You are currently viewing মিথ্যা সভ্যতার অহঙ্কার

মিথ্যা সভ্যতার অহঙ্কার

মিথ্যা সভ্যতার অহঙ্কার

সভ্যতার অহঙ্কার- এই পৃথিবীতে মানুষ নামে যে প্রাণীটি তার আধিপত্য বিস্তার কোরে রেখেছে
সে নিষ্ফল অহংকারে ভাবছে যে সে আজ সভ্যতার চুড়ায় বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে
আছে। সে ভাবছে তার লক্ষ লক্ষ বছরের অস্তিত্বের মধ্যে আজকের মত সার্বিক
সফলতা তার আর কখনো হয় নি। তার পেছনের লক্ষ বছরের অতীতের দিকে সে
কৃপা আর অনুকম্পার দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে দেখছে। আকাশের বিদ্যুতকে সে বেঁধে
চাকরের মত কাজ করাচ্ছে, নদীর গতিকে সে মোড় ফিরিয়ে ফসল ফলাচ্ছে, তার
গতি রুদ্ধ কোরে বিদ্যুৎ তৈরী কোরছে, সে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরের চাঁদে গিয়ে
ফিরে এসেছে। শুধু তাই নয়, সে জানে আর কিছু দিন পর সে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
ঘুরে বেড়াবে।
মানুষ নামের এই প্রাণীটিকে কে বোলে দেবে যে- যে সভ্যতার অহঙ্কারে তুমি
বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছ সে সভ্যতাতো শুধু ঐটুকুই করে নি, সে আরও কোরেছে।
সে তোমাকেই ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক বোমা তৈরী কোরেছে, সে সভ্যতাই
কয়েক মিনিটের মধ্যে হিরোশীমা আর নাগাসাকিতে তোমার কয়েক লক্ষ বৃদ্ধ, যুবক,
নারী ও শিশুকে হত্যা কোরেছে, সেই সভ্যতাই মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দুইটি
মহাযুদ্ধে তোমাদেরই এগার কোটি মানুষকে হত্য কোরেছে।
পৃথিবীর মানুষ আজ বিক্ষুদ্ধ। বাইরে যত সফলতার অহংকার থাকুক মনের
গভীরে মানুষ আজ দেউলিয়া, দিশাহারা। যে কোন দিনের সংবাদপত্র খুলুন,
দেখবেন পৃথিবীময় অশান্তি, ক্রোধ, রক্তারক্তি, অন্যায়, অবিচার আর হাহাকারের
বর্ণনা। রাষ্টধগত ভাবে যুদ্ধ, দলগত ভাবে হানাহানি, ব্যক্তিগত সংঘাত আর
রক্তারক্তির হৃদয়বিদারী বর্ণনা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে, বিশেষ কোরে যে সব
দেশ এই যান্ত্রিক সভ্যতাকে গ্রহণ কোরেছে, সেগুলোতে প্রতি বছর খুন, যখম,
ডাকাতি, ধর্ষণ, বোমাবাজি আর অপহরণের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।
এমন কি বেগুনাহ, নিষ্পাপ শিশুরা পর্য্যন্ত এই মানুষরূপী শয়তানদের হাত থেকে
রেহাই পাচ্ছে না। এক দিক দিয়ে মানুষ যেমন বিজ্ঞানের শিখরে উঠছে অন্যদিক
দিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে সে সব রকমের অন্যায়ের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছুচ্ছে।
মানুষের আত্মা আজ ত্রাহী সুরে চিৎকার কোরছে কেন? কেন মানুষ তার জ্ঞান আর
বিজ্ঞানের প্রগতিকে মনুষ্যত্বের উন্নতির পরিবর্ত্তে তাকে অবনতির গভীর অতলে নিয়ে
যাচ্ছে? তার যে অতীত ইতিহাসের দিকে মানুষ কৃপার দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে তার যে
কোন বিশেষ মুহূর্ত্ত আজকের যে কোন বিশেষ মুহূর্ত্তের সাথে তুলনা কোরলে সে
দেখবে যে, মানুষ হিসাবে সে বর্ত্তমানে কত নিচুতে নেমে গেছে। বেশী দূর যেতে
হবে না, শুধ এই বিংশ শতাব্দীতে সে যত মানুষের প্রাণ হরণ কোরেছে, গত দশ
শতাব্দীর সমস্ত যুদ্ধ বিগ্রহে তার ভগ্নাংশও করে নি। শুধু হত্যা নয়, অন্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে তার পূর্ব পুরুষদের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। আত্মার এই
নিদারুণ পতনের সাথে বিজ্ঞানের, প্রযু৩ির (Deterent) ধ্বংসকারী শক্তির
যোগের পরিণতি চিন্তা কোরে মানুষ আজ শিউরে উঠছে।
মানুষ আজ যে সভ্যতার বড়াই কোরছে সত্যিকি এটা সভ্যতা? আমি
বোলবো, না, এটা সভ্যতা নয়। এটা আত্মাহীন বিবেকহীন একটা যান্ত্রিক প্রগতি
মাত্র, যে প্রগতি মানুষকে যত সে যান্ত্রিকভাবে এগুচ্ছে, তত তাকে মানুষ হিসাবে
টেনে নিচে নামাচ্ছে- তাকে কিছুতেই আর যাই হোক সভ্যতা বোলে আখ্যা দেয়া
যায় না।

Leave a Reply