You are currently viewing ঋণের জালে বন্দি জাতি

ঋণের জালে বন্দি জাতি

ঋণের জালে বন্দি জাতি

প্রাচ্যের বিশেষ কোরে ’মুসলিম’ দেশ গুলির নেতৃত্ব এই যে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটছেন ইউরোপ, আমেরিকার মত শুধু পার্থিব সম্পদের পেছনে, এদের সঙ্গে আছে সেই ‘শিক্ষিত’ শ্রেণীটি যেটি ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রবর্ত্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত, অর্থাৎ যারা নিজেদের সম্বন্ধে অজ্ঞ, কাজেই বিগত প্রভুদের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পূর্ণ বিশ্বাসী। যে বিরাট ভাগটা নিরক্ষর, অশিক্ষিত, প্রায় পশু পর্য্যায়ের সেটার নেতাদের নীতি সম্বন্ধে স্বভাবতঃই কোন বক্তব্য নেই। বাকি রইলো ‘ধর্মের’ ধ্বজাধারী টুপি, পাগড়ীওয়ালা শ্রেণীটি। বিভিন্ন ভৌগোলিক রাষ্ট্রে এই শ্রেণীর লোক খুব কম নয়। যার যার দেশে এরা একত্র হোয়ে চাপ সৃষ্টি কোরলে ঐ অন্ধ নেতৃত্ব বাধ্য হতো তাদের নকল করা ছাড়তে। তা হোচ্ছে না, হয়ত হবেও না। কারণ পেছনে বোলে এসেছি ফকিহ ও মুফাসসিরদের বিশ্লেষণ ও ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের সম্মিলিত কাজের ফলে ধর্মের ঐ ধারক-বাহক শ্রেণীটি।
প্রথমতঃ তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় ফতোয়া দিয়ে একে অপরের পেছনে লেগে আছেন, কোন্দল কোরছেন, ঐক্যবদ্ধ হোয়ে কোন কাজ এদের দিয়ে সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়তঃ আকীদা সম্পূর্ণভাবে বিকৃত হবার ফলে এরা অন্তর্মুখী, নিজেদের নিয়েই এরা অত্যন্ত ব্যস্ত আছেন। মানসিকভাবে পাশ্চাত্যের দাস নেতৃত্ব তাদের জাতিকে কোন গহ্বরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় ব্যাপারই নয় এবং তা বোঝার শক্তিও নেই।
ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবে এরা এবং জনসাধারণ একথা বুঝতে অক্ষম যে ঐ নেতৃত্ব জাতিকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সেখানেই যেতে হবে, অন্য কোথাও তারা যেতে পারবেন না। উট পাখির মত বালুতে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে তারা বাঁচবেন না। যদি নিজেদের জীবন কোন মতে কাটিয়ে যেতেও পারেন, তাদের পরবর্ত্তী বংশধর, তাদের ছেলেমেয়েরা পারবে না। তারা শিক্ষা, সমাজ ও জীবন ব্যবস্থার চাপে শুধু যে ইসলাম থেকে বাইরে চলে যাবে তাই নয়, তারা ইসলাম বিরোধী হোয়ে দাঁড়াবে। তারা যদি সন্দিহান হন তবে তাদের নিজেদের ছেলে-মেয়েদের দিকে ভালো কোরে চেয়ে দেখুন। আল্লাহ যদি তাদের চোখের দৃষ্টি ও বোধশক্তি সম্পূর্ণভাবে হরণ না কোরে নিয়ে থাকেন তবে তারা দেখতে পাবেন জাতীয় জীবনে ইসলাম না থাকলে তাদের আগামী বংশধররাও মুসলিম থাকবে না। বর্ত্তমান দেখে যদি বুঝতে না পারেন তবে নিজের জাতির ইতিহাসের দিকে একবার তাকান, বুঝতে চেষ্টা কোরুন এই জাতি, উম্মাহ, যাকে আল্লাহ নিজে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বোলে বোলেছেন সেই জাতিটা কেন অন্য জাতির ঘৃণ্য ক্রীতদাসে পরিণত হোয়েছিলো কয়েক শতাব্দীর জন্য। তাজাকিস্থান, আজারবাইজান, তাশখন্দ, বোখারা, সমরকন্দ এই সমস্ত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বহু বড় বড় আলেমে দীন ছিলেন, পৃথিবীর অন্য কোন স্থানের চেয়ে ঐ বিরাট এলাকায় ‘ইসলাম’ কম ছিলো না। কিন্তু এখনকার মত সেই অন্তর্মুখী। কমিউনিষ্টরা যখন জাতির মধ্যে বিশেষ কোরে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপ্রবেশ কোরে তাদের চিন্তাধারায় পরিবর্ত্তন আনছে তখন ইসলামের ঐ ধারক বাহকেরা কোর’আন হাদীস নিয়ে গবেষণা কোরে জ্ঞানগর্ভ বই কেতাব প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছেন, মনে কোরছেন ইসলামের বিরাট খেদমত কোরছি, আল্লাহ, রসুল কত খুশী হোচ্ছেন। তারপর হঠাৎ একদিন ঘুম ভাঙলো। কিন্তু তখন আর সময় নাই। হাজারে হাজারে প্রাণ দিয়েও আর ইসলামকে রক্ষা কোরতে পারলেন না। তখন বেশী দেরী হোয়ে গেছে। আজ রাশিয়ার ঐসব বিখ্যাত ওলামায়ে দীনের বংশধররা কট্টর নাস্তিক, কমিউনিস্ট। সেই পাক্কা দীনদার সাধারণ মুসলিম ও ওলামায়ে দীনের বংশধররা নাস্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে আল্লাহ, রসুল আর ইসলামের কথা শুনলে বিদ্রুপের হাসি হাসে। খেলাফতের আসন তুর্কী দেশে কামাল পাশা যখন এই উম্মাহর ঐক্যের শেষ যোগসূত্র খেলাফতটাকে ধ্বংস কোরে দিলো তখন ঐ দেশে লক্ষ লক্ষ ওলামায়ে দীন, মশায়েখ, জনসংখ্যার প্রায় একশ ভাগ ‘মুসলিম’। সেই একই কারণ। ফকীহ মুফাস্সিরদের আর ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের সম্মিলিত কাজের ফল আকীদার বিকৃতি ও অন্তর্মুখীতা। আকীদার ঐ বিকৃতি ও অন্তর্মুখীতা সমস্ত মুসলিম দুনিয়ায় আজও ঐ রকমই আছে। রাশিয়ার আর তুর্কীর মুসলিমদের মত বাকি দুনিয়ার মুসলিম ও ওলামায়ে দীন, মাশায়েখরাও পার পাবেন না, বাঁচতে পারবেন না, যদি আজও তারা উট পাখির মত বালুতে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে ভাবেন যে, আমি যখন কাউতে দেখতে পাচ্ছি না কাজেই আমাকেও কেউ দেখতে পাচ্ছে না। এই অন্তর্মুখী দৃষ্টিভঙ্গী অর্থাৎ আকীদা যে আল্লাহ ও রসুল (সা:) কতখানি ঘৃণা করেন তা সম্মুখে ইনশাল্লাহ দেখাবো। এখানে শুধু এইটুকু বোলে যাচ্ছি যে, এই অন্তর্মুখীতা বিশ্বনবীর (সা:) মাধ্যমে প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার, দীনের, আকীদার সরাসরি বিপরীত। কাজেই স্বভাবতঃই অন্তর্মুখী মানুষের সমস্ত এবাদত নিষ্ফল। (এমন সময় আসবে যখন মানুষের সারা মাসের রোযা না খেয়ে, অভুক্ত হোয়ে থাকা হবে, গভীর রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়া ঘুম নষ্ট করা হবে)।

বর্ত্তমান মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্ব থেকে একটু সরে এসেছি। পাশ্চাত্য সভ্যতার একনিষ্ঠ অন্ধ অনুকরণকারী এই নেতৃত্ব চোখ কান বুজে পাশ্চাত্যের বস্তুতান্ত্রিক অর্থাৎ ভারসাম্যহীন, একপেশে উন্নতির দিকে দৌড়াচ্ছেন। একপাশটা হলো অর্থনৈতিক উন্নতি। এই নেতৃত্ব একটা সোজা কথা বুঝতে পারছেন না, সেটা হলো এই যে, পাশ্চাত্যের মত বস্তুতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক সাফল্য লাভ কোরতে গেলে যে চারিত্রিক গুণ গুলি প্রয়োজন তার নুন্যতম মানও তাদের শিক্ষিত সংখ্যালঘু অংশেরও নেই অশিক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ট অংশের তো নেই-ই। তার প্রমাণ পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে যাবার দিনটির চেয়ে আজ প্রাচ্যের মুসলিম দেশ গুলির সংখ্যাগরিষ্ট জনসাধারণের জীবনের মান নীচু, শুধু তেল সমৃদ্ধ দেশ গুলি ছাড়া। অবশ্য ঐ শিক্ষিত সংখ্যালঘু শ্রেণীর মান কিছুটা উঠেছে কিন্তু সে ওঠার কারণ সত্যিকার অর্থনৈতিক উন্নতি নয়। সেটার কারণ হলো এই যে, দেশ গুলির নেতৃত্ব ও সরকার পাশ্চাত্যের কাছ থেকে যে বিরাট বিরাট অংকের টাকা ঋণ কোরে এনেছে তার একটা মোটা ভাগ এই শ্রেণীর পকেটে গেছে দুর্নীতি, ঘুষ ও চুরির মাধ্যমে। কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখার ফলে যে শিক্ষিত শ্রেণী সৃষ্টি হোয়েছে, হোচ্ছে তা একটি স্বাধীন জাতির পক্ষে, বিশেষ কোরে অনুন্নত দেশের জন্য কোন কাজে আসবে না। কারণ একটি জাতিকে বা দেশকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে গেলেও যে কর্মনিষ্ঠা, যে সাধুতা, যে কর্ত্তব্যপরায়নতা একান্ত প্রয়োজন তা এদের মধ্যে নেই। ব্যক্তিগত, দলীয় স্বার্থকে এরা দেশের স্বার্থের ওপরে স্থান দেয়। অলসতা, কাজে ফাঁকি এদের মজ্জাগত হোয়ে গেছে। বড় বড় ব্যাপার বাদ দিন অতি সাধারণ ও মানবিক দায়িত্ব পালনেও এরা ব্যর্থ। যাদের এরা নকল করেন তাদের দেশে কোন অপরাধ ঘটলে দু’থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ পৌঁছায় আর এদের দেশে চব্বিশ ঘণ্টায়ও পৌঁছায় না। ও দেশে কোথাও দুর্ঘটনা হোলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স এসে আহতকে তীর বেগে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং এ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে। আর এদের দেশে দুর্ঘটনা ঘটলে এ্যাম্বুলেন্স আসে অনেক চেষ্টা, ডাকাডাকির পর, যদি সেটা অচল হোয়ে পড়ে না থেকে থাকে এবং হাসপাতালে পৌঁছার সময় অবধি যদি আহত বেঁচে থাকে তবে দু’এক ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা ও পরিচর্য্যাহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। ওদেশে সরকারী অফিসে কোন ফাইল আরম্ভ হোলে যথাসম্ভব কম সময়ে তার যা সিদ্ধান্ত হবার তা হয়। এদের দেশে যদি ফাইলটি হারিয়ে না যায় তবে রোজ যেয়ে চেষ্টা করতে হয় তাকে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নিতে এবং তা কোরতে কর্মকর্ত্তাদের শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ কোরতেই পকেটের পয়সা খরচ কোরতে হয় এবং তারপরও কর্মকর্তা পান চিবুতে চিবুতে বলেন, আপনার কাজটা এখন হোচ্ছে না, ব্যস্ত আছি, আপনি দু’এক মাস পরে খোঁজ কোরবেন। ওদের দেশে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখে ঘড়ি মেলানো যায় এদের দেশে ট্রেন ইত্যাদির সময়ের অমিল মিনিটের নয় অনেক ঘণ্টার। না, যাদের নকল করা হোচ্ছে আর যারা নকলের চেষ্টায় ওষ্ঠাগত প্রাণ হোচ্ছেন তাদের তফাৎ বোলতে গেলে শেষ নেই। জীবনের প্রতিস্তরে, প্রতি বিভাগে ঐ একই তফাৎ।

পেছনে দু’একবার পাশ্চাত্য জাতি গুলোর কাছে প্রাচ্যের ঋণের কথা উল্লেখ কোরে এসেছি। এ সম্বন্ধে আরও দু’চারটি কথা বলা প্রয়োজন। সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, প্রাচ্যের দেশ ও জাতি গুলির তুলনায় পাশ্চাত্যের দেশ ও জাতি গুলি অনেক অনেক ধনী। কারণ অনেক আছে, তবে এখন যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রধান কারণ গুলি হলো:
ক) পাশ্চাত্যের ছোট বড় প্রায় প্রত্যেকটি দেশ প্রাচ্যের কোন না কোন দেশ, এলাকা সামরিক শক্তি বলে দখল কোরে তাকে কয়েক শতাব্দী ধোরে শোষণ কোরে বিরাট ধনী ও শক্তিশালী হোয়েছে।
খ) খ্রীস্ট ধর্ম, জাতীয় জীবনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবার কারণে ওটাকে ব্যক্তি জীবনে নির্বাসন দেওয়ার ফলে পাশ্চাত্যের মানুষের মন ও আত্মা ক্রমশঃ বস্তুতান্ত্রিক ভাবধারায় পূর্ণ হোয়ে গেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্মের ফলে এটা অবশ্যম্ভাবী ছিলো, যেমন আজ প্রাচ্যের মানুষেরও দৃষ্টিভঙ্গি (আকীদা) ঐ দিকেই মোড় নিয়েছে তাদের জীবন দর্শন নকল করার কারণে। পাশ্চাত্যের মানুষের বস্তুতান্ত্রিক হোয়ে যাবার ফলে তাদের জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হোয়ে দাঁড়িয়েছে এই পার্থিব জীবনটাকে পূর্ণভাবে ভোগ করা। তা কোরতে গেলে অবশ্যই পরিশ্রম কোরে সম্পদ আহরণ কোরতে হবে, কাজেই তারা ক্রমশঃ অতি পরিশ্রমী হোয়ে উঠতে লাগলো, মানুষের মধ্যে উপার্জনের প্রতিযোগিতা শুরু হোয়ে গেলো। এই একনিষ্ঠ পরিশ্রমের সঙ্গে যোগ হলো তাদের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। এই সম্মিলনের ফল আজ যা দেখছেন পাশ্চাত্য জগতে। পার্থিব উন্নতিতে জগতের শীর্ষে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মানব জীবনের অন্য পার্শ্ব, আত্মার পার্শ্ব তাদের জীবনে অনুপস্থিত। তাই সারাটা জীবন তারা ভোর থেকে রাত পর্য্যন্ত অবিশ্রান্ত খেটে যায় উপার্জন আর উপার্জন, আরও উপার্জন কোরে জীবন উপভোগের জন্য। স্বভাবতঃই এর ফল অর্থনৈতিক উন্নতি।

আরো কারণ আছে, কিন্তু প্রধান কারণ ঐ দু’টি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইউরোপের বিভিন্ন জাতি গুলি যখন প্রাচ্যের দেশ গুলি ছেড়ে চলে গেলো তখন নেতৃত্ব ও ক্ষমতা ছেড়ে গেলো তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘শিক্ষিত’ একটি শ্রেণীর কাছে একথা পেছনে বোলে এসেছি। এ কথাও বোলে এসেছি যে, এই শ্রেণীটির মন মগজ তারা কিনে নিয়েছিলো। এদের নিজস্ব সত্ত্বা বোলতে কিছুই নেই। পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার ব্যবস্থাই হোচ্ছে একমাত্র সঠিক ব্যবস্থা, পৃথিবীতে আর কিছুর কোন অস্তিত্ব নেই। স্রষ্টা, আল্লাহ ঐ সব ব্যাপারে যে ব্যবস্থা বিশ্বনবীর (সা:) মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তা তাদের কাছে চৌদ্দশ’ বছর আগের এক অশিক্ষিত নিরক্ষর বেদুঈন জাতির জন্য প্রযোজ্য হোলেও বর্ত্তমান আধুনিক যুগে অচল, তাই পরিত্যাজ্য। একথা তাদের বিগত প্রভুরাই শিখিয়েছেন, তারা শিখেছেন, তাই বিশ্বাস করেন। আশ্চর্য কি এদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু চৌদ্দশ বছর আগে ঐ বেদুঈনদের জন্য প্রযোজ্য নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত পালন করেন। এর পেছনে যুক্তি কি? যাই হোক, পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে গেলো কিন্তু এই স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধ নিয়ে গেলো যে, তাদের পরোক্ষ শাসন ঠিকই থাকবে, কারণ যাদের হাতে ক্ষমতা এলো তারা শুধু চামড়ার রংটুকু ছাড়া সর্বোতভাবে পাশ্চাত্যের প্রধিনিধি। এই বাদামী ইংরেজ, কালো ফরাসী আর হলদে ওলন্দাজ স্পেনীয়রা যখন তাদের অশিক্ষিত নিরক্ষর জাতি গুলিকে শাসন কোরতে আরম্ভ করলো তখন বিগত প্রভুরা বোঝালো যে, তোমরা অতি গরীব (গরীব কিন্তু তারাই কোরেছে, তারা অধিকার করার আগে প্রাচ্যের এই দেশ গুলি ঐসব ইউরোপীয় দেশ গুলির চেয়ে বহু ধনী ছিলো, এটা ইতিহাস) এখন তোমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে হবে। কারণ মানব জীবনের মুখ্য, মুখ্য কেন, একমাত্র উদ্দেশ্যই হোচ্ছে সম্পদ অর্জন কোরে জীবনের উপভোগ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি কোরতে গেলে আমাদের মত কল-কারখানা বসাতে হবে। তোমাদের দেশ গুলিকে শিল্পায়ন কোরতে হবে। শিল্পায়ন কোরতে গেলে টাকার দরকার হবে। তোমাদের তো টাকা নেই। (টাকা তো আমরা এই কয়েক শতাব্দী ধোরে শুষে নিয়েছি)। কোন চিন্তা নেই, আমরা অত্যন্ত মহানুভব, টাকা আমরা ধার দেবো, তোমরা কল-কারখানা লাগানো শুরু কোরে দাও। পাশ্চাত্যের বিগত প্রভুদের এই মহানুভবতার আসল উদ্দেশ্য ছিলো অন্য। উদ্দেশ্য ছিলো রাজনৈতিক অধিকার ছেড়ে আসতে বাধ্য হোলেও অর্থনৈতিক আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখা। সুদখোর মহাজন যেমন মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ধার কর্জ দিয়ে খাতককে ঋণে জর্জরিত কোরে একদিন তার সর্বস্ব নিয়ে নেয় ঠিক সেই উদ্দেশ্য। মানসিকভাবে পাশ্চাত্যের দাস, প্রাচ্যের নেতৃত্ব পাশ্চাত্যের ঐ প্রস্তাব যে প্রত্যাখ্যান কোরবে না সে সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারা ঐ প্রস্তাব লুফে নিয়েছিল তা ইতিহাস। শুধু লুফে নেন নি, ইহুদী প্রবর্ত্তিত সুদভিত্তিক ব্যবস্থায় রাজী হোয়ে ঐ ঋণ গ্রহণ কোরেছেন প্রাচ্যের মুসলিম নেতৃত্ব, যারা নামাযও পড়েন, রোযাও রাখেন, হজ্বও করেন কেউ কেউ পীরের মুরীদ এমনকি অনেকের কপালে সাজদার দাগও হোয়ে গেছে। কিন্তু তাদের আসল ইলাহ্ পাশ্চাত্যের প্রভুদের উপদেশ ও প্রস্তাব কি তারা ফেলে দিতে পারেন? আল্লাহ যে সুদ, সুদভিত্তিক সমস্ত অর্থনৈতিক আদান-প্রদান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ অর্থাৎ হারাম কোরে দিয়েছেন তা ঐ সব ‘মুসলিম’ নেতাদের কাছে কোন অর্থই বহন করে না।

যদিও পাশ্চাত্যের ঋণদাতা ধনী দেশ গুলির আসল উদ্দেশ্য ছিলো প্রাচ্যের জাতি গুলির গলায় ঋণের সোনার শেকল পড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অর্থনৈতিক দাস বানিয়ে রাখা, কিন্তু প্রাচ্যের জাতি গুলি যদি ঐ ঋণের পূর্ণ সদ্ব্যবহার কোরে তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারতো তবে অর্থনৈতিক উন্নতি ও তাদের উদ্দেশ্য- জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোরতে পারতো। কিন্তু সেটাও করা সম্ভব হয় নি। কারণ কিছু পেছনে বোলে এসেছি। এখানে আবার বোলছি। প্রথম কারণ শিক্ষার অভাব। অন্ধ অনুকরণকারী নেতৃত্ব, স্বাধীনতা পাবার পর কেরানী সৃষ্টিকারী শিক্ষাব্যবস্থা বদলিয়ে চরিত্র সৃষ্টিকারী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করেন নি। কাজেই সে চরিত্র জাতির মধ্যে সৃষ্টি হয় নি যেটা ছাড়া জাতির যে কোন রকমের উন্নতি তো পরের কথা, জাতি টিকেই
থাকতে পারে না। কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা না বদলানোর ফল এই হোয়েছে যে, পাশ্চাত্য প্রভুরা চলে যাবার সময়ে প্রাচ্যের দেশ গুলিতে, বিদ্যালয় গুলিতে যে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্ত্তিতা, শিক্ষকের প্রতি সম্মান ইত্যাদি ছিলো আজ তার একশ’ ভাগের এক ভাগও নেই। এ গুলি যার যার দেশের রাজনৈতিক দল গুলির লেজুড়বৃত্তি কোরে বিদ্যালয় গুলিতে দলাদলি, গোলা গুলি, ছুরি মারামারিতে ব্যস্ত। ওটাতো গেলো চরিত্রের কথা, কেরানীকুল সৃষ্টি কোরে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু রাখার জন্যে যে ভাষা, অংক, ভুগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হতো আজ তার মানও গোলামী যুগের চেয়ে অনেক নীচে নেমে গেছে, একথা দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের কাছে সত্য। দ্বিতীয় কারণ পাশ্চাত্যের অনুকরণ কোরে তাদের সব কিছুই গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা। ঐ ব্যবস্থা মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং ইউরোপের সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, মানসিক ও চারিত্রিক পরিবেশে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে অর্থাৎ বিবর্ত্তনের মধ্য দিয়ে বর্ত্তমানের রূপ পেয়েছে। ঐ ব্যবস্থা প্রাচ্যের নেতৃত্ব তাদের অন্ধ হীনমন্যতায় অপরিবর্ত্তিত রূপে ইংরেজীতে যাকে বলে Lock stock and barrel, তাদের নিজ নিজ দেশ ও জাতি গুলির উপর চাপালেন। এদের মানসিক দাসত্ব এতো গভীর যে, অশিক্ষিত নিরক্ষর মানুষেরও যে সাধারণ জ্ঞান আক্কেল থাকে সেটুকু ব্যবহার কোরলেও তারা দেখতে পেতেন যে, সম্পূর্ণ ভিন্ন, প্রধানত বিপরীত পরিবেশে যে ব্যবস্থা (system) ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে পাশ্চাত্য জগতে গড়ে উঠেছে তা হঠাৎ কোরে প্রাচ্যের জাতি গুলির উপর চাপালে তা চোলবে না, অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হবে বিশৃঙ্খলা, হতাশা। ঠিক তাই হোয়েছে। স্বাধীনতা পাবার পর প্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ গুলির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে ও সেই সব দেশের সামরিক বাহিনীকে শাসনভার হাতে নিয়ে কঠোরতার সাথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হোয়েছে। একদিকে চরিত্রহীনতার জন্য কাজে ফাঁকি, কর্মবিমূখতা, ব্যক্তি ও দলগত স্বার্থকে জাতির স্বার্থের ওপরে স্থান দেওয়া ইত্যাদি, অন্য দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘন ঘন সরকার বদল, আন্দোলন, কথায় কথায় ধর্মঘট ইত্যাদি এই দুই মিলে কোন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, কোন বড় শিল্পায়নকে সুষ্ঠুভাবে কাজে পরিণত কোরতে দেয়নি। কাজেই বিগত প্রভুদের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঋণ এনে প্রাচ্যের নেতৃত্ব তাদের কাংখিত জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কোরতে পারে নি, মান আরও নেমে গেছে। মাঝখান থেকে এই দেশ গুলির উপর সুদে আসলে যে অংকের ঋণ দাঁড়িয়েছে তা দেখলে মাথা ঘুরে যায়। বিশ্ব ব্যাংক হিসেব দিয়েছে “শুধু বাংলাদেশই পাশ্চাত্যের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলির কাছে ৩৬৯৯৯০ কোটি ডলারের ঋণজালে আবদ্ধ হোয়েছে। ৩৬৯৯৯০ কোটি কত তা এই ঋণগ্রস্ত দেশের মানুষরা ধারণা কোরতে পারে? বিশ্ব ব্যাংকের এ হিসাবটা আজকের নয় ২০২১ সনের। শুধু বাংলাদেশের অংকই এত বিশাল, বাকি পাশ্চাত্য দেশের কথাতো বাদই দিলাম। উন্নয়নের ব্যর্থতার জন্য আসল শোধ করা দূরের কথা শুধু সুদটুকুই এই সব দেশ দিতে পারছে না। কাজেই ঋণের অংক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চোলছে। বিগত প্রাশ্চাত্য প্রভুরা যা চেয়েছিলো তা পূর্ণমাত্রায় অর্জন কোরেছে। প্রাচ্যের জাতি গুলির গলায় ঋণের শেকল লাগিয়ে তারা শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নয়, অন্যান্য বহুদিক দিয়ে কর্তৃত্ব কোরে চোলেছে। তারচেয়েও বড় কথা হোচ্ছে, ঐ অসম্ভব বিরাট অংকের ঋণের বোঝা ঐ নেতাদের ঘাড়ে নয়, ঐ বোঝা আসলে তাদের দেশ গুলির জনসাধারণের ঘাড়ে। ঋনের শুধু সুদের একটা অংশ আদায় করার জন্য এই নেতৃত্ব করের উপর কর, খাজনার উপর খাজনা আরোপ কোরে চলেছেন, তা সত্ত্বেও ঋণের বোঝা বেড়ে চোলছে। এই সব দেশের প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা কিন্তু তারা জানে না। ঐ যে গরীব কৃষক ক্ষেতে হাল দিচ্ছে, সে জানে না যে, যাদের তারা ইউরোপের নকল করা প্রথায় ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত কোরেছে তারা তার প্রতিনিধি হোয়ে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার, পাউণ্ড ঋণ নিয়েছে। ঐ যে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অফিস কর্মচারীরা সকাল-সন্ধ্যা অফিস যাচ্ছেন আসছেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা কোরছেন, সবাই বেখবর যে, তাদের প্রত্যেকের মাথার উপর বিরাট অংকের ঋণ চেপে আছে এবং তা দিতে হবে, আজ হোক আর কাল হোক। আসল বাদ দিন শুধু সুদের একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিশোধ করার জন্য জনসাধারণের উপর নতুন নতুন কর ধরা হোচ্ছে, পুরানো কর ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হোচ্ছে। আজ একথা পাশ্চাত্যের মহাজন জাতি গুলি ও প্রাচ্যের খাতক জাতি গুলি উভয়ের কাছেই পরিস্ফুট হোয়ে উঠেছে যে, এইসব অর্দ্ধাহারী, অনাহারী প্রায় উলঙ্গ জাতি গুলির আর সাধ্য নেই ঐ বিরাট ঋণ শোধ করার। এতে অবশ্য মহাজন জাতি গুলির ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, তাদের কোন লোকসান হবে না। কারণ ঋণ দেবার সময়ই তারা যেসব শর্ত্ত আরোপ কোরেছিলো এবং গদগদ চিত্তে প্রাচ্যের নেতৃত্ব যে সব শর্ত্ত মেনে নিয়েছিলো তার বদৌলতে ইতিমধ্যেই তারা সুদে আসলে ঋণের টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। আজ আসল টাকা না পেলেও তাদের কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু কাগজে পত্রে বিরাট টাকা তাদের পাওনা হোয়ে আছে, যার ফলে প্রাচ্যের নেতৃত্ব করজোড়ে মহাজনদের সামনে দাঁড়িয়ে দয়া প্রার্থণা কোরছেন, আরও ঋণ চাইছেন। আরও ঋণ চাইছেন এই জন্য যে, আরও ঋণ না হোলে তাদের চোলবে না (বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্থান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ)। ঋণ নিয়ে এবং সে ঋণ সদ্ব্যবহার কোরে উন্নতির বদলে অবনতি হবার ফলে এখন এইসব দেশ এমন পর্য্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য অর্থাৎ ভিক্ষা না নিলে এদের বাজেট করাই অসম্ভব, সুদের একটা আংশিক পরিশোধও অসম্ভব। তাই বাহ্যত টিকে থাকার জন্যই আরও ঋণ, আরও খয়রাত দরকার। নতুন নতুন ঋণ নিয়ে ঐ ঋণের টাকা দিয়েই কিছু কিছু সুদ এরা শোধ করছেন। কিন্তু নতুন ঋণ নতুন সুদের পাহাড় গড়ে উঠছে, যে ঋণ আসলে যার যার দেশের জনসাধারণের উপর চাপছে। আজ পাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্যের প্রায় সব কটি দেশের, বিশেষ কোরে মুসলিম দেশ গুলির শুধু হাড্ডি-মজ্জা নয়, আত্মা পর্য্যন্ত দেনাবদ্ধ হোয়ে গেছে।

এতো গেল বিদেশের কাছে ঋণের ব্যাপারে মাত্র কয়েকটা কথা। বিস্তারিত লিখতে গেলে আলাদা বই হোয়ে যাবে।

Leave a Reply