You are currently viewing অস্তিত্ব সংকটে সভ্যতা

অস্তিত্ব সংকটে সভ্যতা

এই সংকট থেকে মানব সভ্যতার মুক্তির উপায় কি?

মানব সভ্যতা যদি এখনও না বুঝে যে তার এ আত্মাহীন যান্ত্রিক প্রগতির পথ ছেড়ে তারা এই যান্ত্রিক জ্ঞান মানুষের কল্যাণের কাজে লাগাতে হবে, তার আত্মাকে উন্নত কোরতে হবে এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলে নতুন ভাবে গড়তে হবে। তবে আজ হোক আর কাল হোক বন্দুকের ট্রিগার একজনকে টিপতেই হবে। আমি জানি আমার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না। বোলবেন, না, না, মানুষ এমন আত্মহত্যার কাজ কোরবে না। তাদের কাছে আমার নিবেদন হলো এই যে, মানুষ ইচ্ছে কোরে এই আত্মহত্যা কোরবেন না ঠিক কিন্তু দু’জন একে অন্যের বুকের উপর বন্দুক তাক কোরে চিরদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না, এও ঠিক কিনা? এই সভ্যতার ধারকেরা ইচ্ছে কোরে এই আত্মহত্যা কোরবে না ঠিক, কিন্তু অবস্থা বাধ্য কোরবে একজন না একজনকে টিধগার টিপতে। এ শতাব্দীতে মানুষ দু’টো বিশ্বযুদ্ধ কোরেছে, যা এই ত্রুটিপুর্ণ সভ্যতার ফল। প্রথমটা ধরুন। ১৯১৪ সনে যে দিন যুদ্ধ শুরু হয় তার আগের দিন যদি সমস্ত পৃথিবীতে একটা গণভোট নেয়া হোত এই বোলে যে, যুদ্ধ চাও কি চাওনা, তবে যুদ্ধের পক্ষে মানুষ কোন ভোট দিতো না, দিলেও শূণ্যের কোঠার কাছাকাছি। এমন কি যেই সভ্যতার ধারকেরা পরের দিন মহাযুদ্ধ আরম্ভ কোরেছিল তারাও না। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কি বাঁধেনি? সেই যুদ্ধে চার কোটি মানুষ হতাহত হয় নি? তারপর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মাত্র একুশ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের দিন যদি আবার পৃথিবীময়- এমন কি যে সব দেশ যুদ্ধ শুরু করলো তাদের সহ গণভোট নেয়া যেতো, তবে তারও ফল ঐ আগের গণভোটের মতই হোত- যুদ্ধের পক্ষে শূণ্যের কোঠায়। কিন্তু তাতে কি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ বন্ধ হোয়েছে? হয় নি- এবং সে যুদ্ধে এই সভ্যতার সাত কোটি মানুষ নামক প্রাণী হতাহত হোয়েছে, বিভৎসভাবে পঙ্গু হোয়েছে, কোটি কোটি স্ত্রীলোক বিধবা হোয়েছে, কোটি কোটি ছেলেমেয়ে বাপ-মা হারিয়েছে, কোটি কোটি স্ত্রীলোক ধর্ষিতা হোয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীময় মানুষও যদি কোন বিশেষ ব্যপার না চায়, তবুও তা হয় এবং পৃথিবীময় মানুষও যদি কোন ব্যপার চায়, যেমন শান্তি, তা হয় না। কেন? আগেই বোলেছি- অবস্থা, আর এই অবস্থার জন্ম হয় মানুষেরই কাজের ফলে, ত্রুটি পুর্ণ সভ্যতার ফলে- তার কর্মফল সে আর এড়াতে পারে না শত অনিচ্ছা থাকলেও। হাজার চেষ্টা কোরলেও পরিণতি তাকে ভোগ কোরতেই হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ কেমন কোরে যুদ্ধ আরম্ভ হলো তা লিখতে যেয়ে লেখেছেন-“We all slithered into it” অর্থাৎ আমরা কেমন যেন পিছলিয়ে ওর মধ্যে পড়ে গেলাম। আজ পৃথিবীর চারদিক থেকে আর্ত্ত মানুষের হাহাকার উঠছে- শান্তি চাই, শান্তি চাই। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের উপর শাসকের অবিচারে, ন্যয়ের উপর অন্যায়ের বিজয়ে, সরলের উপর ধুর্ত্তের বঞ্চনায়, পৃথিবী আজ মানুষের বাসের অযোগ্য হোয়ে পড়েছে। নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। এ অবস্থা বিনা কারণে হয় নি। অন্য কোন গ্রহ থেকে কেউ এসে পৃথিবীতে এ অবস্থা সৃষ্টি করে নি। মানুষ নিজেই এই অবস্থার স্রষ্টা। তাই পৃথিবীতে শান্তির জন্য এত চেচামেচি, এত লেখা, এত কথা, এত শান্তির প্রচার- কিছুই হোচ্ছে না। শুধু
হোচ্ছে না নয়, সমস্ত রকম পরিসংখ্যান বোলে দিচ্ছে যে, একমাত্র যান্ত্রিক উন্নতি ছাড়া আর সমস্ত দিক দিয়ে এই সভ্যতার মানুষ অবনতির পথে যাচ্ছে- এবং দ্রুত যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বোলছে, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে খুন, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি সর্বরকম অপরাধ প্রতি বছর বেড়ে চলেছে বরং বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমন কোন দেশ নেই যেখানে অপরাধের সংখ্যা কমছে। এর শেষ কোথায়? এর পরিণতি চিন্তা কোরে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ আজ দিশাহারা। এর উপর আবার ভয়াবহ বিপদ দাঁড়িয়েছে পারমাণবিক বোমা। এ সবই, অর্থাৎ এই অবস্থা প্রমাণ কোরছে যে মানব জাতি আজ পর্যন্ত এমন একটা জীবনব্যবস্থা তার নিজের জন্য সৃষ্টি বা প্রণয়ন কোরতে পারে নি যেটা পালন কোরলে যান্ত্রিক উন্নতি সত্তেও মানুষ এই পৃথিবীতে শান্তিতে বাস কোরতে পারে।
তাহোলে উপায় কি? মানুষের ভবিষ্যত নিদারুণ পরিণতিকে এড়াবার পথ কি?
পথ আছে, উপায় আছে। কিন্তু সে পথ গ্রহণ করার সময় খুব বেশী নেই। সেই পথেরই সন্ধান দিচ্ছে হেযবুত তাওহীদ। যে পথে চোললে, যে জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা কোরলে মানুষ জাতি অপ্রতিরোধ্য ভাবে তার আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাবে না, তার বুদ্ধি ও মনের, দেহের ও আত্মার এমন একটা সুষ্ঠু, ভারসাম্য মিশ্রণ দেবে যা তাকে দু’দিকেই উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে। এমন পথ খুঁজতে গেলে সর্বপ্রথম মানুষকে একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সিদ্ধান্তের উপর তার সাফল্য ও বিফলতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর কোরবে। সেটা হোচ্ছে ধীরস্থির, নিরপেক্ষভাবে চিন্তা কোরে সিদ্ধান্ত করা যে, এই পৃথিবী ও মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা আছেন, কি নেই। সাধারণ বুদ্ধিতেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, মানুষ পৃথিবীতে কোন্ পথে কিভাবে চোললে নিরাপত্তা ও শান্তির মধ্যে থাকতে পারবে তা স্রষ্টা থাকলে বা না থাকলে এই উভয় অবস্থাতেই একই হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। আরও সহজ কোরে বলতে গেলে- আপনাকে যদি কোনও বিশেষ একটি দেশে যেতে হয়, তবে সর্ব অবস্থাতেই আপনার সিদ্ধান্ত কি একই হবে? যদি সেই দেশটাতে দৃঢ় আইন-কানুন, বিচারালয়, কর্ত্তব্যনিষ্ঠ দক্ষ পুলিশ থাকে, অথবা সেই দেশটাতে কোন সরকার, আইন-কানুন, পুলিশ এমনকি কোর্ট-কাচারী কিছুই না থাকে- এই উভয় অবস্থাতেই কি আপনি একইভাবে সেই দেশে প্রবেশ কোরবেন এবং একইভাবে বিচরণ কোরবেন? কোন
দ্বিধা না কোরে বলা যায় যে- অবশ্যই নয়। প্রথম অবস্থায় আপনি একা এবং নিরস্ত্র সে দেশে প্রবেশ কোরবেন এবং নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াবেন এবং দ্বিতীয় অবস্থায় আপনি
একা সে দেশে অবশ্যই প্রবেশ কোরবেন না। যদি যেতেই হয় তবে আপনি দল গঠন কোরবেন, অস্ত্রসজ্যিত হবেন এবং চলাফেরার সময় অত্যন্ত সতর্ক এবং
সাবধান হবেন। যেহেতু দেশে আইন নেই তাই আপনার অস্ত্রই হবে আইন। অর্থাৎ ঐ দেশে একটা সক্তিশালি সরকার থাকা বা না থাকার উপর আপনার মত, পথ,
কাজ সর্ব কিছু শুধু বদলাচ্ছে না একেবারে উল্টো হোয়ে যাচ্ছে। কাজেই স্রষ্টা আছেন কি নেই এই সিদ্ধান্তের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর কোরছে মানুষের সত্যিকারের শান্তি
ময়, সুখী প্রগতির পথ কিম্বা বিপথ। মানব জাতি হিসাবে, মানুষ আজও এইসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নি, তাই তার মত ও পথের এত বিভিন্নতা, এত সংঘর্ষ।
কাজেই মানব জাতিকে সামগ্রিকভাবে আজ সিদ্ধান্ত নিতেই হবে যে স্রষ্টা আছেন কি নেই, কারণ আজ শুধু মানুষে মানুষে যুদ্ধ, রক্তারক্তি, হানাহানি, অশান্তি
আর অশ্রু নয় এগুলো দিয়ে তার অতীত ও বর্ত্তমান পূর্ণ হোয়ে আছে- আজ বাজী তার একেবারে অস্তিত্বের।

Leave a Reply