You are currently viewing উম্মতে মুহাম্মদীর অবিশ্বাস্য জয় রথের রহস্য
জিহাদ আত্মরক্ষা মূলক নয়

উম্মতে মুহাম্মদীর অবিশ্বাস্য জয় রথের রহস্য

উম্মতে মুহাম্মদীর অবিশ্বাস্য জয় রথের রহস্য

মানব জাতির নিখুত আদর্শ, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ রসূলের (সা:) অনুসারী এই মহাজাতির (উম্মতে মুহাম্মদী) এই যে চরম আত্মত্যাগ এর একমাত্র কারণ সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি, ইসলাম স্থাপন, ইবলিসের যে চ্যালেঞ্জ আল্লাহ গ্রহণ কোরেছেন তাতে আল্লাহকে জয়ী করা। আল্লাহর জন্য ও মানুষের কল্যাণের জন্য উভয় দিক থেকেই এর চেয়ে বড়, এর চেয়ে মহান কাজ, মহান আমল আর সম্ভব নয়। তাই সর্বজ্ঞানী সর্বশেধষ্ঠ বিচারক স্রষ্টা এই সর্বত্যাগী সংগ্রামীদের জন্য রেখেছেন তার সর্বশ্রেষ্ট পুরস্কার- বিনা বিচারে দেহান্তরের সঙ্গে সঙ্গে সর্বোত্তম জান্নাত আর রেখেছেন এ উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান তাদের মৃত পর্য্যন্ত বলার উপর নিষেধাজ্ঞা। অথচ সভ্যতার দাবীদার পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবাদী এবং শিক্ষিতরা এই মহান ব্রতকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, তলোয়ারের জোরে
ধর্মান্তর করা বোলে অভিহিত কোরেছেন। শুধু তাই নয় তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত প্রাচ্যের, এমন কি এই জাতির অন্তর্ভুক্ত অনেক বুদ্ধিজীবীও তাদের প্রভুদের সুরে সুর মিলিয়েছেন। তবে সবাই নয়। এ দীনের, জীবন ব্যবস্থার বিরোধী পাশ্চাত্যের পণ্ডিতদের প্রত্যেকেই যে অন্ধ তা নয়। কেউ কেউ আছেন ও ছিলেন যারা সত্য আংশিকভাবে হলেও দেখতে পেয়েছেন এবং স্বীকার কোরেছেন। যেমন De Lacy OLeary লিখেছেন History makes it clear, however, that the legend of the fanatical Muslims sweeping throuh the world and forcing Islam at the piont of the sword upon conquered races is one of the most fantastically absurd myths that historians have ever repeated. অর্থাৎ- যাহোক, ইতিহাসই একথা পরিষ্কার কোরে দেখায় যে, ইতিহাসবেত্তারা যত কিছু পুনরাবৃত্তি কোরেছেন তার মধ্যে পৃথিবীতে দ্রুত ধাবমান ধর্মান্ধ গোড়া মুসলিম তলোয়ারের জোরে অন্য জাতি গুলির উপর ইসলাম চাপিয়ে দিচ্ছে, এই উপকথা অত্যন্ত উদ্ভট কল্পনা ও হাস্যকর মিথ্যার অন্যতম (Islam at the cross Roads – D Lacy O Leary) । এখানে লক্ষ্য কোরুন লেখক Repeated, পুনরাবৃত্তি শব্দটা ব্যবহার কোরেছেন অর্থাৎ এই উদ্ভট কল্পনা ও হাস্যকর মিথ্যাটি যে তথাকথিত ইতিহাসবেত্তারা বারবার উল্লেখ কোরেছেন, লিখেছেন সে সম্বন্ধে তিনি সচেতন।

এ গেলো তলোয়ারের জোরে ইসলাম চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপার। তারপর কেন এ সংগ্রাম, এ সম্বদ্ধে ইতিহাসবেত্তা Lothrop লিখেছেন- Forgetting the chronic rivalries and blood feuds which had consumed their energies is internecine strife, and welded into a glowing unity by the fire of their new found faith, the Arabs poured forth from their deserts to conquer the earth for Allah the One true God (The New World of Islam- Lothrop) অর্থাৎ “যে পুরাতন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পুরুষানুক্রমিক রক্তাক্ত বিবাদের দরুণ ও আত্মকলহে তাদের শক্তি নিঃশেষ হচ্ছিল তা ভুলে যেয়ে এবং নতুন বিশ্বাসের আগুনে উজ্জল ঐক্যে দৃঢ় সংবদ্ধ হোয়ে আরবরা তাদের মরুভূমি থেকে বানের ঢলের মত নির্গত হলো- এক এবং সত্য আল্লাহর জন্য পৃথিবী জয় কোরতে।”

তারপর এ দীন জীবন-বিধান যে কোনও জাতি বা গোত্র বা ঐ ধরনের কোনও কিছুর মধ্যে সীমিত থাকার জন্য নয়, এ দীনকে অধ্যয়ন করার পর এ কথাও অনুধাবন কোরতে পেরেছেন অনেকেই। যেমন বিশ্বনবী (সা:) সম্বন্ধে লিখতে চেয়ে Joseped I Nunan লিখেছেনঃ His creed…. necessarily connotes the existance of Universal empire. অর্থাৎ তাঁর (মোহাম্মদ) ধর্ম অবশ্যই একটি বিশ্ব সাম্রাজ্যের অর্থ বহন করেI(slam and European Civilization – Joseped I Nunan)।

মনে রাখতে হবে যে খ্রীস্টান Nunan এ কথা মহানবী (সা:) বা ইসলামের প্রশংসায় বোলছেন না, বোলছেন নিন্দা কোরে। অর্থাৎ বিশ্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মত নিন্দনীয় কাজ হোচ্ছে মোহাম্মদের (সা:) এবং তার ধর্মের। এটা যে Nunan এর দৃষ্টিতে সাম্রাজ্যবাদ তার কারণ পৃথিবীময় একটা আদর্শ, একটি সংবিধান প্রতিষ্ঠা তাদের আকীদায় (Concept) এ আসেনা। আমার বক্তব্য হোচ্ছে, ঐ সব খ্রীস্টান চিন্তাবিদরা যে সত্য এই দীনে দেখতে পেয়েছেন অর্থাৎ
ক) তলোয়ারের জোরে মানুষকে এ দীন গ্রহণ কোরতে বাধ্য করা হয় নি।
খ) এই উম্মাহ একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম কোরেছে এবং
গ) ঐ আদর্শটি সমস্ত পৃথিবীর মানব জাতির জন্য।
এই সত্য আজ এই জাতির সমস্ত রকম কাজ, চিন্তা এবং আকীদার বাইরে। ওগুলো কোনোটার মধ্যেই আজ এই জাতি নেই। আছে হাস্যকর খুটিনাটির মধ্যে জড়িয়ে, স্থবির হোয়ে মাকড়সার জালে আবদ্ধ মাছির মত। দীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বিশ্বনবীর (সা:) ও তার আসহাবদের (রা:) প্রকৃত সুন্নাহ থেকে যে তারা লক্ষ কোটি মাইল দূরে, সে বোধ পর্য্যন্ত হারিয়ে গেছে।

আমরা ইতিহাসে পাই, এই প্রকৃত উম্মতে মুহাম্মদী, মো’মেন ও মুসলিম উম্মাহ শেষ নবীর (সা:) ওফাতের পর থেকে তার আরদ্ধ কাজ চালিয়ে গেলো এবং পৃথিবীর এক বিরাট এলাকা উম্মতে মুহাম্মদীর অধীনে এলো, মানব জাতির একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে শেষ জীবন ব্যবস্থার সুফল উপহার দিলো। এ বিজয়কে অমুসলিম ইতিহাসবেত্তারা সাম্রাজ্যবাদী বিজয় এবং মুসলিম শাসনাধীন এলাকাকে ইসলামী সাম্রাজ্য বোলে অভিহিত কোরেছেন, এমনকি নিজস্ব স্বত্তাহীন মুসলিম ইতিহাসবেত্তারাও তাদের নকল কোরে একে “মুসলিম সাম্রাজ্য, ইসলামী সাম্রাজ্য” ইত্যাদি বোলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বোঝেন নি যে সামরিক শক্তিবলে দখল কোরলেও ওটা ‘সাম্রাজ্য’ ছিলো না, ছিলো একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সাম্রাজ্যবাদ যে শোষণ ও অন্যায় করে, ওটা ছিলো তার ঠিক উল্টো, শোষণ ও অন্যায় বন্ধ কোরে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা। ইতিহাসকে সত্যান্বেষী মন দিয়ে পড়লে ঐ ইতিহাসবেত্তারা দেখতে পেতেন যে যারা আল্লাহর দেয়া দীন, জীবন-ব্যাবস্থাকে প্রতিষ্ঠা কোরতে সশস্ত্র বাধা দেয়নি তাদের কোন সম্পদ মুসলিম বাহিনী হস্তগত করে নি, তাদের কোন শোষণ করে নি। প্রত্যেক মুসলিমের উপর যে কর ধরা হতো অমুসলিমের উপরও সেই কর ধরা হতো। কেবলমাত্র যারা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হোলে অস্ত্র ধোরতে রাজী ছিলো না তাদের রক্ষার জন্য তাদের উপর একটা সামান্য অতিরিক্ত কর ধরা হতো। তাও দুর্বল, বৃদ্ধ, স্ত্রীলোক, শিশু এমন কি রোগাক্রান্ত লোকদের বাদ দিয়ে শুধু যুদ্ধক্ষম, কিন্তু অস্ত্র ধোরতে রাজী নয়, – এমন লোকদের উপর ঐ কর ধরা হতো- যার নাম জিজিয়া। অমুসলিমদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হোলে মুসলিমদের সাথে নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র ধোরতে রাজী ছিলো তাদের উপর ঐ জিজিয়া ধরা হতো না এর চেয়ে ন্যায্য নীতি আর কি হোতে পারে? এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে যারা সাম্রাজ্যবাদ বোলে নাম দিয়েছে তারাই অস্ত্রের বলে সমস্ত প্রাচ্য অধিকার কোরে তাকে নিঃশেষে শোষণ কোরেছে, তা আজ ইতিহাস।

এইখানে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে কোরছি। ইসলামের এই যে উদ্দেশ্য পুরণের নীতি- অর্থাৎ পার্থিব জীবনের সব কিছু আল্লাহর রাস্তায় কোরবান কোরে দিয়ে শেষে প্রাণটুকু পর্য্যন্ত তাকে নিবেদন কোরে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে জয়ী হোয়ে বিজিত জাতির অন্যায় জুলুমের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ফেলে দিয়ে সেখানে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, অথচ বিজিত জাতির মানুষ গুলির ব্যক্তিগত জীবনে যে কোন ধর্ম পালন করার পূর্ণ স্বাধীনতা দান- এই নীতি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, ইসলাম অনেক বেশী অগ্রাধিকার দেয় জাতীয় জীবনকে, আইনকে, শাসনতন্ত্রকে, ব্যক্তি জীবনকে নয়। ইসলামের উদ্দেশ্য হোলো শাসন ব্যবস্থা দখল কোরে সেখানে আল্লাহর দেয়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যেটা করা হোলে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যক্তি যদি তার বক্তিগত জীবনে ভুল পথ আঁকড়িয়ে থাকে তবে সে তার ফল ভোগ কোরবে ঐ ব্যক্তিগত ভাবে, জাতীয় জীবনে নয়। জাতীয় জীবন যদি ভুল আইন কানুনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তবে ব্যক্তি জীবন সৎ কাজের উপর থাকলেও তা স্থায়ী হবে না। বৃহত্তর জাতীয় জীবনের চাপে ও প্রভাবে তা বিলীন হোয়ে যাবে। যেমন বর্ত্তমান পৃথিবীতে লক্ষ কোটি মানুষ অতি নিষ্ঠার সাথে ধর্মকর্ম, সৎ কাজ, কোরলেও পৃথিবী অন্যায়, অবিচারে, রক্তপাতে পূর্ণ হোয়ে আছে এবং প্রতিদিন ঐসব অতি দ্রুত হারে বাড়ছে, যেকোন পরিসংখ্যানই একথা বোলে দেবে। ব্যক্তিগত ভাবে সাধু হোয়ে থাকা ও জাতীয় জীবনকে ভুল আইন কানুন ইত্যাদির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে মানব জাতি আজ শুধু প্রচণ্ড অশান্তিতেই ভুগছে না, প্রলয়ংকরী আনবিক যুদ্ধে ধ্বংস হোয়ে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সর্বাত্মক সংগ্রাম (জেহাদ ও কেতাল) কোরে অন্য জাতি গুলির রাষ্ট্র ব্যবস্থা অধিকার কোরে সেখানে আল্লাহর দেয়া শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরেও বক্তি ধর্মজীবনকে তার স্বাধীন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া, শুধু ছেড়ে দেয়া নয়, তাদের ধর্ম গুলিকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারীভাবে গ্রহণ করা প্রমাণ করে যে, দীন ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হোচ্ছে জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত নয়। তা না হোলে যুদ্ধে জয়ী হোয়ে তারা পরাজিত জতি গুলিকে তাদের ধর্ম ত্যাগ কোরে শেষ ইসলামকে গ্রহণ করতে বাধ্য কোরতেন এবং তা করলে আল্লাহর নির্দেশ ‘ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই’ অমান্য করা হতো এবং শত্রুদের “তলোয়ারের জোরে মুসলিমরা ধর্মান্তরিত কোরেছে” এ অপবাদ সত্য হতো।

সংক্ষেপে বোললে বোলতে হয় রসুলাল্লাহর (সা:) আসহাবরা (রা:) অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদী হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কোরেছিলেন যে, তাদের অস্তিত্বের অর্থই হোলো তাদের নেতা বিশ্বনবী মুহাম্মদের (সা:) সুন্নাহ অনুসরণ করা, অর্থাৎ তিনি সারা জীবনভর যে কাজটি কোরেছেন সেই কাজ চালিয়ে যাওয়া। সে কাজটি হোচ্ছে, যেহেতু তিনি (সা:) সমস্ত পৃথিবীর জন্য প্রেরিত হোয়েছেন কাজেই পৃথিবীময় এই শেষ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করা। সে সংগ্রাম মানুষকে বুঝিয়ে, কথা বোলে, লিখে এবং সশস্ত্র ভাবে, সর্বতোভাবে। মহানবীর (সা:) জীবিতকালে তারা (উম্মতে মুহাম্মদী) তাদের পার্থিব যা কিছু ছিলো সব দিয়ে এবং শেষে প্রাণটুকু দিয়ে তাকে তার দায়িত্ব পুরণে সাহায্য কোরেছেন, তার প্রতি কাজে, প্রতি প্রচেষ্টায় তার সাথে থেকে তাকে আপ্রাণ সাহায্য কোরেছেন। তার প্রতিটি সুখ-দুঃখের তারা অংশীদার হোয়েছেন। তারপর যখন তিনি তাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন তখন তারা তাদের নেতার কাজে যেন কোন বিরতি না হয় সেজন্য সেই সংগ্রাম পূর্ণভাবে চালু রাখলেন। সেই কাজের বিরাটত্ব, সংকট, বিপদ তাদের এক মুহূর্ত্তের জন্য দ্বিধাগ্রস্ত কোরতে পারলো না। কারণ তারা তাদের নেতার (সা:) পবিত্র মুখে শুনেছিলেন এই বলতে যে, যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে আমাদের কেউ নয়। তারা (উম্মতে মুহাম্মদী) বুঝেছিলেন ‘তার (সা:) বা তাদের কেউ নয়’ অর্থ উম্মতে মুহাম্মদীই নয় এবং তার সুন্নাহ হলো পৃথিবীতে এই জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম- সশস্ত্র সংগ্রাম। বিশ্বনবীর (সা:) আসহাব তাদের নিজেদের উম্মতে মুহাম্মদী হবার অর্থ কী বুঝেছিলেন এবং ঐ উম্মাহ কিসের প্রভাবে একটা অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত জাতি থেকে এক রাতে বিশ্বজয়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হোয়েছিলেন তা দেখাতে ইতিহাস থেকে দু’একটা ঘটনা পেশ কোরছি।

উম্মতে মুহাম্মদীর মুজাহিদ বাহিনী শেষ ইসলাম পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা কোরতে কোরতে আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে যখন যেয়ে পৌঁছলেন তখন তারা দেখলেন তাদের সম্মুখে মহাসমুদ্র, আর সামনে এগোবার পথ নেই। তখন নেতার ও উম্মাহর উদ্দেশ্য সাধনে নিবেদিত প্রাণ সেনাপতি উকবা বিন না’ফে আটলান্টিক মহাসমুদ্রে তার ঘোড়া নামিয়ে দিলেন এবং যতদূর পর্য্যন্ত ঘোড়ার পায়ের নীচে মাটি পাওয়া গেলো ততদূর এগিয়ে গেলেন এবং তারপর আসমানের দিকে দু’হাত তুলে বোললেন- ইয়া আল্লাহ! এই মহাসমুদ্র বাধা না দিলে আমরা তোমার রাস্তায় আরও সম্মুখে অগ্রসর হোতাম। আরও দেখুন পশ্চিমদিকে মুজাহিদ বাহিনীর সেনাপতি আমর (রা:) মিশরের আর্চ বিশপের কাছে যে প্রতিনিধি দল পাঠালেন তার দলপতি নিগ্রো উবায়দা (রা:) আর্চ বিশপকে কী বোললেন। একজন নিগ্রোর সাথে ঘৃণাভরে আর্চ বিশপ প্রথমে কথাই বোলতে চান নি। পরে যেহেতু সেনাপতি আমর (রা:) ঐ নিগ্রোকেই দলপতি কোরে পাঠিয়েছেন কাজেই বাধ্য হোয়ে তার সাথে কথা বোলতে হলো। উবায়দা (রা:) আর্চ বিশপকে বোললেন, “আমাদের বাহিনীতে আমার মত এক হাজার কালো লোক আছে। আমরা শত শত্রু বাহিনীর সাথে একসাথে যুদ্ধ কোরতে তৈরী আছি। আমরা বেঁচেই আছি শুধু আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য। আমরা ধন দৌলতের কোন পরোয়া করি না। আমাদের শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানো আর পরার কাপড়ের বেশী আর কিছুই চাই না। এই পৃথিবীর জীবনের আমাদের কাছে কোন দাম নেই। এর পরের জীবনই আমাদের কাছে সব।” এ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে তো আছেই যারা আমাদের কোন কিছুই ভালো দেখেন না তাদের ইতিহাসবেত্তারাও এই ঘটনাকে সত্য বোলে গ্রহণ কোরেছেন(দেখুন S.S.Leeder Gi Veiled Mysteries of Egypt ৩৩২ পৃষ্ঠা থেকে ৩৩৫ পৃষ্ঠায়)। উম্মতে মোহাম্মদীর অবিশ্বাস্য বিজয়ের মুলে ছিলো ঐ আকীদা, ঐ দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে, এবং ঐ আকীদাই তাদের পরিণত কোরেছিল এক দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা, অপরাজেয় জাতিতে, যাদের নাম শুনলে অমুসলিমের আত্মা পর্য্যন্ত কেঁপে উঠতো। বিশ্বনবীর (সা:) উম্মাহ এবং প্রতিনিধি হিসাবে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই শেষ ইসলামকে মানুষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগত জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জাতির মধ্যে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠাই হোচ্ছে শেষ ইসলামের সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম লক্ষ্য এবং রসুলাল্লাহর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ, এ কথা আশাকরি উপস্থাপিত কোরতে পেরেছি।

Leave a Reply