You are currently viewing ধর্মের মূল- মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা।

ধর্মের মূল- মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা।

ধর্মের মূল- মানব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা।

তারপর এক সময়ে তার ইচ্ছা হলো মানুষ সৃষ্টির। তার এই ইচ্ছা কেন তা আমার জানা নেই। কারো জানা আছে কিনা তাও জানা নেই। তার বাণীতে তিনি কিছু আভাষ মাত্র দিয়েছেন। একবার বোলেছেন- “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। ” (সূরা মূলক-২)

মোট কথা একমাত্র তিনিই জানেন, কেন তিনি এই বিশ্বজগত ও বিশেষ কোরে একাধারে তার শ্রেষ্ঠ ও সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি মানুষ সৃষ্টি কোরলেন।(আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে।-সূরা-আত তীন) কিন্তু এ সত্য এড়াবার উপায় নেই যে সৃষ্টি তিনি কোরেছেন। ঐ সময়টার কথা বোলতে যেয়ে তিনি কোরআনে আমাদের যা বোলেছেন তা এইযে, যখন আল্লাহ তার মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতাদের বোললেন যে আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি কোরতে ইচ্ছা কোরেছি তখন তারা বোললেন- কী দরকার তোমার প্রতিভু সৃষ্টি করার? ওরাতো পৃথিবীতে ফ্যাসাদ, অশান্তি আর রক্তপাত কোরবে।(আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না। সুরা বাকারা-৩০) মালায়েকদের এই উত্তরের মধ্যে নিহিত রোয়েছে সৃষ্টি রহস্যের একটা বড় অংশ। কাজেই এখানে একটু থেমে এই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়টি ভাল কোরে বুঝে নেয়া যাক।

ইসলাম, জুডিয় ও খ্রীস্টান ধর্মমতে আদমের (আ:) এক ছেলে আরেক ছেলেকে হত্যা কোরেছিলো। ঐ প্রথম রক্তপাত থেকে যে রক্তপাত মানুষ জাতির মধ্যে শুরু তা আজ পর্যন্ত থামে নি। এবং এই অশান্তি ও রক্তপাত আজ পর্য্যন্ত মানুষজাতির জন্য সর্বপ্রধান সমস্যা হোয়ে আছে। ফেরেশতারা যে দু’টি শব্দ মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যাবহার কোরেছিলেন তার একটা ফ্যাসাদ, যার অর্থ অবিচার, অশান্তি, অন্যায় ইত্যাদি। অন্যটি রক্তপাত। দুটো মিলিয়ে অর্থ দাঁড়ায় মানুষ অন্যায়,অশান্তি আর রক্তপাত কোরবে। সত্যই তাই হোয়েছে, আদমের (আ:) ছেলে থেকে আজ পর্য্যন্ত শুধু ঐ রক্তপাতই নয়, অশান্তি, অন্যায়, অবিচারও বন্ধ হয় নি, এবং তখন থেকে আজ পর্য্যন্ত মানব জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা এই অন্যায়, অশান্তি, অবিচার আর রক্তপাত, যুদ্ধ মানুষ শত চেষ্টা কোরেও বন্ধ কোরতে পারেনি। শুধু তাই নয়, এই সমস্যাই মানুষ জাতিকে এমন পর্য্যয়ে নিয়ে এসেছে যে আজ তার অস্তিত্বই প্রশ্ন হোয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যুক্তি হিসাবে মালায়েকরা এ কথা বলেন নি যে মানুষ মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, প্যাগোডায়, সিনাগগে যেয়ে তোমার উপাসনা কোরবে না, উপবাস কোরবে না। তারা এসবের একটাও বলেন নি। বোলেছেন অশান্তি, অন্যায়, ঝগড়া আর রক্তপাত কোরবে। অর্থাৎ আসল সমস্য ওটা নয়, এইটা। আল্লাহ কি বোঝেন নি মালায়েকরা কি বোলেছিলেন? তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন এবং তা সত্ত্বেও তাদের আপত্তি অগ্রাহ্য কোরে মানুষ বানালেন। তার প্রতিনিধি সৃষ্টির ব্যাপারে স্রষ্টা নিজে আমাদের যে সব তথ্য জানাচ্ছেন তা থেকে আমরা কয়েকটি বুনিয়াদি কথা জানতে পারছি। একটি তার এই নতুন সৃষ্টিটির গুরুত্ব ও মর্যাদা কত বেশী এবং এর উপর তার স্নেহ কতখানি তা বুঝা যায় এথেকে যে- যেখানে মালায়েকসহ এই বিশাল সৃষ্টি তিনি কোরলেন শুধু তার মুখের আদেশ দিয়ে- হও, আর সব হোয়ে গোলো।

(কোন বিষয়ে আমি ইচ্ছে করলে বলি, ‘হয়ে যাও’, ফলে তা হয়ে যায়।-সূরা-আন-নাহল-৪০)

(তাঁর ব্যাপার তো এই যে, তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি কেবল বলেন, ‘হও’; ফলে তা হয়ে যায়।-সূরা-ইয়াসীন-৮২)

সেখানে মানুষকে অর্থাৎ আদমকে (আ:) তৈরী কোরলেন তার নিজ হাতে।

(আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলীস, আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’-সূরা-সা’দ-৭৫)

এবং তার দেহের মধ্যে তার নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে দিলেন।

(অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও-সূরা-আল-হিজর-২৯)

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা, শব্দ ব্যবহার কোরেছেন আমার আত্মা, স্বয়ং স্রষ্টার আত্মা। অর্থাৎ আল্লাহর যত রকম গুণাবলী, সিফত আছে সব মানুষের মধ্যে চলে এলো। এমনকি তার যে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি এটাও ঐ আত্মার সঙ্গে মানুষের মধ্যে চলে এলো। এইটা সম্বন্ধেই আল্লাহ বোলেছেন- মানুষকে আমি আমার আমানত দিয়েছি।

(আমিতো আসমান, যমীন ও পবর্তমালার প্রতি এই আমানত অর্পণ করেছিলাম, তারা এটা বহন করতে অস্বীকার করল এবং ওতে শংকিত হল, কিন্তু মানুষ ওটা বহন করল; সেতো অতিশয় যালিম, অতিশয় অজ্ঞ-সূরা-আল-আহযাব-৭২)

আল্লাহর এই গুণ, এই শক্তি গুলি সৃষ্টির আর কারো নাই। ফেরেশতা, মালায়েকদেরও নেই- সব তার বেধে দেওয়া আইন, নিয়ম মেনে চোলছে। এই গুলিকেই আমরা বলি প্রাকৃতিক নিয়ম। কারো সাধ্যনেই এই নিয়ম থেকে একচুল পরিমাণও ব্যতিক্রম করে। কারণ তা করার ইচ্ছা শক্তিই তাদের দেয়া হয় নি। ইচ্ছা হোলে কোরব, ইচ্ছা না হোলে কোরব না, এ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি একমাত্র আল্লাহর। মানুষের মধ্যে যখন তিনি তার আত্মা ফুঁকে দিলেন তখন তার মধ্যে স্রষ্টার সমস্ত গুণাবলীর ও শক্তির সঙ্গে ঐ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিও চলে এলো। এটাই হলো তার দেয়া আমানত যা অন্য কোন সৃষ্টি গ্রহণ কোরতে ভয় পেলো। কিন্তু মানুষ এটা নিয়ে নিজেকে অন্যায়কারী ও জ্ঞানহীন প্রমাণ করলো। আল্লাহ তার নিজের আত্মা মানুষের মধ্যে ফুঁকে দেয়ার আগে পর্য্যন্ত মানুষ লক্ষ কোটি সৃষ্টির আরেকটি মাত্র ছিলো। কিন্তু স্রষ্টার আত্মা তার মধ্যে ফুঁকে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে এক অনন্য সৃষ্টিতে রূপান্তরিত হোয়ে গেলো। সে হোয়ে গেলো স্রষ্টার, আল্লাহর প্রতিনিধি যার মধ্যে রোয়েছে সেই মহান স্রষ্টার প্রত্যেকটি গুণ, শুধুমাত্র গুণ নয় প্রত্যেকটি শক্তি। শুধু তফাৎ এই যে, অতি সামান্য পরিমাণে। ব্যাখ্যা কোরতে গেলে বোলতে হয়- মহাসমুদ্র থেকে এক ফোটা পানি তুলে এনে তার যদি রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা যায় তবে ঐ এক ফোটা পানির মধ্যে সেই মহাসমুদ্রের পানির প্রত্যেকটি গুণ পাওয়া যাবে, মহাসমুদ্রের মধ্যেযত পদার্থ আছে তার প্রত্যেকটি পাওয়া যাবে। কিন্তু তবু ঐ এক ফোটা পানি মহাসমুদ্র নয় সে প্রলয়ংকরী ঝড় তুলতে পারে না, জাহাজ ডোবাতে পারবে না। সূর্য্যর আগুন থেকে একটা মোমবাতি জ্বলিয়ে আনলে সেই মোমবাতির শিখায় সূর্য্যের আগুনের সমস্ত গুণ থাকবে। সেও জ্বালাতে পারবে, আলো দিতে পারবে কিন্তু সে সূর্য্যের মত গ্রহে গ্রহে আলো আর তাপ ছড়াতে পারবে না। তবুও ঐ মোমবাতির শিখা সেই সূর্য্য থেকেই আনা আগুন একই জিনিষ।

দ্বিতীয় হোল:- স্রষ্টা তার এই নতুন সৃষ্টিটাকে সব জিনিষের নাম শেখালেন।(এবং তিনি আদমকে সমস্ত নাম শিক্ষা দিলেন, অনন্তর তৎসমূদয় মালাইকা/ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপিত করলেন, অতঃপর বললেনঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে আমাকে এ সব বস্তুর নামসমূহ বর্ণনা কর।- সূরা-বাকারা-৩১) এর অর্থ হলো তিনি যা সৃষ্টি কোরেছেন সেই সব জিনিষের ধর্ম , কোন জিনিষের কি কাজ, কেমন কোরে সে জিনিষ কাজ কোরে ইত্যাদি, এক কথায় বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি কোরে তিনি তার বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন, মানুষকে সেই বিজ্ঞান শেখালেন। এই কথা বোলে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষ জাতি সৃষ্টির প্রত্যেক জিনিষ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কোরবে। আজ থেকে হাজার বছর আগে মানুষ যে সব জিনিসের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ কোরেছিল অর্থাৎ নাম জেনেছিলো, আজ তার চেয়ে বহু বেশী জিনিষের সম্বন্ধে জানে, আজ থেকে বহু বছর পর সে আরো বহু জিনিষ সম্বন্ধে জানবে। মানুষকে বিজ্ঞান শেখাবার পর তিনি তার মালায়েকদের ডেকে সব জিনিষের নাম জিজ্ঞাসা কোরলেন, তারা বোলতে পারলেন না।(তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’।-সূরা-বাকারা-৩২) কারণ আগেই বোলেছি, মালায়েকরা প্রাকৃতিক শক্তি মাত্র। তাদের যার উপর যে কাজের ভার দেয়া আছে তার বাইরের কোন জ্ঞান তাদের নেই ইচ্ছাশক্তিও নেই।

তৃতীয় হলো:- আল্লাহ তার মালায়েকদের ডেকে হুকুম কোরলেন তার এই নতুন সৃষ্টি আদম অর্থাৎ মানুষকে সাজদা কোরতে। ইবলিস ছাড়া আর সমস্ত মালায়েক মানুষকে সাজদা কোরলেন।(এবং যখন আমি মালাইকা/ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সাজদাহ কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলে সাজদাহ করেছিল; সে অগ্রাহ্য করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।-সূরা-বাকারা-৩৪) এর অর্থ কি? এর অর্থ প্রথমতঃ ফেরেশতারা মানুষকে তাদের চেয়ে বড়, বেশী উচ্চ বোলে মেনে নিলেন, কারণ তার মধ্যে আল্লাহর আত্মা আছে যা তাদের মধ্যে নেই। দ্বিতীয়তঃ প্রাকৃতিক শক্তি গুলিকে আল্লাহ মানুষের খেদমতে নিযুক্ত কোরে দিলেন। আগুন, পানি, বাতাস, বিদ্যুৎ, চুম্বক, মাটি ইত্যাদি লক্ষ কোটি মালায়েক তাই মানুষের সেবায় নিয়োজিত। একমাত্র ইবলিস আল্লাহর হুকুম অমান্য কোরে আদমকে (আ:) সাজদা করলো না।

এখানে একটি প্রশ্ন হোতে পারে- মালায়েকরাতো প্রাকৃতিক শক্তি, তাহোলে ইবলিস তাদেরই একজন হোয়ে, ইচ্ছাশক্তিহীন হোয়ে, আল্লাহর আদেশ কেমন কোরে অমান্য করলো। এর জবাব হোচ্ছে- মালায়েকরা সব আলোর তৈরী, একমাত্র ইবলিসই ছিলো আগুনের তৈরী। কারণ মূলতঃ ইবলিস ছিলো একজন জ্বীন, মালায়েক নয়। কঠিন এবাদত ও রেয়াযত কোরে পরে সে মালায়েকের স্তরে উন্নীত হয়। আগুনের তৈরী বোলে তার মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি না থাকলেও অহঙ্কার তখনো বজায় ছিলো, যা সে অত সাধনা কোরেও নিশ্চিহ্ন কোরতে পারে নি। মাটির তৈরী আদমকে সাজদা কোরতে বলায় তার ঐ অহঙ্কার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো বোলেই সে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিলো যে, তুমি যদি আমাকে এই শক্তি দাও যে আমি মাটির তৈরী তোমার ঐ সৃষ্টিটার দেহের, মনের ভেতর প্রবেশ কোরতে পারি তবে আমি প্রমাণ কোরে দেখাবো যে, ঐ সৃষ্টি তোমাকে অশ্বীকার কোরবে। আমি যেমন এতদিন তোমাকে প্রভু শ্বীকার কোরে তোমার আদেশ মত চলেছি, এ তেমন চোলবে না। আল্লাহ ইবলিসের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরলেন। তাকে আদমের দেহ, মন, মিস্তিষ্কে প্রবেশ কোরে আল্লাহকে অশ্বীকার করার, তার অবাধ্য হবার প্ররোচনা দেবার শক্তি দিলেন।(এবং নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে পথভ্রান্ত করব, তাদেরকে কু-মন্ত্রনা দিব এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে। যে আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শাইতানকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে, নিশ্চয়ই সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।-সূরা-নিসা-১১৯)

এর পরের ঘটনা গুলো অতি সংক্ষেপে এই যে, আল্লাহ তার প্রতিভু আদমের জন্য তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি কোরলেন, তাদের জান্নাতে বাস কোরতে দিলেন একটি মাত্র নিষেধ আরোপ কোরে। আল্লাহর অনুমতি পেয়ে ইবলিস আদম ও হাওয়ার মধ্যে প্রবেশ কোরে তাদের প্ররোচনা দিয়ে ঐ একটিমাত্র নিষেধকেই অমান্য করালো, যার ফলে আল্লাহ তাদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নির্বাসন দিলেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য(অনন্তর শাইতান তাদের উভয়কে সেখান হতে বিচ্যুত করল, অতঃপর তারা উভয়ে যেখানে ছিল সেখান হতে তাদেরকে বর্হিগত করল; এবং আমি বললামঃ তোমরা নীচে নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু; এবং পৃথিবীতেই রয়েছে তোমাদের জন্য এক নির্দিষ্ট কালের অবস্থিতি ও ভোগ সম্পদ।-সূরা-বাকারা-৩৬) অর্থাৎ কেয়ামত পর্য্যন্ত। আর বোললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পথ-প্রদর্শক পাঠাবো।(আমি বললাম, ‘তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও, পরে যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।-সূরা-বাকারা-৩৮)

প্রশ্ন হোতে পারে যে মানুষের মধ্যে তিনি তার নিজের আত্মা ফুঁকে দিয়েছেন তাকে পথ-প্রদর্শন কোরতে হবে কেন? এই জন্য হবে যে যদিও মানুষের মধ্যে স্রষ্টার সমস্ত গুণ ও শক্তিই আছে, কিন্তু তা অতি সামান্য পরিমাণে।(তোমাকে তারা আত্মা সম্পর্কে প্রশ্ন করে। তুমি বল, ‘আত্মা আমার প্রতিপালকের আদেশ বিশেষ; আর তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।-সূরা-বনী ইসরাইল-৮৫) মানুষ নিজে তার পথ খুঁজে নিজের জন্য একটি জীবন ব্যবস্থা তৈরী কোরে নিতে পারতো যদি কি কি প্রাকৃতিক নিয়মে এই সৃষ্টি হোয়েছে, চোলছে তার সবই যদি সে জানতো। কিন্তু তা সে জানেনা। দ্বিতীয়তঃ ইবলিস তো তার মধ্যে বোসে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাকে প্ররোচনা দিয়ে চোলেছেই। তার চেয়ে বড় কারণ, ঐ ইবলিসের চ্যালেঞ্জ- মানুষকে দিয়ে আল্লাহকে অশ্বীকার করিয়ে, আল্লাহর দেয়া জীবন পথকে বর্জন কোরিয়ে নিজেদের জন্য জীবনব্যবস্থা তৈরী কোরিয়ে তাই মেনে চলা- যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অন্যায়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তপাত। আল্লাহ তার নবীদের মাধ্যমে যুগে যুগে মানুষের জন্য জীবন ব্যবস্থা পাঠিয়ে বোলছেন আমাকে একমাত্র প্রভু, একমাত্র বিধানদাতা বোলে বিশ্বাস কোরে, এই জীবন ব্যবস্থা মত তোমাদের জাতীয়, পারিবারিক ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা কর, তাহলে তোমাদের ভয় নেই।(সূরা-বাকারা-৩৮) কিসের ভয় নেই? ঐ ফ্যাসাদ, অশান্তি, রক্তপাতের এবং পরবর্ত্তীতে জাহান্নামের ভয় নেই। যে জীবনব্যবস্থা দীন আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে বার বার পাঠালেন- এর নাম, স্রষ্টা নিজে রাখলেন শান্তি, আরবী ভাষায় ইসলাম। অর্থ – এই দীন, জীবনব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা কোরলে তার ফল শান্তি, জাতীয়, পারিবারিক, ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি, ইসলাম। না কোরলে অশান্তি, অন্যায়, অবিচার মানুষে মানুষে যুদ্ধ, রক্তপাত। মানুষ তৈরীর বিরুদ্ধে মালায়েকরা যে কারণ পেশ কোরেছিলেন আল্লাহর কাছে। তাই সেই আদম (আ:) থেকে শেষ নবী মোহাম্মদ (দ:) পর্য্যন্ত যতবার নবীর মাধ্যমে এই জীবনব্যবস্থা তিনি পাঠালেন, সব গুলির ঐ একই নাম-ইসলাম-শান্তি।

এই হোল সমস্ত ব্যপারের মূল কথা। দীনের আর বাকি যেটুকু আছে নামায, রোযা, ইত্যাদি হাজারো কাজ, সব আনুষাঙ্গিক, গৌণ। তার প্রমাণ – আজ পৃথিবীময় ঐ আনুষাঙ্গিক কাজ গুলো প্রতি ধর্মে অতি নিষ্ঠার সাথে গভীর আন্তরিকতার সাথে কোরে যাওয়া হোচ্ছে, কিন্তু পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন তো দূরের কথা- অশান্তি, মারামারি, হানাহানি আর রক্তপাত অবিশ্রান্তভাবে বেড়ে চোলছে। শুধু তাই নয়, এমন প্রচণ্ড অস্ত্র তৈরী হোয়েছে যে আজ মানুষ জাতিটাই ধ্বংস হবার পথে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ যদি প্রতি ধর্মের প্রতিটি মানুষ তাদের যার যার ধর্মের ঐ উপাসনা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি পরিপূর্ণভাবে পালন করেন তা হোলেও পৃথিবীতে অশান্তি, অন্যায়, রক্তপাত বন্ধ তো হবেই না, আজ যেমন বাড়ছে তেমনি বেড়েই চোলবে। কারণ আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা মানুষের জন্য তার নবীদের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তা প্রত্যেক ধর্মের লোকেরাই অশ্বীকার কোরে মানুষের তৈরী রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা তাদের জাতীয় জীবনে প্রয়োগ কোরেছে- মূলকে ছেড়ে গৌণকে ধোরে রেখেছে। এই জন্যই স্রষ্টা যখন তার প্রতিনিধি মানুষ তৈরীর কথা মালায়েকদের বোলেছিলেন তখন তারা এ কথা বলেন নি যে, তোমার এই সৃষ্টি উপাসনালয়ে যেয়ে তোমার উপাসনা কোরবে না, উপবাস কোরবে না, আনুষ্ঠানিকতা কোরবে না। বোলেছিলেন নিজেদের মধ্যে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, আর রক্তপাত কোরবে। অর্থাৎ মুল সমস্যা মানুষের শান্তিতে, ইসলামে পৃথিবীতে বসবাস, উপাসনার আনুসঙ্গীকতা নয়। তাই বোলেছিলাম- মালায়েকদের মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যুক্তিটা ভালো কোরে বুঝে নেয়া দরকার- নইলে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মানব জীবনের অর্থ বোঝা যাবে না।

Leave a Reply