You are currently viewing দুই ইলাহের ইবাদতকারী জাতি
দুই ইলাহের ইবাদতকারী জাতি

দুই ইলাহের ইবাদতকারী জাতি

দুই ইলাহ ইবাদতকারী জাতি

দীনকে, জীবন ব্যবস্থাকে বিবর্দ্ধক কাঁচ দিয়ে তন্ন তন্ন কোরে খুঁটিয়ে দেখতে যেয়ে সমগ্র দীন সম্বন্ধে এই যে অবিশ্বাস্য অন্ধত্ব, এই অন্ধত্বের জন্যই এই বিরাট পাগড়ীধারী ধর্মের ধারক বাহক মাওলানা, ওলামায়ে দীনরা ক্ষমতাসীন শিক্ষিত শ্রেণীকে বাধা দেন নি যখন পাশ্চাত্যের মানসিক গোলাম ঐ শ্রেণীটি পাশ্চাত্যের তৈরী জাতীয় জীবন ব্যবস্থা যা সরাসরি কুফর ও শেরক, এই উম্মাহর উপর বহাল রাখলেন। যে সুদকে আল্লাহ অতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ কোরেছেন সেই সুদকে জাতির অর্থনৈতিক জীবনে শাসকশ্রেণী চালু রাখলেও এই মহা ধার্মিকরা তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম কোরলেন না, কারণ তাদের প্রায়ান্ধ দৃষ্টিতে যে সুদপ্রথা সমাজের একটি ছোট অংশকে বিলাসীতার মধ্যে এবং বৃহত্তর অংশকে দারিদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করে সেই সুদের চেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় হোচ্ছে কোন পা প্রথমে ফেলে মসজিদে ঢুকতে হয়। দণ্ডবিধি আল্লাহর আদেশ মোতাবেক কিনা সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়, বিবি তালাকের ফতোয়া কত রকম হোতে পারে সেটাই গবেষণার বিষয়। আকীদার আগাগোড়া বিকৃতি, গুরুত্বের সম্পূর্ণ ওলটপালটের কী নিদারুণ অবস্থা। আল্লাহর রসুল (সা:) একটা সোজা রেখা টেনে আসহাবদের বোললেন, এই হোচ্ছে সহজ সরল পথ, সেরাতুল মোস্তাকীম। তারপর সেই সরলরেখা থেকে ডান দিকে কতক গুলি ও বাম দিকে কতক গুলি রেখা টেনে বোললেন এই গুলি সেই সব পথ যে গুলির দিকে শয়তান ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি কোর’আন থেকে সেই আয়াত পড়লেন যেটায় আল্লাহ বোলছেন- নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার সহজ সরল পথ (সেরাতুল মোস্তাকীম যেটার অর্থ পেছনে কোরে এসেছি)। কাজেই এই পথে চল এবং থাক। অন্য কোন পথে যেওনা (মহানবী (সা:) ডাইনে বায়ে যে লাইন গুলি টানলেন সে গুলি) গেলে তোমরা আমার পথ থেকে বিচ্যুত, বিচ্ছিন্ন হোয়ে যাবে। তিনি (আল্লাহ) এই তোমাদের আদেশ কোরছেন যাতে তোমরা অন্যায় থেকে বেঁচে ন্যায়ে থাকতে পারো(হাদীস- আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ (রা:) থেকে, আহমদ, নিসায়ী- মেশকাত।)। এই হাদীসটি এর আগে উল্লেখ কোরে এসেছি। এছাড়াও আরও বহু হাদীসে এই সেরাতুল মোস্তাকীমকে বিশ্বনবী (সা:) নানাভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তারপর আল্লাহ তার কোর’আনে বহুবার এই সেরাতুল মোস্তাকীম উল্লেখ কোরেছেন। এ যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাবার জন্য একে সুরা ফাতেহার অন্তর্ভুক্ত কোরেছেন ও ঐ সুরা প্রতি রাকাতে অবশ্য পাঠ্য কোরে দিয়েছেন। কেন? এই জন্য যে, সমস্ত কিছুর ভিত্তি হোচ্ছে ঐ সেরাতুল মোস্তাকীম- এই সহজ, অতি পরিষ্কার সত্য যে, এক আল্লাহ আমাদের প্রভু মা’বুদ। তিনি ছাড়া প্রভু, মাবুদ নেই। অর্থাৎ তার আদেশ নিষেধ, তার দেয়া জীবন ব্যবস্থা ছাড়া আর কোন কিছু আমরা গ্রহণ করি না, মানিনা এবং মানা শর্ত্তহীনভাবে, আংশিকভাবে নয়। ওমুক ওমুক ব্যাপারে মানি আর অমুক ব্যাপারে মানি না, অন্যের আদেশ নিষেধ মানি, অন্যের বিধান মানি, অমন মানা সেই সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা গ্রহণ করেন না, অমন আংশিক মানা তার কাছে শেরক, অমার্জনীয় অপরাধ এবং তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে শেরক তিনি কখনই ক্ষমা কোরবেন না(সূরা আন-নীসা-৪৮)। অর্থাৎ এই সহজ সরল সত্যকে গ্রহণ করাই সমস্ত জীবন বিধানের, দীনের ধর্মের ভিত্তি। আল্লাহ জানেন যে, এই ভিত্তিকে পূর্ণভাবে গ্রহণ কোরলে বাকি অন্যসব নিজেই স্বতঃস্ফুর্ত্তভাবেই আসবে এবং মানুষের জীবনে সামগ্রিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু ঐ গ্রহণ যদি পরিপূর্ণভাবে না হয়, আংশিক হয়, জাতীয় জীবনে না হোয়ে যদি শুধু ব্যক্তিগত জীবনে হয়, তবে তা মানব জীবনে শান্তি আনতে পারবে না। কারণ আইন-কানুন দণ্ডবিধির প্রভাবেই শান্তি শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন সম্ভব, ব্যক্তিগতভাবে অসম্ভব। এই জন্যই হাদীসে পাই রসুলাল্লাহ (সা:) বোলেছেন- যে মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এই বিশ্বাস নিয়ে যাবে সে জান্নাতবাসী হবে। মহানবীর (সা:) এই কথা শুনে আবু যার (রা:) জিজ্ঞাসা কোরলেন, যদি ঐ লোক ব্যভিচার করে এবং চুরি করে? আল্লাহর রসুল (সা:) জবাব দিলেন, সে ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও। বিশ্বনবীর (সা:) এই কথা স্পষ্টতই আবু যারকে (রা:) বিস্মিত কোরেছিলো। কারণ তিনি আবার তাকে প্রশ্ন কোরলেন, সে ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও? হাদীসে পাই বিস্মিত আবু যার (রা:) তিন তিন বার বিশ্বনবীকে (সা:) ঐ একই প্রশ্ন কোরেছিলেন এবং শেষ বার একেবারে নিঃসন্দেহ, নিশ্চিত কোরে দেবার জন্য আল্লাহর রসুল (সা:) “হ্যাঁ ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও” এই কথা বোলে যোগ কোরেছিলেন “আবু যারের নাক কেটে দিলেও” এই হাদীসটি ‘মুত্তাফিক আলাইহে’ শ্রেণীভুক্ত অর্থাৎ বোখারী ও মুসলিম উভয় শ্রেষ্ঠ হাদীসবেত্তা দ্বারা সমর্থিত ও গৃহীত, অর্থাৎ নিঃসন্দেহে সত্য। বর্ত্তমানের অতি মুসলিমদের কাছে বিশ্বনবীর (সা:) ঐ কথা অতি আশ্চর্যজনক বোধ হবে, গ্রহণ কোরতে দ্বিধা আসবে, কারণ তাদের আকীদা বিকৃত হোয়ে গেছে। যিনি এই জীবন ব্যবস্থার, দীনের মর্মবাণী বুঝতে পেরেছেন, এর উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার জ্ঞান লাভ কোরেছেন অর্থাৎ রসূলের (সা:) ও তার সাহাবাদের আকীদার সঙ্গে যার আকীদার মিল রয়েছে তিনি আশ্চর্য হবেন না, তিনি সহজভাবেই এই হাদীস নেবেন, কারণ তিনি জানেন যে, বিশ্বনবী (সা:) যে ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ উপাস্য নেই’। কথাটা বোললেন তার অর্থ অন্য সর্বরকম জীবন বিধানকে অস্বীকার করা। বর্ত্তমানের ‘মুসলিম’দের পক্ষে এই হাদীস গ্রহণ করা কষ্টকর, কারণ জাতীয় জীবনে আল্লাহর আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ইত্যাদি সমস্ত ত্যাগ কোরে মানুষের তৈরী ব্যবস্থার মধ্যে, অর্থাৎ শেরক ও কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত হোয়েও মহা নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, তাহাজ্জুদ, নফল, তারাবী, পাজামা, কুর্ত্তা দাড়ি আর ফতোয়ার কুট তর্কে ব্যস্ত এই বিকৃত মানসিকতা। এই হাদীসটি লক্ষ্য কোরুন। দেখুন আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এর পরে মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ পর্য্যন্ত নেই। আরও অনেক গুলি হাদীসে ওমনি শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কে-ই যথেষ্ট বলা হোয়েছে, যেমন জান্নাতের চাবি হোচ্ছে আল্লাহর ছাড়া উপাস্য প্রভু নেই(মুয়ায বিন জাবাল থেকে আহমদ, মেশকাত)অবশ্য অন্য অনেক গুলো হাদীসে মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ যোগ করা আছে- যেমন যে লোক বিশ্বাস কোরবে আল্লাহর ছাড়া উপাস্য ̈ (ইলাহ, মাবুদ) নেই এবং মোহাম্মদ (সা:) তার প্রেরিত তার জন্য জাহান্নাম হারাম হোয়ে যাবে (ওবাদাহ বিন সাবেত থেকে মুসলিম, মেশকাত)। সর্বত্রই মনে রাখতে হবে যে, ঐ তওহীদ আজকের এই ব্যক্তিগত আংশিক তওহীদ নয়, ঐ তওহীদ হোচ্ছে সেই তওহীদ যে তওহীদ বিশ্বনবী (সা:) তার উম্মাহকে শিখিয়েছিলেন। সেই তওহীদ আজ বিশ্বের কোথাও নেই সামান্য কিছু লোকের মধ্যে ছাড়া, যাদের আল্লাহ তার অসীম রহমতে দান কোরেছেন এবং যাদের কথা তার রসুল (সা:) অনেকবার বোলে গেছেন। তিনি বোলেছেন- আমার উম্মতের মধ্যে সব সময়ই একদল লোক থাকবে যারা আল্লাহর হুকুম সমূহকে সমুন্নত রাখবে। এখানে নবী (সা:) প্রকৃত ইসলামকেই বোঝাচ্ছেন অবশ্যই। এই দলের কথা ও তওহীদের ভিত্তির গুরুত্বের কথা কোর’আন ও হাদীসে এতবার এত জায়গায় আছে যে, তা এখানে উল্লেখ কোরতে গেলে আরেকটা বই-ই হোয়ে যাবে। আজকের ‘মুসলিম’ জাতি দীনের সমস্ত খুঁটিনাটি অতি যত্নের সাথে পালন করে কিন্তু আসল ভিত্তি সেই তওহীদে নেই। মরা গাছের শুকনো পাতায় তারা অতি সতর্কতার সাথে সারাদিন পানি ঢালছেন ওদিকে গাছের শেকড় আর গুড়ি যে মরে গেছে তা তাদের জানা নেই। আল্লাহর আর তার রসূলের (সা:) সতর্কবাণী আর নিষেধকে অমান্য কোরে দীনের অতি বিশ্লেষণের বাড়াবাড়ির অবশ্যম্ভাবী পরিণাম এই। আজ এই উম্মাহ পাশ্চাত্যের আকীদাকে তসলিম কোরে নিয়েছে, স্বীকার কোরে নিয়েছে যে, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিধাতা (অর্থাৎ বিধানদাতা ইলাহ) হোচ্ছেন আল্লাহ আর জাতীয় অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিচার, দণ্ডবিধি ইত্যাদির বিধাতা, ইলাহ হোচ্ছে পাশ্চাত্যের ইহুদী-জুডিও খ্রীস্টান, সভ্যতা।

আজ এই জাতি যেটা নিজেকে উম্মতে মোহাম্মদী বোলে মনে করে, তার দুই প্রভু, দুই বিধাতা, দুই ইলাহ। এরা এক বিধাতার, ইলাহের ইবাদাত করে, প্রচুর নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দাড়ী টুপি, কুলুখ, দোয়া, দরুদ তাহাজ্জুদ লম্বা কোর্ত্তা, অপ্রয়োজনীয় ওয়াজ চিৎকার কোরে যিকর কোরে, মেয়েদের বাক্সে ভরে, আর অন্য ইলাহের ইবাদত করে তাদের তৈরী বিচার ব্যবস্থায় বিচার কোরে, তাদের তৈরী দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি ও পুরস্কার দিয়ে, তাদের তৈরী তন্ত্র মন্ত্র অনুযায়ী রাজনৈতিক ও সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু কোরে। এর চেয়ে বড় শিরক সম্ভব নয়, এর চেয়ে বড় বেদা’আতও সম্ভব নয়।

একটু আগে বিশ্বনবীর (সা:) যে হাদীসটি উল্লেখ কোরে এসেছি অর্থাৎ যেটায় তিনি বোলেছেন যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে সত্যিকার বিশ্বাসীকে তার ব্যভিচার, তার চুরি জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না, ঐ হাদীসটিতে আরেকটি জিনিষ পরিষ্কার হোয়ে উঠেছে। সেটা হলো এই দীনে জাতীয় জীবন হোচ্ছে আসল প্রয়োজনীয়। আল্লাহর প্রভুত্ব, সার্বভৌমত্বের প্রকৃত দরকার জাতীয় জীবনে, ব্যক্তিগত জীবনে নয়। ব্যভিচার ও চুরি ব্যক্তিগত জীবনের অপরাধ, গোনাহ শয়তানের প্ররোচনার কাছে হেরে যেয়েই মানুষ ঐ অপরাধ করে। কিন্তু জাতীয় জীবনে আল্লাহকে বা তার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা রিপুর কাছে পরাজয় নয়, চিন্তা ভাবনা কোরেই তা করা হয়। আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল, অসীম তার অনুকম্পা তাই রিপুর কাছে পরাস্ত হোয়ে অন্যায়, গোনাহ কোরে ফেলে তারপর অকপটে মাফ চাইলে তিনি মাফ কোরবেন। কিন্তু তার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে তার দেয়া জাতীয় জীবন ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে অন্যের তৈরী, গায়রুল্লাহর তৈরী ব্যবস্থা গ্রহণ কোরলে তিনি মাফ কোরবেন না, এটা তিনি প্রতিজ্ঞা কোরেছেন। কারণ এটা রিপুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরে পরাস্ত হোয়ে করা হয় নি, অন্যের প্রভাবে অন্যের শিক্ষায় ভেবেচিন্তে করা হোয়েছে- প্রকৃত শেরক, প্রকৃত কুফর। বর্ত্তমানের এই দীনের ধারক বাহকদের ধর্মকর্ম দেখলে আমার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। এক ইরাকী হজ্বে আসবার আগে খলিফা ওমরের (রা:) ছেলে আবদুল্লাহ (রা:) সঙ্গে দেখা কোরে হজ্বের সময় মাছি ইত্যাদি মারলে কি কোরতে হবে সে সম্বন্ধে ফতোয়া চাইলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বোললেন, কি আশ্চর্য! যে ইরাকীরা আল্লাহর রসূলের (সা:) নয়নের মনি হোসায়েনকে (রা:) হত্যা কোরেছে তারা মাছি মারার কাফফারার ফতোয়া জিজ্ঞাসা কোরছে। বিকৃত আকীদার ফলে আজ মুসলিম জগতের অবস্থা ঐ ইরাকীর মত।

Leave a Reply