You are currently viewing অর্ধ পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কিভাবে হলো?
উম্মতে মুহাম্মাদীর উল্টো পথে যাত্রা

অর্ধ পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কিভাবে হলো?

অর্ধ পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কিভাবে হলো?

সহজ সরলতাকে, সেরাতুল মোস্তাকীমকে পণ্ডিতরা এবং সুফীরা ত্যাগ কোরে জটিলতার পথ ধরার ফলে বিশ্বনবীর (সা:) উম্মাহ একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন অন্তমুর্খী স্থবির জাতিতে পরিণত হলো। তাদের উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব পালনের সংগ্রাম করার শক্তি আর তাদের অবশিষ্ট রোইলো না।
প্রশ্ন আসে, এখানেই কি তবে এই উম্মাহর শেষ? না তা নয়। মহানবীর (সা:) ভবিষ্যতবাণী মোতাবেক তার উম্মাহর ৬০/৭০ বছর পর মৃত্যু ঠিকই তবে সে মৃত্যু জাতি হিসাবে। ব্যক্তিগত ও ছোট দল হিসাবে অনেক লোক সেরাতুল মোস্তাকীম, দীনুল কাইয়্যেমাকে এবং এই জাতির প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে গেলেন না। কিন্তু তারা অনেকটা অসহায় হোয়ে পড়লেন এই জন্য যে, বৃহত্তর জাতি ও সরকারী শক্তি জাতির উদ্দেশ্য ভুলে গেছে। এই ছোট ছোট দল গুলি সম্বন্ধেই শেষনবী (সা:) বোলে গেছেন- আমার উম্মাহর মধ্যে চিরদিন একদল লোক থাকবে যারা সর্বদা আল্লাহর হুকুম কে বলবৎ রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে(হাদিস- মুয়াবিয়া (রা:) থেকে বোখারী ও মুসলিম) । বৃহত্তর উম্মাহ জাতি হিসাবে উম্মতে মোহাম্মদী রইলো না কিন্তু এরা দলগতভাবে ও ব্যক্তিগত ভাবে মহানবীর (সা:) প্রকৃত অনুসারী রোইলেন। আটলান্টিকের তীর থেকে চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত শেষ জীবন ব্যবস্থা বিস্তারের পর যখন উদ্দেশ্য নষ্ট ও আকীদা বিকৃতির জন্য এর গতি রুদ্ধ হোয়ে গেল, তারপর এর যে বিস্তারটুকু হোয়েছে তা হোয়েছে ঐ দলগত উম্মতে মোহাম্মদীদের দিয়ে। যখন এরা দেখলেন যে, জাতি তার লক্ষ্যভ্রষ্ট হোয়ে গেছে, এর নেতারা এখন রাজত্ব করাকেই উদ্দেশ্য মনে কোরছে, এর পণ্ডিতরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা নিয়ে অতি ব্যস্ত হোয়ে পড়েছেন এর সুফীরা খানকায় বোসে আল্লাহকে অত্যন্ত যিকর কোরছেন কিন্তু মোহাম্মদ (সা:) এর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বকে সম্মুখে নিয়ে যাবার কেউ নেই তখন তারা আল্লাহর নাম নিয়ে ছোট ছোট দলেই বের হোয়ে পড়লেন পৃথিবীতে শেষ জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা কোরে শান্তি স্থাপন করার জেহাদে। পরবর্ত্তীতে ইসলামের যে বিস্তার আফ্রিকায়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এবং চীনের মুল ভূখণ্ডে হোয়েছে তা হোয়েছে ঐ ছোট ছোট উম্মতে মোহাম্মদীর দলের জেহাদের কারণে। বিশ্বনবী (সা:) ও খোলাফায়ে রাশেদার সময়ের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর মতই এরা প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার কার্যকরী করেন। কিন্তু পরে এদের সুফী বোলে প্রচার চালানো হয় এবং ইসলামের প্রকৃত রূপ দৃষ্টি থেকে বিলুপ্ত হওয়ায় ঐ প্রচারের ফলে এই জাতি ঐ দুঃসাহসী যোদ্ধাদের সুফী বলেই গ্রহণ কোরে নেয়, এবং আজও তাদের খানকাবাসী সুফী বোলেই বিশ্বাস করে। এদের জীবনী লেখকরা বহু সত্য, আধা সত্য, আধা মিথ্যা ঘটনা তাদের জীবনী গুলোতে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের মহাসুফী বোলে চিত্রিত কোরতে চেষ্টা কোরেছেন এবং সফলও হোয়েছেন। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যায় যে তাদের প্রায় প্রত্যেকজনই ছিলেন মরদে মুজাহিদ। প্রত্যেকে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এই শেষ জীবন ব্যবস্থার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা কোরেছেন। খুব কমস্থানেই সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া এই দীন কায়েম হোতে পেরেছে। জাতি হিসাবে উদ্দেশ্য ভুলে যাবার পর সংগ্রাম ছেড়ে দেয়ার পর ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে যারা উম্মতে মোহাম্মদী রইলেন তাদেরই কোরবানী ও সশস্ত্র সংগ্রামের ফলে পরবর্ত্তীতে এই দীন পৃথিবীতে আরও বিস্তৃত হোয়েছে। এরা তখন দুনিয়া ত্যাগ কোরে ইসলামের সন্ন্যাস গ্রহণ কোরে ঘরবাড়ী সম্পত্তি সব কিছু ছেড়ে দলবেধে সশস্ত্র সংগ্রামে বের হোয়ে না পড়লে আজ ইসলাম ঐ প্রাথমিক পর্য্যায়ে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে এবং উত্তর আফ্রিকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতো, দক্ষিণ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও চীনে বিস্তার লাভ কোরত না। বিশ্বনবীর (সা:) সময়ের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর মত এরাও ছিলেন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী অর্থাৎ দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা। অথচ এদের প্রকৃত রং বদলিয়ে এদের সুফী বোলে চিত্রিত করা হোয়েছে নিজেদের সঠিক বোলে প্রমাণ করার জন্য। আসলে এরা সুফীদের ঠিক উলটো। এরা নিজেদের সব কিছু ছেড়ে এই দীনুল কাইয়্যেমাকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জেহাদে অজানা পৃথিবীতে বের হোয়ে পড়েছিলেন আর সুফীদের কাজ হোচ্ছে তসবিহ হাতে খানকায় বোসে তপস্যা করা।

অর্দ্ধেক পৃথিবীতে শেষ জীবন ব্যবস্থা, শেষ ইসলাম যে প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিলো তা মুজাহিদদের শাহাদাতের বিনিময়ে নয়, সুফীদের প্রচারের ফলে- এ মিথ্যা ও অবিশ্রান্ত প্রচারের ফলে মানুষের মধ্যে সত্য বোলে গৃহীত হোয়ে গেছে। এই কথা প্রমাণ করার জন্য বহু বই লেখা হোয়ে গেছে বিভিন্ন ভাষায়। যারা ঐ সব বই লিখেছেন আর যারা তা পড়ে বিশ্বাস কোরেছেন, উভয়ই প্রকৃত ইসলামের আকীদা থেকে বহু দূরে। এই দীনের যে মর্মবাণী জেহাদ, কেতাল, এ সত্যকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা আরম্ভ হোয়েছে রসুলাল্লাহর (সা:) সময়ের ৬০/৭০ বছর পর থেকেই। ঐ মহাপাপের শাস্তি হিসাবে প্রথমে এসেছে অনৈক্য, তারপর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, রক্তারক্তি, তারপর এসেছে ইউরোপের খ্রীস্টান জাতি গুলির ঘৃণ্য গোলামী, দাসত্ব এবং স্পেন থেকে একেবারে দৈহিকভাবে নির্মূল হোয়ে যাওয়া। ঐ ধামাচাপার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ সফল হওয়ার ফলেই ইসলামের পৃথিবীময় বিস্তারকে মুজাহিদদের সশস্ত্র সংগ্রামের ফলের বদলে সুফীদের প্রচারের ফল হিসাবে যেমন লেখাও হোয়েছে তেমনি তা বিশ্বাসও করা হোয়েছে এবং এখন এই মিথ্যা সর্বত্র গৃহীত। এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে আলাদা বই-ই হোয়ে যাবে, কাজেই শুধু কয়েকটি বুনিয়াদী সত্য লেখা ছাড়া উপায় নেই।

সমস্ত পৃথিবীর খবর আমার জানা নেই, কাজেই পৃথিবীর যে অংশে আমি বাস করি শুধু সেইটুকুর কথাই বোলছি। এই দেশে শেষ ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোয়েছে বখতিয়ার খিলজীর তলোয়ারের শক্তিতে। উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশে হোয়েছে শাহজালালের (রঃ) তলোয়ারে, যে তলোয়ার আজ উপেক্ষিত হোয়ে পড়ে আছে। দক্ষিণ বাংলায় হোয়েছে খান জাহান আলীর (রঃ) তলোয়ারে। উত্তর বাংলায় হোয়েছে সুলতান মাহমুদ মাহী সওয়ারের (রঃ) তলোয়ারের শক্তিতে, পশ্চিম বাংলায় হোয়েছে শাহ সফী উদ্দিন (রঃ), শাহ সুলায়মান (রঃ), সৈয়দ দেওয়ান চন্দন শহীদ (রঃ) ইত্যাদি অনেক মুজাহিদদের তলোয়ারের জোরে। অবশ্য আমার এ কথার অর্থ এই নয় যে, শুধু মুজাহিদদের সশস্ত্র সংগ্রামের ফলেই এদেশে আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী এই দেশ অস্ত্রের বলে জয় করার আগেও আরব ও অন্যান্য মুসলিমরা ব্যবসা বাণিজ্য উপলক্ষে এ দেশের বন্দর গুলিতে এসে স্থানীয় লোকজনের সংস্পর্শে আসেন। তখনকার ঐ মুসলিম ব্যবসায়ী ও বণিক মুসলিমরা এখনকার মত মৃত মুসলিম ছিলেন না। তারা যেখানেই যেতেন সেখানেই তারা তাদের জীবন বিধান দীন প্রচারের চেষ্টা কোরতেন। তাদের সে চেষ্টা যে সম্পূর্ণ বিফল হোয়েছে তা আমি বলি না। নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে সব সময়ই এমন মন থাকে যা সত্য গ্রহণ করে এবং অনেক মানুষই নিশ্চয় তাদের হাতে মুসলিম হোয়েছিলেন। কিন্তু বুনিয়াদী সত্য হলো এই যে, প্রধান কারণ হলো মুজাহিদদের সশস্ত্র সংগ্রাম। এই দেশে মুসলিমরা যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সেজন্য যাদের অবদান সর্বশ্রেষ্ঠ, যাদের কয়েকটি মাত্র নাম উল্লেখ কোরলাম তাদের জীবনী পড়লে দেখা যে যায় সশস্ত্র সংগ্রামেই তাদের জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে। সিলেটের শাহ জালালের (রঃ) মত অনেকের হাতের তলোয়ার আজও রক্ষিত আছে। তারা যে আধ্যাত্মিক সাধকও ছিলেন না তা আমি বোলছি না, তাদের আধ্যাত্মিক সাধনাও অবশ্যই ছিলো কারণ তাদের জীবন প্রকৃত মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদীর মতই ভারসাম্যযুক্ত ছিলো। কিন্তু পরবর্ত্তী সময়ে তাদের জীবনের সশস্ত্র সংগ্রামের ভাগটুকু ছেটে ফেলে তাদের কেরামতির ভাগটাকেই শুধু প্রধান নয় একমাত্র ভাগ বোলে প্রচার করা হোয়েছে। ঐ প্রচারের চেষ্টায় নানা অসত্য, অর্দ্ধসত্য কল্পকাহিনী এমনকি সম্পূর্ণ মিথ্যাও তাদের পবিত্র জীবনী গুলোতে ঢুকিয়ে দেয়া হোয়েছে। বিশ্বনবীর (সা:) প্রকৃত উম্মাহ, ইসলামের সন্ন্যাসী এই মহাযোদ্ধাদের খানকাবাসী সুফী প্রমাণের জন্য যে সমস্ত বই লেখা হোয়েছে তাদের মধ্য থেকে একটি বই নিন- গোলাম সাকলায়েনের লেখা- বাংলাদেশের সুফী সাধক। দেখুন, এই যোদ্ধাদের সুফী প্রমাণ করার জন্য লেখক লিখছেন- “ফলত বাংলাদেশে মুসলমান যে আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ তার মুলে দেশী ও বিদেশী বহু পীর দরবেশ ও সুফীসাধকদের সাধনা ও কর্ম তৎপরতাই প্রধানত দায়ী। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে কোন কোন সময় কোন কোন ধর্মোন্মক্ত মুসলিম বাদশাহ বা শাসক ক্ষাত্রশক্তির সাহায্যে এদেশে ইসলাম বিস্তারের চেষ্টা কোরেছিলেন বটে, কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফলকাম হয় নি। মুসলিম ক্ষাত্রশক্তি যেখানে পরাজিত ও বিধ্বস্ত হোয়েছে দরবেশ ও সুফী সাধকদের নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তি সেখানে অত্যাশ্চার্যরূপে জয়লাভ কোরেছে(বাংলাদেশ সুফী-সাধক- গোলাম সাকলায়েন।পৃ:৮৭)। এই কথা তিনি লিখলেন বইটার প্রথমদিকে-৮৭ পৃষ্ঠায়। তারপর বহু “সুফী- সাধক”দের বহু যুদ্ধ, বহু কোরবানী বহু শাহাদাত ও বহু গাজীত্বের বর্ণনার পর বইয়ের শেষ দিকে লিখছেন- “প্রকৃতপক্ষে তুর্কী শাসকদের দ্বারা বাংলাদেশ বিজিত হওয়ার পর সুফী-সাধক এদেশের চিন্তা জগতে অভিনব ও বৈপ্লবিক পরিবর্ত্তনের সূত্রপাত করে।” (২৫৫পৃঃ) অর্থাৎ গোলাম সাকলায়েন সাহেব প্রথমে ভুল কথা লিখে পরে নিজের অজান্তেই শেষ দিকে সত্য কথা লিখে ফেলেছেন। আরও প্রকৃত সত্য এই যে, প্রথম দিকে ইসলামের মুজাহিদদের সশস্ত্র সংগ্রামের ফলে এই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্ত্তীতে ভারসাম্যহীন, অস্ত্রহীন, তসবীহধারী সুফীদের সময়ে দেশ ইংরাজের গোলামে পরিণত হয়। শুধু ‘দরবেশের” সংখ্যাই যদি ধরা হয় তবে প্রথম দিকের ঐ যোদ্ধা দরবেশরা যখন এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন তখন তাদের যে সংখ্যা ছিলো, পরবর্ত্তীতে যখন ইংরাজ এসে মুসলমানদের হাতে থেকে দেশ ছিনিয়ে নিলো, তখন “দরবেশ”দের সংখ্যা বহু বেশী। অর্থাৎ যোদ্ধারা ক্ষাত্রশক্তির বলে এদেশে ইসলাম আনলেন আর দরবেশদের, সুফীদের আমলে ইংরাজরা এদেশ মুসলিমদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ঐ সুফী দরবেশ সহ সমস্ত মুসলিম জাতিটাকে গোলাম বানিয়ে দিলো।

তাসাওয়াফ সম্বন্ধে শেষ কথা এই যে, মো’মেন মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদীর সর্বশ্রেষ্ঠ যে দায়িত্ব, অর্থাৎ এই দীনুল ইসলাম, দীনুল কাইয়্যেমাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে ইবলিসের চ্যালঞ্জে আল্লাহকে জয়ী করার সংগ্রাম, জেহাদ করার পর যদি সময় থাকে তবে তাসাওয়াফের সাধনা কোরুন, কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ঐ সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব পালন না কোরে যদি শুধু সাধনাই কোরতে থাকেন তবে এই দুনিয়াতেই এই জাতির উপর যে আযাব হোচ্ছে তার চেয়েও কঠিন আযাব এবং আখেরাতে আরও ভয়ংকর আযাবের অপেক্ষা কোরুন।

মহানবীর (সা:) ভবিষ্যৎবাণী মোতাবেক ৬০/৭০ বছর পর উম্মতে মোহাম্মদীর মৃত্যু হলো, একথা বহু লোকই মানবেন না জানা কথা। বিশেষ কোরে যারা অতি মুসলিম, যারা এই দীনের মর্মবাণী থেকে বহুদূরে, এর মৃত কংকালটা যারা আঁকড়ে ধোরে আছেন তারা তর্ক দেবেন বিশ্বনবী (সা:) নিজেই বহু হাদীসে আমাদের তার উম্মাহ বোলে বোলেছেন, এমনকি পথভ্রষ্ট হোলেও আমাদের তার উম্মাহ বোলে উল্লেখ কোরেছেন। ঠিক কথা। কিন্তু ঐসব হাদীসে তিনি তার প্রকৃত উম্মাহ বোঝান নি, বুঝিয়েছেন সাধারণভাবে-ইংরেজীতে যাকে বলা হয় In general sense অর্থাৎ অন্য থেকে পৃথক বোলে বোঝাবার জন্য। অর্থাৎ যেটাকে তিনি উল্লেখ কোরছেন সেটা খ্রীস্টান, ইহুদি জাতি নয়, মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রসুল্লাল্লাহ বলে এমনি একটা পৃথক জাতি- একথা বোঝাবার জন্য। প্রমাণ দিচ্ছি- মহানবী (সা:) ভবিষ্যতবাণী কোরেছেন যে, ক্রমে ক্রমে ভবিষ্যতে তার জাতি বনী ইসরাইলীদের (এখানে তিনি বনি ইসরাইল বোলতে ইহুদী-খ্রীস্টান সভ্যতাকে বোঝাচ্ছেন) এমনভাবে অনুসরণ কোরবে যে তাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার কোরলে, তার উম্মাহর মধ্য থেকেও কেউ তা কোরবে(হাদিস- আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে তিরমিজি, মেশকাত)। প্রশ্ন হোচ্ছে কেউ যদি মানসিকভাবে অন্য জাতির এতটা দাস হোয়ে যায় যে, হীনমন্যতায় সে ঐ পর্য্যায়ে যায় যে, তাদের নকল ও অনুকরণ কোরতে যেয়ে সে প্রকাশ্যে মায়ের সাথে ব্যভিচার কোরতেও বিরত হয় না, তবে সেই লোককে বা জাতিকে উম্মতে মোহাম্মদী বলা যায়? নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু এখানেও বিশ্বনবী (সা:) তার উম্মাহ বোলেই উল্লেখ কোরেছেন, কারণ এই জাতিটিকে অন্য জাতি থেকে পৃথক কোরে বোঝাবার জন্য ওহ In general sense, তিনি তার প্রকৃত উম্মাহ বোঝান নি।

মহানবীর (সা:) ভবিষ্যবাণী মোতাবেক ৬০/৭০ বছর পর যখন উম্মতে মোহাম্মদীর জাতি হিসাবে মৃত্যু হোলো তখন কি রইলো? রইলো জাতি হিসাবে মুসলিম। মুসলিম শব্দের অর্থ হলো- যে বা যারা আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থাকে তসলীম অর্থাৎ সসম্মানে গ্রহণ কোরে নিজেদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠা করে, অন্য কোন রকম জীবন বিধানকে স্বীকার করে না, সে বা তারা হলো মুসলিম। এই জাতি রসুলাল্লাহর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ তার মাধ্যমে প্রেরিত দীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দেবার ফলে জাতি হিসাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর সংজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হোয়ে শুধু একটি মুসলিম জাতিতে পরিণত হলো। এ জাতির সংবিধান রইলো কোর’আন ও হাদীস, রাজনৈতিক, আর্থ সামাজিক সবরকম ব্যবস্থা শাসন ও দণ্ডবিধি (penal code) সবই রইলো ঐ কোর’আন ও হাদীস মোতাবেক। ওর বাইরে অন্য কোন রকম রাজনৈতিক বা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে তারা শেরক বা বহু ঈশ্বরবাদ মনে কোরতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য তারা হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাদের আকীদা বিকৃত হোয়ে গিয়েছিলো। কাজেই তারা ঐ বিশাল ভূখণ্ডের শাসক হোয়ে পৃথিবীর আর দশটা রাজ্যের মত রাজত্ব কোরতে লাগলেন। এই অবস্থায় কয়েক’শ বছর পার হোয়ে গেলো।

Leave a Reply