You are currently viewing উম্মতে মুহাম্মাদীর উল্টো পথে যাত্রা
উম্মতে মুহাম্মাদীর উল্টো পথে যাত্রা

উম্মতে মুহাম্মাদীর উল্টো পথে যাত্রা

উম্মতে মুহাম্মাদীর উল্টো পথে যাত্রা

যেহেতু সুফীরা মানব জীবনের একটি দিককে আকড়ে ধোরলেন সুতরাং তারা ভারসাম্যহীন হোয়ে গেলেন। যে ভারসাম্যের উপর আল্লাহ এই শেষ ইসলামকে প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন সেই ভারসাম্য, সেরাতুল মোস্তাকীম সুফীরা নষ্ট কোরে দিয়ে এক পাশে, আত্মার পাশে ঝুঁকে পড়লেন। দীন একপা ওয়ালা মানুষের মত চলার শক্তি হারিয়ে ফেললো। নিজেদের কাজকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য তারা যুক্তি দেখালেন- আমরা তো জেহাদ ছাড়িনি। আমরা জেহাদে আকবর কোরছি, কারণ নফসের সঙ্গে জেহাদ হোচ্ছে জেহাদে আকবর বড় জেহাদ। তাদের এই যুক্তি যে অসার রসূলের (সা:) সুন্নত থেকে কাপুরুষের মত পলায়নের পক্ষে ভুল হাদীসের উল্লেখ ও সরাসরি কোর’আনের বিরোধিতা, সম্মুখে একটি আলাদা পরিচ্ছদে তা দেখাবো। আল্লাহ যে জন্য এই জেহাদ কোরতে আদেশ কোরছেন তা হলো যে জন্য তিনি তার রসুল পাঠিয়েছেন- অর্থাৎ পৃথিবীময় আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থা, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। এই জেহাদ যারা কোরবে তাদের নিজেদের চরিত্র গঠন কোরতে গেলে তাদের ভেতরের শয়তানের বিরুদ্ধেও তাদের জেহাদ কোরতে হবে। তাই বাইরের জেহাদ হবে প্রচার কোরে, মানুষকে যুক্তির মাধ্যমে বুঝিয়ে, বক্তৃতা কোরে, লিখে এবং অস্ত্র নিয়ে। ভেতরের জেহাদ হবে শয়তানের প্ররোচনার বিরুদ্ধে, লোভ, অহংকার, হিংসা, ইর্ষা, ক্রোধ ও কামের বিরুদ্ধে। এই দু’রকম জেহাদের যে কোনটাকে বাদ দিলেই সেই ভারসাম্য নষ্ট হোয়ে যাবে এবং সেই এক পা ওয়ালা মানুষের মত জাতিও চলার শক্তি হারিয়ে স্থবির হোয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, যে উদ্দেশ্যে ভেতরের জেহাদ সেই উদ্দেশ্যই অপূর্ণ থেকে যাবে। একটি মানুষ হোক আর একটি জাতিই হোক, গতিই (Dynamism) প্রাণ, যারই গতি রুদ্ধ হোয়ে গেলো সেটাই মৃত। সুফীদের কাজের ফলে উম্মতে মুহাম্মাদী এক পা হারিয়ে স্থবির, গতিহীন অর্থাৎ মৃত হোয়ে গেলো। যে জন্য বিশ্বনবী (সা:) বোলেছিলেন আমার জাতির আয়ু ৬০/৭০ বছর।

কিন্তু এইই সব নয়। অতি বিশ্লেষণকারী পণ্ডিতদেরও এই সুফীদের কাজের সম্মিলিত একটি ফল হলো: যা ভয়ংকর, যা উম্মতে মুহাম্মাদীকে, এই উম্মাহকে একেবারে বিপরীতমুখী কোরে দিয়েছে। তা হলো এই যে, এই জাতিকে অন্তর্মুখী কোরে দিয়েছে। আমি পেছনে বোলে এসেছি যে, বিশ্বনবী (সা:) যে জাতিটি (উম্মতে মুহাম্মাদী) সৃষ্টি কোরলেন সেটার মূল চরিত্র হলো শুধু বহির্মুখী নয় একেবারে বিস্ফোরণমুখী (Explosive)। উম্মতে মুম্মাদীর ইতিহাস দেখুন। শত্রু মিত্র কেউই এ ইতিহাস সম্বন্ধে দ্বিমত পোষণ করে না যে, বিশ্বনবীর (সা:) নেতৃত্বে উম্মতে মুহাম্মাদী একটি বোমের মত ফেটেছিলো এবং তেইশ বছরে সমস্ত আরব উপদ্বীপকে আচ্ছন্ন কোরে ফেলেছিলো। তারপর বিশ্বনবীর (সা:) ওফাতের পর তার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্তির পথে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামে, জেহাদে, এই উম্মতে মুহাম্মাদী আরেকবার বিস্ফোরিত হলো মহা শক্তিশালী এটম বোমের মত এবং এক বিস্ফোরণে মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে আটলান্টিকের তীর থেকে ভারত মহাসাগরের তীর পর্য্যন্ত আচ্ছন্ন কোরে ফেললো। এরপর আর কি কোন সন্দেহ থাকতে পারে যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর মূল চরিত্র হোচ্ছে জেহাদ এবং বিস্ফোরণমুখী (Explosive)? এবং ঐ চরিত্র সৃষ্টি কোরেছিলেন স্বয়ং আল্লাহর রসুল। এই বর্হিমুখী (Explosive) এবং বিস্ফোরণমুখী (Extrovert) চরিত্র তিনি (সা:) সৃষ্টি কোরেছিলেন অবশ্যই স্বয়ং আল্লাহর নির্দেশেই, এতে তো আর সন্দেহের কারণ থাকতে পারে না। সাধারণ জ্ঞানেও বোঝা যায় যে, যে নবীর (সা:) উপর আল্লাহর দায়িত্ব দিলেন এই শেষ জীবন ব্যবস্থাকে, এই শেষ সংবিধানকে সমস্ত মানব জাতির উপর প্রতিষ্ঠা করার এবং যে দায়িত্ব নবীর পর তার উম্মাহর উপর বর্তালো সে উম্মাহর চরিত্র, দৃষ্টিভঙ্গী, আকীদা অবশ্যই বহির্মুখী হোতে হবে, নইলে ঐ কাজের একবিন্দু অগ্রগতি হবে না। কোনভাবে যদি এই জাতিকে তার চরিত্র বদলিয়ে অন্তর্মুখী করা যায় তবে ঐ জাতি শেষ হোয়ে গেলো। এ সম্বন্ধে এখানে একটা হাদীস পেশ কোরছি। একবার মহানবী (সা:) সাহাবাদের সঙ্গে নিয়ে জেহাদে যাচ্ছিলেন। পথে এমন একটা স্থানে বিশ্রামের জন্য যাত্রা বিরতি কোরলেন যে জায়গাটা নির্জন, ছায়া ঘেরা এবং একটি পানির ঝরণা আছে। একজন সাহাবা বোললেন- আহ্! আমি যদি এই সুন্দর নির্জন জায়গাটায় একা থেকে যেতে পারতাম। অবশ্যই তিনি ওখানে থেকে আল্লাহর এবাদতের কথা বোঝালেন, কারণ এ নির্জনে বোসে তো আর ঘর-সংসার বা ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বোঝান নি। আল্লাহর রসুল (সা:) ঐ কথা শুনে বোললেন- আমি ইহুদী বা খ্রীস্টান ধর্ম নিয়ে আসিনি, আমাদের এ পথ নয়। যার হাতে মোহাম্মদের জীবন তার কসম, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের জন্য শুধু সকাল বা বিকাল বেলার (একবেলা) পথ চলা সমস্ত পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়ে এবং ৬০ বছরের নামাযের চেয়ে বেশী(হাদীস- আবু ওমামা থেকে আহমদ, মেশকাত)। তার কথার অর্থ হলো পূর্ববর্তী নবীরা তাদের যার যার জাতিও সমাজের মধ্যে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা কোরতে প্রেরিত হোয়েছিলেন। তাদের স্থান ও পরিধি ছিলো সীমিত, ছোট। কিন্তু শেষ নবী (সা:) প্রেরিত হোয়েছেন বিশাল পৃথিবীতে আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠিত কোরতে, তার নিজের এবং তার উম্মাহর কোন অবকাশ, কোন উপায়ই নেই তাদের নিজেদের কোথাও সীমিত, অবরুদ্ধ কোরে ফেলতে। তাদের কার্যক্ষেত্র এই বিশাল পৃথিবী এবং সংগ্রাম অন্য নবীদের এবং তাদের উম্মাহর তুলনায় বহু গুণ বৃহত্তর ও কঠিন। তাই এই শেষ উম্মাহকে কোথাও কোন বন্ধনে সীমিত কোরলে তা হবে এই উম্মাহকে হত্যা কোরে ফেলার মত। তাই বিশ্বনবী (সা:) তার সাহাবার কথা শুনে তার প্রতিবাদ কোরে তার দৃষ্টিভঙ্গির, আকীদার সংশোধন কোরে দিলেন।

মহা পণ্ডিতরা, ফকিহ, মুফাসসিররা আল্লাহ ও রসূলের (সা:) সাবধান বাণী অগ্রাহ্য কোরে চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে এ জাতিকে তো আগেই দীনুল-
কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীম, সহজ-সরল দীন থেকে বিচ্যুত কোরে, বহু মযহাব ও ফেরকায় বিভক্ত কোরে এর ঐক্য ও শক্তি ভেঙ্গেচুরে দিয়েছিলেন, এবার সুফীরা এসে এর দিকনির্দেশনাই একেবারে উল্টো দিকে কোরে দিলেন। যে উম্মাহকে আল্লাহর রসুল (সা:) হাতে তলোয়ার ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে পৃথিবীতে বের কোরে দিয়েছিলেন সুফীরা সে উম্মাহর হাত থেকে তলোয়ার কেড়ে নিয়ে হাতে তসবিহ ধরিয়ে দিয়ে পেছন টেনে ঘরে, খানকায় বসিয়ে দিলেন। লক্ষ শত্রু বিশ্বনবীর (সা:) জীবনের ব্রতকে যে ক্ষতি কোরতে পারে নি পণ্ডিত ও ভারসাম্যহীন সুফীরা তার চেয়ে বহু গুণ বেশী ক্ষতি কোরলেন। মহানবী (সা:) তার উম্মাহকে যেদিকে চালনা কোরলেন সুফীরা চালনা করলেন তার উল্টো দিকে। মহানবী (সা:) চালনা কোরে ছিলেন বাইরের দিকে সুফীরা, দরবেশরা চালনা কোরলেন ভেতরের দিকে। রসুলাল্লাহ (সা:) এ জাতিকে চালনা কোরেছিলেন অন্যায়ের, অবিচারের আর অশান্তির সঙ্গে সংঘর্ষের দিকে, এরা চালনা কোরলেন অন্যায়ের (যুলম) কাছে আত্মসমর্পণের দিকে, পালানোর দিক। এই জাতির পণ্ডিতদের আলেমদের কাজের ফলে জাতি ঐক্যহীন, খণ্ড-বিখণ্ড একটি শক্তিহীন পদার্থে পরিণত হলো, তারপর সুফীরা এসে একে এর চলার দিক পরিবর্ত্তন কোরে উল্টো দিকে পরিচালিত কোরলেন। এর পর এ জাতির আর রইলো কি? কিছুই না। এই কথাই বিশ্বনবী (সা:) বলেছেন- আমার উম্মাহর আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর। ইতিহাস দেখুন, যখন রসুল (সা:) ঐ কথা বোলেছিলেন তার মোটামুটি ৬০/৭০ বছর পরই এই উম্মাহ পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম জাতি হিসাবে ছেড়ে দেয়। ঐ সময়েই জাতি হিসাবে উম্মতে মুহাম্মাদীর মৃত্যু হয়, মহানবীর (সা:) ভবিষ্যতবাণী সঠিক হয়।

এইখানে মনে আসে রসুলাল্লাহর (সা:) আরেকটি হাদীস। একদিন তিনি সাহাবাদের সামনে একটি সোজা লাইন টানলেন , তারপর বোললেন- এই হোচ্ছে আল্লাহর রাস্তা, সেরাতুল মোস্তাকীম। এরপর তিনি ঐ সোজা লাইন থেকে ডানদিকে কতক গুলি ও বা দিকে কতক গুলি লাইন টেনে বোললেন- এই গুলি ঐ রাস্তা যে রাস্তায় যাবার জন্য শয়তান ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি (সা:) কোর’আন থেকে পড়লেন নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার সহজ, সরল পথ (সেরাতুল মোস্তাকীম)। এই পথে চল, অন্যান্য পথে চলো না। কারণ ঐ সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর ঐ পথ থেকে বিচ্যুত কোরে দেবে(হাদিস- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) থেকে – আহমদ, নিসায়ী, মেশকাত)। আল্লাহর রসূলের (সা:) এ উপদেশ ও সতর্কবাণীকে আমাদের মহাপণ্ডিতরা আর সুফী দরবেশরা উপেক্ষা কোরেই ঐ সেরাতুল মোস্তাকীম থেকে জাতিকে দুই দিকে টেনে নিলেন। তারা দেখলেন না আল্লাহ কতবার তার কোর’আনে এই সেরাতুল মোস্তাকীমকে, দীনুল কাইয়্যেমাকে উল্লেখ কোরেছেন এবং কোন জটিলতায় না যেয়ে এই সহজ সরল রাস্তায় আমাদের রাখার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনাকে বাধ্যতামূলক কোরে দিয়েছেন, শুধু প্রতি ওয়াক্তে নয় একেবারে প্রতি রাকাতে। এই সেরাতুল মোস্তাকীম, সহজ সরলতাকে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা কোরলে আল্লাহ একে প্রতি রাকাতে পড়া ফরজ কোরে দিতে পারেন। আর সত্যই এই সরলতা এতই গুরুত্বপূর্ণ এত প্রয়োজনীয়। এই সহজ সরলতাকে, সেরাতুল মোস্তাকীমকে পণ্ডিতরা এবং সুফীরা ত্যাগ কোরে জটিলতার পথ ধরার ফলে বিশ্বনবীর (সা:) উম্মাহ একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন অন্তমুর্খী স্থবির জাতিতে পরিণত হলো। তাদের উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব পালনের সংগ্রাম করার শক্তি আর তাদের অবশিষ্ট রোইলো না।

Leave a Reply