You are currently viewing দিন বিস্তারের “জেহাদ” ও “ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নেই”- এর সীমারেখা ও পার্থক্য কি?
জিহাদ আত্মরক্ষা মূলক নয়

দিন বিস্তারের “জেহাদ” ও “ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নেই”- এর সীমারেখা ও পার্থক্য কি?

যুদ্ধ কোরে, জোর কোরে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অধিকার ও ব্যক্তিকে তার সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া- এই দীন বিস্তারের “জেহাদ” ও “ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নেই”- এর সীমারেখা ও পার্থক্য। এই সীমারেখা সম্বন্ধে উম্মতে মোহাম্মদীর ধারণা অর্থাৎ আকীদা কত পরিষ্কার ছিলো তা আমরা দেখি খলিফা ওমরের (রা:) কাজে।

আল্লাহর শেষ বই এই কোর’আনে ও তার শেষ নবীর (সা:) জীবনী ও তার হাদীস গুলি যারা এমন কি ভাসা ভাসা ভাবেও পড়েছেন তারাও লক্ষ্য না কোরে পারবেন না যে, এই শেষ জীবন-ব্যবস্থার অনুসারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার ও সর্বোচ্চ সম্মান রাখা হোয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারীদের (শহীদ) জন্য। সবার কাজের বিচার হবে, তাদের হবে না, প্রথম রক্তবিন্দু মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমস্ত পাপ, সমস্ত গুণাহ আল্লাহ মুছে ফেলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে দাখেল কোরে দেবেন। এ পুরস্কার আর কাউকে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন নি। শুধু তাই নয়, আল্লাহ আমাদের বোলছেন- তোমরা তাদের মৃত পর্য্যন্ত বোলবে না(সূরা বাকারা- ১৫৪ ও সূরা ইমরান -১৬৯)। তারা শহীদ হউন, কিন্তু আমাদের চোখে তো অন্তত তারা অন্যের মতই মারা গেলেন। তবু আমাদের মুখ দিয়েও বলার অধিকার নেই যে তারা মরে গেছেন। উম্মতে মোহাম্মদীর, মো’মেনের, মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান। কতখানি স্নেহের চোখে দেখলে আল্লাহ এ সম্মান দিতে পারেন। সশস্ত্র সংগ্রামে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ উৎসর্গকারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান দেয়ার প্রকৃত অর্থ কি? এর অর্থ হোচ্ছে, এই জাতির উম্মাহর জন্য আল্লাহ লক্ষ্য স্থির কোরে দিয়েছেন। আর তা হোচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে শেষ নবীর (সা:) মাধ্যমে প্রেরিত শেষ জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা কোরে সমস্ত মানব জাতির জীবনে ন্যায় ও শান্তি আনয়ন করা। আল্লাহ খুব ভাল কোরেই তার সৃষ্ট মানুষকে জানেন। তিনি জানেন যে, পূর্ববর্তি বিকৃত ধর্ম গুলিকে ও মানুষের নিজেদের তৈরী ব্যবস্থা গুলিকে মানুষ এমন অন্ধভাবে আকড়ে ধরে আছে যে, সবিনয়ে আহ্বান কোরলেই তারা তা ছেড়ে সঠিক পথে আসবে না। লক্ষ যুক্তি প্রমাণ তবলীগ কোনো কাজে আসবে না। তারা বাধা দেবে, সর্বতোভাবে দেবে এবং সশস্ত্রভাবে দেবে এবং সেই সশস্ত্র বাধাকে ভেঙ্গে এই দীনকে প্রতিষ্ঠা কোরতে হবে। অন্য কথায় পৃথিবীতে প্রচলিত সব রকম ভুল ও অন্যায় ব্যবস্থকে সশস্ত্র সংগ্রামে পরাভূত কোরে মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় যারা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ কোরলেন তারা হোলেন শহীদ। একদিকে ইবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে জয়ী করার জন্য, অন্যদিকে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য পার্থিব সব কিছু এবং শেষ পর্য্যন্ত নিজেদের প্রাণটুকুও কোরবানী কোরে দেওয়ার চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে? তাই এর পুরস্কার ও সম্মান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড়। এই জন্য এই দীনে এর সামরিক দিকটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) এই দিকটাকেই সবচেয়ে প্রাধান্য ও জোর দিয়েছেন। সামরিক দিক এই জাতিকে কতখানি প্রভাবিত কোরেছিলো, সমস্ত জাতিটার চরিত্র কতখানি পরিবর্ত্তিত কোরে ফেলেছিলো তার একটু আভাস দিচ্ছি।

আগে পারসিকরা বিশ্বাস কোরত যে, একজন পারসিক সৈন্য দশজন আরবের সমান। তারা অবজ্ঞা ভরে আরবদের ডাকতো ভিক্ষুকের জাত বোলে। এ বিশ্বাস এক তরফা ছিলো না। আরবরাও একজন পারসিক সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে দশজন আরবীর সমান মনে কোরত। দক্ষিণ আরবে ইয়ামন পারসিকরা শাসন কোরত একজন গভর্নরের অধীনে কিছু সংখ্যক মাত্র সৈন্য দিয়ে। আভ্যন্তরীণ আরব এত নিঃস্ব ছিলো যে ওখানে গভর্নর বা সৈন্য রাখার মত কোন আকর্ষণ আছে বোলে তারা মনে কোরত না। ও দিকটায় কোন বিশেষ ঘটনা বা গোলযোগ হোলে ইয়ামনের গভর্নর দু’একজন পুলিশ পাঠিয়ে দেয়াকেই যথেষ্ট মনে করতেন। বিশ্বনবী (সা:) যখন পৃথিবীর বিভিন্ন শাসকদের এই শেষ জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন তখন পারস্যের সম্রাট (খসরু) পারভেজ অপমানিত বোধ কোরে তার ইয়ামনের গভর্নর বাযানকে আদেশ দিলেন মোহাম্মদ (সা:) নামের আরবটাকে ধৃষ্টতার জন্য গ্রেফতার কোরে তার কাছে রাজধানীতে পাঠিয়ে দিতে। সম্রাটের আদেশ পেয়ে গভর্নর বাযান কি কোরলেন তা লক্ষ্য কোরুন। তিনি রসুলাল্লাহকে (সা:) গ্রেফতার করার জন্য মদীনায় দু’জন পুলিশ পাঠিয়ে দিলেন(মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক, তাবারী, ইয়াযীদ বিন আবু হাবিব)। এখানে চিন্তা করার বিষয় এই যে, ইয়ামন আরব উপদ্বীপেই অবস্থিত এবং মক্কা-মদীনা থেকে খুব দুরও নয়। যখনকার কথা হোচ্ছে তখন বিশ্বনবীকে (সা:) নিয়ে আরবময় হুলুস্থুল, বদর ও ওহোদের যুদ্ধ ছাড়াও অনেক ছোট-খাটো সংঘর্ষ হোয়ে গেছে। মহানবী (সা:) মদীনায় সর্বেসর্বা। গভর্নর হিসাবে এসব খবর বাযানের জানা না থাকা অসম্ভব। তা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করার জন্য মাত্র দু’জন পুলিশ পাঠানো থেকে বোঝা যায় পারসিক শক্তি আরবদের কতখানি অবজ্ঞার চোখে দেখতো।

তারপর সব মিলিয়ে মাত্র তেইশ বছরের সাধনায় বিশ্বনবী (সা:) ঐ আরবকেই রূপান্তরিত কোরলেন একটি জাতিতে, যে জাতি ঐ পারসিকদের যুদ্ধক্ষেত্রে তুলোর মতে উড়িয়ে দিলো। দেখা গেলো তখন একটা মুসলিম মুজাহিদ দশটা পারসিক সৈন্যের সমান। অর্থাৎ একদম উল্টো। তফাৎটা লক্ষ্য কোরুন, এক পুরুষেরও তফাৎ নয়, মাত্র কয়েকটা বছর, এবং সেই মানুষ গুলিই যারা নিজেরাই স্বীকার কোরতেন যে একজন পারসিক সৈন্য দশজন আরবের সমান, তারাই যখন ইসলাম গ্রহণ কোরে সেই পারসিকদের মুখোমুখী হোয়ে দাঁড়ালেন তখন দেখা গেলো, এবার তারাই একজন, দশজন পারসিক সৈন্যের সমান। এই তফাৎ কিসে আনলো? নিঃসন্দেহে ইসলাম। অর্থাৎ এই জীবন-ব্যবস্থা, এই দীন একজন মানুষকে দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত করে, একটি জাতিকে যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজেয় কোরে দেয়। যদি তা না করে তবে সেটা আর বিশ্বনবীর (সা:) শেখানো ইসলাম নয়, তা বর্ত্তমানের বিকৃত, প্রাণহীন, তথাকথিত, বিপরীতমুখী ইসলাম। ইসলামকে জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরলে নিজে থেকেই স্বতঃস্ফূর্ত্তভাবে একটি জাতি দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত হতে বাধ্য, এমনি কোরেই আল্লাহ এই জীবন-ব্যবস্থাটা তৈরী কোরেছেন এবং কাজেই এর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান যোদ্ধাদের জন্য রেখেছেন। কারণ পরম জ্ঞানী আল্লাহ জানেন যে, যতই প্রচার, তবলীগ করা হোক শেষ পর্য্যন্ত ঐ সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া এ দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করানো যাবে না। যারা ইসলামের কিতাল অর্থাৎ সশস্ত্র সংগ্রামকে শুধু আত্মরক্ষামূলক বোলে মনে করেন তাদের জ্ঞাতার্থে নিবেদন এই যে, তাই যদি হতো তবে মহানবীর (সা:) আসহাব তার ওফাতের পর দল বেধে আরব থেকে অস্ত্র হাতে বের হোয়ে পৃথিবীকে শাসন করার ক্ষমতা তাদের হাতে ছেড়ে দেবার আহ্বান কোরতেন না, আরবে বোসেই তারা মহাউৎসাহে বর্ত্তমানের মুসলিমদের মতো নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কোরতে থাকতেন। এবং তাহলে আজ যারা একে শুধু আত্মরক্ষার যুদ্ধ বলেন তারা নামাবলী গায়ে দিয়ে মুর্ত্তিপূজা কোরতেন, কিম্বা গলায় ক্রূশ ঝুলিয়ে গীর্জায় যেতেন, আর না হোলে বুদ্ধ মুর্ত্তির সামনে চোখ বুজে বোসে বুদ্ধং শরণং গচ্ছামী জপতেন।

কিন্তু কথা আছে। আহ্বান কোরে, বুঝিয়ে মানুষকে এই জীবন-বিধানের আওতায় আনার চেষ্টায় বিফল হোয়ে অস্ত্র ধরা এবং মানুষকে অস্ত্রের জোরে ধর্মান্তরিত করা- এই দু’য়ের মধ্যে সুক্ষ অথচ বিরাট এক পার্থক্য আছে। আল্লাহর রসুল (সা:) তার জীবনেই ঐ পার্থক্যকে পরিষ্কারভাবে তার সাহাবাদের অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন এবং ঐ উম্মাহ পরবর্ত্তীকালে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন কোরে গেছেন। পার্থক্যটা হলো এই: একদিকে যেমন আল্লাহ বিশ্বনবীকে (সা:) জানিয়ে দিলেন যে তাকে তিনি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই জন্য যে তিনি (নবী) পৃথিবীর সমস্ত রকম জীবন-ব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয়, অকেজো কোরে দিয়ে এই ব্যবস্থা, শেষ ইসলামকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ সঙ্গে তিনি উম্মতে মোহাম্মদীকে আদেশ কোরেছেন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে এই দীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে সমস্ত অশান্তি, অন্যায়, রক্তপাত নিশ্চিহ্ন কোরে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা কোরতে। তার (সা:) নিজের প্রতি আল্লাহর ঐ আদেশ এবং মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর আদেশকে একত্র কোরলে যা হয় রসুলাল্লাহ (সা:) তা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। বোলছেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি (আল্লাহ কতৃক) সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে, যে পর্য্যন্ত না পৃথিবীর মানুষ আল্লাহকে একমাত্র প্রভু ও আমাকে তার প্রেরিত বোলে স্বীকার কোরে নেয়, সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয়। এক কথায় জেহাদ কার্যতঃ মুসলিম জাতির জন্য অবশ্য কর্ত্তব্য, ফরদ হোয়ে গেলো।

এখানে জেহাদ বোলতে আমি সশস্ত্র সংগ্রাম, কেতালকে বোঝাচ্ছি। কারণ নিজ আত্মার, রিপুর, কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জেহাদ থেকে শুরু কোরে কথা বোলে, যুক্তি দিয়ে, লিখে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করার জেহাদতো আছেই, আমি উপরোক্ত ব্যাপারে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বোলছি এই জন্য যে, কোর’আনের যে আয়াত ও বিশ্বনবীর (সা:) যে হাদীসের উদ্ধৃতি দিলাম, উভয়টাকেই আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) জেহাদ শব্দ ব্যবহার করেন নি, কোরেছেন কিতাল শব্দ ব্যবহার, যার অর্থ সশস্ত্র সংগ্রাম, যুদ্ধ। অন্য দিকে তেমনি আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন, “জোর কোরে কাউকে ধর্মান্তরিত কোরবে না”। আল্লাহ তার নবীকে (সা:) ও তার উম্মাহকে আদেশ দিচ্ছেন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে এই শেষ ইসলামের মধ্যে নিয়ে আসতে, আবার বোলছেন কাউকে জোর কোরে ধর্মান্তরিত কোরবে না- আপাতদৃষ্টিতে এ অসামঞ্জস্যপূর্ণ আদেশকে শেষ নবী (সা:) পরিষ্কার কোরে দিয়েছেন অনেক বার। যখনই তিনি তার মুজাহিদদের কোন শত্রুর বিরুদ্ধে পাঠিয়েছেন, প্রত্যেকবার তিনি তাদের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন যে প্রত্যেক সংঘর্ষের আগে বিরোধীদের তিনটি শর্ত্ত দেবে। যে শর্ত্ত গুলি এর আগে উল্লেখ কোরে এসেছি। উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। এ দীন আমাদের সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতেই হবে, তা না হোলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এই কাজ কোরতেই আল্লাহ তার নবীকে (সা:) পাঠিয়েছেন। এই কোরতেই আমরা পার্থিব সর্ব কিছু কোরবান কোরে এখন প্রাণটাও কোরবান কোরতে তোমাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু উদ্দেশ্য আমাদের কাউকে জোর কোরে ধর্মান্তরিত করা নয়। উদ্দেশ্য রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হবে এই শেষ ইসলামের ব্যবস্থা অনুযায়ী। কিন্তু যাদের ইচ্ছা তারা বক্তিগতভাবে তাদের পুর্ববর্ত্তী বিকৃত দীনকে ধোরে রাখতে পারে, আমাদের আপত্তি নেই।

যুদ্ধ কোরে, জোর কোরে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অধিকার ও ব্যক্তিকে তার সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া- এই দীন বিস্তারের “জেহাদ” ও “ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নেই”- এর সীমারেখা ও পার্থক্য। এই সীমারেখা সম্বন্ধে উম্মতে মোহাম্মদীর ধারণা অর্থাৎ আকীদা কত পরিষ্কার ছিলো তা আমরা দেখি খলিফা ওমরের (রা:) কাজে। পবিত্র জেরুসালেম শহর মুজাহিদ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পর খলিফা ওমর বিন খাত্তাব (রা:) ঘুরে ঘুরে শহরের দর্শনীয় বস্তু গুলি দেখার সময় যখন খ্রীস্টানদের একটি অতি প্রসিদ্ধ গীর্জা দেখছিলেন তখন নামাযের সময় হওয়ায় তিনি গীর্জার বাইরে যেতে চাইলেন। জেরুজালেম তখন সবেমাত্র মুসলিমদের অধিকারে এসেছে, তখনও কোন মসজিদ তৈরীই হয় নি, কাজেই নামায খোলা ময়দানেই পড়তে হতো। জেরুসালেমের প্রধান ধর্মাধ্যক্ষ বিশপ সেফ্রোনিয়াস ওমরকে (রা:) অনুরোধ কোরলেন ঐ গীর্জার মধ্যেই তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে নামায পড়তে। ভদ্রভাবে ঐ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান কোরে ওমর (রা:) গীর্জার বাইরে যেয়ে নামায পড়লেন। কারণ কি বোললেন তা লক্ষ্য কোরুন। বললেন- আমি যদি ঐ গীর্জার মধ্যে নামায পড়তাম তবে ভবিষ্যতে মুসলিমরা সম্ভবতঃ একে মসজিদে পরিণত কোরে ফেলতো। একদিকে ইসলামকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত কোরতে সর্বস্ব পণ কোরে দেশ থেকে বেরিয়ে সুদূর জেরুসালেমে যেয়ে সেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে খ্রীস্টানদের গীর্জা যেন কোন অজুহাতে মুসলিমরা মসজিদে পরিণত না করে সে জন্য অমন সাবধানতা। এই হলো “ধর্মে বল প্রয়োগ নেই” এবং ‘সশস্ত্র সংগ্রাম করো যে পর্য্যন্ত না পৃথিবী থেকে সমস্ত অন্যায়, রক্তপাত, অশান্তি শেষ হোয়ে না যায়’ এর প্রকৃত অর্থ। ঐ অর্থ এবং তফাৎ বিশ্বনবীর (সা:) আসহাব এবং উম্মতে মোহাম্মদী সঠিকভাবে বুঝেছিলেন বোলেই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর যে বিরাট অংশে দীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন সেখানে ইসলামিক, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও আইন প্রশাসন ব্যবস্থা চালু কোরলেও কাউকে বল প্রয়োগে কিম্বা প্রলোভন দেখিয়েও ধর্মান্তরিত করেন নি। কোরলে ঐ বিরাট ভূখণ্ডে আজ একটাও অমুসলিম থাকতে পারতো না। বরং অন্যান্য ধর্মের মন্দির, গীর্জা সীনাগগের রক্ষা ও নিরাপত্তার ভার ছিলো মুসলিমদের হাতে। অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ সব রকমের অধিকারকে রক্ষা কোরতে ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম প্রশাসন কত দূর গেছে তার হাজারো ঘটনা ইতিহাস হোয়ে আছে, যা পড়লে হতবাক হোয়ে যেতে হয়। এমন ঘটনা দিয়ে এই উম্মাহর ইতিহাস ভরপুর যেখানে তারা একটি অমুসলিম জাতির সামরিক প্রতিরোধ চুর্ণ কোরে তাদের ইসলামী আইন ও শাসনের অধীনে এনেছে, তারপর অল্পদিনের মধ্যেই এই নতুন জীবন-ব্যবস্থার ফলে সুবিচার, শান্তি ও নিরাপত্তা দেখে অভিভূত হোয়ে দলে দলে অমুসলিম স্বেচ্ছায় ইসলামে প্রবেশ কোরেছে, ফলে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠে পরিণত হোয়েছে। সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে তাদের ইসলামের জীবন-ব্যবস্থার অধীনে না আনলে লক্ষ যুক্তি-তর্কে ও তবলীগে এটা ঘোটতে পারতো না। তাই আবুযর (রা:) বোলেছিলেন- আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ ইসলামে এক বিশেষ কর্ত্তব্য। এই জেহাদের মাধ্যমে মুসলিমরা লোকদের গলায় শিকল দিয়ে নিয়ে আসেন, অতঃপর ঐ লোকগণই স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ কোরে নেয়।

Leave a Reply