You are currently viewing অতি বিশ্লেষনে অন্ধ জাতির অন্ধত্বের পরিনাম
অতি বিশ্লেষনে অন্ধ জাতির অন্ধত্বের পরিনাম

অতি বিশ্লেষনে অন্ধ জাতির অন্ধত্বের পরিনাম

অতি বিশ্লেষনে অন্ধ জাতির অন্ধত্বের পরিনাম

দ্বীন এর অতি বিশ্লেষন এর মত ঘৃণিত কাজে মুসলিম নামক এই জাতি এমন পর্য্যায়ে গেছেন যে, সূরা ফাতেহার শেষ শব্দটির উচ্চারণ দোয়াল্লীন হবে, না যোয়াল্লীন হবে এই নিয়ে এরা বহু বছর ধোরে তর্ক-বিতর্ক কোরে আসছেন, বছরের পর বছর বাহাস কোরেছেন, বই লিখেছেন, এমন কি মারামারি কোরে প্রাণে মারা গেছেন। অথচ এটা একটা তর্কের বিষয়ই নয়। পৃথিবীর সব জায়গার লোক সব অক্ষর উচ্চারণ কোরতে পারে না, কিন্তু কোর’আন সবাইকে পড়তে হয়। মিশরের মানুষ ‘জ’ (জীম) উচ্চারণ কোরতে পারে না, তারা ‘জ’কে ‘গ’ উচ্চারণ কোরতে বাধ্য হয়, জামাল শব্দকে তারা গামাল উচ্চারণ করে। তুরস্কের মানুষ ‘খ’ (খে) উচ্চারণ কোরতে পারে না, ‘খ’ কে তারা ‘হ’ উচ্চারণ করে এবং ঐ উচ্চারণেই কোর’আন শরীফ পড়ে, খালেদকে, হালেদ খানকে হান উচ্চারণ করে। আরবী ভাষায় ‘প’ অক্ষর নেই তাই আরবীরা ‘প’ অক্ষরকে ‘ব’ বা ‘ফ’ উচ্চারণ করে পাকিস্তানকে বাকিস্তান আর প্যালেষ্টাইনকে ফিলিস্তিন উচ্চারণ করে। শুধু এখন কেন স্বয়ং বিশ্বনবীর (সা:) সময়েও আরবের গোত্র গুলির মধ্যে উচ্চারণের বিভিন্নতা ছিলো। আশআরী গোত্রের লোকেরা আরবী লাম অক্ষর উচ্চারণ কোরতে পারেনা বোলে তারা লামের বদলে মিম উচ্চারণ করে। তাদের ঐ উচ্চারণে কোর’আন পাঠ অবশ্যই রসুলাল্লাহ (সা:) শুনেছেন। কিন্তু তিনি অশুদ্ধ পড়া হলো বলেন নি, বরং বোলেছেন তোমাদের সুবিধামত উচ্চারণ (তেলাওয়াত) কর(বোখারী-৩/২২৭, মুসলিম ১/৫৬১ কুরআন পরিচিতি, ৫ মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পৃঃ ২১০-২১৯।)

এই দেশেরই এক এলাকার মানুষ ‘প’ অক্ষর উচ্চারণ কোরতে পারে না, ‘প’ কে ‘হ’ উচ্চারণ করে, পানিকে হানি উচ্চারণ করে। এই নিয়ে মারামারি করাটা কতখানি নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার, জাহেলিয়াতের কাজ ভাবতে অবাক হোতে হয়। অথচ এরাই পাগড়ী মাথায় দিয়ে জোব্বা গায়ে দিয়ে নিজেদের আলেম অর্থাৎ জ্ঞানী ও শিক্ষিত বোলে চালান এবং আমরাও তাই স্বীকার করি। এই পুরোহিত অর্থাৎ ‘আলেম’ শ্রেণীর মাসলা-মাসায়েলের চুলচেরা বিশ্লেষণ দীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে জাতিকে কতখানি বঞ্চিত কোরছে তার আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। লখনু থেকে উর্দু ভাষায় একটি ‘ধর্মীয়’ মাসিক পত্রিকা বের হতো। তাতে যথারীতি মসলা-মাসায়েলের কুট তর্কাতর্কি তো থাকতোই আর থাকতো পাঠকদের প্রশ্নোত্তর। একটা প্রশ্নের উদ্ধৃতি দিচ্ছি:- “একটা তাবুর ভেতরে একদল লোক জামাতে নামায পড়ছে। এমাম পাক-সাফ আছেন, কিন্তু তাবুটার এক কোণে নাজাসাত অর্থাৎ অপবিত্র কিছু লেগে আছে। এমাম সাহেব যখন দাঁড়ান তখন তারা মাথার টুপিটা তাবুর কাপড় স্পর্শ করে। এ অবস্থায় পেছনের সকলের নামায যায়েজ হবে কি হবে না?” অর্থাৎ এমাম সাহেবের টুপি তাবুস্পর্শ কোরলে, তাবুর কোণে লেগে থাকা অপবিত্রতাটা ইলেকট্রিকের মত তাবুর কাপড় বেয়ে এমাম সাহেবের টুপি হোয়ে তাকে অপবিত্র কোরে দেয় কিনা? একবার চিন্তা কোরে দেখুন, বুদ্ধি মস্তিষ্কের কি হাস্যকর অপব্যবহার। আরও করুণ কথা হলো, যে সময়ের কথা বোলছি, তখন সমস্ত দেশটি একটি পাশ্চাত্য খ্রীস্টান শক্তির পদানত, যারা এ দীনের জাতীয় শরিয়াহ অর্থাৎ এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দণ্ডবিধি ইত্যাদি সমস্ত ব্যবস্থা অবৈধ কোরে দিয়ে তাদের নিজেদের তৈরী ব্যবস্থা এ জাতির উপর চাপিয়ে রেখেছে। কোথায় তারা ঐ গায়রুল্লাহর আইন ও শাসনের বিরুদ্ধে জেহাদ কোরবে, আবার মুসলিম হবার চেষ্টা কোরবে, না, তারা তাবুতে টুপি লাগছে বোলে নামায যায়েজ হোচ্ছে কি হোচ্ছে না তাই নিয়ে গবেষণা কোরছে। এদিকে আল্লাহর চোখে তারা যে মুসলিম নয়, মো’মেনই নয়, তাবুতে নাপাকী থাক না থাক, তাদের নামায যে নামাযই নয় সে জ্ঞানও তাদের নাই।

এ গেলো এ জাতির দাসত্বের, গোলামীর সময়ের কথা, যে গোলামী মো’মেনের পক্ষে উম্মতে মোহম্মদীর পক্ষে অসম্ভব। এবার আসুন স্বধীন’ হবার পরের, অর্থাৎ বর্ত্তমান অবস্থা। এ দেশেরই একটি সংবাদপত্রে সপ্তাহে একদিন নানা রকমের মসলা-মাসায়েলের প্রশ্নের জবাব দেয়া হয় লখনুর ঐ ‘ধর্মীয়’ মাসিকের মত। কিছুদিন আগে তাতে একটি প্রশ্ন ছাপা হোয়েছিল। প্রশ্নটি ছিলো- ‘রেডিও শোনা, টেলিভিশন দেখা জায়েজ কিনা?’ শর্ত্তও ছিলো, শুধু খবর শোনা, অন্যান্য অনুষ্ঠান যে জায়েজ নয়, তা প্রশ্নের মধ্যেই স্বীকৃত। প্রশ্নটি এসেছে একটি মাদ্রাসা থেকে, হয় ছাত্র না হয় শিক্ষক। প্রশ্নটির মধ্যে বর্ত্তমান ‘মুসলিম’ জাতির আকীদার নিদারুণ অজ্ঞতা ও তার ফলে বিকৃত মানসিকতা ফুটে উঠেছে। আজকের পৃথিবীর দু’টি অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্বন্ধে কী অজ্ঞাতপূর্ণ প্রশ্ন। ঐ আবিষ্কার গুলি করার কথা ছিলো এই মুসলিম জাতিরই- যাদের গড়া ভিত্তির উপর আজকের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সম্ভব হোয়েছে। মুসলিম জাতির গবেষনার, বিষ্ময়কর আবিষ্কারের ফলশ্রুতি আজকের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তির সাফল্য। তারা জ্ঞান চর্চা কোরেছিলেন কারণ আল্লাহ তার কোর’আনে ও মহানবী (সা:) তার উপদেশে, নিদের্শে এই জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণাকে অবশ্য কর্ত্তব্য কোরে দিয়েছিলেন। তারপর তারা যখন ঐ নির্দেশ ভুলে যেয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্বেষণ ও গবেষণা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ও রসূলের (সা:) নিষেধ অর্থাৎ দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু কোরলেন, ফিকাহ শাস্ত্র নামে বিরাট এক শাস্ত্র গড়ে তুললেন তখন তার ফল হলো দু’টো। একটা এই যে, এই জাতি মসলা-মাসায়েলের মতভেদে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হোয়ে গেলো, এবং অজ্ঞানতার ও সংর্কীর্ণতার অন্ধকারে ডুবে গেলো। দ্বিতীয়টি হলো এই যে, তাদের পরিত্যক্ত, ফেলে আসা জ্ঞানের, আবিষ্কারের ভিত্তি গুলিকে সযত্নে তুলে নিয়ে তার উপর গবেষণা কোরে ইউরোপ আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পৃথিবীর শীর্ষস্থানে। তারা আবিষ্কার করলো ঐ রেডিও, টেলিভিশন, আর যারা ভিত্তি স্থাপন কোরেছিলো তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে বোসে প্রশ্ন কোরছেন- ও গুলো জায়েজ কিনা। কী নিদারুন পরিহাস। আর নিদারুন এই জন্য যে, প্রশ্নটি এসেছে একটি মাদ্রাসার ছাত্র বা শিক্ষকের কাছ থেকে। তাকে আমার জবাব হোচ্ছে এই যে, মানুষকে আল্লাহ যে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন তা দিয়ে সে মিথ্যা ও অন্যায় কথাও বোলতে পারে কিম্বা সত্য ও ন্যায় কথাও বোলতে পারে- তাই বোলে কথা বলাটাই, বা কথা বলার শক্তিটাই না-জায়েজ হোতে পারে কি? রেডিও, টেলিভিশন যদি ন্যায়, সত্য, আল্লাহ-রসূলের (সা:) কথা বলে তবে নিশ্চয়ই তা জায়েজ এবং যদি অসত্য, অসুন্দর, অন্যায়, আল্লাহ-রসূলের (সা:) বিরুদ্ধে বলে তবে তা না-জায়েজ। কী বোলছে, কী দেখাচ্ছে, কী শেখাচ্ছে সেইটা জায়েজ কিম্বা না-জায়েজের প্রশ্ন হবে, রেডিও, টেলিভিশন নিজেরা না-জায়েজ হোতে পারে না, যেমন হোতে পারে না মানুষের কথা বলার শক্তি যা আল্লাহ দিয়েছেন। আপনার মনে ও গুলোর জায়েজ, না-জায়েজের প্রশ্ন এই জন্য এসেছে যে বর্ত্তমানে এ গুলো যা বলে, যা দেখায়, যা শেখায় তা ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়- এই জন্য তো? তাহলে শুনুন- আল্লাহর রসূলের (সা:) সাবধান বাণী ও নিষেধ অগ্রাহ্য কোরে জেহাদ ত্যাগ কোরে এই দীনুল-কাইয়্যেমার, সেরাতুল-মোস্তাকীমের, সহজ-সরল পথকে ত্যাগ কোরে এই দীনটার পুংখানুপুংখ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ কোরে নানা রকম মসলা-মাসয়েল আবিষ্কার করা যখন আরম্ভ হলো তখন থেকেই এই জাতির ভাঙ্গন আরম্ভ । অবশ্য তার আগে থেকেই আল্লাহর রহমত এজাতির উপর থেকে উঠে গিয়েছিলো যখন জাতিটি আল্লাহর নবীর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ জেহাদ ও কেতাল ত্যাগ কোরে রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরেছিলো। যাই হোক, ঐ বিশ্লেষণের ফলে বহির্মুখী, সংগ্রামী জাতিটি একটি অন্তর্মুখী স্থবির জাতিতে রূপান্তরিত হোয়ে গেল। একটি বহু মযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত ও অন্তর্মুখী জাতির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি কি? অবশ্যই শত্রুর কাছে পরাজয় ও দাসত্ব(হাদীস-দীন নিয়ে বাড়াবাড়ির পরিনাম পরাজয়-আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বোখারী।) । ঠিক তাই হলো সামরিক ভাবে শত্রু সহজেই এই জাতিকে পরাজিত করলো, কারণ বিশ্বনবীর (সা:) ও তার আসহাবদের (রা:) হাতে ছিলো অস্ত্র আর এদের হাতে ছিলো ফতোয়ার কলম আর তসবিহ্। রাষ্ট্রশক্তি চলে গেলো শত্রুর হাতে, যে রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম ইসলামই নয়। তারপর কয়েকশ’ বছর ঘৃণিত গোলামীর পর যখন ছাড়া পেলেন তখন ঐ রাষ্ট্রশক্তি শত্রুর হাত থেকে হস্তান্তরিত হলো এক শ্রেণীর লোকের কাছে যাদের সাথে ঐ শত্রুর তফাৎ শুধু গায়ের চামড়ার রংয়ের। মাদ্রাসায় পড়েন বোলে এবং কিছু ব্যক্তিগত শরিয়াহ মসলা জানেন বোলে আপনারা যারা নিজেদের উৎকৃষ্ট মুসলিম বোলে মনে করেন তারা যে কুয়োর ব্যাঙ ছিলেন আজও সেই কুয়োর ব্যাঙই আছেন। রাষ্ট্রশক্তি অধিকার করার কোন চেষ্টা আপনাদের মধ্যে নেই, কারণ আপনাদের ইসলাম আর রসুলাল্লাহর (সা:) ইসলাম দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিষ। রসুলাল্লাহর (সা:) ইসলাম প্রথমেই আরবের রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরেছিলো এবং তার সংগ্রামী আসহাবদের ইসলাম অর্দ্ধেক পৃথিবীর রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরেছিলো। আর আপনাদের পুর্বসূরী ফকিহ, মুফাসসিরদের ইসলাম ও বিকৃত সুফীবাদের ইসলাম লাখো শহীদ ও মুজাহিদদের রক্তে অর্জিত সেই রাষ্ট্রশক্তি শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিলো। সমস্ত ‘মুসলিম’ দুনিয়ার রাষ্ট্রশক্তি আজও তাদের হাতে যারা রেডিও, টেলিভিশনে তাই বোলবে তাই দেখাবে তাই শেখাবে যা আমাদের বিগত পাশ্চাত্য প্রভুরা শিখিয়েছে। আর আপনারা জাহেলিয়াতের অন্ধকারে বোসে প্রশ্ন কোরতে থাকবেন ও গুলো জায়েজ না না-জায়েজ। আপনাদের ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হোয়েছে, আপনারা টুপি মাথায় দিয়ে মাদ্রাসায় যে ফিকাহ শিখেছেন সে ফিকাহ অর্দ্ধেক ফিকাহ। আপনাদের, আমাদের জাতীয় জীবনে ইসলামের ফিকাহ নেই, খ্রীস্টানদের শেখানো ফিকাহ সেখানে চালু, ইসলামের বিচার ব্যবস্থা, দণ্ডবিধি সেখানে নেই, আছে পাশ্চাত্য মানুষের তৈরী আইন, বিচার ব্যবস্থা ও দণ্ডবিধি। যে রেডিও, টেলিভিশন আবিষ্কার করার কথা আপনার সেটা কোরেছে পাশ্চাত্য। এ জাতি যখন মুসলিম ছিলো তখন তাদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, জ্ঞান ও প্রযুক্তি দেখে অর্দ্ধসভ্য ইউরোপীয়ানরা অবাক বিশ্বয়ে চেয়ে থাকতো, ঠিক যেমন কোরে পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার দেখে আজ আমরা মাছের মত হা কোরে চেয়ে থাকি। খ্রীস্টান প্রভুরা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরে তাদের পছন্দ মত যে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিলো এখন সেই প্রাণহীন, বক্তিগত মসলা-মাসায়েলে সমৃদ্ধ জটিল বিতর্কিত ইসলাম আমরা আঁকড়ে ধোরে প্রাণপাত কোরছি। এটা আল্লাহর দেয়া সহজ-সরল সেরাতুল মোস্তাকীম নয়, দীনুল-কাইয়্যেমা নয়। দীনের পণ্ডিতরা দীনের উদ্দেশ্য ও মর্মবাণী ভুলে যেয়ে ওটার অতি বিশ্লেষণ কোরে প্রাণহীন স্থবির কোরে দেওয়ার ফলে আল্লাহ তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রশক্তি ছিনিয়ে নিয়ে অন্যের হাতে দিয়ে দিয়েছেন এবং এরকম ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও পূর্ববর্ত্তী দীন গুলির ‘আলেম’ পণ্ডিতরাও ঐ কাজ কোরেছেন ও শাস্তি হিসাবে তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রশক্তি চলে গেছে। শেষ ইসলামের ঠিক আগেরটাই অর্থাৎ খ্রীস্টানদেরটা ধরুন। ঈসার (আ:) আনা দীনের উদ্দেশ্য ভুলে যখন ওটার মসলা-মাসায়েলের তর্কাতর্কি তুলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে গেলো তখন রাষ্ট্রশক্তি তাদের হাত থেকে মুসলিমদের হাতে চলে এলো। একটা প্রবাদ আছে- হযরত ঈসার (আ:) পায়খানা-প্রশাব পবিত্র না অপবিত্র এই নিয়ে জেরুযালেমে যখন খ্রীস্টান পাদরী, যাজক, আলেমদের কনফারেন্স ও তাদের মধ্যে বহাস হোচ্ছে তখন মুসলিম বাহিনী জেরুযালেম আক্রমণ কোরে দখল কোরে নিলো। পরে ঐ মুসলিমরাই আবার যখন আসল কাজ বাদ দিয়ে ঐ খ্রীস্টানদের মত চুলচেরা বিশ্লেষণ, ফতোয়াবাজী আর কোর’আনের আয়াতের গুপ্ত অর্থ বের করার কাজে ব্যস্ত হোয়ে পড়লো, রেবাত গুলি যখন খানকায় রূপান্তরিত হোয়ে পড়লো, তখন খ্রীস্টানরা এসে সমস্তটাই দখল করলো- ঠিক উলটোটা হল। তারও আগে মুসার (আ:) দীনকে ইহুদীদের ‘আলেম’রা অর্থাৎ রাব্বাই সাদ্দুসাইরা ঠিক আমাদের ‘আলেম’ অর্থাৎ মওলানা, মুফাসসিরদের মত বিশ্লেষণ কোরতে কোরতে ওটাকে যখন এখনকার ইসলামের মত মসলা-মাসায়েল সর্বস্ব এক প্রাণহীন পদার্থে পরিণত কোরেছিলেন তখন আল্লাহ তাদের রোমানদের পদানত কোরে দিয়েছিলেন তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রশক্তি ছিনিয়ে নিয়ে। এটা আল্লাহর আইন, নিয়ম।

আল্লাহর এই আইন এই নিয়মের জ্ঞান প্রদত্ত হোয়েছিলেন বোলেই তার রসুল (সা:) বারবার নিষেধ কোরে গেছেন দীনের বিশ্লেষণ কোরতে। বহু হাদীসে এর উল্লেখ আছে। কিন্তু আমাদের ওলামা, মাশায়েখ, ওয়ায়েজরা তাদের ওয়াজে, উপদেশে ওগুলো উল্লেখ করেন না, কারণ ও গুলো তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। মতভেদের সর্বপ্রধান উৎস স্বভাবতই কোর’আনের আয়াত সমূহ অর্থাৎ আয়াতের অর্থ। এর আগে হাদীস উল্লেখ কোরে এসেছি যেটায় একদিন বিশ্বনবী (সা:) দুইজন সাহাবাকে কোর’আনের একটি আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক কোরতে দেখে রেগে আগুন হোয়ে গিয়েছিলেন। রিপু জয়ী, নফস বিজয়ী সেই সিদ্ধ পুরুষ, মহাবিপদে যিনি নির্ভয়, প্রশান্ত, মাথায় পাহাড় ভেঙ্গে পড়লেও যিনি অটল, অসহনীয় অত্যাচারে যিনি নিষ্কম্প, চরম শত্রুকে যিনি পরম স্নেহে ক্ষমা করেন তিনি যখন রেগে লাল হন তখন অবশ্যই বুঝতে হবে ব্যাপার সাধারণ নয়। আমরা পাই সেই ইনসানে কামেল আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক শুনে রেগে শুধু লাল হন নি, বোলেছিলেন কোর’আনের আয়াতের অর্থ নিয়ে বাদানুবাদ কুফর। কী সাংঘাতিক কথা, কুফর, একেবারে ইসলাম থেকে বহিষ্কার, যার মাফ নেই। আর একবার পাই তাকে রাগে লাল অবস্থায় যখন একজন সাহাবা তাকে (সা:) একটু খুটিয়ে মসলা-মাসায়েল জিজ্ঞাসা কোরেছিলেন। আমাদের একথা নিশ্চিতভাবে বুঝতে হবে যে, মহানবী (সা:) সাধারণ ব্যাপারে অত রাগেন নি। যে ব্যাপারে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, এটা একেবারে উম্মাহর জীবন-মরণের প্রশ্ন, তার সারা জীবনের সাধনার সাফল্য ব্যর্থতার প্রশ্ন, ভবিষ্যতে তার সৃষ্ট জাতির ভাগ্যের প্রশ্ন, শুধু তখনই অত রাগান্বিত হোয়েছেন। বিশ্বনবী (সা:) বেশ কয়েকটি হাদীসে দীন ইসলামকে একটি ঘর বা বাড়ীর সঙ্গে তুলনা কোরেছেন। অনেক রকম জিনিষ নিয়ে একটি বাড়ী হয়। তাতে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে, তার চেয়ে কম প্রয়োজনীয় থাকে, অল্প প্রয়োজনীয় জিনিসও থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিত্তি, ওটা যদি শক্ত না হয় তবে বাড়ী বেশীদিন টিকবে না, কিছুদিন পরই ধ্বসে পড়বে। তারপর আসে বাড়ীর থাম বা দেয়াল, ওটা বানাতেই হবে, কারণ ওটা না থাকলে বাড়ীর আসল যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ ছাদ তা থাকবে না। তারপর আসতে থাকে ক্রমেই কম প্রয়োজনীয় জিনিষ গুলো, দরজা-জানালা, দেয়ালের আস্তর, মেঝে, সিড়ি। তারপর আসে আরও কম প্রয়োজনীয় জিনিষ রং, চুনকাম, ফুলের বাগান ইত্যাদি। যে লোক এইভাবে বাড়ীটিকে দেখবে বাড়ীটার উদ্দেশ্য, বাড়ীর কোন জিনিস বেশী রুত্বপূর্ণ কোন জিনিস কম প্রয়োজনীয় সে ঠিকভাবেই বুঝবে, অর্থাৎ বাড়ী সম্বন্ধে তার ধারণা, আকীদা সঠিক। বাড়ীর কোথাও কোন জিনিস নষ্ট হলে বা ভেঙ্গে গেলে সে সঠিক ভাবেই বুঝবে যে, কতখানি দরকারী কতখানি প্রয়োজনীয় জিনিসটি নষ্ট হলো এবং সেই মোতবেক সেটাকে মেরামত করার চেষ্টা কোরবে। কিন্তু বাড়ীটাকে ঐ দৃষ্টিতে না দেখে একদল লোক যদি বাড়ীটাতে পুংখানুপুংখভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রথম খুব কাছে যেয়ে দেখেন, তারপর হাটু গেড়ে নিচু হোয়ে দেখেন এবং তাতেও সন্তুষ্ট না হোয়ে বিবর্দ্ধক কাঁচ (Magnifying Glass) দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে তবে তারা বাড়িটার অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস, ধুলামাটি ইত্যাদি বড় বড় দেখতে পাবেন, কিন্তু গোটা বাড়ীটাকে আর দেখতে পাবেন না। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি সংকুচিত হোয়ে তারা প্রায়ান্ধ হোয়ে যাবেন। তখন তাদের একদল বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে দেখে গবেষণা কোরে বোলবেন এখানে এই রং হওয়া উচিত আরেক দল বোলবেন জানালায় এই কাঠ হওয়া উচিৎ আরেক দল বোলবেন বাগানের এই জায়গায় ফলের গাছ লাগানো উচিৎ ইত্যাদি এবং তাদের মধ্যে ঐ নিয়ে মতভেদ হোয়ে বিভক্তি হোয়ে যাবে- বাড়ীটার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যাবে। গত কয়েক শতাব্দী থেকে আমাদের ওলামায়ে দীন বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে এই দীনকে ওমনি কোরে দেখেছেন আর বিশ্লেষণ কোরছেন। তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টি আর সম্পূর্ণ দীনটাকে দেখতে পারে না। দীনের উদ্দেশ্যও বুঝতে পারে না, তার প্রক্রিয়াও অর্থহীন হোয়ে গেছে। ইসলামের বাড়ীটি ধ্বসে গিয়ে মাটিতে পড়ে আছে আর তারা ঐ ধ্বসে পড়া বাড়ীর দরজা জানালায় কি রং হবে, বাগানের কোথায় কি ফুলের গাছ লাগানো উচিৎ তাই নিয়ে গবেষণা কোরছেন, তর্কাতর্কি কোরছেন, মারামারি কোরছেন। সুতরাং কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কোনটা কম প্রয়োজনীয় এ বোধ তাদের লোপ পেয়েছে অর্থাৎ জ্ঞান আর নেই। হিমালয় পর্বতকে তারা বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে দেখতে যেয়ে পর্বতের পায়ের সুক্ষ ধূলাবালিকে বড় বড় পাথরের টুকরোর মত দেখতে পাচ্ছেন এবং ওগুলোকেই পাহাড় পর্বত মনে কোরছেন। কিন্তু হিমালয়ের চুড়া কতখানি উর্দ্ধাকাশে উঠে গেছে কেমন কোরে সে মেঘ আটকিয়ে বৃষ্টি ঝরায়, তুষার ঝড় সৃষ্টি করে- তা তাদের ধারণার, আকীদার বাইরে। মহানবীর (সা:) বর্ণিত ইসলামের ঐ বাড়ীটি সম্বন্ধে এই বিকৃত আকীদার অর্থাৎ দৃষ্টির অন্ধত্বের জন্য কয়েক শতাব্দীর ঘৃণিত দাসত্বের সময়েও ওলামায়ে দীন টুপি, পাগড়ী, টাখনুর উপর পাজামা, বিবি তালাকের ফতোয়া, সুর কোরে কোর’আন পড়া ইত্যাদি খুঁটিনাটি নিয়ে মহা ব্যস্ত থেকেছেন আর ভারসাম্যহীন সুফীরা জাতির দাসত্বের সময়েও অন্তর্মুখী হোয়ে খানকায় বোসে যার যার আত্মার ঘষামাজা কোরছেন গোল হোয়ে বোসে, পাড়া কাঁপিয়ে যিকির কোরছেন, অতি সযত্নে কুফর ও শেরকের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেছেন। তারপর তথাকথিত স্বাধীনতা পাবার পরও ঐ দুই ভাগ মানুষ ঠিক একই কাজ কোরে চোলেছেন চোখ কান বুজে।

Leave a Reply