You are currently viewing নকল সুন্নাহ অনুসারী নকল উম্মতে মোহাম্মদী

নকল সুন্নাহ অনুসারী নকল উম্মতে মোহাম্মদী

নকল সুন্নাহ অনুসারী নকল উম্মতে মোহাম্মদী

এই সংগ্রাম-জেহাদ ত্যাগ কোরে অর্থাৎ আল্লাহর রসূলের (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ ত্যাগ কোরে এই জাতি যখন শান-শওকতের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য রাজতন্ত্রের মত রাজত্ব কোরতে শুরু করলো তখন এক সমস্যা দেখা দিলো। সেটা হলো এই জাতি তার নেতার সুন্নাহ পালন কোরবে কেমন কোরে? প্রকৃত সুন্নাত ত্যাগ করা হোয়েছে অথচ সুন্নাহ ছাড়া চোলবেও না। কারণ আল্লাহর রসুল বোলেছেন, “তার সুন্নাহ ত্যাগ করার অর্থই উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বহিষ্কার হওয়া।” এই সমস্যা থেকে জাতিকে উদ্ধার কোরলেন সেই অতি বিশ্লেষণকারী পণ্ডিত শ্রেণী, ফকীহ- মুফাসসির ইত্যাদি। সেটা হলো আসল সুন্নাহ যখন বর্জনই করা হোয়েছে তখন নকলটাই করা যাক। তখন সুন্নাহ হিসাবে নেয়া আরম্ভ হলো বিশ্বনবীর (দ:) ব্যক্তিগত ব্যাপার গুলি যে গুলির সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কোন সম্পর্ক নেই। তাঁর খাওয়া-শোয়া-ওঠা-বসা ইত্যাদি নেহায়েত ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার। তাঁর (দ:) সুন্নাহ বোলতে তিনি কখনই এ গুলি বোঝান নি, বোঝালেও ওগুলো পালন না করার জন্য তার উম্মাহ থেকে বহিষ্কার অবশ্যই বোঝান নি। কারণ যে কাজের জন্য তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হোয়েছিলো অর্থাৎ ‘সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া যে পর্য্যন্ত না সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান মানিনা এবং মোহাম্মদ (দ:) আল্লাহর প্রেরিত, একথা বিশ্বাস না করে- সালাত কায়েম না করে, যাকাত না দেয় – হাদিস – আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে বোখারী, মেশকাত ঐ কাজের সাথে ঐ সংগ্রামের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-পছন্দ-অপছন্দের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু ঐ সমাধানই গ্রহণ করা হলো এবং আজ পর্য্যন্ত এ হাস্যকর সমাধানই এই জাতি অতি নিষ্ঠার সাথে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পালন করার চেষ্টা কোরছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের ধার্মিকরা যেমন প্রত্যেকে ভাবেন ‘একমাত্র আমার ধর্মই ঠিক বাকিরা সব বিপথগামী নরকে যাবে’ ঠিক তেমনি ভাবে তিয়াত্তর ফেরকার মধ্যে বাহাত্তর ফেরকার প্রত্যেকটি মানুষ অতি নিশ্চিত যে শুধু ঐ ফেরকাই রসুলাল্লাহর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী সুতরাং সেই নির্দিষ্ট জান্নাতী ফেরকা। তারাই যে নবীর (দ:) সুন্নাহ পালনকারী তাতে মানুষের যাতে কোন সন্দেহ না থাকে এজন্য অনেক ফেরকা তাদের ফেরকার নামেই সুন্নাহ শব্দটা যোগ কোরে রেখেছেন, অর্থাৎ একমাত্র আমরাই সুন্নাহ পালনকারী জান্নাতী ফেরকা। তারা একথা বুঝতে অসমর্থ যে বিশ্বনবী (দ:) তাঁর সুন্নাহ বোলতে যা বুঝিয়েছিলেন তার ধারে কাছেও তারা নেই। আসল জান্নাতী ফেরকার সুন্নাহর সাথে বাকি বাহাত্তর ফেরকার সুন্নাহর আসমান-যমিন তফাৎ। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো দাঁত মেসওয়াক করা, জান্নাতী ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো রসুলাল্লাহ (দ:) ও আবু ওবায়দার (রা:) মত জেহাদে সশস্ত্র সংগ্রামে দাঁত ভেঙ্গে ফেলা। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো নিজেদের ঘরে বা হুজরায় মাথার কাছে তসবিহ রেখে ডান পাশে শোয়া, জান্নাতী ফেরকার কাছে হলো মাথার কাছে অস্ত্র রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে শোয়া। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো টুপি-পাগড়ী পড়া, জান্নাতী ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো শিরস্ত্রাণ পড়া। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো লম্বা জোব্বা পড়া, জান্নাতী ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো যোদ্ধার কাপড় ও বর্ম পড়া। বাহাত্তর ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো খাবার পর মিঠাই খাওয়া, জান্নাতী ফেরকার কাছে সুন্নাহ হলো অনাহারে থেকে পেটে পাথর বেঁধে যুদ্ধ করা। আরও বহু আছে, দরকার নেই। বাহাত্তর ফেরকার সুন্নাহ পালন কোরতে রসুলাল্লাহ (দ:) ও তাঁর সাহাবাদের (রা:) মত কোরবানীর প্রয়োজন হয় না, আহত হোতে হয় না, নিগৃহীত-অপমানিত হোতে হয় না, বিপদের সম্মুখীন হোতে হয় না। কাজেই তারা অতি নিষ্ঠার সাথে ঐ অতি নিরাপদ সুন্নাহ গুলি পালন করেন এবং নবীর (দ:) ও আল্লাহর সন্তুষ্টি আশা করেন। শুধু আশা করেন না, ও সম্বন্ধে তারা অতি নিশ্চিত। যদিও তারা জান্নাতের সুগন্ধ পর্য্যন্ত পাবেন না, কারণ- বিশ্বনবী (দ:) বোলেছেন তারা না’রী, আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। বাহাত্তর ফেরকা যে সুন্নাহ গুলি পালন করেন সে গুলি শুধু বিশ্বনবীর (দ:) সুন্নাহ নয় সে গুলি লক্ষ কোটি খ্রীস্টান-ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধের সুন্নাহও’! পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই দাঁতন (মেসওয়াক) করে, কোটি কোটি অমুসলিম মাথায় টুপি দেয়, পাগড়ী পড়ে, দাড়ী রাখে, মোচ কামিয়ে ফেলে, খাবার পর মিঠাই খায়, ডানপাশে শোয়। এগুলি বাহাত্তর ফেরকার অতি প্রিয় সুন্নাহ। কিন্তু জান্নাতী ফেরকা যে সুন্নাহ পালন করে সে সুন্নাহ একমাত্র বিশ্বনবী (দ:) ও তাঁর আসহাব ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ পালন করেন না। সেটা হলো শেষ জীবন-ব্যবস্থা, দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপরিসীম দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম। বিশ্বনবীর (দ:) পবিত্র দেহে ছিলো যুদ্ধে যখম হওয়ার চিহ্ন, তাঁর আসহাবদের মধ্যে বোধ হয় একটা লোকও খুঁজে পাওয়া যেতোনা যার গায়ে অস্ত্রের আঘাত ছিলো না, বহু সাহাবী ছিলেন যাদের সমস্ত শরীর অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নে ভরপুর ছিলো। ঐ সুন্নাহ হলো সেই একমাত্র জান্নাতী ফেরকার সুন্নাহ। বাকি বাহাত্তর ফেরকার সুন্নতীদের সারা গায়ে সুঁচের দাগও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা ‘দীনুল কাইয়্যেমা’কে সমস্ত পৃথিবীতে কার্যকরী কোরে মানব জাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম (জেহাদ) ও সশস্ত্র সংগ্রাম (কিতাল) করার যে সুন্নাহ বিশ্বনবী (দ:) ও তাঁর সঙ্গীরা (রা:) রেখে গেছেন সেই সুন্নাহকে বুঝিয়েছিলেন যখন তিনি বোলেছিলেন যার উপর আমি ও আমার সঙ্গীরা আছি এবং এও বোলেছেন যে, যারা এই সুন্নাহ ছেড়ে দেবে তারা আমাদের কেউ নয় অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদী নয়। মহানবীর (দ:) আসহাব যে নিঃসংশয়ে বুঝতে পেরেছিলেন কোনটা তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ, তার অকাট্য প্রমাণ হোচ্ছে সেই উম্মতে মোহাম্মদীর ইতিহাস, তা পেছনে বোলে এসেছি। এখন যিনি আল্লাহর রসূলের (দ:) রেসালতের পর এই জাতির হাল ধোরেছিলেন সেই আবু বকরের (রা:) একটা কথা উল্লেখ কোরছি। জাতির খলিফা নির্বাচিত হোয়ে তার প্রথম বক্তৃতাতেই তিনি বোললেন, “মুসলিমরা! তোমাদের মধ্যে কেউ যেন জেহাদ পরিত্যাগ না করে। কোন জাতি একবার জেহাদ ত্যাগ কোরলে আল্লাহ সে জাতিকে অপদস্ত-অপমানিত না কোরে ছাড়েন না”। বিশ্বনবীর (দ:) ঘনিষ্টতম সঙ্গী (সাহাবা) তার সর্ব রকম বিপদ-আপদে সুখ-দুঃখের চিরসঙ্গী- নবীর (দ:) জীবিতকালেই যাকে উম্মতে মোহাম্মদীর নামাযে এমামতি করার হুকুম দেওয়া হোয়েছিলো- সেই আবু বকর (রা:) কি মহানবীর (দ:) কাছে থেকে ইসলাম-ইসলামের মর্মবাণী-প্রকৃত সুন্নাহ-এসব কি শিক্ষা করেন নি? নিশ্চয়ই কোরেছিলেন এবং শুধু আবু বকর (রা:) নন, বিশ্বনবীর (দ:) প্রত্যেক সাক্ষাত-সঙ্গীরা (রা:) কোরেছিলেন। আবু বকরের (রা:) মত তারাও জানতেন তাদের নেতার প্রকৃত সুন্নাহ কোনটা, তাই তাদের শেষ মানুষটা বেঁচে থাকা পর্য্যন্ত ঐ জেহাদ চালিয়ে গেছেন। আবু বকরের (রা:) ঐ সাবধান বাণী কতখানি সত্য ছিলো তা ইতিহাস। যতদিন এই জাতি একাগ্র লক্ষ্যে (হানিফ) ঐ সুন্নাহ অর্থাৎ জেহাদ চালিয়ে গেলো ততদিন আল্লাহ স্বয়ং তাদের অভিভাবক হোয়ে তাদের সঙ্গে রোইলেন। তা না থাকলে তাদের ঐ অবিশ্বাস্য বিজয় অসম্ভব ছিলো। তারপর ৬০/৭০ বছর পর যখন এই জাতি ঐ জেহাদ বন্ধ করলো, তখন সংখ্যায় তারা প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ বেশী, পৃথিবীর প্রায় অর্দ্ধেক তাদের দখলে। হোলে কি হবে? জেহাদ ছাড়া অর্থ বিশ্ব নবীর (দ:) সুন্নাহ ছাড়া, অর্থাৎ উম্মতে মোহম্মদী হোতে বহিষ্কার। কারণ তিনি তো বোলেই দিয়েছেন, যে আমার সুন্নাহ ছাড়লো সে আমাদের কেউ নয়। আবু বকর (রা:) বোলেছিলেন ‘জেহাদ ছাড়লে আল্লাহ অপদস্ত অপমানিত কোরবেন’। দেখা গেলো আবু বকর (রা:) অনেক কম বোলেছিলেন। কারণ আল্লাহ শুধু অপদস্ত-অপমানিতই কোরলেন না, তিনি শত্রুদের দিয়ে নবীর (দ:) ব্যক্তিগত অভ্যাসের সুন্নাহ পালনকারী এবং উম্মতে মোহাম্মদীর দাবীদার এই বিরাট জাতিটাকে লাইন কোরে দাঁড় করিয়ে মেশিন গান কোরে, ট্যাঙ্কের তলায় পিষে, জীবন্ত কবর দিয়ে, ফাঁসি দিয়ে, বেয়নেট করে, আগুনে পুড়িয়ে, তাদের মেয়েদের আফ্রিকা আর ইউরোপের বেশ্যালয়ে বিক্রি কোরিয়ে এবং তারপরে তাদের ঘৃণিত ক্রীতদাসে পরিণত কোরে দিলেন। এই সময়ের ইতিহাস পড়লে মনে হয় আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ ত্যাগ করার, দীনের অতি বিশ্লেষণ কোরে জাতিকে টুকরো টুকরো কোরে দেওয়ার, এক বহির্মূখী গতিকে উল্টিয়ে অন্তর্মূখী কোরে দিয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে শেষ কোরে দেওয়ার শাস্তি দিতে তার গযবের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। সে শাস্তির ইতিহাস পড়লে গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়। ভুললে চোলবে না যে যখন এই লোমহর্ষক শাস্তি আল্লাহ এই জাতিকে দিয়েছিলেন তখন এই জাতির আইন-কানুন-বিচার-দণ্ডবিধি ইত্যাদি সবই কোর’আন-হাদীস মোতাবেক অর্থাৎ জাতি তখনও উম্মতে মোহাম্মদী না হোলেও মুসলিম। কিন্তু আল্লাহ তাও পরোয়া কোরলেন না। আর আজতো তাও নেই, ওগুলোও তো গায়রুল্লাহর মানুষের তৈরী, যেগুলো ধ্বংস কোরে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য উম্মতে মোহাম্মদীকে সৃষ্টি করা হোয়েছিলো। এই জাতি সেই কুফর ও শেরককে গ্রহণ কোরেও, সেই মোতাবেক জাতীয় জীবন চালিত কোরেও নবীর (দ:) কতক গুলি অপ্রয়োজনীয়-নিরাপদ নেহায়েত ব্যক্তিগত অভ্যাসকে অতি নিষ্ঠার সাথে নকল কোরে নিজেকে অতি উৎকৃষ্ট উম্মতে মোহাম্মদী ভাবছে। কী পরিহাস, কী হাস্যকর।

রসুলাল্লাহর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ এই দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে তার উম্মাহ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া ছাড়াও আরও বহু ক্ষতি হোয়েছে। শুধু তাদের নয়, সমস্ত মানব জাতির মহা ক্ষতি হোয়েছে। কেমন কোরে তা বোলছি। পরিবার পরিজন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-বাড়ী এমন কি দেশ ত্যাগ কোরে অর্থাৎ ইসলামের সন্ন্যাস (হাদীস- ইসলামে সন্ন্যাস নেই, ইসলামের সন্ন্যাস জেহাদে ও হজ্বে) গ্রহণ কোরে মাত্র ৬০/৭০ বছরের মধ্যে প্রায় অর্দ্ধেক পৃথিবীতে এই শেষ দীন প্রতিষ্ঠা করার পর যখন এই উম্মাহ তার নেতার সুন্নাহ ছেড়ে দিলো- তখন তারা এমন প্রচণ্ড শক্তিশালী যে তাদের বাঁধা দেবার মত তখন আর কেউ নেই। তখন যদি তারা না থামতেন তবে সমস্ত পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠিত হোয়ে মানব জাতির জীবন থেকে সমস্ত অন্যায়-অবিচার-অশান্তি-রক্তপাত বন্ধ হোয়ে শান্তি ও নিরাপত্তায় ভরপুর হোয়ে যেতো। তাদের ঐ থেমে যাওয়ার ফলে মানব জাতির মধ্যে যত অশান্তি-অন্যায়-অবিচার-যুদ্ধ-রক্তপাত হোয়েছে, হোচ্ছে ও হবে তার জন্য দায়ী তারা, যারা নবীর (দ:) ঐ প্রকৃত সুন্নাহ পরিত্যাগ কোরেছিলেন। গতিশীলতা (Dynamism) হারিয়ে জাতি যখন স্থবির হোয়ে গেলো তখন স্বাভাবিক ভাবেই তাতে জাতি-ধ্বংসকারী বিষ জন্মানো আরম্ভ হলো। পানির স্রোত যতক্ষণ বইতে থাকে, চলমান থাকে ততক্ষণ পানি তাজা থাকে। স্রোত বন্ধ হোয়ে গেলেই পানিতে পচন ধরে বিষ জন্মায়। সুন্নাহ ছেড়ে দিয়ে গতিহীন স্থবির হবার পরই পচন ধরলো, সে পচন হলো দীনের অতি বিশ্লেষণ, যেটার কথা বিশ্বনবী (দ:) বোলে গিয়েছিলেন- ‘অতি বিশ্লেষণ কোরোনা, পূর্ববর্ত্তী উম্মাহ গুলির মত ধ্বংস হোয়ে যাবে”। দ্বিতীয় পচন হলো ভারসাম্যহীন বিকৃত সুফীবাদের অনুপ্রবেশ, যেটা ঐ গতিশীলতার ঠিক বিপরীত, যেটা জাতির আকীদা উলটিয়ে পেছন দিকে মুখ কোরে দিলো। বিশ্ব নবীর (দ:) উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বকে যারা মাঝপথে স্তব্ধ কোরে দিয়েছিলেন, তারা আল্লাহর দেওয়া বিশ্বনবীর (দ:) উপাধি, ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ কেও পূর্ণ হোতে দেন নি, অর্থাৎ তিনি (দ:) এখনও ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ হন নি। ব্যাখ্যা কোরছি- ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ শব্দের অর্থ হলো (পৃথিবীর) জাতি সমূহের উপর (আল্লাহর) রহমত। এখন প্রশ্ন হোচ্ছে আজ পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখুন দেখি। কোথায় সে রহমত? পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি, হাহাকার, অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত, বুক ভাংগা দুঃখ। মানুষের ইতিহাসে বোধহয় একত্রে একই সঙ্গে দুনিয়ার এত অশ্রু, এত অশান্তি কখনো ঘটেনি। নবী করিমের (দ:) আগেও বোধহয় পৃথিবীর একখানে অশান্তি থাকলে অন্যখানে খানিকটা শান্তি থাকতো। বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ পৃথিবী ছোট, আজ একই সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যে রক্তারক্তি-অশান্তি হোচ্ছে তা ইতিহাসে বোধহয় আর কখনো হয় নি।

তর্ক যাদের অভ্যাস তারা হয়ত আমার একথা মানবেন না। বোলবেন এর আগে যে হয় নি সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত হব কেমন কোরে, কারণ অতীতে মানুষ এক জায়গার খবর অন্য জায়গায় পেতো না। ঠিক কথা, মানছি আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু একটা কথায় আমি নিশ্চিত এবং আশা করি ঐ তার্কিকরাও নিশ্চিত হবেন যে, ইতিহাসে ত্রিশ বছরের মধ্যে দুইটি বিশ্বযুদ্ধ কোরে ষোল কোটি মানুষ এবং তারপর থেকে এখন পর্য্যন্ত পাঁচ কোটি মানুষ এত কম সময়ের মধ্যে কখনই হতাহত হয় নি। এত অন্যায়ও মানুষের ইতিহাসে আর কখনো হোয়েছে কিনা সন্দেহ। তার চেয়েও বড় কথা, মানব জাতি আণবিক যুদ্ধ কোরে আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা আজকের, বর্ত্তমানের। রসুলাল্লাহর (দ:) পৃথিবীতে আসার চৌদ্দশ বছর পর। তাহোলে তিনি কেমন কোরে পৃথিবীর মানুষের জন্য রহমত? এর জবাব হোচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাকে (দ:) যে জীবন ব্যবস্থা, দীন দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেই দীন মানব জাতির উপর সমষ্টিগতভাবে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা কোরলে যে শান্তি, সুবিচার, নিরাপত্তা মানুষের জীবনে নেমে আসবে সেটা হলো আল্লাহর রহমত, তার দয়া। কারণ তিনি ঐ জীবন ব্যবস্থা না দিলে মানুষ কখনই তা নিজেরা তৈরী কোরে নিতে পারতো না, যদি কোরত তবে তা সীমাহীন অশান্তি আর রক্তপাত ডেকে আনতো, যেমন আজ কোরছে। সেই জীবন ব্যবস্থা, দীন, সংবিধান তিনি যার মাধ্যমে মানুষকে দিলেন তাকে তিনি উপাধি দিলেন রহমাতুল্লিল আলামিন। কিন্তু যতদিন না সমগ্র মানব জাতি নিজেদের তৈরী জীবন ব্যবস্থা সমূহ পরিত্যাগ কোরে মোহাম্মদের (দ:) মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগ কোরবে ততদিন তারা সেই অশান্তি, অন্যায় (ফাসাদ) ও যুদ্ধ, রক্তপাতের (সাফাকুদ্দিমা) মধ্যে ডুবে থাকবে, আজকের মত এবং ততদিন বিশ্বনবীর (দ:) ঐ উপাধি অর্থবহ হবে না, অর্থপূর্ণ হবে না এবং আজও হয় নি। তার উম্মাহ ব্যর্থ হোয়েছে তার (দ:) উপাধিকে পরিপূর্ণ অর্থবহ কোরতে। তবে ইনশাল্লাহ সেটা হবে, সময় সামনে। স্রষ্টার দেওয়া উপাধি ব্যর্থ হোতে পারেনা, অসম্ভব। এ ব্যাপারে সম্মুখে আলোচনা করবো।

কার্লমার্কস, কমিউনিজম বোলে একটি জীবন ব্যবস্থা সৃষ্টি কোরেছেন। এটাও একটা দীন এবং অবশ্যই এই আশা নিয়ে যে তার অনুসারীরা একে সমস্ত পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা কোরবে এবং তা কোরতে সর্বরকম সংগ্রাম কোরবে। তার অনুসারীরা তা কোরেছেও। অর্থনৈতিক অবিচার, অন্যায়কে শেষ কোরে সুবিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারা অসীম ত্যাগ, সাধনা, সংগ্রাম, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর এক বিরাট অংশে তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা কোরেছে। আজ বা ভবিষ্যতে যদি কমিউনিস্টরা তাদের উদ্দেশ্য ভুলে যেয়ে কার্ল মার্কসের ব্যক্তিগত অভ্যাস গুলিকে অনুকরণ কোরতে থাকে তবে মার্কস কি তাদের অনুসারী কমিউনিস্ট স্বীকার কোরবেন? এই প্রশ্নটাই কোরেছিলাম একজন উৎসর্গকৃত প্রাণ যুবক কমিউনিস্ট কর্মীকে। বোলেছিলাম ‘আচ্ছা বলতো! ভবিষ্যতে কখনো মার্কস কবর থেকে উঠে এসে যদি দেখেন যে, তোমরা কমিউনিজমকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ কোরেছো। শুধু তাই নয়, যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য তিনি সংগ্রাম শুরু কোরেছিলেন সেই পুঁজিবাদকে তোমরা গ্রহণ কোরেছো, তোমাদের সংবিধান বাদ দিয়ে জাতীয় জীবনে পাশ্চত্যের ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোরেছো, কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তোমরা কমিউনিজম বিশ্বাসী, তোমরা মার্কসের মত চুল দাড়ি রাখ, তার মত হ্যাট পড়ো, তার মত কাপড় পড়ো, মার্কস যে কাতে ঘুমাতেন তোমরাও সেই কাতে শোও, যেভাবে দাঁত মাজতেন সেইভাবে মাজ, হাতে কাস্তে-হাতুড়ী মার্কা ব্যাজ পড়, সুর কোরে দ্যাস ক্যাপিটাল পড় এবং কে কত সুন্দর সুর কোরে তা পড়তে পারে তার প্রতিযোগিতা করে পুরস্কার দাও এবং এসব কোরে সত্যি বিশ্বাস কর যে তোমরা অতি উৎকৃষ্ট কমিউনিস্ট এবং মার্কসের বিশ্বস্ত অনুসারী- তবে মার্কস কি কোরবেন? কমিউনিস্ট কর্মীটি অবাক বিশ্বয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, তা কী কোরে সম্ভব? আমাদের কমিউনিস্ট বলেই স্বীকার করবেন না। আমরা যদি পুঁজিবাদী গণতন্ত্রই গ্রহণ করি তবে আমরা আর কমিউনিস্ট রোইলাম কি করে? বললাম, ধোরে নাও না তাই কোরলে, কোরলে মার্কস কি কোরবেন? একটু চিন্তা কোরে সে বললো, আমাদের কমিউনিস্ট বোলেই স্বীকার কোরবেন না। ‘আমাদের গায়ে থুথু দেবেন’। অনুরূপ অবস্থায় মহানবী (দ:) কি কোরবেন তা আমাদের কষ্ট কোরে অনুমান কোরতে হবে না। কারণ সে কথা তিনি (দ:) আমাদের আগেই বোলে দিয়েছেন। তিনি বোলেছেন, তোমাদের আগে আমি হাউসে কাওছারে পৌছব, আমার সামনে দিয়ে যারা যাবে তারা পানি পান কোরবে এবং যারা পান করবে তারা আর কখনও তৃষ্ণার্ত্ত হবে না। লোকজন যাদের আমি চিনি এবং যারা আমায় চেনে পানি পান করার জন্য আমার কাছে আসবে কিন্তু তাদের ও আমার মধ্যে বাধা-ব্যবধান সৃষ্টি করা হবে। তখন আমি বলবো, এরা তো আমার লোক। বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার পর এরা কি বেদা’ত কোরেছিল। তখন আমি বলবো, দূর হও, দূর হও, যারা আমার পর বেদা’ত কোরেছো-হাদীস সহল বিনসা’দ (রা:) থেকে- বুখারী, মুসলীম, মেশকাত-মুসনাদ আহমদ। এই অনেকটা শাব্দিক অনুবাদকে সহজ ভাষায় বোললে এই দাঁড়ায়-আল্লাহর রসুল (দ:) সবার আগে হাউসে কাওসারে পৌছে যাবেন, তারপর তার উম্মাতের মানুষ তার সামনে দিয়ে যেতে থাকবে আর তিনি (দ:) তাদের কাওসারের পানি পান করাতে থাকবেন, যে পানি পান কোরলে মানুষ আর কখনও তৃষ্ণার্ত্ত হয় না। এর মধ্যে এমন একদল মানুষ আসবে যারা কাওসারের পানি পান কোরতে অগ্রসর হোলেও রসুলাল্লাহ (দ:) ও তাদের মধ্যে এক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হবে। তখন তিনি বোলবেন, এরাতো আমার লোক অর্থাৎ আমার উম্মত। তখন বলা হবে অর্থাৎ আল্লাহ বোলবেন, আপনি জানেন না আপনার পর আপনার উম্মাহর ঐসব লোক আপনি যে দীন রেখে এসেছিলেন তার মধ্যে কি কি বেদা’ত কোরেছে। এই কথা শুনে ব্যাপারটা বুঝে বিশ্বনবী (দ:) ঐ সমস্ত লোকদের বোলবেন, দূর হও! দূর হও! যারা আমার পর দীনে বেদা’ত কোরেছো। অর্থাৎ মহানবী (দ:) তার উম্মাহর ঐ লোকদের ভাগিয়ে দেবেন, তাদের কাওসারের পানি পান কোরতে দিবেন না, কারণ তারা বেদা’ত কোরেছিলো। বেদা’ত কি তা অন্যত্র লিখেছি (বে’দাত অধ্যায় দেখুন)। এখানে এইটুকুই লিখবো যে, আল্লাহ রসূলের (দ:) মাধ্যমে যে দীন, জীবন ব্যবস্থা মানব জাতিকে দিয়েছেন তা পরিপূর্ণ, তাতে কোন কিছু নতুন সংযোজন হলো বেদা’ত। এই বেদা’তকে, সংযোজনকে মহানবী (দ:) শেরক বোলেছেন, কারণ এটা করা মানে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, এবং প্রকারান্তরে বলা যে আল্লাহর দীন পূর্ণ নয়। শুধু নতুন সংযোজনই যদি শেরক হয়, যে শেরক আল্লাহ প্রতিজ্ঞা কোরেছেন মাফ কোরবেন না বোলে, তবে শুধু সংযোজন নয়, দীনের সর্বপ্রধান অর্থাৎ জাতীয় ভাগটিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি বর্জন কোরে সেখানে ইউরোপের ইহুদী-খ্রীস্টানদের তৈরী ব্যবস্থা জীবনে প্রয়োগ কোরে রসূলের (দ:) ব্যক্তিগত সুন্নাহ গুলি পালন কোরে যারা নিজেদের উম্মতে মোহাম্মদী বোলে মনে কোরে আত্মপ্রবঞ্চনায় ডুবে আছেন তাদের কি অবস্থা হবে? প্রত্যেক নবীর (আ:) একটি কোরে হাউস থাকবে এবং তারা প্রত্যেকে যার যার উম্মাহকে কেয়ামতের দিনে তা থেকে পানি পান করাবেন। আমাদের প্রিয় নবীও (দ:) তার হাউজে কাওসার থেকে তার উম্মাহকে পানি পান করাবেন। আল্লাহ যখন নবীকে (দ:) বেদা’তকারীদের পানি পান করাতে বাধা দেবেন তখন বোঝা গেলো তারা আর নবীর (দ:) উম্মত নয়। যদিও আপাতদৃষ্টিতে তারা অবশ্যই তার উম্মত ছিলো, নইলে মহানবী (দ:) প্রথমে একথা কেন বোলবেন যে, ওরাতো আমার লোক, অর্থাৎ আমার উম্মত। ঐ লোক গুলি আজকের “উম্মতে মোহাম্মদী”। দৃশ্যত এত উৎকৃষ্ট উম্মতে মোহাম্মদী যে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল পর্য্যন্ত প্রায় ধোকায় পতিত হবেন। আল্লাহ বাধা না দিলে তো কাওসারের পানি পান করিয়েই দিতেন। বিশ্বনবী (দ:) যখন তাদের ‘দূর হও, দূর হও’ বোলে ভাগিয়ে দিবেন তখন অবশ্যই একথা পর্রিষ্কার যে তার উম্মাহ থেকেই ভাগিয়ে দেবেন। কাপড়ে চোপড়ে, চলাফেরায়, কথাবার্ত্তায়, খাওয়া দাওয়ায়, শোয়ায় তারা উৎকৃষ্ট সুন্নাহ পালনকারী কিন্তু আসলে বেদা’ত ও শেরকে নিমজ্জিত। যাত্রাদলের কাঠের বন্দুক দেখতে একদম বন্দুক, কিন্তু তা থেকে গুলি বের হয়না। এরা নিজেদের ফাঁকি দিচ্ছেন, অন্যকে ফাঁকি দিচ্ছেন এবং কেয়ামতে আর একটু হোলেই একেবারে স্বয়ং নবীকরীম (দ:) কেই ফাঁকি দিয়ে ফেলেছিলেন আর কি!

মুমিন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদীর যে সংজ্ঞা দিয়ে এলাম এর শেষ কথা এই যে, মুমিন ও মুসলিম আদম (আ:) থেকে প্রত্যেক নবীর সময়ই ছিলো কিন্তু উম্মতে মোহাম্মদী শুধু শেষ নবীর (দ:) পর থেকে। এই উম্মাহর একমাত্র সাফায়াতকারী তিনি। তিনি যদি আমাদের তার উম্মাহ বোলে স্বীকার না করেন, দূর হও! দূর হও! বোলে তাড়িয়ে দেন। তবে জাহান্নাম ছাড়া আমাদের আর কোন জায়গা নেই।

Leave a Reply