You are currently viewing ইসলামে ভারসাম্যের গুরুত্ব
ইসলামে-ভারসাম্যের-গুরুত্ব

ইসলামে ভারসাম্যের গুরুত্ব

ইসলামে ভারসাম্যের গুরুত্ব

আল্লাহর রসুল (সা:) বোলেছিলেন- আমার উম্মাহর (জাতির) আয়ু ৬০/৭০ বছর। এর প্রকৃত অর্থ হলো এই যে, তার (সা:) জাতি ঐ ৬০/৭০ বছর পর্য্যন্ত তার কাজ চালিয়ে গেছে। তারপর তারা ঐ কাজে বিরতি দিলো, কারণ ঐ উদ্দেশ্যটা ভুলে গেলো। তাদের দৃষ্টি, তাদের প্রকৃত লক্ষ্য, যে লক্ষ্য আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন তা থেকে ঘুরে যেয়ে যে সহজ-সরল দীনকে সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার কথা সেটাকে চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্যে ব্যাপৃত হোয়ে পড়লো এবং আল্লাহ ও রসূলের (সা:) কথা মতই ধ্বংস হোয়ে গেলো। কিন্তু এই ধ্বংস হবার কারণ শুধু পণ্ডিতদের ঐ অতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণই নয়। আরও একটি প্রধান কারণ আছে আর তা হলো এই দীনুল কাইয়্যেমাতে, সেরাতুল মোস্তাকীমের মধ্যে বিকৃত সুফী মতবাদ অর্থাৎ ভারসাম্যহীন আধ্যাত্মবাদের অনুপ্রবেশ। আল্লাহ মানুষের জন্য যত জীবনব্যবস্থা পাঠালেন যুগে যুগে, তার শেষটাকে তিনি তৈরী কোরলেন একটা অপূর্ব ভারসাম্য দিয়ে। এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্টই হলো ভারসাম্য। এর আগের দীন গুলিতে যে ভারসাম্য ছিলো না তা নয়, মূল দীনে ভারসাম্য অবশ্যই ছিলো। কারণ মানুষ শুধু দেহ নয় আত্মাও, শুধু সামাজিক জীব নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনও আছে। তাই তার জীবন-বিধান, দীনও একতরফা হোতে পারে না। সেটাকে অবশ্যই এমন হোতে হবে যে সেটা মানুষের উভয় রকম প্রয়োজনীয়তা পূরণ কোরতে পারে। নইলে সেটা ব্যর্থ হোতে বাধ্য। তাই আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা অবশ্যই সব সময় মূলতঃ ভারসাম্যযুক্ত ছিলো। কিন্তু পূর্ববর্ত্তী সব নবীদের (আ:) উপর অবতীর্ণ দীন গুলি ছিলো স্থান ও কালের প্রয়োজনের মধ্যে সীমিত এবং ওগুলোর ভারসাম্যও ছিলো ঐ পটভূমির প্রেক্ষিতে সীমিত। কিন্তু ঐ দীন গুলির ভারসাম্যও মানুষ নষ্ট কোরে ফেলেছে। হয় বিধানের আদেশ-নিষেধ গুলিকে আক্ষরিকভাবে পালন কোরতে যেয়ে দীনের মর্মকে, আত্মাকে হারিয়ে ফেলেছে, না হয় দীনের সামাজিক বিধান গুলিকে যে গুলো মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা কোরবে সে গুলিকে ত্যাগ কোরে শুধু আত্মার উন্নতির জন্য সংসার ত্যাগ কোরে সন্ন্যাস গ্রহণ কোরেছে। উভয় অবস্থাতেই দীনের ভারসাম্য নষ্ট হোয়ে গেছে। ঐ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা কোরতে আল্লাহকে আবার প্রেরিত, নবী পাঠাতে হোয়েছে। শেষ যে জীবন-বিধান স্রষ্টা পাঠালেন তার শেষ নবীর (সা:) মাধ্যমে এটা এলো সমগ্র মানব জাতির জন্য। এর মধ্যে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইন, বিচার ও দণ্ডবিধিও যেমন রোইল, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবনের আত্মার উন্নতিরও ব্যবস্থা রোইলো। দু’টোই রোইলো- কিন্তু ভারসাম্যযুক্ত অবস্থায়। কোর’আনে স্রষ্টা এব্যাপারে পরিষ্কার কোরে বোলে দিলেন- আমি তোমাদের একটি ভারসাম্যযুক্ত জাতি কোরে সৃষ্টি কোরলাম(সূরা আল বাকারা-১৪৩)। এই আয়াতে আল্লাহ ভারসাম্য বুঝাতে যে শব্দটি ব্যবহার কোরছেন তা হোচ্ছে ওয়াসাত। আল্লামা ইউসুফ আলী এই শব্দের অনুবাদ কোরেছেন Justly balanced এবং Mohammed Marmaduke Pickthall অনুবাদ কোরেছেন Middle, অর্থাৎ মাঝখানে অবস্থিত। যে আয়াতে আল্লাহ এই জাতিকে ভারসাম্যযুক্ত কোরে তৈরী করার কথা বোলছেন তার ঠিক আগের আয়াতে তিনি সেরাতুল মোস্তাকীমের কথা বোলছেন। দীনুল কাইয়্যেমার, সেরাতুল মোস্তাকীমের ও ওয়াসাতের মূল অর্থ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রত্যেকটি শব্দের অর্থের মধ্যে সেই ভারসাম্য অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। এই ওয়াসাত শব্দ ব্যাখ্যা কোরতে যেয়ে আল্লামা ইউসুফ আলী লিখছেন- আরবী ওয়াসাত শব্দটি আক্ষরিকভাবে মধ্যবর্ত্তীতা অর্থ প্রকাশ করে (The Holy Quran- translation by Allama Abdullah Yousuf Ali/Note 143)
এই ভারসাম্য যদি নষ্ট হোয়ে যায় অর্থাৎ যে কোন একদিকে ঝুঁকে পড়ে তবে যে কোন ব্যবস্থা নষ্ট হোয়ে যায়। আধ্যাত্ববাদ এই দীনে প্রবেশ কোরে এর ভারসাম্য নষ্ট কোরে দিলো কারণ এই মতবাদ এই জীবন-ব্যবস্থার সমষ্টিগত দিকটা, যার মধ্যে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গুলি রোয়েছে সে গুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা কোরে এর শুধু ব্যক্তিগত ও আত্মার উন্নতির প্রক্রিয়াকে আকড়ে ধরাকেই ধর্মকর্ম সাবস্ত করলো। একদিকে পণ্ডিতরা ফকিহ, মুফাস্সিররা এই দীনের আইন-কানুনকে তন্ন তন্ন বিশ্লেষণ কোরতে শুরু কোরলেন, অন্য দিকে সুফীরাও সব কিছু সম্পূর্ণ ত্যাগ কোরে নিজেদের আত্মার ধোয়ামোছা পরিষ্কারের কাজে মগ্ন হোয়ে গেলেন। দু’দল দু’দিকে ঝুঁকে পড়লেন। ভারসাম্য আর রইল না, হারিয়ে গেলো। যে কাজের জন্য বিশ্বনবী (সা:) প্রেরিত হোয়েছিলেন, যে কাজের জন্য তার উম্মাহ সর্বস্ব ত্যাগ কোরে পৃথিবীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, সে কাজ উপেক্ষিত হোয়ে পরিত্যক্ত হলো। জাতি দু’ভাগ হোয়ে দু’দিকে ঝুঁকে পড়লো, উম্মতে মোহম্মদী ঐ খানেই শেষ হোয়ে গেলো জাতি হিসাবে। এই যে দু’টি ভাগ হলো, দু’টি ভাগই হলো অন্তর্মুখী (Introvert)। ফকিহ মুফাস্সির ইত্যাদিরা বই, কেতাব, কলম, কাগজ নিয়ে ঘরে ঢুকলেন, আর সুফীরা তসবীহ নিয়ে হুজরায় আর খানকায় ঢুকলেন। বিশ্বনবী (সা:) ও তার আসহাবদের অসমাপ্ত কাজ করার জন্য বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সংখ্যক মাত্র লোক রোইলেন যারা এই জাতির উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, সেরাতুল মোস্তাকীম ও দীনুল কাইয়্যেমাকে ভুললেন না। কিন্তু জাতি হিসাবে এই উম্মাহ আর উম্মতে মোহাম্মদীও রোইলো না সেরাতুল মোস্তাকীম, সহজ-সরল রাস্তায়ও রইলো না। এরই ভবিষ্যত বাণী কোরে শেষ নবী (সা:) বোলেছিলেন- আমার উম্মাহর আয়ু ৬০/৭০ বছর। কারণ তার (সা:) ওফাতের ৬০/৭০ বছর পরই এই মহা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল।

যেহেতু দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীম ও উম্মাতে ওয়াসাতা মূলতঃ একই অর্থ বহন করে অর্থাৎ ১) সহজ ও সরল, ২) মধ্যপন্থী, ৩) স্থির, নিশ্চিত, ৪) চিরস্থায়ী, শাশ্বত ও ৫) ভারসাম্যযুক্ত সুতরাং এটা পরিষ্কার হোয়ে যায় যে, এই ভারসাম্য (Balance) এই দীনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, কতখানি প্রয়োজনীয়। এক কথায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ দীনের প্রাণ এই ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে। আল্লাহ এই ভারসাম্যের কথা শুধু বোলে দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, এর গুরুত্ব বোঝাবার জন্য তিনি আরও কাজ কোরছেন। যার মাধ্যমে তিনি এই সহজ-সরল পথ (সেরাতুল মোস্তাকীম) আমাদের জন্য পাঠালেন তাকে অর্থাৎ তার শেষ নবীর (সা:) পবিত্র দেহখানিও তিনি সৃষ্টি কোরলেন এক অপূর্ব ভারসাম্য দিয়ে। ইতিহাসবেত্তাদের ও বিভিন্ন হাদীসে এই সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষের যে দৈহিক বর্ণনা পাওয়া যায়। সেগুলিকে একত্র কোরলে যে মানুষটাকে পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় তিনি বেশী লম্বাও ছিলেন না খাটোও ছিলেন না, দেহ ছিলো শক্তিমান, সুগঠিত কিন্তু মোটাও নয়, কৃশও নয়, গায়ের রং ইউরোপিয়ানদের মত ধবধবে সাদাও নয়, কালোও নয়, দুধে আলতায় মেশানো, মাথার চুল বেশী কুনচিতও নয়, একেবারে সোজাও নয়, মাঝারি ঢেউ খেলানো; এমন কি পবিত্র মুখখানাও গোলও ছিলো না, লম্বাও ছিলো না, ছিলো ডিম্বাকৃতি, যাকে পাশ্চাত্য ইতিহাসবেত্তারা বর্ণনা কোরেছেন Oval শব্দ দিয়ে। সমস্ত কিছুই মাঝারি, কোনটাই বেশী নয়। অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, তার নবীর (সা:) পবিত্র দেহের মত তার দেয়া জীবন-ব্যবস্থাও ভারসাম্যযুক্ত, কোন কিছুরই অতিরিক্ততা নেই। এর যে কোন ব্যাপারেই একটু অতিরিক্ততা কোরলেই এর ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং তা আর সেই নিখুঁত ভারসাম্যযুক্ত ইসলাম থাকবে না। এই দীনকে অতি বিশ্লেষণ কোরে পণ্ডিতরা, ফকিহ ও মুফাস্সিররা এর ভারাসাম্য যেমন নষ্ট কোরে দিলেন, সেরাতুল মোস্তাকীমের, অতি সহজ-সরলতাকে মসলা-মাসায়েলের দুর্বোধ্য জটিলতায়, তেমনি অন্যদিকে সুফী সাধকরাও এর ভারসাম্য নষ্ট কোরে এর বহির্মুখী সংগ্রামী চরিত্রকে অন্তর্মুখী কোরে নিঃসাড় কোরে দিলেন, স্থবির কোরে দিলেন। এরা জীবনের নতুন লক্ষ্য স্থাপন কোরলেন। আল্লাহ তার রসূলের (সা:) জন্য তার (সা:) জীবনের লক্ষ্য নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন। কোর’আনে বোলেছিলেন- আল্লাহ তার রসুলকে পাঠিয়েছেন পথ-প্রদর্শন ও সত্যদীন দিয়ে এই জন্য যে, তিনি পৃথিবীতে প্রচলিত অন্যান্য সমস্ত দীন গুলির উপর একে প্রতিষ্ঠা কোরবেন। তার রসূলের জীবনের লক্ষ্য এত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বোলে দিয়েও সন্তুষ্ট না হোয়ে, এযে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাবার জন্য বোললেন- (এই কথার) সাক্ষী হিসাবে স্বয়ং আল্লাহই যথেষ্ট (কোর’আন- সূরা আল ফাতাহ ২৮)। আল্লাহর ভাষা থেকে মনে হয় যেন তিনি জানতেন, তার রসূলের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের মধ্যে মতভেদ হবে। তাই যেন তিনি বোলছেন যে,
তোমাদের মধ্যে যত মতভেদই হোক, আসলে তার জীবনের লক্ষ্য কি তা আমি বোলে দিলাম ও এর সত্যতা সম্বন্ধে আমি স্বয়ং সাক্ষী রইলাম। এই সত্য উপলব্ধি কোরে বিশ্বনবী (সা:) ঘোষণা কোরলেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি (আল্লাহ কর্তৃক) যে, আমি যেন সমস্ত মানব সমাজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাই যে পর্য্যন্ত না তারা আল্লাহকে একমাত্র প্রভু (এলাহ) বোলে এবং মোহাম্মদকে তার প্রেরিত বোলে স্বীকার করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত প্রদান করে১ । এখানে আমি ‘সশস্ত্র সংগ্রাম’ অনুবাদ কোরেছি এইজন্য যে, বিশ্বনবী (সা:) শব্দ ব্যবহার কোরেছেন কিতাল, যার অর্থ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ। আল্লাহ ও তার রসূলের অকাট্য বাণী থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে রসুলাল্লাহর (সা:) জীবনের উদ্দেশ্য কী ছিলো। এখানে একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় আবার এসে যাচ্ছে। তা হলো- যে জীবনের লক্ষ্য এই বিশাল পৃথিবীতে এক আদর্শ, এক জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। সে জীবন অতি অবশ্যই হবে বহির্মুখী (Extrovert), সে জীবনের দৃষ্টি হবে বহির্মুখী, এবং হোয়েছেও তাই। তার সম্পূর্ণ জীবনটাই বহির্মুখী। শুধু তাই নয়, তিনি যে জাতিটি সৃষ্টি কোরলেন তারও জীবন হলো বহির্মুখী। স্বভাবতঃই, কারণ আল্লাহ তার নবীর উপর যে কাজের ভার চাপিয়ে দিলেন এবং নবীর (সা:) পর যা তার উম্মাহর উপর চাপলো সে কাজটাই তো বহির্মুখী, সমস্ত পৃথিবীর উপর এই দীন স্থাপন করা। কাজেই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, রসূলের (সা:) ও তার সৃষ্ট উম্মাহর চরিত্রকে শুধু বহির্মুখী (Extrovert) বলা যথেষ্ট হয় না, বোলতে হয় বিস্ফোরণমুখী (Explosive)। বিশ্ব নবীর (সা:) জীবিত কালে প্রথম বিস্ফোরণ সমস্ত আরবকে আচ্ছন্ন কোরে দিলো এবং তার (সা:) ওফাতের পর তার উম্মাহর বিস্ফোরণ আটলান্টিক মহাসাগরের তীর থেকে চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত আচ্ছাদিত কোরে দিল।

বোলছিলাম, এই সুফী সাধকরা ইসলামের ভারসাম্য নষ্ট কোরে দিলেন। কেমন কোরে সেইটা এখন বিবেচ্য। আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) জাতির সামনে যে লক্ষ্য নির্দিষ্ট কোরে দিয়েছিলেন এই আধ্যাত্ম সাধকরা সেটা বদলিয়ে নতুন লক্ষ্যস্থাপন কোরলেন। সেটা হলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাধনা কোরে, আত্মাকে উন্নত কোরে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, এবং তা কোরতে ঐ বিশেষ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপই হলো লোক সান্নিধ্য বর্জন কোরে নির্জনতা বেছে নেয়া। অর্থাৎ রসুলাল্লাহ (সা:) তার জাতির, উম্মাহর যে বহির্মুখী সংগ্রামী চরিত্র সৃষ্টি কোরেছিলেন তার ঠিক বিপরীতমুখী- অন্তর্মুখী। অন্যান্য ধর্মের আধ্যাত্মিক সাধকরা তাদের সাধনার প্রক্রিয়ার মাল-মশলা তাদের যার যার ধর্মগ্রন্থ গুলি থেকে সংগ্রহ কোরেছিলেন। এ ধর্মের সুফী-সাধকরাও কিছু কিছু মাল-মশলা কোর’আন-হাদীস থেকে খুঁজে বের কোরলেন। খুব বেশী কিছু পেলেন না, কারণ এ জীবনব্যবস্থা সংগ্রামী, নির্জনে বোসে সাধনার কোন ব্যবস্থা এতে নেই। কিন্তু যেহেতু এ দীন ভারসাম্যযুক্ত, দেহ ও আত্মার উভয়ের উন্নতির ব্যবস্থা এতে আছে, কাজেই আত্মার দিকের যেটুকু আছে ঐ টুকুকেই তারা আলাদা কোরে নিয়ে নিলেন এবং তাতে যোগ কোরলেন কিছু প্রক্রিয়া, যা তারা অন্যান্য ধর্মের প্রক্রিয়া থেকে নিলেন ও কিছু নিজেরা তৈরী কোরে নিলেন। ভারসাম্য সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হোয়ে গেলো। এই দীনে মানুষের আত্মার উন্নতির যে অংশটুকু আছে তাকে যদি মা’রেফাত বোলে ধোরে নেওয়া যায় তবে এ দীন হলো শরিয়াহ ও মা’রেফাতের মিশ্রণে একটি পূর্ণ ব্যবস্থা। মানুষ এক পায়ে হাটতে পারে না, তাকে দু’পায়ে ভারসাম্য কোরতে হয়। দীনেরও দু’টি পা। এক পা শরিয়াহ অন্য পা মারেফাত। এই দুই পায়ের সহযোগিতায় একটা মানুষ ভারসাম্য রেখে হাটতে পারে। একটা জাতির বেলায়ও তাই। ঐ দুই পায়ের একটা বাদ দিলে বা নিষ্ক্রিয় হোয়ে গেলে ঐ জাতিও আর হাটতে পারবে না, তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছতে পারবে না। সুফী- সাধকরা এই দীনের মারেফাতের পা’টাকে আঁকড়ে ধোরলেন। অবশ্য শরিয়াহর পায়ের যেটুকু ব্যক্তিগত পর্য্যায়ের সেটুকু আংশিকভাবে গ্রহণ কোরলেন। কিন্তু এ দীনের শরিয়াহ প্রধানতই জাতীয়; রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও দণ্ডবিধিই এর প্রধান ভাগ। এই প্রধান অংশটুকুকে বাদ দিয়ে শুধু ব্যক্তিগত শরিয়াহ ও আত্মার উন্নতির অংশটুকু গ্রহণ কোরে নির্জনবাসী হোয়ে সুফীরা এই দীনের একটা পা কেটে ফেললেন। ফলে এ দীন স্থবির হোয়ে গেলো, চলার শক্তি হারিয়ে ফেললো। যে জিনিসের গতি নেই সেটা মৃত, গতিই প্রাণ। এক পা হারিয়ে এই জাতি চলার শক্তি হারালো তার পর ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। যে জাতি শরিয়াহ আর মারেফাতের দু’পায়ে হেঁটে আরব থেকে বের হোয়ে আটলান্টিকের তীর আর চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত গেলো, সে জাতি ফকিহ, মুফাসসির আর সুফীদের কাজের ফলে ভারসাম্য হারিয়ে, চলার শক্তি হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।

Leave a Reply