You are currently viewing ধর্মের বিকৃতি, নবী-রাসূলের আগমন, অহঙ্কারী মোল্লা/পুরহিত শ্রেনীর নবী-রাসূলের বিরোধিতা।

ধর্মের বিকৃতি, নবী-রাসূলের আগমন, অহঙ্কারী মোল্লা/পুরহিত শ্রেনীর নবী-রাসূলের বিরোধিতা।

একজন নবী একটা জনসম্প্রদায়ে বা জাতিতে যখন প্রেরিত হোয়েছেন তখন তাকে সম্মুখীন হোতে হোয়েছে তার পূর্ববর্ত্তী নবীর বিকৃত ব্যবস্থার অনুসারীদের। পূর্ববর্ত্তী দীনকে বিকৃত করা না হোলে হয়তো তখন তাকে পাঠানোর প্রয়োজনই হতো না। এই দীন গুলি কেমন কোরে বিকৃত হোয়েছে সে সম্বন্ধে একটা ধারণার প্রয়োজন। যখন কোন একজন নবী তার কাজে সফল হোয়েছেন অর্থাৎ তার আনা জীবনব্যবস্থা তার সম্প্রদায় বা জাতি গ্রহণ কোরেছে, প্রতিষ্ঠা কোরেছে, তখন তার ফলে সে জাতিতে শান্তি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোয়েছে। তিনি পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ ঐ ব্যবস্থা বিকৃত কোরতে শুরু কোরেছে। এই বিকৃতি গুলোকে শ্রেণী বিন্যাস কোরলে প্রধান প্রধান গুলো হলো-

ক) নবীর ব্যক্তিত্বে, চরিত্রের মাধুর্যে মুগ্ধ, তার অলৌকিক শক্তিতে অভিভূত তার জাতি, উম্মাহ তাকে অশেষ ভক্তিশ্রদ্ধা কোরেছে। তাদের মধ্যে অনেকে তাকে প্রাণ ভরে ভালও বেসেছে। তার ওফাতের পর ক্রমে ক্রমে এই ভক্তি শ্রদ্ধা ভালবাসা তাকে আরও উপরের আসনে বসাতে চেয়েছে। এটা একটা স্বাভাবিক মানবিক মানসিক বৃত্তি, যে যাকে যত ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে সে তাকে তত বড় কোরে দেখতে চায়, দেখাতে চায়। যদিও রসুল তার জীবিতকালে নিঃসন্দেহে বার বার পরিষ্কার কোরে বোলে গেছেন যে আমি তোমাদের মতই মানুষ, শুধু আমাকে পাঠানো হোয়েছে তোমাদের জন্য জীবন-বিধান দিয়ে, কিছু অলৌকিক শক্তি দিয়ে। কাজেই আমি যা, অর্থাৎ রসুল, এর বেশী আমাকে অন্য কিছু মনে কোরোনা, কোরলে মহা অন্যায় হবে। কিন্তু অতি ভক্তি আর শয়তানের প্ররোচনায় যতই দিন গেছে ততই তাদের নবীকে উপরের দিকে ওঠাতে ওঠাতে শেষ পর্য্যন্ত কোন নবীকে আল্লাহর ছেলে, কোন নবীকে একেবারে আল্লাহর আসনেই বসিয়েছে।

খ) নবীরা চলে যাবার পর তার জাতি, উম্মাহ, তাদের জীবন ব্যবস্থাটাকে নিয়ে অতি বিশ্লেষণ কোরতে শুরু কোরেছে। যে কোন জিনিষেরই অতি বিশ্লেষণ সে জিনিষটাকে নষ্ট, ধ্বংস কোরে দেয়। তাদের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। অতি বিশ্লেষণের ফলে বিভিন্ন রকমের মতামত গড়ে উঠেছে, সেই মতামতের অনুসারী জুটেছে, জাতি নানা মতে বিভক্ত হোয়ে গেছে। তারপর অবশ্যম্ভাবীরূপে সেই বিভক্তি অর্থাৎ মাযহাব ও ফেরকা গুলির মধ্যে সংঘাত ও ফলে ধ্বংস হোয়ে গেছে।

গ) এই অতি বিশ্লেষণের অবশ্যম্ভাবী ফল আরও হোয়েছে। তার একটা হলো জীবন-বিধানের আদেশ-নিষেধ গুলির গুরুত্বের ওলট-পালট হোয়ে যাওয়া- অর্থাৎ কোন্টা অতি প্রয়োজনীয়, কোনটা তার চেয়ে কম প্রয়োজনীয়, কোনটা বিশেষ প্রয়োজনীয় নয়, এ গুলির উল্টা-পাল্টা কোরে ফেলা যদিও সব গুলিই জীবনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় অগ্রাধিকার কোনটা আগে কোনটা পরে। অতি বিশ্লেষণের ফলে জীবন-ব্যবস্থাগুলির যে সব অনুশাসন অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, যার উপর সমগ্র ব্যবস্থাটার জীবন-মরণ নির্ভর কোরত সে গুলোকে অপ্রয়োজনীয় বলে নামিয়ে দিয়ে অতি অপ্রয়োজনীয় নির্দেশ গুলিকে মহা গুরুত্ব দিয়ে তাই নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হোয়েছে।

ঘ) অতি বিশ্লেষণের আরও এক আত্মঘাতী ফল এই হোয়েছে ঐ জীবনব্যবস্থাগুলি যা জাতির সর্বস্তরের মানুষের জন্য এসেছিলো তার ব্যাখ্যা, ইত্যাদি করার অধিকার একটি বিশেষ শ্রেণীর হাতে সীমাবদ্ধ হোয়ে পড়েছে। স্বভাবতই, কারণ যে আদেশ নিষেধ গুলি জাতির সবার জন্যই অবতীর্ণ হোয়েছে তা সবারই বোধগম্য ছিলো- কিন্তু ওগুলিকে বিশ্লেষণ, অতি-বিশ্লেষণ কোরে জন সাধারণের বোঝার বাইরে নিয়ে যাওয়া হোয়েছে- ফলে ঐ বিশ্লেষণ নিয়ে ঘাটাঘাটি করায় ব্যস্ত ঐ শ্রেণীটির মধ্যে তা আবদ্ধ হোয়ে পড়েছে এবং পরবর্ত্তীতে জীবন-বিধানের সব রকম ব্যাপারে তাদের মতামত হোয়ে দাঁড়িয়েছে চূড়ান্ত। এই হলো পুরোহিত শ্রেণী এবং এমনি কোরেই প্রতি জীবন-বিধান, প্রতি ধর্মে এরা নিজেরা নিজেদের সৃষ্টি কোরেছেন এবং জীবন-বিধানের মুল লক্ষ্যই বিনষ্ট হোয়ে গেছে। জাতির জনসাধারণ অতি প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য ভুলে যেয়ে পুরোহিতদের কাছে প্রক্রিয়ার ছোট খাট ব্যাপার গুলি সম্বন্ধে বিধান (ফতোয়া) জানতে চেয়েছে আর পুরোহিতরা অতি উৎসাহে নতুন নতুন দুর্বোধ্য বিধান তৈরী কোরেছেন আর তা তাদের দিয়েছেন।

ঙ) আরেক রকমের বিকৃতি এসেছে কায়েমী স্বার্থের কারণে। প্রথমে নতুন প্রেরিতের ধর্মকে মেনে নিলেও পরে তারা দেখেছে যে তা তাদের কায়েমী স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হোয়ে দাঁড়াচ্ছে তখন তারা ছলে-বলে, বিধান বিশ্লেষণকারীদের (মুফতি) হাত কোরে ঐ স্বার্থ বিরোধী নির্দেশ গুলির পরিবর্ত্তন কোরেছে। ক্রমশঃ সমস্ত জীবনব্যবস্থার মুল উদ্দেশ্যই ভুলে যেয়ে ওর খুঁটিনাটি ব্যাপার গুলি পালন করাই একমাত্র কর্ত্তব্য হোয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিটি জীবন ব্যবস্থা ঐসব গুলি কারণের একত্রিত, সম্মিলিত প্রভাবে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত হোয়ে গেছে। স্রষ্টা দিয়েছেন মানুষকে একটা প্রাণবন্ত, বেগবান জীবন ধর্ম। শয়তানের প্ররোচনায় সেটাকে একটা উদ্দেশ্যবিহীন, স্থবির, প্রাণহীন, অনুষ্ঠান সর্বশ্য ব্যাপারে পরিণত কোরেছে। ফলে আবার মানুষ অনিবার্যভাবে সেই অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার আর রক্তারক্তির মধ্যে পতিত হোয়েছে। সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু আল্লাহ আবার তার রসুল পাঠিয়েছেন মানুষকে সত্য, ন্যায় পথে ফিরিয়ে আনতে।

উপরোক্ত বিকৃতি গুলি ছাড়াও আরও একটি বিশেষ কারণ হোয়েছে নতুন নবী পাঠানোর। সেটা হলো মানুষ জাতির বিবর্ত্তন। এক নবী থেকে তার পরবর্ত্তী নবী পর্য্যন্ত যে সময় অতীত হোয়েছে, সেই সময়ে মানুষ জ্ঞানে-বিজ্ঞানে কিছুটা এগিয়ে গেছে। পারিপার্শ্বিকতায় খানিকটা প্রভেদ এসেছে, নতুন সমস্যাও দেখা দিয়েছে। কাজেই পরবর্ত্তী রসুল যে ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন তাতেও স্বাভাবিকভাবেই পুর্বের ব্যবস্থা থেকে কিছু ভিন্নতা থেকেছেই, যদিও মৌলিক সত্য, আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্ব, দীনুল কাইয়ে ̈মা, সনাতন ধর্ম, সেরাতুল মোস্তাকীম একই থেকেছে। বিভিন্নতা গুলি শুধুমাত্র কম প্রয়োজনীয় ব্যাপার গুলোয়, যে গুলি স্থান এবং কালের প্রভাবাধীন।

যখনই কোন নতুন নবী, প্রেরিত এসেছেন তিনি তার জাতিকে যা বোলেছেন তার সারমর্ম, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে কিছু এদিক ওদিক ছাড়া এই যে:

ক) আমার পূর্ববর্ত্তী আল্লাহর রসুল তোমাদের যে দীন, জীবনব্যবস্থা দিয়ে গেছেন, তোমরা সেটাকে নানাভাবে অর্থহীন, অকেজো কোরে দিয়েছো। তোমরা আল্লাহর বইয়ে হাত ঘুরিয়েছো, তোমাদের ইচ্ছামত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তার অর্থ বিকৃত কোরেছো। গুরুত্ব বদলিয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার গুলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি কোরেছো। এমন কি একমাত্র প্রভুর সার্বভৌমত্ব নষ্ট কোরে বহুত্ববাদে নিমঞ্জিত হোয়েছো। পরম করুণাময় তাই আমায় পাঠিয়েছেন

তোমাদের এই বোলতে যে-
খ) তোমরা যাকে অনুসরণ কর বোলে দাবী কর, তিনিও তার মাধ্যমে প্রেরিত বইকে আমি স্বীকার কোরেছি।
তিনি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন যথাযথভাবে, এর পূর্বে যা এসেছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং নাযিল করেছেন তাওরাত ও ইনজীল।-(সূরা-আলে-ইমরান-৩)
আর এটি একটি কিতাব, আমি তা নাযিল করেছি, বরকতময়, যা তাদের সামনে আছে তার সত্যায়নকারী। আর যাতে তুমি সতর্ক কর উম্মুল কুরা (মক্কা) ও তার আশ-পাশে যারা আছে তাদেরকে। আর যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে তারা এ কিতাবের প্রতি ঈমান আনে এবং তারা তাদের সালাতের উপর যত্নবান থাকে।আর তার চেয়ে বড় যালিম কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে, অথবা বলে, ‘আমার উপর ওহী প্রেরণ করা হয়েছে’, অথচ তার প্রতি কোন কিছুই প্রেরণ করা হয়নি? এবং যে বলে ‘আমি অচিরেই নাযিল করব, যেরূপ আল্লাহ নাযিল করেছেন’। আর যদি তুমি দেখতে, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহঙ্কার করতে। -(সূরা-আন’আম-৯২,৯৩)

গ) কিন্তু তোমরা ওটা এত বিকৃত কোরে ফেলেছো যে তা এখন বাতিল ঘোষণা করছি।
ঘ) এখন থেকে আমি যে বই এবং জীবনব্যবস্থা নিয়ে এসেছি সেইটা কার্যকরী হবে।
ঙ) আমি যে সত্যই স্রষ্টার প্রেরিত তা তোমাদের কাছে প্রমাণ করার জন্য আমাকে কতক গুলি চিহ্ন, আয়াত, মো’জেজা দেয়া হোয়েছে, সে গুলো তোমরা দেখে নাও এবং
চ) আমাকে প্রেরিত, রসুল বোলে স্বীকার কোরে নাও এবং পূর্বের বিকৃত ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আমার মাধ্যমে প্রেরিত স্রষ্টার দেয়া এই নতুন জীবন-বিধান গ্রহণ কর।

তার এর ঘোষণার ফল কি হোয়েছে? বিভিন্ন প্রেরিতের জীবনীতে আমার বিভিন্ন ফল দেখি। কোন রসূলের ডাকে কিছু লোক তাকে বিশ্বাস কোরে তার ধর্ম গ্রহণ কোরেছে, আর কিছু লোক তাকে অবিশ্বাস বা অস্বীকার কোরে আগের সেই অচল ব্যবস্থাকেই আঁকড়ে ধোরে রেখেছে। কোন নবীর ডাকে অল্প কয়েকজন সাড়া দিয়েছে, বাকিরা আগের বাতিল অনুষ্ঠান গুলিকেই চালু রেখেছে। কোন কোন নবীকে পূর্ববর্ত্তী নবীর অনুসারীরা হত্যা পর্য্যন্ত কোরে ফেলেছে।
আল্লাহ অবশ্যই তাদের উক্তি শ্রবণ করেছেন যারা বলে, ‘আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী’, তারা যা বলে তা আমি অবশ্যই লিপিবদ্ধ করে রাখব এবং (তাদের) অন্যায়ভাবে নাবীগণকে হত্যা করার বিষয়টিও (লিপিবদ্ধ করে রাখব) এবং আমি বলব- ‘জাহান্নামের দহন যন্ত্রণা ভোগ কর’ এটা তোমাদের আগেই পাঠানো কাজের বিনিময়, কারণ আল্লাহ স্বীয় বান্দাগণের প্রতি কোন প্রকার যুলম করেন না। যারা ব’লে থাকে যে, ‘আল্লাহ আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছেন, যেন আমরা আগুনে গ্রাস করে এমন কোন কুরবানী আমাদের সামনে না দেখানো পর্যন্ত কোন রসূলের প্রতি ঈমান না আনি’। বল, ‘আমার পূর্বে বহু রসূল বহু প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছিল এবং তোমাদের কথিত সেই মু’জিযা নিয়েও (এসেছিল)। যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে কেন তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে?’ -(সূরা-আলে-ইমরান-১৮১, ১৮২, ১৮৩)
আবার এমনও হোয়েছে যে কোন নবীকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হোয়েছে এবং হত্যা করা হোয়েছে, কিন্তু তার ওফাতের পর বহু মানুষ তাকে স্বীকার ও বিশ্বাস কোরে তার আনা জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত কোরেছে।

প্রতি নবীর সময় অধিকাংশ মানুষ তাদের হৃদয়ের ভেতরে বুঝতে পেরেছে যে এই লোক সত্যই স্রষ্টার প্রেরিত-রসুল। কারণ তার ব্যক্তিত্বে, চারিত্রিক শক্তিতে প্রবল অসাধারণত্ব তো ছিলোই, তার উপর চূড়ান্ত প্রমাণ হিসাবে ছিলো অলৌকিক কাজ কোরে দেখাবার ক্ষমতা, আয়াত, মো’জেজা। কিন্তু তা সত্বেও একদল লোক তাকে স্বীকার কোরে নতুন ইসলামকে গ্রহণ কোরেছে, আরেক দল করে নি। বিচার কোরলে আমরা দেখতে পাই- যারা স্বীকার কোরেছে তাদের কারণ:
ক) পূববর্ত্তী বিকৃত ইসলামে থেকেও যারা তাদের আত্মাকে ইবলিসের প্রভাব থেকে ব্যক্তিগতভাবে কমবেশী মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন এবং যার ফলে দীনের অবনতি দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য কোরছিলেন, কিন্তু কিছু করার শক্তি ছিলো না।
খ) সাধারণ লোক, যারা বিকৃত ব্যবস্থায় নির্য্যাতিত হোয়েও অসহায় অবস্থায় পড়ে ছিলো,
গ) রসূলের ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন ইসলাম গ্রহণ কোরলে যে নির্য্যাতন অবশ্যম্ভাবী তাকে যারা ভয় করে নি।

আর যারা অশ্বীকার কোরেছে তাদের কারণ:
ক) পূর্ববর্তী ইসলামের পুরোহিত শ্রেণী, যারা সেই দীনের ধারক, বাহক বোলে নিজেদের মনে কোরতেন। এই শ্রেণীর মনে চিরদিন তাদের জ্ঞানের অহংকার বিদ্যমান ছিলো। স্বভাবতই- কারণ তারা সমাজের, জাতির দেয়া চাঁদা, দান ইত্যাদির উপরই বেঁচে থাকতেন এবং নিরলসভাবে ধর্মের বিধান, নিয়ম, ইত্যাদির বিশ্লেষণ, অতি-বিশ্লেষণ কোরতেন এবং জনসাধারণকে বিধান (ফতোয়া) দিতেন। কঠোর পরিশ্রম কোরে নতুন বিধান সৃষ্টি কোরতেন যাতে অন্যান্য পুরোহিতদের চেয়ে তার জ্ঞানের শ্রষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়। এই পুরোহিত শ্রেণীর মধ্যে বিধান-ব্যবস্থা ইত্যাদি (ফতোয়া) নিয়ে তিক্ত মতভেদ থাকলেও নতুন নবীর ব্যপারে তারা ছিলেন একত্র। কারণ নতুন ইসলামকে মেনে নিলে ঐ মহা সম্মানিত স্থান থেকে তাদের পতন হবে এ কথা সবার চেতন, অবচেতন উভয় মনই জানতো। যে জ্ঞানের অহংকারের জন্য তাদের মধ্যে অবিশ্রান্ত তর্কাতর্কি, বাহাস লেগে থাকতো, সেই অহঙ্কারই তাদের শ্রেণীকে নতুন নবীর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ কোরতো। প্রত্যেক নবী সব চেয়ে প্রচণ্ড বাধা ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হোয়েছেন এই শ্রেণীটির কাছ থেকে।
খ) যারা পুরোহিত শ্রেণীভুক্ত না হোয়েও অতি নিষ্ঠার সাথে ধর্ম পালন কোরতেন, ঐ পুরোহিত শ্রেণীর সৃষ্ট বিভিন্ন দল বা ফেরকার কোনটি চুলচেড়াভাবে পালন কোরতেন।
গ) আর অস্বীকার কোরেছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা ঐ পুরোহিত শ্রেণীর আদেশ-নিষেধ মানতে এমন অভ্যস্ত হোয়ে গিয়েছিলো যে ঐ পুরোহিতদের ছাড়া অন্য কারো কথা শোনার সময় ও ইচ্ছা তাদের ছিলো না। এদের মধ্যে অনেকে যদিও বুঝতে পেরেছে যে- এই মানুষটি সত্য নবী, কিন্তু তবুও তাকে স্বীকার ও গ্রহণ কোরলে সমাজে যারা পুরোনো ব্যবস্থা আকড়ে আছে তাদের বিদ্রুপ, নির্য্যাতন, এমন কি নিজ পরিবারের মধ্যে অশান্তির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে নবীকে অস্বীকার কোরেছে।
ঘ) আরো এক ধরনের মানুষ রসুলদের স্বীকার ও গ্রহণ করে নি। এরা হলো তারা যারা প্রথম দিকে বিরোধিতা কোরেছে সত্যই তাকে মিথ্যা মনে কোরে। কিন্তু পরে যখন তার চরিত্র, চিহ্ন-নিদর্শন, অলৌকিক কাজ দেখে বুঝতে পেরেছে যে, আমি তো ভুল কোরেছি- তখন কিন্তু তার প্রবৃত্তি, নফস, রিপু যাই বলুন, তাকে বাঁধা দিয়েছেন। বোলেছে- তুমি যাকে এতদিন ভণ্ড, মিথ্যাবাদী বোলে লোকজনকে তাকে স্বীকার করা থেকে বাধা দিয়েছো! আজ তার কাছে নত হোলে লোকে হাসবে না? এই যে আপাত দৃষ্টিতে নিজেকে ছোট করা এ কোরতে না পেরে বহু লোক সত্য জেনেও রসূলের বিরোধিতা কোরেছে- রসুলকে ও তার আনা নতুন ইসলামকে স্বীকার করে নি।

যদিও সত্য নবীকে স্বীকার ও গ্রহণ না করার কয়েকটি বিভিন্ন কারণ উপস্থাপন কোরলাম। কিন্তু গভীরে গেলে দেখা যায় আসলে সব গুলির মূল কারণ অহংকার। এই কারণেই প্রতি ধর্মে বারবার বলা হোয়েছে যে যার মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার থাকবে সে মুক্তি পাবে না। মানুষের মধ্যে যে ষড়রিপুর কথা বলা হয়, তার একটা অহংকার। আশ্চর্য কি- এই ষড়রিপু, অর্থাৎ ছয়টা প্রবৃত্তির মধ্যে পাঁচটা আল্লাহর মধ্যে নেই, শুধু মানুষের মধ্যে আছে। আর ষষ্ঠটা অর্থাৎ অহঙ্কার স্বয়ং আল্লাহর মধ্যে আছে এবং এটা শুধু তারই সাজে, মানুষের নয়। তাই অহংকারের শাস্তি অতি দ্রুত এবং এ জীবনেই। আমার মনে হয় দিনের আলোর মত প্রাঞ্জল সত ̈কেও অস্বীকার করাবার জন ̈ অহংকারের মত শক্তিশালী শয়তানী শক্তি আর নেই।

Leave a Reply