You are currently viewing কোর’আনের মো’জেজা
হিজবুত তাওহিদ

কোর’আনের মো’জেজা

ব্যাখ্যার প্রথম অংশঃ মুসলিম অসমুলিম কোন ইতিহাসবেত্তারই দ্বিমত নেই যে রসুলাল্লাহর (সা:) চল্লিশ বছর বয়স থেকে তেষট্টি বছর বয়সে ওফাত পর্য্যন্ত এই তেইশ বছরে কিছু কিছু কোরে, কোন সময়ে সামান্য, কোন সময়ে বেশ কিছু কোরে, সমস্ত বইটি অবতীর্ণ হোয়েছে। প্রেরিত বোলেছেন- এর একটি অক্ষরও আমার নয়। এর প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি শব্দ স্রষ্টার মুখের বাণী। তার দেয়া জীবন ব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, আদেশ-নিষেধ, সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমি বাহক মাত্র। এই বাণী গুলি যখনই এসেছে তখনই লিখে রাখা হোয়েছে এবং প্রেরিত (সা:) স্বয়ং এবং অন্যান্য অনেকেই তা সঙ্গে সঙ্গে মুখস্ত কোরে ফেলেছেন। অন্য কিছুর সাথে এমন কি তার নিজের কোন কথার সাথে আল্লাহর এই বাণী মিশে না যায় সেদিকে রসুল (সা:) এবং তার অনুসারীরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন। এত সতর্কতা নেয়া হোয়েছে যে অনুসারীদের মধ্যে কেউ কেউ যখন রসূলের (সা:) উপদেশ ইত্যাদি লিখে রাখতে চেষ্টা কোরলেন তখন তিনি (সা:) নিষেধ কোরেছিলেন, যাতে হঠাৎ অসাবধানে তা কোর’আনের বাণীর সঙ্গে মিশে না যায়। পরে সবার যথেষ্ট
সতর্ক থাকার ফলে যখন সে সম্ভাবনা একেবারেই রোইলো না শুধু তখন মহানবী (সা:) অনুমতি দিলেন তার কাজ, কথা, উপদেশ ইত্যাদি আলাদা কোরে লিখতে, যা আজ হাদীস। স্রষ্টা স্বয়ং তার নিজের মুখের এই বাণীর, বাক্য গুলির নাম দিলেন আয়াত অর্থাৎ প্রকাশ্য নিদর্শন। অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে বোলছেন- এই বাক্যগুলি মোহাম্মদের (সা:) কথা নয়, আমার নিদর্শন। পুর্ববর্ত্তী ধর্মগ্রন্থ গুলির সাথে এইখানে কোর’আনের তফাৎ, বৈশিষ্ট্য এসে গেলো। ঐ সমস্ত ধর্মগ্রন্থে আল্লাহর নিজের মুখের যে বাণী শ্লোক (একই অর্থে আয়াত) তা এবং যার মাধ্যমে তা এসেছে, সেই প্রেরিতের কথা, কাজ ইত্যাদি তালগোল পাকিয়ে গেছে। উদাহরণরূপে বাইবেল, উভয় বাইবেল। পুরানো বাইবেলে(Old Testament) আদম (আ:) থেকে শুরু কোরে বহু প্রেরিত তাদের জীবনী, কাজকর্ম, ভ্রমণ, কথাবার্ত্তা ইত্যাদির সঙ্গে আল্লাহর বাণী এমনভাবে মিশে গেছে যে, তা থেকে শুধু আল্লাহর মুখের সরাসরি কথা ছেঁকে বের কোরে নেয়া আজ অসম্ভব। নতুন বাইবেলে(New Testament) ঈসার (আ:) জীবনী লিখেছেন চারজন, যার কেউই ঈসাকে (আ:) চোখে দেখেন নি। স্বভাবতঃই মিল নেই। এবং ঈসার (আ:) মুখ দিয়ে স্রষ্টার যে বাণী বের হোয়েছে তা এবং ঈসার (আ:) নিজের কথা বা অভিমতের মধ্যে কোন পার্থক্য টানা অসম্ভব হোয়ে গেছে। এই ত্রুটি সংশোধন করার আপ্রাণ চেষ্টা খ্রীস্টান ধর্মের পণ্ডিতরা কোরেছেন। কোরতে যেয়ে তারা দেখেছেন যে ঠিক শুধু আল্লাহর মুখের বাণী গুলো ছেঁকে আলাদা কোরে লেখা অসম্ভব। এ অসম্ভব চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে তারা চেষ্টা কোরলেন যে একটি বইয়ে শুধু ঈসার (আ:) মুখ নিসৃত কথা গুলো আলাদা করা যায় কিনা এবং এই চেষ্টায় উদ্ভাবন কোরলেন রেড লেটার বাইবেল তারা বাইবেল ছাপালেন কালো কালিতে এবং ঈসা (আ:) যে কথা গুলো নিজের মুখে বোলছেন বোলে তারা মনে করেন কিন্তু কোন প্রমাণ নেই, সে গুলো ছাপালেন লাল কালিতে। লক্ষ্য কোরুন- লাল কালিতে ছাপানো কথা গুলো কিন্তু আল্লাহর নয়, খ্রীস্টান পণ্ডিতরা তা দাবীও কোরছেন না- তারা দাবী কোরছেন লাল কালিতে ছাপানো শব্দ ও কথা গুলো যিশুর অর্থাৎ ঈসার (আ:)। আসলে কিন্তু তাও নয়। কারণ যে চারজন ঈসার (আ:) জীবনী লিখেছেন তারা ঈসার (আ:) মুখ দিয়ে চার রকমের কথা বোলিয়েছেন, চার রকমের কাজও কোরিয়েছেন এবং ঐ চার রকমের মধ্যে অনেক পার্থক্যও রোয়েছে। কোর’আনের আয়াত (শুধুমাত্র আল্লাহর মুখের বাণী, বাক্য) এবং হাদীস। (বিশ্বনবীর কাজ, কথা, ভ্রমণ যুদ্ধ ইত্যাদি) যদি একই বইয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয় এবং গুলিয়ে ফেলা হয় তাহোলে কোর’আনে অবস্থা যা দাঁড়াবে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ গুলির সেই অবস্থা। বরং তার চেয়েও খারাপ অবস্থা হোয়ে দাঁড়িয়েছে আরও কয়েকটি কারণের জন্য। রসুলাল্লাহর (সা:) তীক্ষ্ণদৃষ্টি এবং প্রখর সতর্কতার জন্য আল্লাহর মুখের বাণী (আয়াত) সম্পূর্ণ আলাদা হোয়ে রোইলো। পূঁত পবিত্র হোয়ে তার প্রতিটি শব্দ সংরক্ষিত হলো চির দিনের জন্য। এই হলো কোর’আনের মো’জেজার প্রথম অংশ।

দ্বিতীয় অংশ- দেশী, বিদেশী কোন ইতিহাসবেত্তার সন্দেহ নেই যে মোহাম্মদ (সা:) নিরক্ষর ছিলেন। এই নিরক্ষর লোকটি তেইশ বছর ধোরে খণ্ডে খণ্ডে একটি বিরাট বই রচনা কোরলেন যা চৌদ্দশ’ বছর ধোরে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, দেশী-বিদেশী মহাপণ্ডিতদের গবেষণার বস্তু‘ হোয়ে রোয়েছে, যার উপর হাজার হাজার বই লেখা হোয়েছে। যে বইয়ের উপর গবেষণা কোরতে যেয়ে বহু মহাপণ্ডিত একে মানুষের সৃষ্ট হোতে পারে না বিশ্বাস কোরে শেষে ইসলামকে মেনে নিয়েছেন। ৯০ এর দশকে দু’জন নামকরা বিজ্ঞানী- একজন ফরাসি এবং একজন ইংরেজ শেষ নবী মোহাম্মদের (সা:) নবুয়তের উপর বিশ্বাস এনে মুসলিম জাতিতে যোগ দিয়েছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করায় তারা দু’জনেই বলেছেন, (তাদের কারও সঙ্গে কারও পরিচয় বা যোগাযোগ
ছিলো না) যে তারা বিজ্ঞানী হিসাবে আজকের বিজ্ঞানের আলোকে কোর’আনের উপর বহুদিন গবেষণা কোরে এই স্থি’র সিদ্ধান্তে উপনীত হোয়েছেন যে, এই মহাগ্রন্থ মানুষের রচিত হওয়া সম্ভব নয়। এই বইয়ে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক সত্য তারা পেয়েছেন তার কতক গুলি অতি সাম্প্রতিককালে আবিষ্কার এবং প্রমাণিত হোয়েছে। চৌদ্দশ বছর আগে একজন নিরক্ষর মানুষের পক্ষে, তিনি যতবড় চালাক লোকই হোননা কেন, এসব বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ কোরে যাওয়ার কথাই ওঠে না। এমন কি তিনি যদি নিরক্ষর না হোয়ে তদানিন্তন কালের পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীও হোতেন তবুও তা তার পক্ষে সম্ভব হতোনা, কারণ এসব তথ্য তখন আবিষ্কারই হয় নি। কাজেই এ কোর’আনের রচয়িতা একমাত্র সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা ছাড়া কেউ হোতে পারে না।

তৃতীয় অংশঃ এই কোর’আনে স্রষ্টা আল্লাহ মানুষ জাতিকে লক্ষ্য কোরে বোলছেন- তোমরা যদি মনে কর এই কোর’আন আমার কথা, বাক্য নয়, মোহাম্মদ (সা:) এটা রচনা কোরেছেন তবে তোমরা এই বইয়ের যেকোন একটা অধ্যায়ের (সূরা) মত একটি মাত্র অধ্যায় রচনা কোরে দেখাও যে তোমরাও এমন অধ্যায় রচনা কোরতে পার, কাজেই এটা মোহাম্মদের (সা:) রচনা হওয়া সম্ভব। এবং তা কোরতে তোমরা সকলে অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতি একত্র হোয়ে তোমাদের জ্ঞান, সাহিত্য, কবিত্বের সর্বশক্তি প্রয়োগ কোরে হলেও তা কোরে দেখাও। কোর’আনের স্রষ্টা অবিশ্বাসীদের, সন্দেহবাদীদের এই চ্যালেঞ্জ কোরে তারপর নিজেই বোলে দিচ্ছেন- তোমরা কখনোই তা পারবে না(আমি আমার বান্দাহর প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার মত কোন সূরাহ এনে দাও আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহবান কর। যদি তোমরা না পার এবং কক্ষনো পারবেও না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যা প্রস্তুত রয়েছে কাফেরদের জন্য।-আল-বাকারা-২৩,২৪ ) এখানে মনে রাখা দরকার যে, কোর’আনে এমন ছোট অধ্যায়ও আছে যা মাত্র ষোলটি শব্দ দ্বারা তৈরী হোয়েছে। চৌদ্দশ বছর পার হোয়ে গেছে আজ পর্য্যন্ত কোন মানুষ ষোলটি শব্দ এমন কোরে লিখতে পারলো না- যা জ্ঞানের গভীরতা, সাহিত্যে, রচনা শৈলীতে কোর’আনের সমকক্ষ হয়। কোর’আনকে মোহাম্মদের (সা:) রচনা প্রতিপন্ন কোরতে চেষ্টার লোকের অভাব আছে একথা আশা করি কেউ বোলবেন না। কোর’আনের স্রষ্টার এ চ্যালেঞ্জ চৌদ্দশ বছর আগের দেয়া। এবং এ চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে থাকবে যতদিন এই পৃথিবী ও মানুষ আছে। এ চ্যালেঞ্জের সময়সীমা নেই, অন্য কোন শর্ত্তও নেই। যদি ধোরে নেই কোর’আন আল্লাহর বানী নয়- মোহাম্মদ (সা:) নিজেই এর রচয়িতা তাহোলে প্রশ্ন আসে, তিনি এমন একটা চ্যালেঞ্জ কী কোরে দিলেন? তিনি চিন্তা কোরলেন না যে, অনাগত ভবিষ্যতে কেউ বা কারও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি হঠাৎ এমন কোন রচনা সৃষ্টি হোয়ে যায়- যা তার (সা:) রচিত সূরার সমান সাহিত্য হোয়ে যায়, বিশেষ কোরে যখন মাত্র ষোলটি শব্দের ছোট্ট অধ্যায়ও তিনি রচনা কোরেছেন, তাহোলে তো ঐ একটি মাত্র কারণেই তিনি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবেন। তাহোলে শুধু কোর’আনকেই যে তার (সা:) নিজের রচনা বোলে বলা হবে তাই নয়, তার সমস্ত কাজকেই মিথ্যা ও ধোঁকাবাজি বলার সুযোগ হোয়ে যাবে। এতবড় ঝুকি তিনি নিতে গেলেন কেন? ইতিহাসে আছে গত চৌদ্দশ’ বছরে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে বহু প্রয়াস প্রচেষ্টা হোয়েছে কোর’আনের ক্ষুদ্রতম সূরার সমকক্ষ একটি সূরা প্রনয়ন কোরতে। হয় নি, হবে না। যারা চেষ্টা কোরেছেন তারাই শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বোলেছেন- হয় না, দাবীও করেন নি হোয়েছে বোলে। ভবিষ্যতেও হবে না।

চতুর্থঅংশঃ তার কোর’আনে স্রষ্টা বোলছেন এই কোর’আনকে আমি (সমস্ত কিছু থেকে) রক্ষা করবো(নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক। -আল-হিজর-৯)। অর্থাৎ কেউ এর কোন কথা বদলাতে, কোন অংশ বাদ দিতে, কোন কিছু যোগ কোরতে পারবে না। এক কথায় অবতীর্ণ হবার সময় এ যা ছিলো তা থেকে এক একবিন্দু বদলাতে দেব না। এ ভার আমি নিজে গ্রহণ কোরলাম এবং এ দায়িত্ব আমি চিরদিন পালন কোরবো। মুসলিম অমুসলিম গবেষকদের কারোরই দ্বিমত নেই যে, আজ পৃথিবীময় মানুষ যে কোর’আন পড়ে তার সাথে শেষ প্রেরিত মোহাম্মদের (সা:) সময় যে কোর’আন পড়া হতো তার সাথে একটি চন্দ্রবিন্দুও তফাৎ নেই। সম্প্রতি রাশিয়ায় একটি কোর’আন পাওয়া গেছে যেটি প্রমাণিত হোয়েছে আমীরুল মো’মেনীন আলীর (রা:) নিজের হাতের লেখা বোলে। ঐ কোর’আনের সঙ্গে আমরা এখন যে কোর’আন পড়ি তার সাথে একটি অক্ষরের অমিল নেই। শুধু উচ্চারণের সুবিধার জন্য যে নুখতা গুলো পরে যোগ করা হোয়েছে সে গুলো ছাড়া। যেখানে পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থই অবিকৃত নেই, বহু গ্রন্থের অস্তিত্বই নেই, সেখানে চৌদ্দশ’ বছরে সম্পূর্ণ অবিকৃত থাকা কোর’আনের এক মো’জেজা।

এখানে মো’জেজার প্রসঙ্গে ছেড়ে দু’টো কথা বোলে নেই। প্রশ্ন হোচ্ছে এর আগেও তো আল্লাহর কাছ থেকে বই, কেতাব, জীবন বিধান বহন কোরে ধর্মগ্রন্থ এসেছে। বাইবেল, তোরাহ, এসব গুলোকে তো স্রষ্টা নিজেই স্বীকার কোরেছেন তারই পাঠানো বই বোলে(তিনি সত্য সহকারে তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্বতন কিতাবের সমর্থক এবং তিনি তাওরাত ও ইঞ্জীল অবতীর্ণ করেছেন । -আলে-ইমরান-৩) । কিন্তু ওগুলোকে রক্ষা করার ভার তিনি নেন নি কেন? যার ফলে ওগুলো বিকৃত হোয়ে গেছে, অনেক গুলো ধ্বংস হোয়ে গেছে? শুধু কোর’আনের বেলায় তিনি রক্ষাকর্ত্তা হোলেন কেন এর উত্তর হলো- এই কোর’আন, এই জীবন বিধান তার শেষ বই বোলে। এর আগের বই গুলো সম্বন্ধে তিনি জানতেন মানুষ ওগুলো বিকৃত কোরে ফেলবে, অনেক অংশ বাদ দিয়ে অনেক কিছু ইচ্ছামত যোগ কোরবে, অনেক বই যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদিতে ধ্বংস হোয়ে যাবে। তিনি নিজে ওগুলোর রক্ষার দায়িত্ব নেন নি এই জন্য যে, তিনি জানতেন তাকে পরে আবার তার প্রেরিত নবী পাঠাতে হবে, তার মাধ্যমে তার বাণী নতুন কোরে আবার মানুষকে জানাতে হবে। কিন্তু কোর’আন তার শেষ বাণী, পৃথিবীর মানুষের বাকি আয়ুকালের জন্য তার শেষ এবং পূর্ণ জীবন বিধান। এ যদি বিকৃত হয় তবে তাকে আবার রসুল পাঠাতে হবে, আবার তার বাণী পাঠাতে হবে মানুষের অনাগত বংশধরদের জন্য। তাহোলে শেষ নবী (সা:) আর শেষ নবী থাকবেন না।

কথাটা বোধহয় আরও একটু পরিষ্কার করা দরকার। আজ যদি কোন চিন্তাশীল হিন্দু (যদিও হিন্দু বোলে কোন ধর্ম নেই, আসলে ওটা সনাতন ধর্ম) তার ধর্মের বর্ত্তমান অবস্থায় অসন্তুষ্ট হোয়ে, সেটার প্রকৃত অবস্থা অর্থাৎ সেটা যখন অবতীর্ণ হোয়েছিলো সেই অবিকৃত খাঁটি অবস্থার অনুশীলন কোরতে চান তবে তিনি তা পারবেন না। কারণ তার বেদ আর সে বেদ নেই, অবতীর্ণ হবার সময় সেটা যা ছিলো। একথা তার ধর্মের পণ্ডিতরাই বোলবেন। ভগবত গীতা সহ অন্যান্য গ্রন্থেরও সেই একই কথা। গীতার বিশেষজ্ঞরাও তা স্বীকার করেন। গীতার অতি প্রসিদ্ধ অনুবাদক, ব্যাখ্যাকার ও টিকাকার শ্রী জগদীস চন্দ্র ঘোষ লিখছেন- “প্রাচীন ধর্মসূত্র গুলি অধিকাংশ পরিবর্ত্তিত ও পরিবর্দ্ধিত হইয়া ধর্মসংহিতা নাম ধারণ করিয়াছে।” সংহিতা গুলির মধ্যে মনুসংহিতাই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও প্রামাণ্য, অন্যান্য গুলি প্রাচীন নাম সংযুক্ত থাকলেও অপেক্ষাকৃত আধুনিককালে সঙ্কলিত হইয়াছে, সন্দেহ নাই।” “প্রাচীন বিধি সমূহ কতক পরিবর্দ্ধিত হইয়াছে, কতক সংশোধিত হইয়াছে এবং ভক্তিমার্গের অনুকুল অনেক নতুন ব্যবস্থাও বিধিবদ্ধ হইয়াছে।” “আবার মনুর অষ্টপ্রকার বিবাহ, দ্বাদশ প্রকার পুত্র ইত্যাদি বিষয়ক ব্যবস্থা পরবর্ত্তীকালে সম্পূর্ণ পরিবর্ত্তিত হইয়াছে।(শ্রী ভগবদগীতা- শ্রী জগদীসচন্দ্র ঘোষ সম্পাদিক (সপ্তম সংস্করণ হইতে পুনমুদ্রন) পৃঃ ১৩-১৪।)ত্রয়োদশ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোক ব্যাখ্যায় জগদীস বাবু লিখেছেন-“অনেকেই এই শ্লোকটি প্রক্ষিপ্ত বলিয়া মনে করেন ” (শ্রী ভগবদগীতা- শ্রী জগদীসচন্দ্র ঘোষ সম্পাদিক (সপ্তম সংস্করণ হইতে পুনমুদ্রন) পৃঃ ৪৭৪।)। “এই শ্লোকটি কেহ পরে বসাইয়া দিয়াছেন।” অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আজ যদি কেউ অমলিন, অবিকৃত সনাতন ধর্ম মতে নিজ জীবন চালনা কোরতে চান তবে তা তার পক্ষে অসম্ভব। অনুরূপভাবে যদি একজন খ্রীস্টান খ্রীস্টধর্মের বর্ত্তমান হাজার হাজার ভাগের (ফেরকা) কোনটি সঠিক তা জেনে সেইটা পালন কোরতে চান, তাও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ ঈসা (আ:) যে আরামাইক ভাষায় কথা বোলতেন সে ভাষায় আজ কোন বাইবেল নেই, আজকের সব বাইবেল একটি মানুষ রচিত বইয়ের অনুবাদ মাত্র। সুতরাং- ঈসা (আ:) যা শিক্ষা দিয়েছিলেন তা আজ পৃথিবীতে নেই। বাইবেল নিয়ে বহু গবেষণা কোরেছেন এমন পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকেরই অভিমত তাই। ঠিক এমন অবস্থা যাতে কোন মুসলিমের না হয় সেই জন্য স্রষ্টা তার শেষ বইয়ের রক্ষার ভার নিজে নিয়েছেন। যেসব বিকৃতি আসার ফলে পূর্ববর্ত্তী অন্যান্য ধর্ম বাতিল কোরে আল্লাহ নতুন নবী পাঠিয়েছেন সেই সব বিকৃতি এই শেষ দীনেও এসে গেছে। কিন্তু আজ যদি কেউ এর এই বিকৃত আকীদা ছুড়ে ফেলে এর প্রকৃত অনুসারী হোতে চায় তবে তার জন্য অবিকৃত কোর’আন রোয়েছে। যা অনুসরণ কোরে সে বা তারা মহানবী (সা:) যে দীন আমাদের জন্য রেখে গেছেন সেই দীন জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরতে পারে। আল্লাহ যদি তার এই শেষ বই সমস্ত রকম বিকৃতি থেকে রক্ষা না কোরতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, অন্যান্য ধর্মের পুরোহিতদের মত এ ধর্মের পুরোহিত-পণ্ডিতরাও বহু আগেই আগের ধর্মগ্রন্থ গুলির মত এই কোর’আনকেও বিকৃত কোরে ফেলতেন এবং সুতরাং কয়েকশ বছর আগেই স্রষ্টাকে আবার রসুল পাঠাতে হতো। কোর’আন মানব জাতির জন্য শেষ জীবন বিধান বোলেই আল্লাহকে এর রক্ষক হোতে হোয়েছে।

পঞ্চম অংশঃ আল্লাহ তার মুখের বাণী কোর’আন সম্বন্ধে বোলছেন- নিশ্চয়ই আমরা কোর’আনকে স্মৃতিবদ্ধ, মুখস্ত করার জন্য সহজ কোরে দিয়েছি। অর্থাৎ কোর’আনের এক মো’জেজা চিহ্ন বৈশিষ্ট্য হলো এই, যে কেউ চেষ্টা করলে একে মুখস্ত কোরতে পারবে। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে বিশ্বনবীর (সা:) সময়েই অর্থাৎ যখন কোর’আন অবতীর্ণ হোচ্ছিলো তখন থেকেই মানুষ এই মহাগ্রন্থ মুখস্ত কোরতে শুরু কোরেছিলো। অবতীর্ণ শেষ হওয়ার অর্থাৎ মহানবীর (সা:) ইন্তিকালের মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই ইয়ামামার যে যুদ্ধ হলো তাতে আটশ হাফেজ (অর্থাৎ যারা প্রথম থেকে শেষ পর্য্যন্ত সমস্ত কোর’আন স্মৃতি থেকে আবৃত্তি কোরতে পারেন) শহীদ হোয়ে ছিলেন। একটি মাত্র যুদ্ধে যদি অতজন হাফেজ শহীদ হোয়ে থাকেন তবে তখনই মোট হাফেজের সংখ্যা কত ছিলো? তারপর যখন উম্মতে মোহাম্মদী শেষ জীবন ব্যবস্থা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর চারিদিকে সম্প্রসারিত করলো তখন আরবের বাইরের দেশ গুলির মধ্যে যারা এ জীবন পথ গ্রহণ কোরলেন তাদের মধ্যে হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ হাফেজ সৃষ্টি হোতে লাগলো।

চৌদ্দশ’ বছর পার হোয়ে গেছে। আজ তথাকথিত মুসলিম জাতি মহানবীর (সা:) মাধ্যমে প্রেরিত প্রকৃত ইসলাম থেকে বহু লক্ষ মাইল দূরে সরে গেছে, শুধু এর খোলসটা কোনমতে ধোরে আছে, এবং বর্ত্তমান পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতি বোলে চিহ্নিত। কিন্তু কোর’আনের ঐ বৈশিষ্ট্য, ঐ মো’জেজা তার জায়গায় ঠিক তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। আজও পশ্চিমে আটলান্টিকের কুল থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের কুল পর্য্যন্ত এই ভুখণ্ডে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যারা সাড়ে ছিয়াশী হাজার শব্দের এই বিরাট বইটাকে স্মৃতি থেকে নির্ভুল ভাবে আবৃত্তি কোরতে পারেন। এর বাইরেও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে এমন বহু মানুষ আছেন এদের মধ্যে যুবক, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ এমন কি সাত আট বছরের ছেলেমেয়েও আছে। বাইবেল কেউ মুখস্ত কোরতে পেরেছেন?
বেদ, গীতা মুখস্ত কোরতে পেরেছেন? আমার জানা নেই। যদি কেউ কোরেও থাকেন তবে তা ব্যতিক্রম, কোর’আনের মত লক্ষ লক্ষ লোক নয়। আরও অদ্ভুত ও আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই যে, আরবের বাইরে যে লক্ষ লক্ষ হাফেজ আছেন, তাদের মাতৃভাষা আরবী নয়, এবং এদের মধ্যে বহু আরবী ভাষাও জানেন না। আরবীতে এক লাইন কথা বোলতে পারেন না। বহু আছেন যারা লেখাপড়াই জানেন না। শুধু অন্যের পড়া বা আবৃত্তি কানে শুনে শুনে এই বিরাট বই স্মৃতিবদ্ধ ও মুখস্ত কোরেছেন। এ যদি মো’জেজা না হয় তবে মো’জেজা কি? অলৌকিক কি?

ষষ্ঠ অংশঃ মুসার (আ:) ইতিহাস বোলতে যেয়ে আল্লাহ তার বইয়ে বোলছেন- যখন ফেরাও মুসার পেছনে ধাওয়া কোরে সৈন্য সামন্ত নিয়ে লোহিত
সাগরের কুলে এলো, আল্লাহর আদেশে মুসা (আ:) তার লাঠি দিয়ে সমুদ্রকে আঘাত কোরলেন, সমুদ্র দু’ভাগ হোয়ে ইসরালীদের পথ কোরে দিল। মুসা (আ:) সেখান দিয়ে পার হবার পর ফেরাউন তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে সমুদ্রে নেমে পড়লো তখন আল্লাহর হুকুমে সমুদ্র দু’দিক থেকে তাদের উপর গড়িয়ে পড়ে সবাইকে ডবিয়ে মারলো। ফেরাউন যখন দেখলো তার বাহিনী তার সামনে ধ্বংস হোয়ে গেলো এবং তারও বাঁচার সম্ভাবনা নেই তখন সে বললো- ইসরাইলীদের আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু নেই এবং আমি তার কাছে আত্মসমর্পন কোরলাম। তখন আল্লাহ বোললেন- কী! এত অবাধ্যতা, এত অন্যায় করার পর? তারপর দয়াময় বোললেন- আচ্ছা, আজ আমি এই দয়া করবো যে, ‘তোমার শরীর আমি রক্ষা করবো এবং তা তোমার পর অনাগত সময়ের মানুষের জন্য একটা নিদর্শন হোয়ে রোইবে’। এই সম্বন্ধে আল্লাহ এও বোললেন যে- অধিকাংশ মানুষ আমাদের নিদর্শন দেখেও তা পরোয়া করে না(সুরা-ইউনুস-৯২,৯৩)। মিশরে পুরানো কবর খুড়ে খুড়ে অনেক মমী বের কোরেছেন প্রত্মতাত্বিকেরা। ওর মধ্যে বেশ কয়েকজন ফারাওয়ের মমীও বের
হোয়েছে। কতক গুলিকে সনাক্ত করা গেছে, কতক গুলিকে যায় নি। গত ১৮৯৮ খ্রীস্টাব্দে একজন ফেরাওয়ের মমী করা দেহ পাওয়া গেছে, যেটিকে প্রত্মতাত্ত্বিক পণ্ডিতেরা সনাক্ত কোরেছেন সেই ফেরাও বোলে, যে মুসা (আ:) কে অনুসরন কোরে লোহিত সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিলো। এ পণ্ডিতরা কিন্তু কেউই মুসলিম নন, সবাই খ্রীস্টান এবং ঐ সনাক্তকরণ অন্যান্য পণ্ডিতরা স্বীকার কোরে নিয়েছেন। চৌদ্দশ’ বছর আগে একটি বইয়ে লেখা হলো তখন থেকে তিন হাজার বছর আগের একটি ঘটনার কথা এবং লেখার তেরশ’ বছর পর অর্থাৎ ঘটনার সাড়ে চার হাজার বছর পরে সেই ঘটনার সত্যাতা প্রমাণিত হলো। ঐ বইটি কে লিখেছেন? চৌদ্দশ’ বছর আগে আরবের মরুভুমির এক নিরক্ষর মানুষ- না সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা যিনি স্বয়ং ফেরাওকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন? এর জবাবও দিতে হবে? আল্লাহর দেয়া জ্ঞান, বিচারবুদ্ধির অপব্যবহার কোরে যারা বলে মোহাম্মদ (সা:) বাইবেল থেকে বিষয় বস্তু
নিয়ে কোর’আন রচনা কোরেছেন, তাদের প্রশ্ন কোরছি যে, বাইবেলে ফেরাওয়ের দেহ রক্ষা করার কথা আছে কি? তার দেহ অনাগত ভবিষ্যতের মানুষের জন্য স্রষ্টার অস্তিত্ব ও কোর’আনের সত্যতার প্রমাণ হিসাবে রক্ষা করার কথা আছে কি? কোন জবাব দেয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়, কারণ বাইবেলে তো নেই-ই, কোর’আন ছাড়া আর কোথাও নেই। ফেরাওয়ের দেহ রক্ষা করার কথা ঘোষণা কোরে আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে বোলছেন- অধিকাংশ মানুষ আমাদের নিদর্শন, প্রমাণ দেখেও তা দেখে না, পরোয়া করে না । চিন্তা কোরে দেখুন, তার এ কথাও সত্য কিনা! কোর’আনের এমন সব অলৌকিক প্রমাণ দেখেও কোটি কোটি মানুষ এ যে স্রষ্টার মুখের বাণী ছাড়া আর কিছুই হোতে পারে না তা বিশ্বাস কোরছেনা।

সমস্ত বিশ্বের মানুষের জীবন-বিধান এই কোর’আন এবং যতদিন এই পৃথিবী ও মানুষ আছে ততদিনের জন্য। এ হোচ্ছে মানুষের জন্য চিরস্থায়ী সংবিধান, সনাতন ধর্ম। এই সংবিধানে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং সামগ্রিকভাবে মানুষ জাতির জন্য জীবনবিধান নির্দিষ্ট কোরে দেয়া হোয়েছে। ওরই মধ্যে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, দণ্ডবিধি ইত্যাদি এক কথায় মানুষের যত রকম প্রয়োজন হোতে পারে তার মৌলিক নীতি, পথ নির্দেশ রোয়েছে। প্রশ্ন হোতে পারে, এ নীতিমালা সর্বকালের জন্য কি কোরে হোতে পারে? যেখানে মানুষ জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হোচ্ছে, তার সমস্ত পারিপার্শ্বিকতা বদলে যাচ্ছে, বিবর্ত্তন হোয়ে চোলছে, সেখানে চৌদ্দশ” বছর আগে দেয়া আইন কানুন, জীবন ব্যাবস্থা কি কোরে বর্ত্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য হোতে পারে? এ প্রশ্ন হোয়েছেও। শুধু হোয়েছে তাই নয়, এবং তা সম্ভব নয় মনে কোরে প্রায় সম্পূর্ণ ‘মুসলিম’ জাতি এবং এর ‘মুসলিম’ রাষ্ট্র গুলি কোর’আনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আইন-কানুন ও দণ্ডবিধি পরিত্যাগ কোরে খ্রীস্টানদের মত শুধু ব্যক্তিগত নির্দেশ, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ কোরে রেখেছে। এরা যদি সত্যান্বেষী মন নিয়ে কোর’আন পড়তেন তবে দেখতে পেতেন যে, যিনি এই মহা সংবিধান রচনা কোরেছেন তিনি তার আদেশ নির্দেশ দেবার সময় সর্বক্ষণ মনে রেখেছেন যে, তার এই আদেশ নির্দেশ, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি মানুষের অস্তিত্বের শেষ পর্য্যন্ত কার্যকর থাকতে হবে। সুতরাং এতে এমন কোন আইন আদেশ নিষেধ
থাকতে পারবে না যাস্থান বা কালের কারণে অচল হোয়ে যেতে পারে। তাহোলে তাকে আবার নতুন প্রেরিত এবং নতুন আইন পাঠাতে হবে। এরা দেখতে পেতেন যে, কোর’আনের সমস্ত আদেশ বুনিয়াদী, ভিত্তিমূলক অর্থাৎ যে সব সত্য স্থান, কাল, পাত্রভেদে তফাৎ হয় না, যা সর্বকালে সর্ব অবস্থায় সত্য, প্রযোজ্য। খুব স্থুল উদাহরণ দিচ্ছি- স্রষ্টা বোলেছেন- তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হোয়ে আমার দেয়া রজ্জুকে (দীন, জীবনব্যবস্থা) ধোরে রাখ এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হোয়ো না(সুরা-আলে-ইমরান-১০৩)। অর্থাৎ বোলছেন ঐক্যবদ্ধ হোয়ে থাকো। ঐক্য বিচ্ছিন্নতার চেয়ে শক্তিশালী। বিচ্ছিন্ন দশজনের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ দশজন অনেক শক্তিশালী এ কথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য একথাও যে আজ থেকে লক্ষ বছর আগেও তা সত্য ছিলো এবং আজ থেকে লক্ষ বছর পরেও তা তেমনিই সত্য থাকবে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতার চেয়ে ঐক্য শক্তিশালী একথা চিরন্তন সত্য, শাশ্বত সত্য, এর কোন পরিবর্ত্তন নেই, হোতে পারে না। আগুনে হাতে দিলে হাত পুড়বে একথা কি কোনদিন অসত্য ছিলো বা ভবিষ্যতে হবে? কোর’আন শুধু এমনি চিরন্তন সত্যে পূর্ণ। এতে এমন একটি আদেশ নির্দেশ নেই যাস্থান, কাল, পাত্রভেদে অচল বা অকার্যকর।

আরও একভাবে কোর’আন অন্য ধর্মগ্রন্থ গুলি থেকে ভিন্ন। সেটা হলো, যেহেতু এটা শুধু বর্ত্তমানের জন্য নয়, মানুষের ভবিষ্যতের জন্যও, সেহেতু তার মধ্যে অবশ্যই অনেক কিছুই থাকবে যা আমরা বর্ত্তমানে বুঝতে পারবোনা। কথাটার ব্যাখ্যা দরকার। মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান কখনও এক স্থানে দাঁড়িয়ে নেই, তা বিবর্ত্তনের মধ্য দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। যে বই বর্ত্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছু আবৃত কোরবে তার মধ্যে এমন সব বিষয় থাকতে বাধ্য যা সময়ের বিশেষ কোন বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সবটা বোঝা যাবে না। আজ যদি কেউ বলে যে একটা মাত্র বোমা মেরে পঞ্চাশ লক্ষ লোকের বসতিপূর্ণ একটি শহর পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন কোরে দেয়া যায় তবে কি কেউ প্রতিবাদ কোরবে? কেউ না, কারণ দু’টি বোমা মেরে হিরোশিমা
আর নাগাসাকী শহর দু’টো নিশ্চিহ্ন কোরে দেয়া হোয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আজ মানুষের হাতে যে পারমানবিক বোমা আছে তা দিয়ে এই পৃথিবীটাই ধ্বংস কোরে দেয়া যায় কিন্তু মাত্র ৭০ বছর আগে কেউ একথা বোললে বা লিখলে লোকে তাকে পাগল ভাবতো। আবার কেউ যদি আজ থেকে মাত্র ৩০ বছর আগে বলতো যে, সে একলক্ষ বই তার এক আঙ্গুলের উপর নিয়ে ঘুরতে পারে, তাহলে মানুষ তাকে কি বলতো? বিশ্ব চাপাবাজ বলতো নিশ্চয়, কিন্তু আজ দেখুন এটা খুবি সাভাবিক।

কোর’আনে আল্লাহ মোশরেক ও কাফেরদের তুলনা দিয়েছেন মাকড়সার বাসার সঙ্গে। বোলেছেন তাদের অবস্থা হলো মাকড়সার বাসার মত। এ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে একজন জার্মান বিজ্ঞানী (নাম মনে নেই) কোর’আন পড়াশোনা কোরতে যেয়ে এই আয়াতের দিকে তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। তার মনে আসে মুসলিমদের আল্লাহ ভঙ্গুরত্বের তুলনা দিতে বেছে বেছে মাকড়সার বাসার কথা বোলছেন কেন? মাকড়সার বাসাই পৃথিবীর সব রকম বাসার মধ্যে ভঙ্গুরতম কিনা। এই একটি মাত্র আয়াত নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পর তিনি মুসলিম হোয়ে গেলেন এবং কারণ হিসাবে লিখলেন- কয়েক বছর গবেষণা কোরে তিনি দেখলেন পৃথিবীতে ছোট বড় পশু পাখিরা এবং পোকা ইত্যাদি যত রকম আবাসস্থল তৈরী করে কোনটাই মাকড়সার বাসার মত ভঙ্গুর নয়। তার মনে হলো এই সত্য আরবের মরুভুমির একজন নিরক্ষর মানুষ মাকড়সার বাসা যে পৃথিবীতে যত রকম বাসা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, নরম আর ভঙ্গুর(সুরা-আনকাবুত-৪১) জানলেন কি কোরে? তারপর তার মনে এ বিশ্বাস জন্মালো যে তা সম্ভব নয়। একমাত্র যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তিনিই জানেন পৃথিবীতে তিনি সবচেয়ে ভঙ্গুর কি সৃষ্টি কোরেছেন এবং কোর’আন নিশ্চয়ই তারই বাণী এবং কোর’আন মোহাম্মদের (সা:) রচনা হোতে পারে না। এমনিভাবে কোর’আনে অনেক কিছুই আছে যা অবতীর্ণ হবার সময় বোঝা যায় নি কারণ জ্ঞান, বিশেষ কোরে বিজ্ঞান তখন অতি প্রাথমিক পর্য্যায়ে ছিলো। আজ জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ জাতি আরও সম্মুখে এগিয়েছে এবং নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার কোরে দেখছে যে স্রষ্টা চৌদ্দশ’ বছর আগেই তা কোর’আনে বোলে রেখেছেন যে গুলো বর্ত্তমান তথ্য আবিষ্কার হবার আগে বোঝা সম্ভব ছিলো না। শুধু একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আল্লাহ বোলেছেন- আমি পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী পানি থেকে সৃষ্টি কোরেছি(আল্লাহ পানি হতে সমস্ত জীবন সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক পেটের ভরে চলে, কতক দু’পায়ের উপর চলে, আর কতক চার পায়ের উপর চলে। আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ের উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।-আন-নূর-৪৫)। আজ বিজ্ঞান দেখছে যে তার এই বাণী দুভাবে সত্য। এক. চিকিৎসা বিজ্ঞান জানতে পেরেছে যে, সমস্ত প্রাণীর দেহের ৭৫ থেকে ৯৬ ভাগই পানি। এমন কি উদ্ভিদ জাতীয় সব কিছুরই প্রধান ভাগ পানি। দুই. পৃথিবীর প্রথম প্রাণ সৃষ্ট হয় সমুদ্রে, অর্থাৎ পানিতে।

কোর’আনে আগামী সমস্ত সময়ের জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন হবে সবই দেয়া আছে। মানুষের জ্ঞান ধীরে ধীরে যতই বাড়তে থাকবে ততই কোর’আনের আয়াত গুলির অর্থ বোঝা যেতে থাকবে। সম্পূর্ণ কোর’আন যে আজ বোঝা যেতে পারে না, কারণ অনাগত ভবিষ্যতের মানুষের জন্য অনেক তথ্য আল্লাহ এর মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন, এই সত্যটি আমাদের পণ্ডিতরা, মুফাস্সিররা উপলব্ধি কোরতে পারেন নি। ফলে তারা এর প্রতিটি আয়াতের তফসীর অর্থাৎ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা কোরেছেন। বিভিন্ন মুফাস্সির বিভিন্ন অর্থ, ব্যাখ্যা কোরেছেন, ফলে নানা মত-অভিমত সৃষ্টি হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হোয়ে গেছে এবং কোন কোন ব্যাখ্যা অদ্ভুত ও অগ্রহণযোগ্য হোয়ে গেছে। কোর’আনের মো’জেজার সপ্তম অংশ তারই এক উদাহরণ।

সপ্তম অংশঃ স্রষ্টা আল্লাহ তার বাণী, আয়াত গুলি যখন তার সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ দূতের (সা:) উপর অবতীর্ণ কোরতে আরম্ভ কোরলেন তখন প্রথম দিকেই মুদ্দাসসির অধ্যায়ে (সূরা) মানব জাতিকে সাবধান কোরে দিলেন যে, তারা যেন একে মানুষের রচনা বোলে মনে না করে। বোললেন- “যারা এই আয়াত সমষ্টি অর্থাৎ কোর’আনকে অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান কোরবে, এর প্রতি ভ্রুকুঞ্চিত কোরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে এবং বোলবে এসব পুরনো যাদু এবং মানুষের তৈরী রচনা- তাদের আমি এমন আগুনে নিক্ষেপ করবো, যে আগুন তাদের না ছাড়বে, না এতটুকু রেহাই দেবে(সূরা-মুদ্দাসির-২১-২৮)

এটুকু বুঝলাম, না বোঝার কিছু নেই। যখন কোর’আন অবতীর্ণ হোয়েছিলো তখন যারা ছিলেন তারাও বুঝেছেন। কিন্তু ঠিক তার পরের আয়াতটিতে বোলেছেন “এর উপর ঊন্নিশ”(সুরা-মুদ্দাসির-৩০) একি কথা? আগের কথার সাথে, আগের আয়াত গুলির অর্থের সাথে মিল, সামঞ্জস্য কিচ্ছু নেই, হঠাৎ বোলছেন, “এর উপর ঊন্নিশ”। কিসের ঊন্নিশ, কার উপর ঊন্নিশ? গত চৌদ্দশ বছর যারা কোর’আন পড়েছেন তারা এই আয়াতে এসে থমকে দাঁড়িয়েছেন। এ আবার কি? আপাতদৃষ্টিতে বেখাপ্পা এই আয়াতকে কোর’আন থেকে বাদও দেয়া যায় নি। কারণ স্বয়ং আল্লাহ এর রক্ষক, হেফাযতকারী। অন্য সব আয়াতের মত মুফাস্ফিররা এরও ব্যাখ্যা কোরতে চেষ্টা কোরেছেন, কারণ তারা এটা উপলব্ধি করেন নি যে ঐ আয়াত চৌদ্দশ’ বছর পরের মানুষের জন্য আল্লাহ দিয়েছেন, যখন মানুষ কম্পিউটার নামে এক যন্ত্র তৈরী কোরবে। তার আগে ঐ আয়াতের অর্থ বোঝা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই সত্য না বোঝার ফলে মুফাস্সিররা এর ব্যাখ্যার চেষ্টা কোরেছেন এবং স্বভাবতই এক একজন এক এক রকম ভুল ব্যাখ্যা কোরেছেন। যেমন দোযখের উন্নিশ জন ফেরেশতা আছে ইত্যাদি। জাহান্নামে মাত্র উন্নিশ জন ফেরেশতা? ওখানে কোটি কোটিরও বেশী ফেরেশতা। মহানবীকে (সা:) ঐ আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করা হোয়ছিলো কিনা জানিনা, হাদীসে পাইনি। জিজ্ঞেস করা হোলেও তিনি তার জবা দিতেন না বোধহয়, কারণ ঐ আয়াত তদানিন্তন মানুষের জন্য ছিলো না, ছিলো কম্পিউটারের যুগের মানুষের জন্য, যেমন আরও বহু আয়াত আছে যে গুলো আজ থেকেও ভবিষ্যতের মানুষের জন্য এবং যে গুলোর অর্থ আমরা আমাদের বর্ত্তমানের জ্ঞান দিয়ে হাজার চেষ্টা কোরলেও বুঝবোনা। ৭০ এর দশকে আরেক গবেষক মহাপণ্ডিত ডঃ রাশাদ খলিফা এই আয়াতের উপর গবেষণা আরম্ভ কোরলেন আমেরিকায়। আগের মুফাস্সিরদের গবেষণার সঙ্গে এর গবেষণার একটা বড় তফাৎ রোইলো। সেটা হলো ডঃ খলিফা বিজ্ঞানের তদানিন্তন নতুন আবিষ্কার কম্পিউটারকে কাজে লাগালেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে নানা রকম হিসাব করে ডঃ খলিফা এক আশ্চর্য আবিষ্কার কোরলেন। তিনি যা আবিষ্কার কোরলেন তা অতি সংক্ষেপে হলো এই- সমস্ত কোর’আন এই ঊন্নিশ সংখ্যার একটা আশ্চর্য হিসাবে বাধা। কোর’আনের প্রধান প্রধান তো বটেই এমনকি অনেক ছোট খাট বিষয় গুলি পর্য্যন্ত এই উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা। ও গুলো সব উন্নিশ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য। প্রথমে ধরুন কোর’আন যে বাক্যটি দিয়ে আরম্ভ হোয়েছে অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম’ এতে উন্নিশটি অক্ষর আছে। এই বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম বাক্যটি কোর’আনে ১১৪ বার আছে, প্রত্যেক সূরার আরম্ভে এবং সুরা নামলের মধ্যে। এই ১১৪ সংখ্যা উন্নিশ দিয়ে বিভাজ্য। (১৯ x ৬) = ১১৪। সম্পূর্ণ কোর’আন কেমন কোরে এই উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা, এমন কি এর কতক গুলি অধ্যায়ের (সূরার) আরম্ভে যে মুকাত্তায়াত অর্থাৎ অক্ষর গুলি আছে সে গুলির হিসাবও এই উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা তা সবিস্তারে এখানে লেখা সম্ভব নয়। এজন্য ডঃ রাশেদ খলিফার The Perpetual Miracle of Muhammad বইটি পড়লে হিসাবটির পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন হোচ্ছে প্রায় সাড়ে ছিয়াশী হাজার শব্দের একটি বই তেইশ বছর ধোরে যদি কোন মানুষ রচনা করেন তবে তার মধ্যে নিজের বক্তব্য, ভাষার সৌন্দর্য্য ইত্যাদি ঠিক রেখে সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে কোথাও অমিল, বিরোধীতা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সেই সঙ্গে এই বিরাট বইটিতে ঊন্নিশ সংখ্যার একটা আশ্চর্য বাধনে বেধে দেয়া কোন মানুষের পক্ষে কি সম্ভব? বিশেষ কোরে ঐ মানুষটি যদি ইতিহাসের ব্যস্ততম মানুষ হন যিনি নিরবচ্ছিন্ন প্রবল প্রতিরোধের মুখে একটি সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে নতুন সমাজ, নতুন জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত কোরেছিলেন, মানব জাতির ইতিহাসের গতিপথ
পরিবর্ত্তন কোরেছিলেন, দশ বছরে আটাত্তরটি যুদ্ধ পরিচালনা কোরেছিলেন, ২৭ টিতে নিজে অংশ গ্রহণ কোরেছিলেন, বিশেষ কোরে ঐ মানুষটি যদি নিরক্ষর হন? যদি সম্ভব না হয় তবে দু’টি মাত্র সম্ভাবনা থাকে। সেই বিশ্ব সৃষ্টির প্রশ্নের মত অর্থাৎ এই হিসাবটা আকিষ্যকভাবে হোয়ে গেছে, আর যদি তা না হোয়ে থাকে তবে অবশ্যই এই কোর’আনের রচয়িতা হোলেন স্বয়ং আল্লাহ। এই প্রশ্ন সমাধানে ডঃ রাশেদ খলিফা কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েছেন, যে যন্ত্রের হিসাবের উপর নির্ভর কোরে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতা চোলছে, যে যন্ত্রের হিসাবের উপর নির্ভর কোরে মানুষ চাঁদে গেছে, মঙ্গল গ্রহে, শনি গ্রহে এবং মহাকাশে রকেট পাঠিয়েছে। তিনি এই সমস্ত তথ্য কম্পিউটারে প্রবিষ্ট কোরিয়ে প্রশ্ন রাখলেন সমস্ত বইটাতে ওমুক ওমুক ভাবে উন্নিশ সংখ্যার হিসাবে বেধে যাওয়াটা আকিষ্যকভাবে হোয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? কম্পিউটার হিসাব কোরে জবাব দিলো ৬২৬০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ এর মধ্যে ১, অর্থাৎ ৬২৬ লিখে তারপর চব্বিশটা শূণ্য যোগ করলে যে সংখ্যা হয় ততবারের মধ্যে মাত্র এক। এক কথায় অমনটি আকিষ্যকভাবে হওয়াটা অসম্ভব। বাকি রইলো এই হিসাবে সমস্ত কোর’আনকে বেধে দেয়ার কাজটা কোরেছেন হয় রসুলাল্লাহ (সা:) আর না হয় আল্লাহ। পেছনে দেখিয়ে এসেছি এটা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, কাজেই একমাত্র সিদ্ধান্ত হলো এটা কোরেছেন স্বয়ং স্রষ্টা। এবং তাই এত বড় প্রমাণ সত্বেও যারা একে আল্লাহর মুখের কথা বোলে বিশ্বাস কোরবে না তাদের জন্য বোলেছেন- তাদের আমি এমন আগুনে নিক্ষেপ করবো যে আগুন তাদেরকে না ছাড়বে, না এতটুকু রেহাই দেবে(সূরা-মুদ্দাসির-২৮)

Leave a Reply