You are currently viewing ঐতিহাসিক ভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব

ঐতিহাসিক ভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব

জ্ঞানের অভাবে যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না, অর্থাৎ নাস্তিক, তারা ধারণা করেন যে, মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে, ভয় দেখাতে, স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা হোয়েছে। এই ধারণাটা বিশ্লষন করা যাক। এ কথা অশ্বিকার করার উপায় নেই স্রষ্টার ধারণা আজকের নয়। ইতিহাসের অনেক আগে, যখন থেকে মানুষ সম্বন্ধে জানা যায় তখন থেকেই মানুষ একজন স্রষ্টার ব্যপারে সচেতন ছিলো। প্রত্নতাত্বিকেরা মাটি খুড়ে হাজার হাজার বছর আগের যে সব জনবসতির খোঁজ পেয়েছেন, দেখেছেন সবখানেই ধর্মের অর্থাৎ স্রষ্টার কোন না কোন রকমের ধারণা ছিলো। বিভিন্ন মহাদেশে, পৃথিবীর যেখানেই কোন প্রাকার ঐতিহাসিক জনপদের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই তারা পেয়েছেন উপাসনার, ধর্মের চিহ্ন। অর্থাৎ স্রষ্টা সম্বন্ধে একটা ধারণা, একটা চেতনা পৃথিবীময় ছড়িয়ে ছিলো এটা সন্দেহাতীত। পৃথিবীর প্রধান ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়াতেও যেসব প্রাক-ঐতিহাসিক মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে সে সবগুলিতেও তাই। যখন এইসব বিভিন্ন জনসমষ্টির মধ্যে কোন সংযোগ, আদান-প্রদান ছিলো না, ভাষা, সংস্কৃতি সব কিছুই ছিলো ভিন্ন, একে অন্যের অস্তিত্ব পর্যন্ত জানতো না, তখন ঐ একটি ব্যপারে সবাই সচেতন ছিলো এটা কেমন কোরে হলো? পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা এই জনসমষ্টিগুলি শুধু যে স্রষ্টার ব্যপারে সচেতন ছিলো তাই নয়- তারা ঐ স্রষ্টার গুণাবলী- আমরা যেটাকে বলি সিফত- একই বোলে কেমন কোরে আবিস্কার কোরল? অর্থাৎ স্রষ্টা মহা-শক্তিশালী, সর্বব্যপী, দয়ালু, যা ইচ্ছা কোরতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ যদি স্রষ্টার ধারণাকে সৃষ্টি কোরে থাকে তবে শীকার কোরে নিতে হবে যে বহু আগে- কত আগে কেউ বোলতে পারবে না, তবে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগে, সমস্ত পৃথিবীময় বিছিন্ন, বিভিন্ন স্থানে মানুষ একটা জুজুর ভয় সৃষ্টি করলো, যে জুজুটার গুণাবলী অকস্বাৎ কেমন কোরে একই হোয়ে গেলো- অর্থাৎ ঐ জুজুটা সর্বশক্তিমান, সর্বত্র বিরাজমান, সর্বজ্ঞানী, অসীম ক্ষমাশীল, দয়াময়, ইত্যাদি। এবার দেখা যাক এটা কতখানি সম্ভব।

পৃথিবীর মধ্যকর্ষণ শক্তি আছে এ কথা প্রতিষ্ঠিত সত্য- এবং এটা আছে পৃথিবীর সৃষ্টির একদম প্রথম থেকে এ কথাও প্রতিষ্ঠিত সত্য। এ পৃথিবী স্রষ্টা তৈরী কোরে থাকেন আর আচম্বিতে নিজেই সৃষ্টি হোয়ে থাক, এই মধ্যাকর্ষণ পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত্ত থেকে আজ পর্য্যন্ত এই পৃথিবীর সমস্ত জিনিষের, পাহাড়-পর্বত, নদী, সমুদ্র এক কথায় প্রত্যেক জিনিষের প্রতিটি অণুপরমানুকে নিচের দিকে টেনে রাখছে। আপনার আমার দেহের প্রতিটি অণু পরামাণুকেও টেনে পৃথিবীতে ধোরে রেখেছে। সৃষ্টির প্রথম থেকে আজ পর্য্যন্ত এক সেকেণ্ডের এক ভগ্নাংশের জন্যও কখনো বিরতি দেয়নি। যে মস্তিষ্ক দিয়ে মানুষ চিন্তা করে, অনুভব করে, সেই মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ কেও সেই অনাদিকাল থেকে এই মধ্যাকর্ষণ অবিরতভাবে টেনে রেখেছে। কিন্তু মানুষ এই সর্বব্যপী শক্তির কথা জানতো না। কোনদিন একে আবিষ্কার কোরতে পারে নি, একে ধারণাও কোরতে পারে নি। মাত্র সেদিন নিউটন একে আবিষ্কার কোরলেন। কেন? এতদিন কি মানুষ তার মগজ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে নি? নিশ্চয় কোরেছে। নিউটনের মাধ্যকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের আগে মানুষ বহু কিছু আবিষ্কার কোরেছে, পিরামিডের মত কালজয়ী সৌধ তৈরী কোরেছে, কিন্তু যে শক্তির অধীনে থেকে তার জীবনের প্রতি মুহূর্ত্ত কাটছে, যে শক্তি এক মুহূর্ত্ত বিরতি দিলে সে পৃথিবীর বহির্মূখ, অপকেন্দ্রীক শক্তির (Centrifugal Force) ফলে ছিটকে মহাশূণ্যে নিক্ষিপ্ত হবে সে শক্তি সম্বন্ধে সে ছিলো সম্পূর্ণ অজ্ঞ- মাত্র কয়েক বছর আগে পর্য্যন্ত।

যেটা নেই (স্রষ্টা) তাকে মানুষ সেই প্রাক-ঐতিহাসিক সময়ে কল্পনা কোরে নিলো, শুধু কল্পনা কোরে নিলো না, সেটা কী রকম তার একই রকম বিস্তারিত বিবরণ পৃথিবীর এধার থেকে ওধার পর্য্যন্ত বিশ্বাস কোরে নিলো- কিন্তু যেটা আছে (মাধ্যাকর্ষণ) সেটাকে মানুষ হাজার হাজার বছরেও আবিষ্কার কোরতে পারলো না- এ কেমন কথা? এর জবাব হোচ্ছে- স্রষ্টা তার প্রেরিতদের দিয়ে সেই প্রথম মানুষটি থেকেই তার অস্তিত্ব ও গুণাবলী অর্থাৎ তিনি কেমন তা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন বোলেই মানুষ তার সম্পর্কে জানে, আর মধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নিউটনের আগে কাউকে জানান নি বোলেই মানুষ তা জানতে পারে নি। স্রষ্টা যদি মানুষ সৃষ্টি কোরে, তাকে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হোতেন, প্রেরিতদের দিয়ে নিজের সম্বন্ধে কিছু না জানাতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মানুষ আজও তার সম্বন্ধে কিছু জানতো না, কিংবা স্রষ্টা কেউ একজন হোতে পারেন ভাবলেও তার গুণাবলী, সিফত সম্বন্ধে কোন ধারণা কোরতে পারতো না। নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বের যে প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুষ প্রমাণ চান, ওরকমের প্রমাণহীন বহু লক্ষ জিনিষকে, ব্যপারকে তারা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন। তারা যার যার বাপকে বাপ বোলে বিশ্বাস করেন, কিন্তু এর কোন প্রত্বক্ষ্য প্রমাণ নেই- প্রতিবেশীর ছেলের চেহারা বাপের মত, শুধু এইটুকুর উপর নির্ভর কোরেই তারা তাদের সত্যই বাপ ও ছেলে বোলে বিশ্বাস করেন। এ বিশ্বাস গুলো সব অবস্থাগত, আনুষাঙ্গিক(Inferential)। কিন্তু স্রষ্টার প্রমাণ তারা চান প্রতক্ষ, চাক্ষুষ।

আসল কথা – স্রষ্টা আছেন কিন্তু তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবেন না বা তার ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ কোরে মানুষকে তার প্রতি বিশ্বাস এনে দেবেন না। কারণ তা কোরলে মানুষকে বিচার কোরে শাস্তি বা পুরষ্কার দেবার আর কোন অর্থ থাকবে না। মানুষ তা হোলে গাছ-পাথর, পাহাড়-পর্বতের মত তার আরেকটি সৃষ্টি মাত্র হতো, তার নিজের হাতের তৈরী যুক্তি, বুদ্ধিসহ সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি হতো না।

Leave a Reply