You are currently viewing জাতির মধ্যে বিভেদ

জাতির মধ্যে বিভেদ

জাতির মধ্যে বিভেদ

এই যে জাতিটি, যেটি নিজেদের মো’মেন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বোলে বিশ্বাস করে এবং মরক্কো থেকে ফিলিপাইন পর্য্যন্ত এক বিরাট মৃতদেহের মত পড়ে আছে, একে খণ্ড খণ্ড কোরে ভাগ কোরে নিয়ে শাসন ও শোষণ কোরে ছেড়ে যাবার পর বর্ত্তমানে এর অবস্থা কী রকম তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার। তা কোরতে গেলে প্রথমে যে জিনিষটি চোখে পড়বে সেটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্তি। শেষ জীবন-ব্যবস্থা, ইসলামের শেষ সংষ্করণ যে সমস্ত অন্যায় পৃথিবী থেকে মিটিয়ে দিতে আল্লাহ তার শেষ নবীর (সা:) উপর অবত্তীর্ণ কোরলেন তার অন্যতম হলো, ভৌগোলিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কারণ মানুষে মানুষে প্রভেদ সৃষ্টি, সমষ্টিগতভাবে মানুষে মানুষে সংঘর্ষ ও রক্তপাতের অর্থাৎ সাফাকুদ্দিমার জন্য যে কয়টি কারণ প্রধানতম তা হলো, গায়ের রং, ভাষার বিভিন্নতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি কোরে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। শেষ ইসলাম এই তিনটি প্রকারের প্রভেদ গুলির প্রত্যেকটিকে সরাসরি অস্বীকার কোরেছে। দ্বিতীয়তঃ বিশ্বনবী (সা:) সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত হোয়েছেন, কাজেই তার নবুয়ত পাওয়ার দিনটি থেকে পৃথিবীর শেষ দিন পর্য্যন্ত সমগ্র মানব জাতি তত্ত্বীয়, ধারণাগতভাবে (Theoretically) তার (সা:) উম্মাহ, মানুষ তাকে (সা:) স্বীকার করুন বা না কোরুন। ঐ তিন রকমের প্রভেদ স্বীকার কোরলে ঐ উম্মাহ অর্থাৎ মানব জাতির মধ্যে বিভাজনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যার অবধারিত ফল হোচ্ছে বিভেদ ও বিবাদ সৃষ্টি। অথচ জীবন-ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হোচ্ছে মানুষের জন্য অবিচার, অশান্তি ও রক্তপাত বন্ধ করা। কাজেই গায়ের রং, ভাষা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদির উপর ভিত্তি কোরে কোন ব্যবস্থা ইসলাম স্বীকার করে না, কোরতে পারে না। ইসলাম স্বীকার করে না অর্থই আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) স্বীকার করেন না। সুতরাং তা স্বীকার করা শেরক ও কুফর। শেষ ইসলাম যে এই বিভেদ স্বীকার করে না ও এই শেষ দীনে যে এর কোন স্থান নেই তার প্রমাণ এর ইতিহাস। বিশ্বনবীর (সা:) সহচর, আসহাব (রা:) ও পরবর্ত্তীতে তার উম্মাহর মধ্যে ঐ তিন রকমের প্রভেদ একেবারে ধুয়েমুছে একাকার হোয়ে গিয়েছিলো। নিগ্রো বেলাল (রা:), আর আরবদের চিরাচরিত জাত শত্রুর দেশের পারস্যের সালমান ফারসী (রা:), এই উম্মাহর নেতৃস্থানীয় হোয়ে গিয়েছিলেন। বর্ত্তমান ‘মুসলিম’ দুনিয়া ঐ শেরক ও কুফরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ডুবে আছে।

এই গেলো রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিভেদ। তারপর পণ্ডিতদের কার্য ফলে ঐ ভৌগোলিক ও ভাষাগত ভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির মধ্যকার ‘মুসলিম’রা নানা মাযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত। একে অপরের বিরুদ্ধে সর্বদা লেগে আছেন। ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় ফতোয়া নিয়ে এরা নিজেদের মধ্যে কঠিন দেয়াল তুলে রেখেছেন, ঐক্য ভেঙ্গে ফেলেছেন। এই গেলো শরিয়াহগত ভাঙ্গন, দৈহিক ভাঙ্গন। তারপর একপেশে, বিকৃত সুফীবাদের অনুসারীরা আত্মার দিক থেকে এই জাতিকে বিভিন্ন তরিকায় বিভক্ত কোরে ভেঙ্গে ফেলেছেন। রাজনৈতিকভাবে, রাষ্ট্রগতভাবে, শরিয়াহগতভাবে, এবং এমনকি আত্মিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত জাতির রোইল কি? কিছুই না। একটা উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন জনসংখ্যা।
আল্লাহ বোলেছেন, – তোমরা একত্র হোয়ে আমার দেয়া এই রজ্জু (জীবন ব্যবস্থা, দীন) ধরে রেখো এবং নিজেরা বিচ্ছিন্ন হোয়ো না – সুরা আলে ইমরান- ১০৩
আল্লাহ এ কথা বোলেছেন এই জন্য যে, ঐক্যহীন, বিভক্ত কোন জাতি, জাতি কেন, কোন কিছুই মূল্যহীন। এমন কি একটা পরিবার পর্য্যন্ত ধ্বংস হোয়ে যাবে যদি তার মধ্যে ঐক্য না থাকে। আল্লাহ বোলেছেন উপরের ঐ কথা,
ঐক্য নষ্টকারীদের জন্য রেখেছেন ইহ-পরকালে কঠিন শাস্তি – সুরা আলে ইমরান- ১০৫
তার রসুল (সা:) বহুভাবে সাবধান বাণী উচ্চারণ কোরেছেন ঐক্য নষ্ট না করার। কিন্তু কিছুই হয় নি। যতভাবে ভাঙ্গা সম্ভব, সর্বভাবে এই জাতির
ঐক্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা হোয়েছে। আল্লাহ ও রসূলের (সা:) ঐ মহা গুরুত্বপূর্ণ বাণীকে রসাতলে দিয়ে এই জাতি মহা নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, তাহাজ্জুদ, দাড়ী, টুপি, পাগড়ী, কুলুখ, টাখনু, মাহফিল, এজতেমা, ওয়াজ, যেকর, তসবিহ, মোরাকেবা কোরে ভাবছে তারা মহা মুসলিম। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হোতে পারে!

পেছনে বোলে এসেছি, বিদেশী প্রভুরা চলে যাবার সময় প্রতিটি রাষ্ট্রে ক্ষমতা দিয়ে গেলো তাদের হাতে গড়া, তাদের মন মত ‘শিক্ষিত’ শ্রেনীটির হাতে।এই শ্রেণীটি ছিলো এবং আছে। এরা দেশের জনসাধারণের সব কিছু থেকেই বিচ্ছিন্ন এবং বিগত প্রভুদের সম্বন্ধে অতল হীনমন্যতায় নিমজ্জিত।প্রভুদের শিক্ষার গুণে তারা নিজেদের প্রপিতামহের নাম বোলতে না পারলেও যে প্রভুদের দেশও তারা কোনদিন দেখেনি সেই প্রভুদের দেশের রাজনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক নেতাদের চৌদ্দ পুরুষের নাম অনর্গল বোলে দিতে পারে। নিজেদের ইতিহাস সম্বন্ধে আছে তাদের লজ্জা, কারণ যে বিকৃত ইতিহাস তাদের প্রভুরা শিখিয়েছিলো তাতে লজ্জা ছাড়া আর কিছুই জন্মাতে পারে না। এই শিক্ষিত শাসক শ্রেণীটির ও তাদের শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু ক্ষমতার গণ্ডীর বাইরে, যারা নিজেদের নাম নিয়েছেন ‘বুদ্ধিজীবী’, শ্রেণীটির কাছে বিগত প্রভুদের শেখানো প্রভুদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, প্রশাসনিক ও দণ্ডবিধির চেয়ে ভাল আর পৃথিবীতে কিছু সম্ভব নয়। ঐ সব ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থা গুলি মধ্যযুগীয় (শব্দটা শিখেছেন প্রভুদের কাছে থেকেই) কাজেই আধুনিক যুগে অচল ও পরিত্যাজ্য। স্বভাবতই প্রভুরা চোলে যাবার পর তারা নিজ নিজ দেশে অর্থাৎ ভৌগোলিক রাষ্ট্র গুলিতে প্রভুদের নকল কোরে তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ব্যবস্থা মাছি মারা কেরানীর মত প্রবর্ত্তন কোরলেন। দণ্ডবিধি চালু কোরলেন প্রভুদের তৈরী সেই দণ্ডবিধি, যে দণ্ডবিধি দিয়ে তারা এতদিন শাসন কোরে গেছে। নিজেদের অতীত সম্বন্ধে লজ্জিত, নিজেদের ভাণ্ডারে কি আছে সে সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, ইউরোপের সব কিছু সম্বন্ধে হীনমন্যতায় নিমজ্জিত এই শাসক বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর পক্ষে অন্য কিছু করা সম্ভবও ছিলো না। এরা হলো সত্যিকার অর্থে পাশ্চাত্যের সব কিছুর পুজারী, আবেদ এবং এও জানেন কিনা সন্দেহ, যে যুগটাকে তারা মধ্যযুগ বোলে ঘৃণা কোরছেন, অর্থাৎ খ্রীস্টীয় পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী, ওই সময়টার মধ্যেই ইউরোপীয়ানদের বর্বর যুগ এবং মুসলিমদের স্বর্ণ যুগ পড়ে। আত্মাহীন পাশ্চাত্য যান্ত্রিক ‘সভ্যতা’ ও তার প্রবর্ত্তকরা এদের মাবুদ।

কয়েকশ বছর ইউরোপীয়ান শক্তিগুলি এই তথাকথিত ‘মুসলিম’ জাতির খণ্ড-বিখণ্ড অংশ গুলিকে ক্রীতদাসের মত শাসন করার পর, নিজেদের মধ্যে মহাযুদ্ধ করার ফলে দুর্বল হোয়ে যেয়ে এ গুলিকে যে ‘স্বাধীনতা’ দিয়ে গেলো, সে স্বাধীনতা কতটুকু স্বধীনতা তা একটু পর্যবেক্ষণ করা দরকার। পাশ্চাত্য শক্তিগুলি খুব ভাল কোরেই জানতো যে, তারা ক্ষমতা ছেড়ে যাচ্ছে তাদেরই সযতনে শিক্ষিত শ্রেণীটির হাতে। কাজেই তাদের স্বার্থ এই নতুন স্বাধীন দেশ গুলিতে সম্পূর্ণ নিরাপদ। তারা চোলে যাবার আগে, যখন তারাই সরাসরি শাসন কোরত তখনকার চেয়ে তাদের স্বার্থ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, কারণ তারা আর নতুন শাসকদের মধ্য তফাৎ শুধু চামড়ার রং। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মহা সমারোহে এই ক্ষমতা হস্তান্তর হলো সেই শ্রেণীটিরই হাতে যাদের মাধ্যমে তারা এতদিন শাসন ও শোষণ কোরে এসেছে। এদের মধ্যে কিছু কিছু লোক তাদের শাসনযন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকলেও শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে পাশ্চাত্যের সব কিছুর সম্বন্ধে হীনমন্যতায় তারা প্রশাসনের লোকদের মতই।

এতক্ষণ গেলো অতীতের কথা। মানুষ সৃষ্টি থেকে আজ পর্য্যন্ত মানব জাতির সর্বপ্রধান সমস্যা হোয়ে আছে একটি- সেটা হোচ্ছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তপাত, অবিচার, সামাজিক অবিচার, অর্থনৈতিক অবিচার, রাজনৈতিক অবিচার, সর্বরকম অবিচার, এক কথায় অশান্তি সেই ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা। মানুষ সৃষ্টির পর ফেরেশতারা এই অশান্তি ও রক্তপাতের কথাই আল্লাহকে বোলেছিলেন আর ইবলিস তাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো যে সে মানুষকে দিয়ে ঐ অশান্তি সৃষ্টি করাবে। আল্লাহ সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরে শয়তানকে বোলেছিলেন- আমি আমার নবী রসুলদের (আ:) পাঠিয়ে মানুষকে এমন রাস্তা দেখাবো, এমন জীবনব্যবস্থা দেব যে জীবনব্যবস্থা জীবনে প্রতিষ্ঠা করলে, যে রাস্তায় চোললে তারা ঐ অশান্তি থেকে মুক্তি পাবে, শান্তিতে থাকতে পারবে। কাজেই যে জীবন-বিধান তিনি মানুষের জন্য পাঠালেন তার নামই দিলেন ইসলাম, আক্ষরিক অর্থেই শান্তি। আদম (আ:) থেকে মোহাম্মদ (দ:) পর্য্যন্ত ঐ একই নাম- ইসলাম। যখন যে নবী আল্লাহ পাঠিয়েছেন তাকে আল্লাহ প্রেরিত বোলে বিশ্বাস ও স্বীকার কোরে নিয়ে যারা ঐ বিধান মতে চলেছে তাদের মধ্য থেকে সব রকম অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর হোয়ে গেছে, তারা সেই চির আকাংখিত শান্তি পেয়েছে। তারপর যখন ঐ জীবন ব্যবস্থাকে শয়তানের প্ররোচনায় বিকৃত কোরে ফেলেছে তখন মানুষ আবার সেই অশান্তির মধ্যে পতিত হোয়েছে। এই হোচ্ছে সমস্ত ধর্ম, দীন, জীবন-বিধানের আসল কথা, গোড়ার কথা। বাকি যা আছে, উপাসনা, এবাদত সবই আনুসঙ্গিক প্রক্রিয়া। ঐ আসল, গোড়ার কথা বাদ দিয়ে অর্থাৎ সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধানকে অস্বীকার কোরে, মানুষের তৈরী বিধান মেনে নিয়ে যত উপাসনা, এবাদতই করা হোক- তাতে মানুষের সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত কোন জীবনেই শান্তি আসবে না। সেটা ইসলাম হবে না, সেটা হবে খাঁটি শেরক, বহুত্ববাদ। এবং আল্লাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, আর যত রকম গোনাহ, পাপ, অন্যায় তিনি ইচ্ছা কোরলে মাফ কোরবেন, কিন্তু শেরক ও কুফর তিনি কখনও মাফ কোরবেন না।
এবিষয়ে আল্লাহ ঘোসনা:
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে। – সুরা আন নীসা – ৪৮

এবার আমাদের বর্ত্তমানের দিক তাকানো যাক। সমস্ত পৃথিবীর কোথাও মানুষ স্রষ্টার দেয়া জীবনব্যবস্থা মেনে চোলছে না। ঐ জীবন-ব্যবস্থাকে সমষ্ঠিগত জীবন থেকে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্য খ্রীস্টান জগত নিজেদের জন্য নিজেরা জীবন-বিধান তৈরী কোরে নিয়েছিলো। তারাই যখন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, সামরিক শক্তির জোরে প্রাচ্যের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি সব রকম জাতিকে পরাজিত কোরে তাদের উপর রাজত্ব করলো, তখন তারা তাদের উপর নিজেদের তৈরী বিধান চাপিয়ে দিলো। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে এই জাতি গুলির এমন সুন্দর মগজ ধোলাই হলো যে, পাশ্চাত্য প্রভুরা পরে এদের ‘স্বাধীনতা’ দিয়ে চলে গেলেও তারা সবাই পূর্ব প্রভুদের ঐ শেরক, বহুশ্বর ব্যবস্থা নিজেদের সমষ্টি জীবনে চালু রাখলো। মগজ ধোলাইর ফলে তারা এটা বুঝতে ব্যর্থ হলো যে, ঐ ব্যবস্থা মানুষে মানুষে সংঘর্ষ, যুদ্ধ, রক্তপাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। এর বাস্তব এবং নিশ্চিত প্রমাণ এই যে, ঐ প্রভুরা মাত্র ২৭ বছরের মধ্যে নিজেদের মধ্যে দুইটি মহাযুদ্ধ কোরেছে, ঐ যুদ্ধ দু’টিতে বাকি বিশ্বকেও জড়িয়ে ফেলেছে, প্রায় পনেরো কোটি মানুষকে হতাহত কোরেছে। অন্যান্য ধ্বংসের কথা বাদই দিলাম এবং বিজ্ঞানের ও প্রযুক্তির জ্ঞানকে তারা হত্যার কাজে ব্যবহার কোরে আজ এমন পর্য্যায়ে নিয়ে এসেছে যে, শুধু তারাই নয়, তাদের ঐ আত্মাহীন, বিবেকহীন নাস্তিক জীবন-ব্যবস্থার অনুসারী বাকি মানবজাতিকেও তাদের পেছনে পেছনে সার্বিক ধ্বংসের দোরগোড়ায় এনে দাঁড় কোরিয়েছে। পার্থিব জীবনে, জাতীয় জীবনে খ্রীস্ট ধর্মের বিফলতার ফলে ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ কোরে দেয়ার শিক্ষা অর্থাৎ এই শেখানো যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি জটিল ব্যাপার আল্লাহর বুঝার এবং বুদ্ধির বাইরে। এই মগজ ধোলাই হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি ধর্মের অনুসারীদের উপর সাফল্যপূর্ণ হওয়াটা অতখানি আশ্চার্যজনক নয় যতখানি এই মুসলিম জাতির উপর হওয়াটা। কারণ ঐ ধর্ম গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মের (যদিও হিন্দু বোলে কোন ধর্ম নেই, আসলে বৈদিক, সনাতন ধর্ম) মধ্যে জাতীয় ব্যবস্থা থাকলেও তা ছিলো সীমিত, সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রযোজ্য নয় আর বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি ধর্মের মধ্যে জাতীয় অর্থাৎ আইন-কানুন, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক কোন ব্যবস্থা ছিলো না। আর এই শেষ ইসলামে সমগ্র মানব জাতির জন্য জাতীয়, সমষ্টিগত ব্যবস্থা, আইন, দণ্ডবিধি, আদেশ নিষেধ এত প্রকট ও দীপ্ত যে, এই জাতি কী কোরে খ্রীস্টানদের ঐ শিক্ষা ও মগজ ধোলাই মেনে নিতে পারলো তা সত্যি আশ্চর্য্যজনক। আকীদার কতখানি বিকৃতি হোলে মানুষের সাধারণ জ্ঞানও লোপ পায় তার প্রমাণ এই ব্যাপারটা। এই শেষ ইসলামের একটি প্রধান অংশই হোচ্ছে বিচার বিভাগীয় ও দণ্ডবিধি অর্থাৎ শারিয়াহ। এটা যার সামান্য পরিমাণ জ্ঞানও আছে তিনিও জানেন এবং রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া যে ওগুলো প্রয়োগ করা সম্ভব নয়, তা বুঝতে যে সাধারণ জ্ঞান সেটুকুও কেমন কোরে লোপ পেলো এ আশ্চর্যজনক। খ্রীস্ট ধর্ম ও রাজনীতির যে সুস্পষ্ট বিভাজন আছে হিন্দু ধর্মে তেমন বিভাজন সুস্পষ্ট আকারে নেই। আর ইসলামে আদৌ কোন বিভাজন নেই (India as a Secular State Princeton University Press. 1693. Page-9.)। কিন্তু যতই আশ্চর্যজনক হোক সত্য এই যে, দু’চারটি দেশ ছাড়া (যে গুলো ভাগ্যক্রমে পাশ্চাত্যের সরাসরি দাস হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলো) অন্যান্যের সঙ্গে সমস্ত ‘মুসলিম’ দুনিয়া খ্রীস্টানদের ঐ আকীদাকে তসলিম কোরে নিয়েছে যে, তাদের ব্যক্তি জীবনের বিধাতা, অর্থাৎ বিধানদাতা, এলাহ হোচ্ছেন আল্লাহ এবং জাতীয় জীবনের অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শাসন, বিচার, দণ্ডবিধি ইত্যাদির বিধাতা, এলাহ হোচ্ছে পাশ্চাত্যের খ্রীস্টান প্রভুরা, জুডিও খ্রীস্টান সভ্যতা। এ যদি শেরক ও কুফর না হয় তবে শেরক বোলে কোন শব্দ নেই।

আজকের ‘মুসলিম’ জগতের দিকে তাকালে যা দেখা যায় তা হোচ্ছে বহু ভাগে বিভক্তি একটি জনসংখ্যা, একটা জাতি নয় একটি উম্মাহ নয়। আল্লাহ ও রসূলের (সা:) দেয়া জাতির সংজ্ঞা অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু, বিধানদাতা নেই এবং মোহাম্মদের (সা:) মাধ্যমে শেষ বিধান এসেছে, এই সত্যের বিশ্বাসীরা এক জাতি এক উম্মাহ, প্রত্যাখ্যান কোরে পাশ্চাত্য খ্রীস্টানদের ভৌগোলিক অবস্থান, চামড়ার রং, ভাষা ইত্যাদির উপর ভিত্তি কোরে জাতির সংজ্ঞাকে গ্রহণ কোরে পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম নামের জনসংখ্যাটি কার্যত মোশরেক ও কাফের হোয়ে আছে। রাজনৈতিকভাবে বহু ভৌগোলিক দেশে বিচ্ছিন্ন এই জনসংখ্যাটি অন্য ভাবে বহু ভাগে বিভক্ত। অন্য ভাবটি হোচ্ছে ধর্মীয় ভাব। এক আল্লাহ, এক রসূলে (সা:) এবং এক কোর’আনে বিশ্বাসী বোলে প্রচারকারী এই জনসংখ্যাটি শুধু বহু ভাগে বিভক্ত নয়, ঐ ধর্মের ছোটখাট অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার নিয়ে মারামারি, রক্তপাত পর্য্যন্ত কোরতে ব্যস্ত। বিভক্তি গুলি লক্ষ্য কোরলে দেখা যায়-

ক) বৃহত্তর জনসাধারণঃ পূর্ববর্ত্তী পণ্ডিতদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি অর্থাৎ জীবন-বিধান, দীনকে অতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সুক্ষাতিসুক্ষ চুলচেরা বিচারের ফলে, এবং বিশেষ কোরে ‘ধর্মীয়’ জ্ঞানের বাইরে অন্য কোন জ্ঞানের প্রয়োজন নেই এই মতবাদের ফলে সাধারণ মানুষ উভয় রকম জ্ঞান থেকেই বঞ্চিত হোয়ে এক অশিক্ষিত নিরক্ষর জনসংখ্যায় পরিণত হোয়েছে। ঐ কারণ এবং ঐক্য নষ্ট হবার কারণে পরে তারা পাশ্চাত্য খ্রীস্টান শক্তি গুলির দাসে পরিণত হবার পর প্রভুরা সুপরিকল্পিতভাবে তাদের যেটুকু শিক্ষা দিলো তা থেকেও তাদের বঞ্চিত করে। ফলে বর্ত্তমানে এই বৃহৎ জনসাধারণ শুধু নিরক্ষর ও অশিক্ষিত নয়, বরং কুশিক্ষিত ও প্রায় নির্বোধ পশু পর্য্যায়ে পর্যবসিত। সমাজের উচ্চতর শ্রেণীর লোকেরা ভাওতা দিয়ে তাদের দিয়ে যে কোন কাজ কোরিয়ে নিতে পারে। পারে নয়, কোরিয়ে নিচ্ছেও। পাশ্চাত্যের আত্মাহীন শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণী তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য রকমের ফায়দা লুটছেন, এদের বোকা বানিয়ে মাথায় কাঁঠাল রেখে খাচ্ছেন। অন্যদিকে ফতোয়াবাজ পুরোহিত শ্রেণী এদের অজ্ঞানতার, অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে তাদের নামায পড়িয়ে, মুরদা দাফন কোরে, মিলাদ পড়িয়ে, নানা রকম খতম করিয়ে পরগাছার মত নিজেদের জীবিকা উপার্জন কোরছেন।

খ) ফতোয়াবাজ পুরোহিত শ্রেনীঃ ইসলামের পূর্ববর্ত্তী সংস্করণ গুলোতে আল্লাহ এ শ্রেণীটির কোন ব্যবস্থা রেখেছিলেন কি না জানিনা, তবে এই শেষ সংস্করণে যে রাখেন নি তা নিশ্চিত। কারণ বিশ্বনবীর (সা:) সময়ে এবং তার অনেক পরে পর্য্যন্ত এই শ্রেণীর জন্ম হয় নি। তারপর পূর্ববর্ত্তী দীন গুলিতে যেভাবে এই শ্রেণীর উদ্ভব হোয়েছে ঠিক সেইভাবে এই শেষ দীনেও এদের আবির্ভাব হলো- অর্থাৎ দীনের আইন-কানুন, আদেশ, নিষেধ গুলির চুলচেরা বিচার, পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ। পূর্ববর্ত্তী দীন গুলির ঐ বিকৃতি রসুলাল্লাহ (সা:) খুব ভালভাবেই জানতেন এবং তাদের পরিণতি কি হোয়েছিলো তাও জানতেন, তাই তিনি নিজের সৃষ্ট জাতিটাকে, তার উম্মাহকে সতর্ক কোরে দিয়েছিলেন যাতে এই উম্মাহও যেন ঐ একই ভুল কোরে ধ্বংস না হয়।একজন সাহাবা তাকে একটু খুটিয়ে প্রশ্ন করাতে তিনি উষ্মাভরে বোলেছিলেন- তোমাদের পূববর্ত্তী অনেক জাতি তাদের নবীদের এমনি কোরে খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন কোরত, তারপর সেই উত্তর গুলি নিয়ে নানা গবেষণা কোরে মতভেদ সৃষ্টি হতো এবং ফলে তারা ধ্বংস হোয়ে গেছে। আমি তোমাদের যতটুকু কোরতে বোলেছি ততটুকু কোরতে চেষ্টা করো, ওর বেশী আমাকে প্রশ্ন কোরোনা। বিশ্বনবীর (সা:) এই হাদীসটিকে ভাল কোরে বোঝার প্রয়োজন আছে। এই হাদীসটির মধ্যে তিনটি জিনিষ আছে।
প্রথম হলো- তাকে খুঁটিয়ে কোন প্রশ্ন করা অর্থাৎ সুক্ষ বিচার বিশ্লেষণে যাওয়া নিষেধ হোয়ে গেলো।
দ্বিতীয় হলো- ঐ কাজের পরিণতি হলো জাতির বিভক্তি ও ধ্বংস।
তৃতীয় হলো- রসুলাল্লাহ (সা:) যেটুকু কোরতে সরাসরি আদেশ কোরেছেন তার বেশী এগুতে যাওয়া নিষিদ্ধ হোয়ে গেলো।
অর্থাৎ অতি ধার্মিক হওয়া, দীনের অতি বিশ্লেষণ কোরে সেগুলি খুটিয়ে খুটিয়ে পালন করা নিষেধ হোয়ে গেলো। আল্লাহর রসুল (সা:) যে কাজ কোরতে নিষেধ কোরেছেন সে কাজ শরিয়াহ মোতাবেকই যে নিষিদ্ধ, হারাম আশা করি তাতে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না।

কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই উম্মাহর দুর্ভাগ্য শুধু নয়, মানবজাতির দুর্ভাগ্য যে, আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) যে কাজ নিষিদ্ধ কোরেছেন সেই নিষিদ্ধ কাজই করা হলো এবং করা হলো পুরোদমে, মহা উৎসাহে এবং অতি পূণ্যের, সওয়াবের কাজ বোলে মনে কোরে। এই উম্মাহর দুর্ভাগ্য এই জন্য যে, ঐ কাজ কোরে জাতির মন-মগজ আসল উদ্দেশ্য, বিশ্বনবীর (সা:) দায়িত্ব, সমস্ত পৃথিবীতে এই দীন, জীবন-বিধান চালু করার সংগ্রাম থেকে মোড় ঘুরিয়ে ঐ দীনের খুটিনাটি পালন করার মধ্যে ব্যাপৃত হোয়ে পড়লো এবং ফলে নানা মাযহাবে (দলে) ও ফেরকায় বিভক্তি হোয়ে চরমভাবে দুর্বল হোয়ে পড়লো। আর মানবজাতির দুর্ভাগ্য এই জন্য যে, এই উম্মাহ যদি তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতো তবে সব মানব জাতির উপর এই শেষ দীন প্রতিষ্ঠা হতো যার ফলে মানব জাতি আজ শান্তিতে (ইসলাম) বাস কোরত। আল্লাহও তার রসূলের (সা:) নিষেধ অমান্য কোরে অতি বিশ্লেষনের ফলে নানাভাবে বিভক্ত হোয়ে ধ্বংস হোয়ে যাওয়ার ফলে মানবজাতি ঐ চির কাংখিত শান্তি (ইসলাম) থেকে বঞ্চিত হোয়েছে। এই শেষ ইসলাম তাদের উপর প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায়, তারা বাধ্য হোয়ে নিজেদের জাতীয় জীবনের জন্য নিজেরা রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা তৈরী কোরে নেওয়ার ফলে আজ পৃথিবী অবিচার, অনাচার, যুদ্ধ ও রক্তপাতে পূর্ণ। শুধু তাই নয়, আত্মাহীন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ফল, প্রচণ্ড শক্তিশালী মারণাস্ত্রের উদ্ভবনের ফলে দৈহিকভাবে সমূলে ধ্বংসের মুখোমুখি হোয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোন মুহূর্ত্তে, সামান্য একটু যান্ত্রিক ভুলের জন্য আজ পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যেতে পারে- যার ফলে সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হোয়ে যেতে পারে এবং যদি হয় তবে সেই ধ্বংসের সঙ্গে ধ্বংস হবে সেই জাতিটিও, যার উপর দায়িত্ব ছিলো এই ধ্বংস রোধ করা, কিন্তু যেটা নিজেরাই আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী, গায়রুল্লাহর তৈরী জীবন-বিধান তার জাতীয় জীবনে চালু কোরেছে। আজ পৃথিবীময় যে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, দুঃখ, অশ্রু, রক্তপাত হোচ্ছে তার জন্য দায়ী
প্রথমতঃ বিশ্বনবীর (সা:) ৬০/৭০ বছর পর যারা বিশ্বনবীর (সা:) অর্পিত দায়িত্ব ভুলে যেয়ে সংগ্রাম, জেহাদ ত্যাগ কোরেছিলেন।
দ্বিতীয়তঃ ঐ সংগ্রাম ত্যাগ করার পর যারা পৃথিবীর দশটা রাজা-বাদশাহর মত শান-শওকতের সাথে রাজত্ব কোরতে শুরু কোরেছিলেন। মহানবী (সা:) তাদের রাজত্ব করার জন্য, রাজ্য জয় করার জন্য একটি অপরাজেয় দুর্দ্ধর্ষ জাতি সৃষ্টি করেন নি। এবিষয়ে ওমর (রা:) এর একটি উক্তি সরন করা যায় “রাসুল (সা:) কর আদায় করার জন্য প্রেরিত হন নি।
তৃতীয়তঃ যারা দীনের খুঁটিনাটির অবিশ্বাস্য চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে জাতিকে বহু ভাগে বিভক্ত কোরে ঐ বিভক্তি গুলির মধ্যে বাদানুবাদ, তর্কাতর্কি সৃষ্টি কোরে, ঐক্য নষ্ট কোরে জাতিকে দুর্বল নির্জীব কোরে দিয়েছিলেন, সেরাতুল মোস্তাকীম-সহজ সরল দীনকে, জটিলতার, দুর্বোধ্যতার চরমে নিয়ে সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
চতুর্থতঃ যারা এই ভারসাম্যপূর্ণ দীনের মধ্যে ভারসাম্যহীন সুফীবাদ আমদানী কোরে উম্মাহর বিস্ফোরণমুখী (Explosive), বহিমুর্খী (Extrovert) চরিত্রকে উলটিয়ে একেবারে অনঢ় (Passive) ও অন্তর্মুখী (Introvert) চরিত্রে পরিবর্ত্তন কোরে দিয়েছিলেন।
এই চার রকম মানুষের কাজের সম্মিলিত ফলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি শুধু সর্ব নিকৃষ্টেই পরিণত হলো না, যাদের উপর তাদের জয়ী হবার কথা এবং এক সময় হোয়েও ছিলো, তাদের কাছে পরাজিত হোয়ে তাদের ঘৃণিত ক্রীতদাসে পরিণত হলো।

বর্ত্তমানে এই পুরোহিত শ্রেণী তাদের পূর্ববর্ত্তী অতি বিশ্লেষণকারী পণ্ডিতদের অর্থাৎ ফকিহ, মুফাস্সিরদের সৃষ্ট বিভিন্ন মাযহাবে, ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে নিজেদের মধ্যে ফতোয়াবাজী নিয়ে ব্যস্ত। শুধু ব্যস্ত নয় ঐ ফতোয়াবাজী নিয়ে মারামারি, রক্তরক্তি কোরতেও তারা দ্বিধা করেন না। উম্মাটাকে তারা ছিন্নভিন্ন কোরে রেখেছেন, এর ঐক্য ধ্বংস কোরে ফেলেছেন। অথচ ঐ ঐক্য যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য মহানবী (সা:) বোলে দিয়েছেন যে, কোর’আনের কোন আয়াত, কোন কথা নিয়ে মতভেদ কুফর। ঐ কুফরের মধ্যে তারা ডুবে আছেন। অন্যদিকে স্বয়ং আল্লাহ বোলেছেন
তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যার কিছু আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, এগুলি কিতাবের মূল অংশ, অন্যগুলি রূপক, যাদের মনে বক্রতা আছে, তারা ফিতনা (বিশৃংখলা) সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুবিজ্ঞ তারা বলে, আমরা এ বিশ্বাস করি। সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত। বস্তুতঃ বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে। -সুরা আলে ইমরান- ৭
কোর’আনে যে পরিষ্কার আদেশ নিষেধ আছে ঐ গুলিই হলো আসলে প্রয়োজনীয়। আর আছে রূপক আয়াত, যেগুলি আমাদের প্রয়োজন নেই কারণ ও গুলির অর্থ আমাদের জন্য নয় ওগুলি শুধু প্রকৃতভাবে জ্ঞানী তাদের বোঝার জন্য, এবং ভবিষ্যতের মানুষের জন্য। আমাদের জন্য এই যথেষ্ট যে, বুঝি বা না বুঝি আমরা সমস্ত কোর’আন বিশ্বাস করি, সমস্তটাই আমাদের প্রভুর কাছ থেকে এসেছে। কোর’আনের ঐ রূপক আয়াত গুলির গুপ্ত অর্থ বের করার চেষ্টাকে আল্লাহ বোলেছেন যারা তা করে তারা চায় মতভেদ ও বিভ্রান্তি। আল্লাহ ও রসূলের (সা:) আদেশ অমান্য কোরে কোর’আনের বিভিন্ন অর্থ কোরে জাতিকে এই পুরোহিত শ্রেণী বহু ভাগে ভাগ কোরে রেখেছেন। ফলে জাতি এক হোয়ে কোন কাজ কোরতে পারে না। এই শ্রেণীর লোকেরা দীনের ছোটখাট নিয়ম-কানুন পরম নিষ্ঠার সাথে পালন করেন দিনরাত ধোরে কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্যও জানেনা না এর লক্ষ্যও জানেন না। অথচ লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন সমস্ত কাজ অর্থহীন। দীনের খুটিনাটি মসলা-মাসায়েলের বাইরে এদের কোন জ্ঞানই নেই, যে খুঁটিনাটির কোন দাম নেই যদি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হারিয়ে যেয়ে থাকে এবং যে খুঁটিনাটিকে বিশ্বনবী (দ:) নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছেন এই বোলে যে, এই ছোটখাট, খুঁটিনাটির পেছনে লাগলে তা পুর্ববর্তী উম্মাহ গুলিকে যেমন ধ্বংস কোরেছে, তোমাদেরও তেমনি কোরবে। এই হাদীসটি আমি পেছনে উল্লেখ কোরে এসেছি। এই যে এরা খুঁটিনাটি মসলা- মাসায়েল নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি কোরে উম্মাহকে শক্তিহীন ও অক্ষম কোরে রেখেছেন ঐ খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েল গুলিও সবই বক্তিগত ব্যাপারে সীমাবদ্ধ। জাতীয় জীবনের মাসলা-মাসায়েলের গুরুত্ব এদের কাছে নেই, কারণ যে উদ্দেশ্যে, যে লক্ষ্য অর্জন করার জন্য এই উম্মাহর সৃষ্টি হোয়েছিলো সেই উদ্দেশ্যই তো কবে হারিয়ে গেছে, কাজেই ঐ ব্যাপারে মসলা-মাসায়েলের প্রয়োজনীয়তাও আর নেই। কিন্তু এরা এ কথা বোঝেন না যে, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই যেখানে নেই সেখানে ঐ ব্যক্তিগত নিয়ম-কানুন মেনে জীবন-যাপন করার কোন দাম নেই। এই জন্যই রসুলাল্লাহ (সা:) বোলেছেন যে, এমন সময় আসবে যখন মানুষ সারা মাস রোযা রাখবে, তা শুধু না খেয়ে থাকা হবে এবং রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ পড়বে, তা শুধু ঘুম নষ্ট করা হবে- এখন সেই সময়।

বর্ত্তমানে ‘মুসলিম’ দুনিয়ার এই পুরোহিত শ্রেণীর জন্ম ধর্মের, দীনের ইতিহাসে নতুন নয়। এই শ্রেণী সৃষ্টির অনুমতি আল্লাহ কোন দীনকেই দেন নি, অন্ততঃ যে কয়টি দীন সম্বন্ধে আমরা জানতে পারি। তার আগের গুলির কথা বোলতে পারি না। কিন্তু প্রত্যেক দীনেই এরা গজিয়েছেন। নিজেদের নিজেরা সৃষ্টি কোরেছেন সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য, সম্মান, প্রভাব ইত্যাদি ভোগ করার জন্য। আর প্রত্যেক দীনকেই, জীবন ব্যবস্থাকেই তারা নতুন ব্যাখ্যা কোরে নতুন মতবাদ সৃষ্টি কোরে টুকরো টুকরো কোরে ভেঙ্গে ফেলেছেন, গুরুত্বের (Priority) উল্টা-পাল্টা কোরে ফেলেছেন, যার ফলে ঐ দীন অর্থহীন হোয়ে গেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রীস্টান, ইহুদী ইত্যাদি প্রত্যেক দীনের ঐ একই ইতিহাস, একই অবস্থা। শেষ ইসলামে এই শ্রেণীর কোন অস্তিত্ব ছিলো না। এই উম্মাহ যখন তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য ভুলে যেয়ে, সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জীবনে শান্তি আনয়নের সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ কোরে রাজত্ব কোরতে আরম্ভ কোরলো অর্থাৎ তাদের নেতার, রসুলাল্লাহর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ ত্যাগ কোরে এই দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে সুক্ষাতিসুক্ষ মসলা-মাসায়েল উদ্ভাবন কোরে জাতিকে বহু ভাগে ভাগ কোরে ফেললেন, জাতির আকীদা নষ্ট হোয়ে গুরুত্ব উলটে-পালটে গেলো, তখন জন্ম হলো এই পুরোহিত শ্রেণীর। অন্যান্য দীনের পুরোহিত শ্রেণীর চেয়ে জুডিয় ধর্মে অর্থাৎ ইহুদী ধর্মের পুরোহিত শ্রেণীর সঙ্গে বর্ত্তমান ‘ইসলাম’ ধর্মের পুরোহিত শ্রেণীর মিল বেশী। চুলচেরা বিশ্লেষণে ও ফতোয়ায় (বিধানে) হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধরাও কম যান না, একই রকমের, কিন্তু জুডিয় অর্থাৎ ইহুদীদের পুরোহিতদের সাথে শুধু কাজে নয় একেবারে উপাধিতে পর্য্যন্ত মিলে গেছে। ‘ইসলামের’ এই শ্রেণীর নাম মওলানা আর ইহুদীদের রাব্বাই-একদম একার্থবোধক। মাওলা অর্থ প্রভু আর মাওলানা অর্থ আমাদের প্রভু। রব শব্দের অর্থও প্রভু, আর রাব্বাই শব্দের অর্থ আমাদের প্রভু। রাব্বাইরা যেমন তাদের ‘ধর্মীয়’ জ্ঞানের জন্য প্রচণ্ড অহঙ্কারী এই মাওলানারাও তাই। ঐ ‘ধর্মীয়’ জ্ঞানের আত্মম্ভরিতায় রাব্বাইরা যেমন সত্য নবী ঈসাকে (আ:) অস্বীকার কোরেছিলেন, আজ যদি কেউ প্রকৃত দীনকে উপস্থাপিত করেন তবে এই মওলানারা এবং দীনের অন্যান্য ধারক-বাহকরা তেমনি তাকে অস্বীকার কোরবেন, তাকে প্রচণ্ড ভাবে বাধা দেবেন। এটা আমার কথা নয় স্বয়ং বিশ্বনবী (সা:), মাহ্দী (আ:) সম্বন্ধে এ ভবিষ্যত বাণী কোরে গেছেন।

জুডিয় ধর্মের রাব্বাই, সাদ্দুসাইদের সাথে বর্ত্তমানের ইসলাম ধর্মের ধারক-বাহকদের আরও মিল আছে। সেটা অন্ধত্ব। একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। কোন ব্যাপারের বিশ্লেষণ, অতিবিশ্লেষণ, তারপর আরও বিশ্লেষণ কোরতে থাকলে ক্রমশঃ দৃষ্টি সংকুচিত হোয়ে আসতে থাকে। তখন ছোটখাট জিনিষ নযরে আসতে থাকে। কিন্তু সমগ্র জিনিষটি ক্রমশঃ দৃষ্টির বাইরে চলে যেতে থাকে, এবং এক সময় সমগ্র জিনিষটি দৃষ্টির বাইরে চলে যায় এবং ছোট অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার গুলি বিরাট হোয়ে ধরা দেয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- খালি চোখে একটি হাতিকে দেখা এবং একটি বিবর্দ্ধক কাচ (Magnifying Glass) দিয়ে হাতিকে দেখা। খালি চোখে দেখলে সমস্ত হাতিটাই দৃষ্টির মধ্যে আসবে এবং যিনি দেখছেন তার যদি সাধারণ জ্ঞান থাকে তবে তিনি বুঝবেন যে হাতিটি একটি বিরাট প্রাণী, ওটার উদ্দেশ্য হোচ্ছে ওটাকে দিয়ে ওমুক ওমুক কাজ করানো যায়, ওটা খায়, ঘুমোয় ইত্যাদি- অর্থাৎ একটি সম্যক ধারণা। আর যদি খালি চোখে হাতিকে না দেখে খুব নিকটে যেয়ে বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে ওটাকে পর্যবেক্ষণ করা যায় তবে হাতির গায়ের প্রতিটি লোম, পশম, মোটা মোটা দড়ি, কাছির মত দেখা যাবে, চামড়ার প্রতিটি ভাজ পাহাড়ের গায়ের ফাটলের মত দেখা যাবে। কিন্তু হাতিটি আর দেখা যাবে না। হাতি কি এবং হাতি দিয়ে কি হয় তাও বোঝা যাবে না। খালি চোখে হাতিকে দেখে হাতি সম্বন্ধে সঠিক ও সম্যক ধারণাই হোচ্ছে সঠিক আকীদা, আর বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে ওর গায়ের পশম গুলিকে জাহাজ বাধা কাছির মত দেখে সেটাকে হাতি মনে করা বিকৃত, ভুল আকীদা। ইহুদীদের মহাপণ্ডিত রাব্বাই, সাদ্দুসাইরা বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে মুসার (আ:) ধর্মকে দেখে অন্ধ হোয়ে যেয়ে তার দীনের উদ্দেশ্য ও সমগ্র রূপটি হারিয়ে ফেলেছিলো, সেটা তাদের দৃষ্টির বাইরে চলে গিয়েছিলো। তাই আল্লাহ পাঠালেন ঈসাকে (আ:) তাদের অন্ধত্ব ঘোচাতে। ঈসা (আ:) এসে চেষ্টা কোরলেন তাদের চোখ থেকে বিবর্দ্ধক কাঁচ সরিয়ে ফেলতে যাতে তারা মুসার (আ:) সমগ্র দীনটাকে আবার দেখতে পায়। কিন্তু তাদের জ্ঞানের অহংকার, তাদের সুক্ষ বিশ্লেষণের অহংকার তা কোরতে দিলো না। তারা দেখলো সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠা, সম্মান বিপন্ন। তারা সত্য নবী ঈসাকে (আ:) অস্বীকার কোরে তাকে বিদেশী প্রভু রোমানদের সহায়তায় হত্যার চেষ্টা করলো।

বিশ্বনবীর (সা:) পর আর নবী আসবেন না, নবুয়তের দরজা চিরতরে বন্ধ হোয়ে গেছে। কিন্তু কোন লোক যদি আল্লাহর রহমে এই শেষ ইসলামকে সামগ্রিকভাবে দেখতে পায়, এর উদ্দেশ্য এবং ঐ উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া বুঝতে পারে, এক কথায় সঠিক আকীদা পায় এবং সেই লোক যদি তা প্রচার করে তবে ইহুদীদের আলেম, পণ্ডিতদের হাতে ঈসার (আ:) যে অবস্থা হোয়েছিলো এই শেষ ইসলামের আলেম, পণ্ডিতদের হাতে ঐ লোকের সেই অবস্থাই হবে। তাই বিশ্বনবী (সা:) বোলে গেছেন যে,
এই দীনের ভবিষ্যতে যখন বিকৃত হবে তখন যে ভয় না কোরে দাঁড়িয়ে দীনের প্রকৃত রূপ প্রচার কোরবে তারস্থান (দরজা) নবীদের স্থানের চেয়ে মাত্র এক দরজা নিচু হবে। অন্য হাদীসে তার সওয়াব (পূণ্য) একশ শহীদের সমান হবে।

Leave a Reply