You are currently viewing মুমিন জাতি পরাজিত হতে পারে না
মুমিন জাতি পরাজিত হতে পারে না

মুমিন জাতি পরাজিত হতে পারে না

মুমিন জাতি পরাজিত হতে পারে না

আমি পেছনে বোলে এসেছি মহানবীর (সা:) ৬০/৭০ বছর পর থেকে এই জাতি আর জাতি হিসাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী ছিলো না। কিন্তু মুসলিম ছিলো কারণ তাদের সংবিধান ছিলো কোর’আন এবং হাদীস অর্থাৎ তাদের এলাহ ছিলো আল্লাহ, আর পথপ্রদর্শক ছিলেন – মোহাম্মদ (সা:)। যদিও লক্ষ্য চ্যুত হোয়ে যাবার এবং আকীদা বিকৃত হবার কারণে তাদের এমন নিদারুন পতন এলো যে, তারা ক্রীতদাসে পরিণত হলো কিন্তু এইবার গোলামে পরিণত হবার পর এই জাতি আর মুসলিমও রইলো না, মুশরেকে পরিণত হলো। কারণ বোলছি। আল্লাহ কোর’আনে অনেকবার এই জাতিকে লক্ষ্য কোরে বোলেছেন যে, যদি তোমরা মুমিন হও তবে আমি তোমাদের পৃথিবীতে উচ্চ রাখব, অন্যান্য জাতিদের উপর তোমাদের প্রবল রাখবো, পৃথিবীর কতৃত্ব, ক্ষমতা তোমাদের হাতে দেব(সূরা আন নূর-৫৫)। তাহোলে যখন এই জাতি ইউরোপীয়ানদের কাছে যুদ্ধে হেরে গেলো তখন প্রমাণ হলো যে ঐ জাতি আর মুমিন নয়। না হলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মিথ্যা (নাউযুবিল্লাহ)। তারপর সূরা ফাতাহতে আল্লাহ বোলছেন- “যখন অবিশ্বাসীরা তোমাদের (মুসলিমদের) সঙ্গে যুদ্ধ কোরবে (এখানে আল্লাহ সশস্ত্র যুদ্ধের কথা বোলছেন, কারণ শব্দ ব্যবহার কোরেছেন কিতাল) তখন নিশ্চয়ই তারা পালিয়ে যাবে। (অর্থাৎ হেরে যাবে) অতঃপর তাদের রক্ষা করার কোন অভিভাবক বা সাহায্যকারী থাকবে না। এটা সর্বকালে (পূর্বকাল থেকে সব সময়ই) আল্লাহর সুন্নাহ (রীতি) এবং আল্লাহর এই সুন্নাহ (রীতি) তিনি কখনও বদলান না(সূরা আল ফাতাহ- ২২-২৩)। লক্ষ্য কোরুন, মুসলিম জাতিকে, উম্মতে মোহাম্মদীকে আল্লাহ কী বোলছেন। তিনি বোলছেন- তোমাদের সঙ্গে যখনই অবিশ্বাসীদের (এখানে অবিশ্বাসী অর্থ যারা শেষ নবীর (সা:) উপর অবতীর্ণ জীবন ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না) যুদ্ধ হবে তখনই তারা পরাজিত হোয়ে পালিয়ে যাবে। কারণ হিসাবে বোলছেন যে, তাদের রক্ষা করার জন্য কোন অভিভাক বা সাহায্যকারী নেই অর্থাৎ আল্লাহতো উম্মাতে মোহাম্মদীর অভিভাবক এবং সাহায্যকারী আর ঐ পক্ষে কে অভিভাবক বা সাহায্যকারী? আর কেউ নেই। কাজেই পরাজয় ছাড়া তাদের জন্য আর কী সম্ভব? এই বোলে পরের আয়াতে আল্লাহ বোলছেন- এটা অর্থাৎ এই কাজ আমার সর্বকালের সুন্নাহ। সুন্নাহ শব্দের অর্থ হলো কারো কোন রীতি, নীতি, অভ্যাস, নিয়ম ইত্যাদি এবং আল্লাহ বোলছেন এটা আমার সর্বকালের রীতি, অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীর আগেও যে নবীদের (আ:) তিনি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাদের উম্মাহ গুলিও- যখন অবিশ্বাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ হোয়েছে তখনও আল্লাহ সব সময়ই তাদের জয়ী কোরেছেন, তাদের শত্রুরা হেরে পালিয়ে গেছে। এরপর বোলছেন আল্লাহর এই সুন্নাহ কখনও বদলাবার নয়।

আল্লাহর এই কথা যে কত সত্য তার প্রমাণ আমরা পাই যখন আমরা উম্মতে মোহাম্মদী অর্থাৎ প্রথম ৬০/৭০ বছরের ইতিহাস পড়ি। সংখ্যায়, আয়োজনে, অস্ত্রে-শেস্ত্রে, বাহনে, রসদে এক কথায় প্রতি ক্ষেত্রে নগন্য এই জাতি দুইটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করলো। আল্লাহ তার সুন্নাহ বজায় রাখলেন। কিন্তু এইবার ইউরোপ থেকে যে আক্রমণ এলো সে আক্রমণে এই জাতি প্রতি যুদ্ধে পরাজিত হলো, যদিও আক্রমণ গুলি এসেছিলো ই্উরোপের বিভিন্ন ছোট বড় রাষ্ট্র গুলি থেকে। এই পরাজয় প্রমাণ করলো যে, এই জাতি আর আল্লাহর চোখে মুমিনও নয় উম্মতে মোহাম্মদীও নয়। কারণ যদি এই জাতি মুমিন হোয়ে থেকেও যুদ্ধে পরাজিত হোয়ে খ্রীস্টান ইউরোপের দাসে পরিণত হোয়ে যায় তবে আল্লাহর বাণী মিথ্যা (নাউজুবিল্লাহ)। আর নইলে তিনি তার সুন্নাহ বদলিয়ে ফেলেছেন এবং পুর্ববর্তী সব নবীদের উম্মাতের বেলায় না বদলিয়ে তার সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর (সা:) উম্মাহর বেলায় এসে প্রথম তার সুন্নাহ ত্যাগ কোরলেন। এ দু’টোর একটাও সম্ভব নয়, কাজেই একমাত্র সিদ্ধান্ত হলো এই যে, যখন ইউরোপের রাষ্ট্র গুলি এই জাতিকে, যে জাতি তখনও নিজেকে মুমিন ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে মনে কোরতো (এবং আজও করে) আক্রমণ করলো তখন সেটা আর মুমিন নয় উম্মতে মোহাম্মদীও নয়। দীনের অতি বিশ্লেষণের ফলে বিভিন্ন মযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত, ছিন্নভিন্ন, ঐক্যহীন এবং সুফী মতবাদের প্রভাবে বিকৃত আকীদায় অন্তমুর্খী, স্থবির জনসংখ্যা। আল্লাহ আর ঐ জনসংখ্যার অভিভাবকও নন, সাহায্যকারীও নন। কাজেই অবশ্যম্ভাবী ফল পরাজয়। সেই যে বিশ্বনবী (সা:) সতর্ক কোরে দিয়েছিলেন দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোর না, পরাজিত হবে- ঠিক তাই হলো।

সশস্ত্র সংগ্রামে পরাজিত কোরে খ্রীস্টান রাষ্ট্র গুলি এই বিরাট জাতিটাকে খণ্ড খণ্ড কোরে এক এক রাষ্ট্র এক এক খণ্ড অধিকার কোরে শাসন ও শোষণ কোরতে লাগলো। এতদিন এই জাতির সংবিধান ছিলো কোর’আন ও হাদীস। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ইত্যাদির উৎস ছিলো ঐ কোর’আন ও হাদীস। বিচরালয়ে বিচার হতো আল্লাহর দেয়া আইনে (ফিকাহ), দণ্ড দেয়া হতো আল্লাহর ও রসূলের (সা:) নির্দেশ মোতাবেক। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে তো জাতি বিচ্যুত হোয়ে গিয়েছিলোই তা না হলে তো আর শত্রুর ক্রীতদাসে পরিণত হোতে হোত না। কিন্তু তবুও পরাজিত হবার আগে পর্য্যন্ত এই জাতির সব কিছুই পরিচালিত হতো কোর’আন সুন্নাহ মোতাবেক (যা এখন আমাদের মধ্যে নেই) অর্থাৎ ঐ জাতি উম্মতে মোহাম্মদী না থাকলেও মুসলিম ছিলো। কিন্তু উদ্দেশ্য অর্জনের সংগ্রাম ত্যাগ করা, লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়া কী অমার্জনীয় অপরাধ তার প্রমাণ এই যে, মুসলিম থাকা সত্ত্বেও সালাত, সওম, হজ্ব , যাকাত ইত্যাদি নিষ্ঠার সাথে করা সত্ত্বেও প্রচুর নফল সালাত, যিকর, মোরাকেবা, তসবিহ, দাড়ী, টুপি, পাগড়ী, খানকাহ, হুজরা, লক্ষ লক্ষ সুফী দরবেশ ও তাদের কোটি কোটি মুরীদ সত্ত্বেও আল্লাহ এই জাতিকে ইউরোপের ছোট ছোট খ্রীস্টান জাতির পদানত কোরে তাদের ক্রীতদাস বানিয়ে দিলেন। অপমানের চূড়ান্ত কোরবার জন্য আল্লাহ এতখানি কোরলেন যে, পর্তুগালের মত মাত্র কয়েক লক্ষ লোকের একটি ছোট্ট রাষ্ট্রের গোলাম বানিয়ে দিলেন এই উম্মাহর কয়েক কোটি মানুষকে। যখন এই উম্মাহ সশস্ত্র সংগ্রামে শত্রুর কাছে পরাজিত হলো তখন কোর’আন মোতাবেক প্রমাণ দেখিয়ে এসেছি যে, তারা আর আল্লাহর চোখে মুমিন নেই। এবার হাদীস দিয়ে দেখাচ্ছি। একদিন মহনবী (সা:) সালাতের পর স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশীক্ষণ দোয়ায় ব্যাপৃত রোইলেন। সাহাবারা (রা:) অপেক্ষা কোরছিলেন। দোয়া শেষে তারা জিজ্ঞাসা কোরলেন আজ এত দেরী হলো কেন? আল্লাহর রসুল (সা:) বোললেন- আজ আমি আল্লাহর কাছে তিনটি জিনিষের জন্য প্রার্থনা কোরছিলাম। একটা হলো (পূর্ববর্ত্তী অনেক উম্মাহর মত তাদের পথ ভ্রষ্টতার জন ̈) আমার উম্মাহকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস কোরে দিওনা, দ্বিতীয়টা আমার উম্মাহ যেন শত্রুর কাছে কখনো পরাজিত না হয় এবং তৃতীয়টি হলো আমার উম্মাহ যেন নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে। আল্লাহ প্রথম দু’টি মঞ্জুর কোরেছেন, তৃতীয়টি করেন নি(হাদীস- খাব্বাব বিন আমর (রা:) থেকে তিরমিযি, নাসায়ি, মেশকাত)। দ্বিতীয়টি লক্ষ কোরুন। ‘আমার উম্মাহ যেন শত্রুর কাছে পরাজিত না হয়’ এবং ওটা আল্লাহ মঞ্জুর কোরলেন। এরপর যদি ঐ উম্মাহ আটলান্টিকের তীর থেকে বোর্নিও পর্য্যন্ত সর্বত্র যুদ্ধে পরাজিত হোয়ে ঘৃণিত ক্রীতদাসে পরিণত হয় তবে হয় স্বীকার কোরতে হবে যে, আল্লাহ নবীকে (সা:) দেয়া তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কোরলেন আর তা না হলে ঐ জাতি আর মোহাম্মাদের (সা:) প্রকৃত উম্মাহও নয় মুমিন নয়। আর কোনও সিদ্ধান্ত নেই। আল্লাহর ঐ প্রতিশ্রুতি শুধু ঐ একটা হাদীসে নয়, আরও হাদীসে আছে। উদাহরণ স্বরূপ আমর বিন কায়েস থেকে দারিমী মেশকাত ইত্যাদি। এছাড়াও মুমিন হোলে যে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে জয় স্বয়ং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তা কোর’আনের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। যেমন সূরা ইমরানের ১৩৯ আয়াত, সূরা নূরের ৫৫ আয়াত ইত্যাদি। শুধু প্রতিশ্রুতি নয় সুরা রুমের ৪৭ আয়াতে আল্লাহ বোলছেন- মুমিনদের সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব, কর্ত্তব্য, আল্লাহ যদি নিখুঁত হোয়ে থাকেন তবে তিনি ঐ জাতিটি, যেটি ইউরোপের সামরিক আক্রমণে পর্যুদস্ত হোয়ে গেলো, ঐ জাতিটাকে মুমিন বোলে স্বীকৃতি দেন নি, আর তা না হলে তিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হোয়েছেন। আল্লাহ ছোবহান যেমন সত্য তেমনি সত্য যে তিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হোতে পারেন না। কাজেই অনিবার্য সিদ্ধান্ত হলো যে, ঐ জাতি মুমিন ছিল না। অথচ ভুললে চোলবে না যে, এই সময় এই জাতির সংবিধান কোর’আন হাদীস, বড় বড় ফকীহ, মুফাস্সির, মোহাদ্দিস, পীর, দরবেশ, সুফী ইত্যাদি কিছুরই অভাব ছিলো না, শুধু অভাব ছিলো না বোললে হয় না বরং বোলতে হয় এসব দিয়ে জাতি ভরপুর ছিলো। কিন্তু আল্লাহ এসব কিছুই দেখলেন না, তোয়াক্কা কোরলেন না। তিনি এই উম্মাহকে ইউরোপের খ্রীস্টান জাতি গুলির গোলামে পরিণত কোরে দিলেন এবং দিলেন এই বিরাট জাতিটার সবটকু- শিয়া, সুন্নী, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী ও অন্যান্য কোন ফেরকাও বাদ রোইলো না। বাদ রোইলো শুধু মধ্য আরবের ঐ জায়গাটুকু যেখানে কাবা আর বিশ্বনবীর (সা:) রওজা মোবারক অবস্থিত। ওটুকুও যদি খৃষ্টান শক্তি গুলি দখল কোরতে চাইতো তবে তাও রক্ষা করার শক্তি এ জাতির ছিলো না। কিন্তু বোধহয় আল্লাহর তার নিজের ও তার প্রিয় হাবিবের সম্মান ও ইযযতের খাতিরে নিজে এ স্থানটুকু রক্ষা কোরলেন।

এই জাতি এই উম্মাহর জন্য আল্লাহ ও তার রসুল (সা:) যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ কোরে দিয়েছিলেন সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার শাস্তি কী ভয়াবহ হলো। এই যুদ্ধে ইউরোপীয়ান খ্রীস্টান লক্ষ লক্ষ পুরুষ-নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা শিশুকে গুলি কোরে, ট্যাংকের তলায় পিষে, আগুনে পুড়িয়ে এমনকি জীবন্ত কবর দিয়ে হত্যা কোরেছে, লাইন কোরে দাঁড় করিয়ে মেশিনগান কোরেছে, আল্লাহ কি এসব দেখেন নি? নিশ্চয়ই দেখেছেন, কিন্তু একটি আংগুল তুলেও সাহায্য করেন নি। কারণ তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শুধু মুমিনকে, উম্মাতে মোহাম্মদীকে সাহায্য করার। এই জাতিটি যে তখনও মুসলিম তিনি তাও পরোওয়া কোরলেন না। এই উম্মাহকে পরাজিত কোরে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার পর ইউরোপীয়ান জাতি গুলি তাদের যার যার দখল করা এলাকায় তাদের নিজেদের তৈরী আইন ও শাসন ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করলো।

Leave a Reply