You are currently viewing অতি বিশ্লেষণ, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি
দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি

অতি বিশ্লেষণ, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি

অতি বিশ্লেষণ, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি

মহানবীর (সা:) ৬০/৭০ বছর পর থেকে প্রধানতঃ কি কি বিকৃতি প্রবেশ কোরে এই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিকে নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত করলো তা একটা একটা কোরে উপস্থাপন কোরছি। কিন্তু সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত বিকৃতির আসল মূল হলো উদ্দেশ্য চ্যুতি, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া, আকীদা বদলে যাওয়া। যতদিন এই উম্মাহর সামনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ঠিক ছিলো ততদিন তারা একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) সামনে এগিয়ে গেছে। ছোটখাট কোন কিছুই তাদের দৃষ্টি ঘোরাতে পারে নি। কিন্তু যখন লক্ষ্য হারিয়ে গেলো তখন চলাও থেমে গেলো, চারদিকের নানা কিছু তখন চোখে পড়লো এবং তাই নিয়ে তারা মশ গুল হোয়ে গেলেন, মহা কর্ত্তব্য ভুলে গেলেন এবং ফলে বিভিন্ন বিকৃতি ঢুকে তাদের ধ্বংস কোরে দিলো।

প্রথম বিকৃতিঃ অতি বিশ্লেষণ, দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি। পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার পর তাদের জাতির যার যার দীনকে নিয়ে সেটার ব্যাখ্যা, অতি ব্যাখ্যা, আরও অতি ব্যাখ্যা কোরতে শুরু কোরেছে। যার ফলে ঐ বিভিন্ন ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি কোরে বিভিন্ন মতামত গড়ে উঠেছে। দীনের আসল উদ্দেশ্য, তার মর্মবাণী ভুলে যেয়ে ছোটখান বিভিন্ন ব্যবস্থা, ফতওয়া নিয়ে মতান্তর শুরু হোয়ে গেছে এবং কালে বহুভাগে ভাগ হোয়ে জাতি গুলির ঐক্য নষ্ট হোয়ে জাতি ধ্বংস হোয়ে গেছে। এর যেন পুনঃসংগঠন এই শেষ দীনেরও না হয় সেজন্য আল্লাহ সাবধান কোরে দিলেন এই বোলে যে, দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোর না(কোর’আন- সূরা আন-নিসা ১৭১, সূরা আল-মায়েদা ৭৭)। দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করার এই নিষেধের অর্থ কি? এর মানে কি এই যে, খুব ধার্মিক হোয়োনা বা দীনকে ভালোভাবে অনুসরণ কোরোনা, বা বেশী ভাল মুসলিম হবার চেষ্টা কোর না? অবশ্যই তা হোতে পারে না। এই বাড়াবাড়ির অর্থ, ঐ অতি বিশ্লেষণ, জীবন বিধানের আদেশ নিষেধ গুলিকে নিয়ে সে গুলোর সুক্ষ থেকে সূক্ষতর বিশ্লেষণ। যদি জাতির সম্মুখ থেকে তাদের লক্ষ্য স্থল, গন্তব স্থল, উদ্দেশ্য অদৃশ্য না হোয়ে যেতো তবে তারা আগের মতই এক দেহ এক প্রাণ হোয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আপ্রাণ সংগ্রাম চালিয়ে যেতেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয় নি। লক্ষ্য তারা ভুলে গেলেন এবং লক্ষ্য ভুলে যাওয়ার ফলেই ঐ সংগ্রামের কর্মশক্তি মোড় ঘুরে অন্য কাজে ব্যাপৃত হোয়ে পড়লো। যে জীবন বিধানকে সমস্ত পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তার শেষ নবীকে (সা:) পাঠিয়েছিলেন এবং যে দায়িত্ব তিনি তার উম্মাহর উপর অর্পণ কোরে চলে গিয়েছিলেন, উম্মাহও তা উপলব্ধি কোরে জীবনপণ কোরে এই সেই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, এক মহাশক্তিশালী বোমের মত ফেটে আটলান্টিকের তীর থেকে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে চীনের সীমান্ত পর্য্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলো, সেই জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে ঐ জাতি ঐ বিধান গুলির সূক্ষাতিসূক্ষ বিশ্লেষণ আরম্ভ কোরে দিলো।

আদম (আ:) থেকে শুরু কোরে শেষনবী (সা:) পর্য্যন্ত আল্লাহ যে জীবন বিধান মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, স্থান, কাল ভেদে সে গুলোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও সর্বক্ষণ ভিত্তি থেকেছে একটি মাত্র। সেটা হোচ্ছে একেশ্বরবাদ, তওহীদ, একমাত্র প্রভু, একমাত্র বিধাতা (বিধানদাতা) আল্লাহ। যার আদেশ নির্দেশ, আইন-কানুন ছাড়া অন্য কারো আদেশ, নির্দেশ, আইন-কানুন কিছুই না মানা। একেই আল্লাহ কোর’আনে বোলছেন দীনুল কাইয়্যেমা। আল্লাহ মানুষের কাছে এইটুকুই মাত্র চান। কারণ তিনি জানেন যে, মানুষ যদি সমষ্টিগতভাবে তিনি ছাড়া অন্য কারো তৈরী আইন কানুন না মানে, শুধু তারই আইন-কানুন মানে তবে শয়তান তার ঘোষিত উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে দিয়ে অশান্তি, অন্যায় আর রক্তপাত অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং মানুষ সুবিচারে, শান্তিতে (ইসলামে) পৃথিবীতে বসবাস কোরতে পারবে। অর্থাৎ আল্লাহ যা চান। কত সহজ। কাইয়্যেমা শব্দটা এসেছে কায়েম থেকে যার অর্থ চিরন্তন, শাশ্বত, সনাতন। আল্লাহ এই দীনুল কাইয়্যেমার কথা বোলে বোলছেন- এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি(সূরা আল-বাইয়েনাহ্ ৫)। ‘এর বেশী তো আমি আদেশ করিনি’ তিনি বোলছেন এই জন্য যে, তিনি জানেন যে, ঐটুকু করলেই অর্থাৎ তার বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান মানুষ না মানলেই মানব জাতির মধ্যে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সামান্য দাবীটুকুই তিনি মানুষের কাছে আদম থেকে আজ পর্য্যন্ত কোরে আসছেন। পূর্ববর্ত্তী বিকৃত জীবন-ব্যবস্থা গুলিতেও আল্লাহর দাবী ছিলো ঐ সহজ সরল দাবী- দীনুল কাইয়ে ̈মা, তওহীদ। ভারতীয় ধর্মের অনুসারীদের তারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী জিজ্ঞাসা কোরলে তার জবাব দেবেন সনাতন ধর্ম। সনাতন এবং কাইয়্যেমা একার্থবোধক- যা চিরদিন প্রবহমান, চিরন্তন ও শাশ্বত, এবং তা ঐ তওহীদ। এর গুরুত্ব এত বেশী যে একে আল্লাহ আমাদের জন্য শুধু প্রতি সালাতে নয় প্রতি রাকাতে অবশ্য কোরে দিয়েছেন সূরা ফাতেহার মধ্যে। “আমাদের সেরাতুল মুস্তাকীমে চালাও” মোস্তাকীম অর্থ সহজ, সরল ও শাশ্বত।

এইখানে আরেকটি ̧রুত্বপূর্ণ কথা এসে যায়, তাহলো আল্লাহ কোর’আনে আমাদের বোলে দিলেন যে, আমি তোমাদের একটি ভারসাম্যযুক্ত জাতি বানালাম। এই ভারসাম্যের সাথে সেরাতুল মোস্তাকীম ও দীনুল কাইয়্যেমা সংশ্লিষ্ট ও সম্বন্ধ। সহজ, সরল চিরন্তন ছাড়াও সেরাতুল মোস্তাকীম শব্দের এক অর্থ হলো, মধ্যবর্ত্তী, মাঝামাঝি- ঐ ভারসাম্যেরই অন্য অর্থ। আল্লামা ইউসুফ আলী এর অনুবাদ কোরেছেন ১) Straight (সরল) ২) Standard (মাঝামাঝি, মধ্যপন্থী) ৩) Definite (স্থির, নিশ্চিত) Permanent (চিরস্থায়ী শাশ্বত)২।

Standard অর্থটির দিকে লক্ষ্য কোরুন। এই অর্থ হলো মধ্যবর্ত্তী, মাঝামাঝি, মানে সর্বোৎকৃষ্টও নয়, সর্বনিম্নও নয়, সেই মধ্যপন্থী, ভারসাম্যযুক্ত। অর্থাৎ দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীম আল্লাহ আমাদের দিয়ে আসছেন মানুষ সৃষ্টির প্রথম থেকে যা হোচ্ছে- ১) অত্যন্ত সহজ ও সরল, ২) মধ্যপন্থী ৩) চিরস্থায়ী শাশ্বত। এবং যে জাতি একে গ্রহণ কোরবে সে জাতি হবে ভারসাম্যযুক্ত (উম্মাতাও ওয়াসাতা)(দেখুন সুরা আল-বাকারা ১৪৩)। একটা জাতির মধ্যে জ্ঞানী, চালাক, বোকা, সর্ব রকম মানুষই থাকবে, সব নিয়েই একটি জাতি। সুতরাং লক্ষ্য যদি জটিল হয় তবে সবার তা বোধগম্য হবে না। জাতির যে অংশটুকু শিক্ষিত ও মেধাবী, শুধু তাদেরই বোধগম্য হবে- সমগ্র জাতি একতাবদ্ধ হোয়ে ঐ লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম কোরতে পারবে না। তাই আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) যে জাতি সৃষ্টি কোরলেন তার ভিত্তি কোরলেন অতি সহজ ও সরল-তওহীদ, একমাত্র প্রভু হিসাবে তাকেই স্বীকার কোরে নেওয়া। এর নাম দিলেন দীনুল কাইয়্যেমা ও সেরাতুল মোস্তাকীম, চিরন্তন, সহজ সরল পথ। এটাই যে সব কিছু তা বোঝাবার জন্য অবশ্য কর্ত্তব্য (ফরজ) কোরে দিলেন প্রতি রাকাতে ঐ সেরাতুল মুস্তাকীমে চালাবার প্রার্থণা করা, যাতে প্রতিটি মুসলিমের সর্বক্ষণ এ সহজ সরল পথের কথা মনে থাকে এবং ঐ সহজ সরলতার ভিত্তি ছেড়ে জটিলতার দিকে সরে না যায়। এবং জাতির লক্ষ্যও স্থির কোরে দিলেন অতি সহজ ও সরল-ঐ দীনুল কাইয়্যেমাকে, সেরাতুল মোস্তাকীমকে সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে পৃথিবীতে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করা। দুটোই বুঝতে সহজ। সহজ বোলেই বিশ্বনবীর (সা:) সৃষ্ট অত্যন্ত অশিক্ষিত জাতিটি, যার মধ্যে লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা হাতে গোনা-যেতো তারাও ভিত্তি ও লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন এবং তা থেকে চ্যুত হোন নি এবং তারা সফলভাবে আল্লাহ রসূলের (সা:) উদ্দেশ্য সিদ্ধির পথে বহু দূর অগ্রসর হোয়েছিলেন। কিন্তু অতি বিশ্লেষণের বিষময় ফলে ঐ দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীম হোয়ে গেলো অত্যন্ত জটিল, দুর্বোধ্য এক জীবন-বিধান, যেটা সম্পূর্ণ শিক্ষা করাই মানুষের এক জীবনের মধ্যে সম্ভব নয়- সেটাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তো বহু দূরের কথা। জাতি লক্ষ্যচ্যুত তো আগেই হোয়ে গিয়েছিলো, তারপর ফকিহ ও মুফাস্সিরদের সূক্ষাতিসূক্ষ বিশ্লেষণের ফলে জাতির মধ্যে ভয়াবহ বিভেদ সৃষ্টি হোয়ে, বিভিন্ন মাযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে যে অনৈক্য সৃষ্টি হলো তার ফলে পুনরায় একতাবদ্ধ হোয়ে সংগ্রাম করার সম্ভাবনাও শেষ হোয়ে গেলো। এই জন্য রসুলাল্লাহ (সা:) বোলেছিলেন আমার উম্মাহর আয়ু ৬০/৭০ বছর।

অতি বিশ্লেষণ কোরে দীনের প্রাণশক্তি বিনষ্ট কোরে দেওয়ার কাজটা নতুন নয়, আমাদের পণ্ডিতরাই শুধু এ কাজ করেন নি। পূর্ববর্ত্তী দীন গুলোতেও অতি-ধার্মিকরা গজিয়েছেন ও পাণ্ডিত্য জাহির কোরে তাদের দীন গুলোকে ধ্বংস কোরে দিয়েছেন, এ সত্য রসুলাল্লাহর (সা:) হাদীস থেকে পেছনে দেখিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোর’আনে একটি উদাহরণ দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন তার নবী মূসার (আ:) জীবনী থেকে যেখানে আল্লাহ বনী ইসরাইলদের একটি গরু কোর’বানী কোরতে আদেশ দিলেন। মূসা (আ:) যখন এই কোর’বানীর আদেশ বনী ইসরাইলদের জানিয়ে দিলেন তখন যদি তার মোটামুটি ভাল একটি গরু এনে কোর’বানী কোরে দিতো তাহলে তাতেই কাজ হোয়ে যেতো। কারণ কোরবানীর গরুটা কেমন হবে সে সম্বন্ধে আল্লাহ কোন শর্ত্ত দেন নি। কিন্তু আল্লাহ কোর’আনে বোলছেন- বনী ইসরাইল তা করে নি। তারা মুসার (আ:) মাধ্যমে আল্লাহকে প্রশ্ন কোরতে লাগলো- গরুটার বয়স কত হবে, গায়ের রং কি হবে, সেটা জমি চাষের জন্য শিক্ষিত কিনা, জমিতে পানি দেয়ার জন্য শিক্ষিত কিনা, ওটার গায়ে কোন খুঁত থাকতে পারবে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি(সূরা আল-বাকারা ৬৭-৭১)। তারা প্রশ্ন কোরে যেতে লাগলো আর আল্লাহ তাদের প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন। তারপর যখন প্রশ্ন করার মত আর কিছুই রইলো না তখন স্বভাবতই ঠিক অমন একটি গরু পাওয়া দূরুহ ব্যাপার হোয়ে দাঁড়ালো। একটা সহজ সরল আদেশ- “একটা গরু কোরবানী কর” এটাকে খুচিয়ে খুচিয়ে এমন কঠিন কোরে ফেলা হলো যে, অমন গরু আর পাওয়া যায় না। এই জাতির মহা পণ্ডিতরাও বিশ্বনবীর (সা:) ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর ঠিক ঐ কাজটাই মহা ধুমধামের সাথে আরম্ভ কোরলেন। দু’টি মাত্র আদেশ-আমাকে ছাড়া কাউকে মানবে না আমার দেয়া জীবন-বিধান ছাড়া আর কোন বিধান মানবে না, আর এই জীবন-বিধানকে সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরবে। সহজ, সরল দু’টি আদেশ। বিশ্বনবীর (সা:) উম্মাহ ইস্পাতের মত কঠিন ঐক্য নিয়ে ঐ কাজ কোরতে আরব থেকে বের হোয়ে অবিশ্বাস্য ইতিহাস সৃষ্টি কোরেছিলেন। পূর্ববর্ত্তী দীনের পণ্ডিতদের মত এ উম্মাহর পণ্ডিতরাও একে ধ্বংস কোরে দিলেন।

এখানে একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার। আমি ফিকাহ বা ফকিহদের বিরুদ্ধে বোলছি না। কারণ কোর’আন ও হাদীস থেকে জীবন বিধানের নির্দেশ গুলি একত্র ও বিন্যাস কোরলে যা দাঁড়ায় তাই ফিকাহ- অর্থাৎ ফিকাহ ছাড়া কোন মুসলিমের জীবনব্যবস্থা অনুসরন অসম্ভব। আমার বক্তব্য ঐ ফিকাহর অতি বিশ্লেষণ, সুক্ষাতিসুক্ষ বিশ্লেষণ যা আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) কঠোরভাবে নিষেধ কোরে দিয়েছেন। আমাদের ফকিহরা যদি কোর’আন-হাদীসের মৌলিক আদেশ নিষেধ গুলিকে সুন্দরভাবে শ্রেণী বিন্যাস কোরেই ক্ষান্ত হোতেন এবং লিখতেন যে এই-ই যথেষ্ট- এরপর আর অতিরিক্ত বিশ্লেষণে যেও না, কারণ আল্লাহ বোলেছেন দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না এবং রসুলাল্লাহও (সা:) নিষেধ কোরেছেন, তাহলে তাদের কাজ হতো অতি সুন্দর। ইসলামকে প্রকৃতভাবে সেবা করা হতো এবং আল্লাহর কাছ থেকে তারা পেতেন প্রচুর পুরস্কার। কিন্তু দুর্ভাগ্য হোচ্ছে তারা তা করেন নি। তারা আজীবন কঠিন পরিশ্রম কোরে আল্লাহর আদেশ নিষেধ গুলি ও বিশ্বনবীর (সা:) কাজ ও কথা গুলিকে সুক্ষ থেকে সুক্ষতম বিশ্লেষণ কোরতে কোরতে এমন পর্য্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে তা পূর্ণভাবে পালন করা প্রায় অসম্ভব এবং কেউ চেষ্টা কোরলে তার জীবনে অন্য আর কোন কাজ করা সম্ভব হবে না, এ দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের তো প্রশ্নই আসে না। কারণ ফকিহরা তাদের ক্ষুরধার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকে হাজার হাজার মসলা-মাসয়েল সৃষ্টি কোরেছেন। প্রধান প্রধান গণের এক এক জনের সিদ্ধান্তের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। জাতি ঐ মসলা-
মাসায়েলের মাকড়সার জালে জড়িয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হোয়ে গেছে, স্থবির হোয়ে গেছে।

এই পঙ্গুত্ব, স্থবিরত্ব থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ এই দীনকে কোরলেন অতি সহজ ও সরল, সেরাতুল মোস্তাকীম, দীনুল কাইয়্যেমা। কোন
বিষয়েই আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান, কারো নিয়ম-কানুন মানি না, শুধু এইটুকুমাত্র। এ যে কত গুরুত্বপূর্ণ, কত জরুরী তা বোঝাবার জন্য বোললেন, এর বেশী তো আমি তোমাদের কাছে চাইনি। এতেও সন্তুষ্ট না হোয়ে তিনি সেরাতুল মোস্তাকীমকে প্রতি রাকাতে অবশ্য পাঠ্য কোরে দিলেন, যাতে প্রতিটি মুসলিম মনে রাখে যে, আমার দীন অতি সহজ, অতি সরল, আমি যেন কখনও একে জটিল না কোরে ফেলি, জটিল কোরে ফেললে আমার দীনের সর্বনাশ হোয়ে যাবে। এই সেরাতুল মোস্তাকীমের সহজতার, সরলতার মহা গুরুত্ব উপলব্ধি কোরে রসুলাল্লাহ (সা:) এক হাদীসে বোললেন- দীন সহজ, সরল (সেরাতুল মোস্তাকীম) একে নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি কোরবে তারা পরাজিত হবে। অন্য হাদীসে বোললেন, জাতি ধ্বংস হোয়ে যাবে(হাদীস- আবু হোরায়রা (রা:) থেকে মুসলিম)। এই সাবধান বাণীতেও আশ্বস্ত না হোতে পেরে বিশ্বনবী (সা:) আরও ভয়ংকর শাস্তির কথা শোনালেন। বোললেন- কোর’আনের কোন আয়াতের অর্থ নিয়ে বিতর্ক কুফর। এবং কোন অর্থ নিয়ে মতান্তর উপস্থাপিত হোলে আমাদেরকে কি কোরতে হবে তারও নির্দেশ তিনি আমাদের দিচ্ছেন। বোলছেন, কোন মতান্তর উপস্থিত হোলে তা আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও(হাদিস- মেসকাত, মুসলিম)। অর্থাৎ দীনের ব্যাপারে যখনই মতান্তর হবে তখনই চুপ হোয়ে যাবে, কোন তর্ক-বিতর্ক কোরবে না। অর্থাৎ বিতর্কে যেয়ে কুফরি কোরবে না, এবং যে বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই সেই সেরাতুল মোস্তাকীম, দীনুল কাইয়্যেমাকে আকড়ে ধোরে থাক, এখানে লক্ষকরার একটা বিষয় আছে, দীনের ব্যাপার নিয়ে বিতর্ককে আল্লাহর রসুল (সা:) কোন পর্য্যায়ের গুনাহ, পাপ বোলে আখ্যায়িত কোরছেন। চুরি নয়, হত্যা নয়, ব্যভিচার নয়, বোলছেন- কুফর। যার চেয়ে বড় আর গোনাহ নেই, শুধু তাই নয় যা একজনকে এই দীন থেকেই বহিষ্কৃত কোরে দেয়। এতবড় শাস্তি কেন? শেষ নবীর (সা:) হাদীস থেকেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। তিনি বোলছেন- তোমরা কি জান, ইসলামকে কিসে ধ্বংস কোরবে? এই প্রশ্ন কোরে তিনি নিজেই জবাব দিচ্ছেন- শিক্ষিতদের ভুল, মোনাফেকদের বিতর্ক এবং নেতাদের ভুল ফতোয়া(হাদিস- মেশকাত)। যে কাজ ইসলামকেই ধ্বংস কোরে দেয় সে কাজের চেয়ে বড় গোনাহ আর কি হোতে পারে! তাই বিশ্বনবী (সা:) এই কাজকে কুফ্রি বোলে সঠিক কথাই বোলছেন।

এই জাতির মহা দুর্ভাগ্য। আল্লাহর ও তার রসূলের (সা:) এতসব কঠোর সতর্কবাণী এই উম্মাহর পণ্ডিতদের কিছুই মনে রোইল না। তারা সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম কোরে কোর’আন-হাদীসের সুক্ষাতিসুক্ষ বিশ্লেষণ কোরে এক বিরাট ফিকাহ শাস্ত্র গড়ে তুললেন। এদের মণীষার, প্রতিভার, অধ্যাবসায়ের কথা চিন্তা কোরলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হোয়ে আসে, কিন্তু তাদের ঐ কাজের ফলে এই উম্মাহ ছিন্ন-বিছিন্ন হোয়ে ধ্বংস হোয়ে গেলো। শত্রুর কাছে পরাজিত হোয়ে গেলো।

ফিকাহর যে অতি বিশ্লেষণ করা হোয়েছে তার পক্ষে একটি যুক্তি আছে এবং সে যুক্তি আমি সম্পূর্ণ স্বীকার করি। সেটা হোচ্ছে ইসলামের আইন-কানুনের বিচারালয়ে ব্যবহার। অর্থাৎ বিচারালয়ে এই আইনের সুক্ষ প্রয়োগ যাতে কোন নিরপরাধ শাস্তি না পায়। অনৈসলামিক যেসব আইন বর্ত্তমানে পৃথিবীতে চালু আছে, অর্থাৎ মানুষ রচিত আইন গুলি, এ গুলিও সুক্ষভাবে বিশ্লেষণ কোরেই বিচরালয় গুলিতে বিচার করা হয়- উদ্দেশ্য সেই একই- সুবিচার। কিন্তু সে জন্য কোন দেশেই জ্ঞানের অন্যান্য সমস্ত শাখাকে অপ্রয়োজনীয় ঘোষণা কোরে সেই দেশের সংবিধানের এবং আইনের সুক্ষ বিশ্লেষণকে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক কোরে দেয়া হয় নি। শুধু যারা আইনজ্ঞ হোতে চান, আইনজীবি হোতে চান তারা স্বইচ্ছায় ঐ বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেন, ডিগ্রী নেন এবং তারপর আদালতে যোগ দেন। অর্থাৎ চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, শিক্ষা, সাংবাদিকতা ইত্যাদির মত আইনকেও একটি বিশেষ (Specialised) জ্ঞান হিসাবে শিক্ষা করেন। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় পণ্ডিতরা তা না কোরে জাতির মধ্যে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি কোরে দিলেন যে আইনজ্ঞ হওয়াই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, জ্ঞানের অন্যান্য শাখা শিক্ষা করার কোন প্রয়োজন এ জাতির নেই। এই
কাজের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি যা হবার তাই হলো, জাতি জ্ঞানের অন্যান্য শাখাসমূহে যে বিশ্বয়কর জ্ঞান চর্চা কোরে পৃথিবীর শিক্ষকের আসন লাভ কোরেছিলো তা ছেড়ে দিয়ে একটি মুর্খ, অশিক্ষিত জাতিতে পরিণত হলো। উদাহরণরূপে বলা যায় যে, আজকের কোন রাষ্ট্রে যদি শিক্ষা নীতি এই করা হয় যে, সেই রাষ্ট্রের সংবিধান ও ঐ সংবিধান নিসৃতঃ আইন-কানুন ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনই একমাত্র শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে, বর্ত্তমানের মাদ্রাসা শিক্ষার মত, তবে কি হবে? নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, তাহলে বিদ্যালয় গুলিতে নিচু ও প্রাথমিক শ্রেণী থেকেই ঐ বিষয় একমাত্র পাঠ্যবিষয় করা হবে। দু’এক প্রজন্মের মধ্যেই ঐ রাষ্ট্রের লোকজন শুধু তাদের দেশের সংবিধান ও আইন-কানুনের সুক্ষাতিসুক্ষ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া আর কিছুই জানবে না, অন্যান্য সব বিষয়ে অজ্ঞ হোয়ে যাবে। জাতির যা ভাগ্য হওয়া উচিত তাই হলো- অন্য জাতির কাছে পরাজিত হোয়ে যে সংবিধান ও আইন-কানুন নিয়ে এত বিশ্লেষণ করা, সেই আইন-কানুন বাদ দিয়ে বিজয়ী জাতির আইন-কানুন গ্রহণ করা হলো। নিজেদের আইন-কানুন সংবিধান শুধু ব্যক্তিগত পর্য্যায়ে কোন রকমে টিকে রোইলো। যে আইন শিক্ষাকেই একমাত্র শিক্ষণীয় বোলে ঘোষণা করা হলো, মুসলিম দুনিয়াতে আজ সেই আইনে বিচার হয় না, বিচার হয় পাশ্চাত্যের মানুষের তৈরী, গায়রুল্লাহর আইনে, দণ্ড হয় পাশ্চাত্যের দণ্ডবিধি মোতাবেক অর্থনীতি পরিচালিত হয় পাশ্চাত্যের সুদভিত্তিক অর্থনীতি মোতাবেক। অথচ এ সবই ফিকাহ শাস্ত্রের আওতাধীন। তবুও এদের মাদ্রাসা গুলিতে অন্ধের মত এ গুলো পড়িয়ে যাওয়া হোচ্ছে, শিক্ষা দেয়া হোচ্ছে। যে আইনের প্রয়োগই নেই সেই আইনই শিক্ষা দেয়া হোচ্ছে, পরীক্ষা নেয়া হোচ্ছে। কী নিষ্ঠুর পরিহাস। অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর। তাই আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) বারবার সতর্ক কোরে দিয়েছেন দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য। কাউকে বাড়াবাড়ি কোরতে দেখলেই রাগে বিশ্বনবীর (সা:) পবিত্র মুখ লাল হোয়ে যেতো। কারণ তিনি জানতেন যে, অতি বড় সুন্দরী ও অতি বড় ঘরণীর মত অতি বড় মুসলিম না পায় দুনিয়া না পায় জান্নাত।

আল্লাহর শেষ নবী (সা:) ইসলামের যে শেষ সংস্করণটি নিয়ে এসেছেন তা যে অত্যন্ত সহজ, সরল এবং ভারসাম্যযুক্ত তা আল্লাহ ও তার প্রেরিত (সা:) কোর’আনে ও হাদীসে বারবার উল্লেখ কোরেছেন। বারবার উল্লেখ কোরেছেন এই জন্য যে, এই সহজ সরলতা, এই ভারসাম্য ইসলামের প্রাণ, মর্মবাণী। যে বা যারা এ থেকে চ্যুত হবে তারা আর এই ইসলামের গণ্ডীর মধ্যে নেই, কারণ যে উদ্দেশ্যে এই দীন, জীবনব্যবস্থা প্রেরিত হোয়েছে সেই উদ্দেশ্যই তখন ব্যর্থ হবে। এই হোচ্ছে মহানবী (সা:) বর্ণিত পুলসেরাত। তলোয়ারের ধারের মত সুক্ষ একটি সেতু, যে সেতু পার না হোয়ে জান্নাতে পৌঁছনো যাবে না। একটি অতি সুক্ষ সেতু পার হোতে গেলে কোন জিনিষটি অবধারিত? অতি নিশ্চিত উত্তর হোচ্ছে ভারাসাম্য (Balance) এর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ঐ ভারসাম্যের কথাই আল্লাহ বহুবার বোলেছেন তার কোর’আনে, তার রসুল (সা:) বোলছেন তার বহু হাদীসে। সেই ভারসাম্য যেটা আমি বারবার এই বইয়ে জোর দিচ্ছি, দেহের ও আত্মার, মস্তিষ্কের আর মনের, দুনিয়া ও আখেরাতের ভারসাম্য। যে বা যারা যে কোন দিকে কাত হোয়ে এই ভারসাম্য নষ্ট কোরবেন তিনি মহা পণ্ডিত, মহা আলেম হোতে পারেন, মহা সাধক, মহা সুফী হোতে পারেন কিন্তু মোহাম্মদের (সা:) মাধ্যমে প্রেরিত শেষ ইসলামে নেই। ইহুদীদের রাব্বাই, সাদ্দুসাইরা শেষ ইসলামের আলেমদের চেয়ে পাণ্ডিত্যে কম ছিলেন না, কিন্তু আল্লাহর চোখে তারা তার নবী ঈসার (আ:) বিরোধী ও শত্রু, সুতরাং আল্লাহ শত্রু। আর অন্যান্য ধর্মের মহা সাধকরাও আমাদের মহা সুফীদের চেয়ে আধ্যাত্ম শক্তিতে কোন কম যান নি। যারা জানেন না তারা দয়া কোরে পড়াশোনা কোরে দেখুন। কিন্তু ওগুলো এই শেষ ইসলাম নয়। এই সত্য ভাল কোরে মানুষকে বোঝাবার জন্য বিশ্বনবী (সা:) একটি সোজা লাইন টেনে বোললেন এই হোচ্ছে সহজ, সরল পথ, সেরাতুল মোস্তাকীম। তারপর ঐ লাইন থেকে ডান দিকে কতক গুলি ও বামদিকে কতক গুলি আড়াআড়ি লাইন টেনে বোললেন, এই সেরাতুল মোস্তাকীম ছেড়ে শয়তানের ডাকে ডান দিকে আর বামদিকে কতক লোক চলে যাবে। এই বোলে তিনি কোর’আনের আয়াত পড়লেন যাতে সেরাতুল মোস্তাকীমের গুরুত্ব উল্লেখ করা হোয়েছে। এই হাদীসটি পেছনে উল্লেখ কোরে এসেছি।

Leave a Reply