You are currently viewing মুসলিম দুনিয়ার মোশরেক নেতৃত্ব

মুসলিম দুনিয়ার মোশরেক নেতৃত্ব

মুসলিম দুনিয়ার মোশরেক নেতৃত্ব

এখন পাশ্চাত্যের জুডিও খ্রীস্টান সভ্যতার পদতলে ভুলুণ্ঠিত এই মুসলিম নেতৃত্বের অন্য দিকটা দেখা যাক। পেছনে আল্লাহর নবীর (সা:) একটা হাদীস উল্লেখ কোরে এসেছি, যেটায় তিনি বোলেছেন যে, তার উম্মাহর মধ্য সর্বদাই একটা দল থাকবে যেটা মানুষকে আল্লাহর পথে আনার চেষ্টা কোরতে থাকবে। অর্থাৎ ঐ দলটিই প্রকৃত ইসলামের আকীদায় থাকবে। ইসলামের উদ্দেশ্য কি বুঝবে এবং বিপথগামী আকীদা উদ্দেশ্যভ্রষ্ট জাতিকে আবার সত্য পথে আনার জন্য জেহাদ কোরতে থাকবে। সত্যই এরা চিরকাল আছেন এবং প্রকৃত দীন থেকে চ্যুত জাতিকে আবার সত্য পথে ফিরিয়ে আনতে তাদের প্রচেষ্টা, চাপ কমবেশী সর্বদাই এ জাতির ইতিহাসে রোয়েছে। এ চাপ সম্বন্ধে বর্ত্তমান মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্ব সজাগ আছে এবং সর্বতোভাবে তার মোকাবিলা কোরছে। এদের এই মোকাবিলার উপায় আলোচনা কোরছি। প্রথম উপায় হলো প্রকৃত ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞানহীন অশিক্ষিত জনসাধারণকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য বাহ্যিক, অপ্রয়োজনীয় কাজ কোরে দেখানো যে নেতারাও অতি উৎকৃষ্ট মুসলিম। যেমন মসজিদ তৈরী ও মেরামতের জন্য কিছু কিছু টাকা পয়সা বরাদ্দ করা, টাকার নোটে মসজিদ ইত্যাদির ছবি ছাপানো, শুক্রবার ছুটির দিন ঘোষণা করা ইত্যাদি। ইংরাজিতে যাকে বলা হয় Window dressing বাইরে রং লাগিয়ে চকমকে কোরে মানুষকে ধোকা দেওয়া। এই ধোকা দেওয়ার সর্বাধুনিক প্রক্রিয়া হোচ্ছে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম (State religion) ঘোষণা দেওয়া। এতে বুনিয়াদী কোন পরিবর্ত্তন হয় না, মোশরেকী ও কুফরী রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুরোপুরি বহাল থাকে, কিন্তু আকীদাচ্যুত অজ্ঞ জনসাধারণ খুব ইসলাম হোচ্ছে মনে কোরে মহা খুশী থাকে, তাদের সরকার গুলিকে অতি ধার্মিক সরকার মনে করে এবং সমর্থন দেয়। একটি বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক নেতা একবার প্রচণ্ড গণবিক্ষোভ মোকাবিলা কোরলেন শুক্রবারকে ছুটির দিন ঘোষণা কোরে এবং পবিত্র কাবার এমাম সাহেবকে দেশে নিয়ে এসে শহরে শহরে জুমার নামাযের এমামতি কোরিয়ে। অবশ্য তিনি শেষ রক্ষা কোরতে পারেন নি, কারণ তখন অনেক দেরী হোয়ে গিয়েছিলো। দ্বিতীয় উপায় হলো যার যার দেশের রাজনৈতিক দল গুলির, যে গুলির মূলনীতি পাশ্চাত্য থেকে আমদানী করা, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবিরোধী তাদের ঐ জেহাদী দলটির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ লাগিয়ে দেওয়া। সম্ভব হোলে তাদের দিয়েই এদের দমন করা। তাতেও যদি না হয় তবে তারা তৃতীয় উপায় অবলম্বন করেন। সেটা হলো এই প্রকৃত দীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামীদের গ্রেফতার করা, তাদের উপর লাঠি, গুলি চালানো, তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো। বর্ত্তমান মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্ব অজ্ঞ জনসাধারণকে বোকা বানানোর চেষ্টায় জনসভায় বক্তৃতা দেন- ইসলাম শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মই নয় এটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হোলে অবশ্যই তাতে রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন, দণ্ডবিধি, প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে- এটা সাধারণ জ্ঞান) এবং একমাত্র ইসলামই দুনিয়াতে শান্তি আনতে পারে। বক্তৃতা শুনে মুর্খ জনতা হাততালি দেয়, নেতাদের নামে জিন্দাবাদ দেয় আর মনে করে তারা উৎকৃষ্ট মুসলিম নেতৃত্বের অধীনে আছে। নেতারা বক্তৃতা সভা শেষে তাদের সচিবালয়ে ফিরে গিয়ে দেশ পরিচালনা করেন তাদের পূর্ব প্রভুদের শেখানো শেরক ও কুফরী ব্যবস্থা অনুযায়ী। নিদারুণ পরিহাস এই যে, একদা দুনিয়ার শিক্ষক এই জাতি ফকীহ মুফাস্সির আর দ্বীনি আলেমের কার্য ফলে অশিক্ষা আর মুর্খতার এমন স্তরে নেমে গেছে যে, নেতাদের ঐ পরিষ্কার মোনাফেকীটুকু বোঝার মত সাধারণ জ্ঞানটুকুও লোপ পেয়েছে। ছোট ছোট জেহাদী দল গুলি যারা মুসলিম দুনিয়ার সমস্ত ভৌগোলিক রাষ্ট্র গুলিতে আছে এবং সেই রাষ্ট্র গুলিকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা কোরছে, তাদের চেষ্টার ফলে আল্লাহর রহমে আজ আটলান্টিকের তীর থেকে ফিলিপাইন পর্য্যন্ত একটা জীবনের স্পন্দন অনুভূত হোচ্ছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। প্রশ্ন হোচ্ছে এদের প্রচেষ্টায় আরও দ্রুত ফল হোচ্ছে না কেন? সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এরা এত বাধা পাচ্ছেন কেন? এর উত্তর হোচ্ছে-
ক) এদের বিরুদ্ধ শক্তিগুলি অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মবিরোধী মোশরেক ও নাস্তিক শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যে যত মতবিরোধই থাক না কেন, যখন ইসলামের বিরোধীতার প্রশ্ন উঠে তখন তারা একতাবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে মুখে তওহীদ, এক আল্লাহর ওয়াহদানীয়াতে বিশ্বাসী, এক রসুল (সা:), এক কেতাবে বিশ্বাসী বোলে দাবীদার তথাকথিত মুসলিমরা ঐ গায়রুল্লাহর শক্তির বিরুদ্ধে কখনই একতাবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ায়নি। আল্লাহর দেয়া দীনের বিরুদ্ধ শক্তিগুলিও যে ঐক্যবদ্ধ তা নয়, তারাও কেউ গণতন্ত্রে অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, কেউ জনগণের বিশেষ কোন শ্রেণীর সার্বভৌমত্বে, কেউ একনায়কত্বে, কেউ রাজতন্ত্রের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু ইসলামের বিরোধীতার প্রশ্নে তারা এক। আর এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসের দাবীদার মুসলিমরা এক হোয়ে দাঁড়াতে অসমর্থ। এরা অতি ধুমধামে নামায, রোযা, হজ্ব, প্রচুর নফল নামায, দাড়ী, টুপি, যেকের আসকার, সর্বপ্রকার এবাদতে এতো মশগুল যে, তাদের আল্লাহ যে বোলেছেন তোমরা সকলে একত্র হোয়ে আমার দেয়া দড়ি (অর্থাৎ দীন) আকড়ে ধর এবং নিজেরা বিচ্ছিন্ন হোয়োনা(সুরা আলে ইমরান -১০৩)। ও কথার কোন দাম দেবার সময় নেই। সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ একেবারে বুনিয়াদী প্রশ্নেই যারা বিভক্ত তারাও ইসলামের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হোয়ে দাঁড়ায়, আর যারা তার স্বরে আল্লাহর ওয়াহদানিয়াত ঘোষণা করেন- লা ইলাহ ইল্লাল্লাহর যিকর কোরে পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নষ্ট করেন, তারা সেই এক আল্লাহর নামে একতাবদ্ধ হোতে পারেন না। কী নিদারুণ পরিহাস। আকীদার বিকৃতির কি ঘৃণ্য পরিণতি। এ পরিণতিও সেই কোর’আন হাদীসের অর্থের অতি বিশ্লেষণের ফলে জাতির বহুধা বিভক্তি ও ভারসাম্যহীন আধ্যাত্মবাদের অন্তর্মুখীতার
পরিণতি, আকীদার বিকৃতি।

মুসলিম জাতির নেতৃত্বের কথা বোলছিলাম। আরও বলার দরকার আছে। কারণ ইহুদী খ্রীস্টান সভ্যতার গোলাম হোয়ে এই অন্ধ নেতৃত্ব তাদের যার যার দেশের অশিক্ষিত ক্ষুধার্ত্ত জনগণকে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তা অবশ্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। তারা অবশ্যই জান্নাতের পানে নিয়ে যাচ্ছেন না, একথা আহম্মকও বোলবে না। কারণ তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্যই হোচ্ছে উন্নত দেশ গুলির মত জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। সোজা কথায় উন্নত অর্থাৎ পাশ্চাত্য জাতি গুলির জীবন দর্শন অনুসরণ করা, যে দর্শন হোচ্ছে উদয়াস্ত কঠিন পরিশ্রম কোরে প্রচুর সম্পদ আহরণ কর ও প্রাণ ভরে জীবন ভোগ কর। এটা যে তারা কখনো পারবেন না তা কারণসহ পেছনে বোলে এসেছি। ঐ চেষ্টা কোরতে যেয়ে বিরাট অংকের টাকা ধার কোরে আজ এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন যে, তারা যদি উন্নয়নের কোন প্রচেষ্টা না কোরতেন, কোন টাকা ধার না কোরতেন তবে এই দেশ গুলির অর্থনৈতিক অবস্থা বর্ত্তমানের চেয়ে ভালো থাকতো । অন্ততঃ এখনকার মত প্রতিটি মানুষের মাথার উপর হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা থাকতো না। তর্কের খাতিরে যদি ধোরে নেই যে, বর্ত্তমান ‘মুসলিম’ দুনিয়ার নেতৃত্ব সফলকাম হোলেন অর্থাৎ তাদের দেশ গুলিতে পশ্চিমের উন্নত দেশ গুলির মত ধনী বানিয়ে দিলেন, তাহোলে কী হবে? ঐ দেশ গুলি উন্নত শুধু একটি দিক দিয়ে- বস্তুতান্ত্রিক দিক দিয়ে, ঘর-বাড়ী, গাড়ী, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, আরাম আয়েশের দিক দিয়ে, জীবন উপভোগের দিক দিয়ে। মানবজীবনের অপর দিকের প্রতি তারা অন্ধ। আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা ত্যাগ কোরে তারা নিজেরা জীবন বিধান তৈরী কোরে নিয়েছে। সেই একপেশে ভারসাম্যহীন জীবন বিধান, দীনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে বস্তুতান্ত্রিক ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানে উন্নতির ফল হিসাবে তারা আজ এমন ভয়াবহ অস্ত্র তৈরী কোরেছে যা দিয়ে সমস্ত মানব জাতিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলা যায়। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত নৈতিক অবস্থা আরও মর্মান্তিক। জাতীয় জীবন থেকে ধর্মকে নির্বাসন দেবার পর থেকে যে পতন আরম্ভ হোয়েছে তা এমন পর্য্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, আজ পাশ্চাত্যে পারিবারিক বন্ধন প্রায় অনুপস্থিত, যৌন নৈতিকতা ধরতে গেলে কিছুই নেই। চৌদ্দ পনের বছরের অবিবাহিতা মেয়েদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ জনের সতীত্ব নেই। প্রতি তিনটি সদ্য প্রসূত শিশুর মধ্যে একটা জারজ। এসব হিসাব তাদেরই করা, আমার নয়। খুন, জখম, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধের হার এখনও গরীব দেশ গুলির তুলনায় অনেক বেশী। প্রাচ্যের বিশেষ কোরে ‘মুসলিম’ দেশ গুলির বর্ত্তমান নেতৃত্ব উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছেন যার যার দেশের অশিক্ষিত সরল অজ্ঞ জনসাধারণকে নিয়ে ঐ আত্মাহীন নারকীয় সভ্যতার দিকে। আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো শান্তি, তাই এর নাম ইসলাম (শান্তি)। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিতে শান্তি আসবে না। তা আসলে আজ সবচেয়ে ধনী ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানে মহাশান্তি বিরাজ কোরত। তা কোরছে না। প্রতি রকমের জঘণ্য অপরাধে ডুবে আছে তো বটেই তার উপর যে কোন মুহূর্ত্তে পারমাণবিক বোমায় মৃত্যুর ভয়ে মানুষ ঘুমাতে পারছে না। ওদের কথা না হয় বাদ দিলাম, এই মুসলিম দুনিয়ায়ই একটা অংশ তো তেলের বদৌলতে পাশ্চাত্যের মত ধনী হোয়ে গেছে। তারা তো টাকা রাখবার জায়গা না পেয়ে তাদের মহামূল্যবান গাড়ী গুলিকে পর্য্যন্ত সোনার পাত দিয়ে মুড়ে রেখেছে। তাতে আল্লাহর কী হোয়েছে? রসুলাল্লাহর (সা:) বা কী হোয়েছে? যে জন্য মুসলিম জাতিরই সৃষ্টি হোয়েছে সেই উদ্দেশ্য অর্জন করাতো দূরের কথা, ঐ বিপুল সম্পদ দিয়ে, এলাকায় ও জনসংখ্যায় চল্লিশ গুণ বেশী হোয়েও ছোট্ট ইসরাইলের লাথি খেতে খেতে তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাহোলে বাকি মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্ব কোন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে পড়ি কি মরি হোয়ে ছুটছেন?

পাশ্চাত্যের ঋণ দেবার প্রস্তাবে এই নেতৃত্ব গদ গদ চিত্তে যে সোনার শেকল নিজেদের গলায় নিলেন এবং যার যার দেশের জনগণের গলায় পড়ালেন সে শেকল শুধু যে সুদের পর্বত তৈরী কোরে অর্থনৈতিক দাসত্ব চাপিয়ে দিয়েছে তাই নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ঐ শেকল কম প্রভাব বিস্তার করে নি। ঋনাবদ্ধ খাতকের জীবনে মহাজনের প্রভাব কতখানি তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যেরা সম্পূর্ণভাবে বুঝবে না। মহাজনকে খুশী রাখতে খাতককে কতদূর যেতে হয় তা যে কোন একজন খাতককে জিজ্ঞাসা কোরুন। ঋণগ্রস্ত এমন খাতককে বৃদ্ধ মহাজনের মন রক্ষার জন্য কিশোরী মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিতে হোয়েছে এমন খবর আমার মত অনেকেই খবরের কাগজে পড়েছেন। ঋণ রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়েও তাই। খাতক রাষ্ট্রগুলিকেও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মহাজন রাষ্ট্রলির বহুবিধ ইচ্ছাকে পূরণ কোরতে হয় তাদের খুশী রাখার জন্য। ঐসব বহুবিধ ইচ্ছার মধ্যে একটা অতি প্রয়োজনীয় হোচ্ছে এইসব গরীব খাতক দেশে খ্রীস্টধর্ম প্রচার। এটা এজন্য নয় যে, তারা অতি উৎকৃষ্ট খ্রীস্টান। উৎকৃষ্ট খ্রীস্টান তারা মোটেই নয়, উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক। ইতিপুর্বে যখন তারা সামরিক শক্তিতে প্রাচ্য অধিকার কোরে নিয়েছিলো তখন তাদের সামরিক বাহিনী গুলির পেছনে পেছনে এসেছিলো পাদরীর দল। পাশ্চাত্যের ঐ দখলকারী রাষ্ট্রগুলি ঐ পাদরীদের সর্বতোভাবে সাহায্য কোরেছে খ্রীস্টধর্ম প্রচার কাজে। তাদের প্রচার কাজে সরকারী ভাবে সাহায্য কোরেছে, তাদের জন্য স্কুল দিয়েছে, ঐসব স্কুলে ভর্ত্তি হতে বাধ্য করার জন্য দেশী বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ইত্যাদি বন্ধ কোরে দিয়েছে। তারপর রাষ্ট্রীয় পর্য্যায়ে আর্থিক সাহায্য তো আছেই। উদ্দেশ্য হোচ্ছে এই সব দেশের মানুষকে খ্রীস্টান বানিয়ে ফেলতে পারলে তাদের প্রভুত্ব চিরস্থায়ী হোয়ে যাবে। আর সবাইকে না পারলেও একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে ধর্মান্তরিত কোরতে পারলে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভাবে ঐ অংশ তাদের পক্ষে থাকবে। দুই শতাব্দী পর্য্যন্ত তারা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে, অধিকৃত দেশ গুলিতে খ্রীস্টধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য কিন্তু খুব বেশী কৃতকার্য হয় নি। এর বিস্তারিত বিবরণ এখানে সম্ভব নয়। এখানে যতটুকু প্রয়োজন সেটা হলো এই যে, এই অধিকৃত দেশ গুলিতে স্বাধীনতা দিয়ে চলে গেলেও সে সব দেশে তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ অক্ষুন্ন রাখা রাজনৈতিকভাবে প্রয়োজন। এইখানে ঐ ঋণের সোনার শেকল অত্যন্ত কাজে এসেছে। সংক্ষেপে ঔপনিবেশিক সময়ের চেয়ে আজ প্রাচ্যের এইসব দেশে খ্রীস্টান ধর্ম প্রচারকারীদের সংগঠন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে শিক্ষালয়, নতুন নতুন চার্চ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সব দিকে দিয়ে তাদের কর্মতৎপরতা গোলামী যুগের চেয়ে অনেক বেশী, অনেক সাফল্যমণ্ডিত। জনকল্যাণের নামে, ঝড় বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাহায্যের নামে তারা তাদের আসল কাজ কোরে যাচ্ছে, তাদের পেছনে তাদের রাষ্ট্রের আর্থিক সাহায্য তো আছেই আরও আছে কূটনৈতিক সাহায্য। অনেক দেশে খ্র্রীস্টান যাজকদের এবং তথাকথিত জনকল্যাণ সংস্থাগুলির আসল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতন লোকেরা বুঝে তার বিরুদ্ধে কাগজে কলমে অনেক লেখালেখিও কোরেছেন, পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে ওদের আসল মতলব কি। কিন্তু কোথাও কোন ফল হয় নি, হবেও না। কারণ গলায় ঋণের সোনার শেকল নিয়ে মহাজনের বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না, গেলে বিপদ আছে। অর্থাৎ প্রাচ্যের এই মন মগজ বিক্রিকরা নেতৃত্ব তাদের পূর্ব প্রভুদের পক্ষ হোয়ে তাদের যার যার দেশের মানুষদের খ্রীস্টান করার কাজে সাহায্য কোরছেন। ফলও হোয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলি যেদিন প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলি ছেড়ে যায় সেদিন এই দেশ গুলিতে খ্রীস্টানদের যে সংখ্যা ছিলো আজ তা থেকে অনেক বেশী। দু’টি বৃহত্তম মুসলিম দেশের নেতা শুধু যে নামাযী তাই নন, দুজনেই পীরের মুরীদ এবং নিয়মিত পীরের দরবারে হাযিরা দেন। এদের একজন জনসংখ্যার দিক দিয়ে দুনিয়ার বৃহত্তম মুসলিম দেশের প্রধান, প্রেসিডেন্ট। গত ১৯৭০ সনে তার দেশের মুসলিম জনসংখ্যা ছিলো শতকরা পচানব্বই (৯৫) জন। ১৯৮৬ সনে তা এসে দাঁড়িয়েছে শতকরা আশী (৮০) জনে। ঐ শতকরা ১৫ জন খ্রীস্টান হোয়ে গেছে। ঐ অতি উৎকৃষ্ট মুসলিম (বর্ত্তমান ইসলামের বিকৃত আকীদায় তাকে অবশ্যই অতি উৎকৃষ্ট মুসলিম বোলতে হবে, কারণ তিনি শুধু নামাযী ইত্যাদিই নন, তাসাওয়াফ অনুশীলনকারী মুরীদও) প্রেসিডেন্টের দেশে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করা নিষিদ্ধ, জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশনে ইসলামও খ্রীস্টধর্মের জন্য সমান সময় দেয়া হয় (লন্ডন থেকে প্রকাশিত মাসিক এরাবিয়া -১৯৮৬)। দীনের পুনর্জাগরণের জন্য যারা চেষ্টা করেন তাদের গ্রেফতার, জেল, বুলেট তো অন্যান্য মুসলিম দেশ গুলির মতই। দ্বিতীয় দেশটির সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই, কিন্তু অবস্থা যে প্রায় একই তাতে সন্দেহ নেই এবং ইনিও পীরের মুরীদ, নিয়মিত দরবারে হাজিরা দেন। প্রতি জুমায় ওয়াজ করেন, ইহুদী দাড়ীওয়ালা টুপি পড়া মুসল্লীরা নিবিষ্ট চিত্তে তা শোনে (ইনি বর্ত্তমানে ক্ষমতায় নেই, কারাগারে আছেন)। এর দেশেও আজ খ্রীস্টান সংখ্যা চল্লিশ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশী। এক কথায় ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রগুলি তাদের দু’শ বছরের সরাসরি শাসনে খ্রীস্টধর্ম প্রচারে যতখানি সাফল্য লাভ কোরতে পেরেছিলো তার চেয়ে বেশী সাফল্য লাভ কোরেছে নামাযী পীরের মুরীদ অতি উৎকৃষ্ট ‘মুসলিম’ নেতাদের মাধ্যমে।

বর্ত্তমান মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব যে মোশরেক ও মোনাফেক একথার আরো প্রমাণ চাই? আছে। আরো বহু প্রমাণ আছে। কিন্তু বই বহু বড় হোয়ে যাবে। এই নেতৃত্ব সম্বন্ধে আল্লাহ কি বোলছেন তা উল্লেখ কোরছি। আল্লাহ কোর’আনে বোলছেন- আল্লাহ যা নাযেল অর্থাৎ অবতীর্ণ কোরেছেন যারা তা অনুসারে আদেশ দেয় না তারা কাফের, যালেম এবং ফাসেক (সুরা আল মায়েদা – ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এই কথাটাকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাবার জন্য আল্লাহ কথাটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে তিনটি আয়াতে বোলেছেন, অর্থাৎ একই আয়াত বোলে শুধু শেষ শব্দটি এক আয়াতে কাফের দ্বিতীয় আয়াতে যালেম ও তৃতীয় আয়াতে ফাসেক শব্দ ব্যবহার কোরেছেন। যদিও আয়াত তিনটি ইহুদী ও খ্রীস্টানদের সম্বন্ধে বলা হোয়েছে কিন্তু উদ্দেশ্য যে বিশ্বজনীন এবং মুসলিমদের জন্যেও বুনিয়াদী নীতি হিসাবে প্রযোজ্য তা মিশরের মোহাম্মদ কুতুবসহ বহু পণ্ডিত আলেম এবং মোফাস্সিররা স্বীকার কোরেছেন। কারণ শেষ নবীর (সা:) মাধ্যমে শেষ জীবন ব্যবস্থা, দীন প্রেরিত হবার পর পূর্ববর্ত্তী গুলো মনসুখ, বাতিল হওয়ায় “আল্লাহ যা নাযেল অবতীর্ণ কোরেছেন” বোলতে এখন শুধু কোর’আনকেই তিনি বোঝাচ্ছেন। এই আয়াত তিনটি জাতীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে নাযেল হোয়েছে। কারণ আল্লাহ শব্দ ব্যবহার কোরেছেন হুকুম যে শব্দটি আদেশ ও বিচার উভয়ই বুঝায়। সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায় যে আদেশ ও বিচার অবশ্যই নেতৃত্বের হাতে, নেতৃত্বের ব্যাপার। অর্থাৎ নেতৃত্ব ও শক্তি ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরও যারা আল্লাহ যা নাযেল কোরেছেন অর্থাৎ কোর’আন হাদীস মোতাবেক আদেশ দেয় না, সেই মোতাবেক আদালতে বিচার করে না ও সর্ববিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় না তারা কাফের, যালেম ও ফাসেক। অর্থাৎ বর্ত্তমান মুসলিম দুনিয়ার নেতৃত্বকে কাফের, যালেম ও ফাসেক (আল্লাদ্রোহী) একথা আমি বোলছি না, আল্লাহ বোলছেন। ঐ হুকুম অর্থাৎ আদেশ ও বিচার যে ইহুদী ও খ্রীস্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এই উম্মতের জন্যও তা আল্লাহ বোলছেন ঐ তিন আয়াতের পরই অর্থাৎ ৫১ নং আয়াতে। ঐ আয়াতে আল্লাহ তার রসুলকে (সা:) আদেশ কোরেছেন এই কেতাব মোতাবেক আদেশ ও বিচার কর(সুরা আল মায়েদা -৫১)। এতো গেলো আল্লাহর কথা। তার শেষ নবী (সা:) বোলছেন যারা (তার তথাকথিত উম্মতের মধ্যে) অন্য যে জাতির অনুকরণ অনুসরণ কোরবে তাদের ঐসব জাতির মধ্যে গণ্য করা হবে এবং তাদের হাশরও তাদের সাথেই হবে (হাদিস ইবনে ওমর থেকে আহমদ, আবুদাউদ, মেশকাত)। কতক গুলি ব্যক্তিগত নিয়ম কানুন আর কতক গুলি প্রাণহীন অনুষ্ঠান ছাড়া জাতীয় সব কিছুতেই অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়েই আল্লাহর সরাসরি আদেশ নির্দেশ অমান্য কোরে বর্ত্তমান নেতৃত্ব ও জনসাধারণ পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ কোরছে। আল্লাহ ও তার রসূলের (সা:) কথানুযায়ী এরা কাফের, যালেম ও ফাসেক এবং হাশরের দিন ইহুদী ও খৃষ্টানদের দলভুক্ত হোয়ে দাঁড়াবে যাদের তারা প্রাণপনে নকল কোরছে। শুধু তাই নয়। আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা দীন প্রতিষ্ঠা না করার ফলে যে অবিচার, অন্যায়, চুরি, খুন, যখম, অনাহার, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ইত্যাদি মানুষের মধ্যে সংঘটিত হোয়েছে, হোচ্ছে, হবে এর প্রত্যেকটির জন্য হাশরের দিন দায়ী হবে এই নেতৃত্ব যেটা ক্ষমতা হাতে পেয়েও এই দীন প্রতিষ্ঠা করে নি, যা কোরলে এ সমস্ত লুপ্ত হোয়ে যেয়ে মানুষ শান্তিতে (ইসলামে) বাস কোরতে পারতো।

এই অবস্থায় স্বভাবতই যে প্রশ্নটি মনে আসে তাহলো এই যে, পাশ্চাত্যের হাতে গড়া শ্রেণীটির হাতে শাসন ক্ষমতা দেওয়া হলো এবং তারা তাদের অসীম হীনমন্যতায় আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থাকে ত্যাগ কোরে তাদের পুর্ব প্রভুদের সমস্ত রকম ব্যবস্থাই অক্ষুন্ন রেখে তাদের পক্ষ হোয়ে শাসন চালিয়ে যেতে লাগলেন আজ ৩০/৪০ বছর ধোরে, এর বিরুদ্ধে দুনিয়ার বিভিন্ন ‘মুসলিম দেশ গুলিতে অভ্যূত্থান, বিদ্রোহ হলো না কেন? আল্লাহর কথা মোতাবেক কাফের, যালেম ও ফাসেক নেতৃত্ব বহাল তবিয়তে তাদের প্রভুদের কাছ থেকে শেখা কুফর ও শেরক শাসন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের উপর যারা অকপটে শুদ্ধ হৃদয়ে আল্লাহ রসুল ও ইসলামে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে তারা উম্মতে মোহাম্মদী। এ অদ্ভূত অবিশ্বাস্য অবস্থার কারণ আংশিক ভাবে পেছনে বোলে এসেছি। আল্লাহর ও রসূলের (সা:) আদেশ অমান্য কোরে মুফাস্সির, ফকীহ ইত্যাদিরা যখন এই সহজ সরল দীন (সেরাতুল মোস্তাকীম) কে বিশ্লেষণ কোরতে কোরতে এক জটিল দুর্বোধ্য দীনে পরিণত কোরলেন তখন ঐ কাজের ফলে এই জাতি বহু মযহাবে ও ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে যেয়ে এক নিবীর্য, অক্ষম, অপদার্থে পরিণত হলো। জাতি হোক, গোষ্ঠী হোক, পরিবার হোক, একটা সামরিক বাহিনী হোক, যাই হোক বিভক্তি ও অনৈক্য আসলেই সেটা অকেজো হোয়ে যায়, এটা চিরন্তন সত্য, এর কোন ব্যতিক্রম নেই। তারপর ভারাসাম্যহীন সুফী মতবাদ ঐ অক্ষম স্থবির জাতির মধ্যে অনুপ্রবেশ কোরে ওর আকীদাই একেবারে বিপরীতমুখী অর্থাৎ অন্তুর্মূখী কোরে দিলো। দু’টো মিলে এই একদা লৌহকঠিন ঐক্যবদ্ধ দুর্দম প্রাণশক্তিতে ভরপুর দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি একটি অন্তর্মূখী, বহুধা বিচ্ছিন্ন স্থবির, কাপুরুষ জনসংখ্যায় পরিণত হলো। এর যে অংশটা বিগত পাশ্চাত্য প্রভুদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত সে অংশ আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়। সেটা জনগণের, জনগণের এক বিশিষ্ট শ্রেণীর, একনায়কের, রাজা-বাদশাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, সুতরাং বর্ত্তমান নেতৃত্বের সহযোগী। ঐ অংশটা বাদ দিলে থাকে দুটি অংশ। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ অশিক্ষিত, নিরক্ষর, এও জানে না ঐও জানে না, নিদারুণ দারিদ্রের মধ্যে বাস কোরে কোনমতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টাতেই তাদের সারাজীবন পার হোয়ে যায়। অন্য অংশটি হোচ্ছে অতি মুসলিম। এ অংশটি নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ছাড়াও প্রচুর নফল এবাদত করেন, পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে দৌঁড়ান, হাতে তসবিহ আছে, দাড়ী টুপির তো কথাই নেই, ছোট খাট খুটিনাটি মসলা মাসয়েল তারা অতি নিখুঁতভাবে পালন করেন। তাদের আল্লাহ ব্যক্তিগত আল্লাহ। তারা অতি নিষ্ঠার সাথে সুন্নাহ পালন করেন কিন্তু শুধু ব্যক্তিগত সুন্নাহ। তাদের দীন সম্বন্ধে আকীদা আজ অন্যান্য ধর্মের আকীদার মত অর্থাৎ ধর্ম নেহায়েত ব্যক্তিগত ব্যাপার- আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ। নেতারা কেমন কোরে দেশ শাসন কোরছেন, এ শাসনের ফলে মানুষের উপর কেমন অন্যায়, অবিচার, যুলুম হোচ্ছে এসব ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। এক কথায় কার্ল মার্কস যে আফিমের কথা বোলেছেন এরা সেই আফিম খাচ্ছেন। এই অংশটা তাদের বিকৃত আকীদায় একথা বুঝতে অসমর্থ যে, তাদের ঐ অতি এবাদত, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এসব কিছুই আল্লাহ আর রসূলের কাছে গৃহীত হবে না। এই নিশ্চলতা, এই স্থবিরত্বের জন্যই ঐ বর্ত্তমান নেতৃত্ব নিরুপদ্রবে তাদের কুফরী ও মোশরেকী শাসন চালিয়ে যেতে পারছেন। ‘মুসলিম’ দুনিয়ার নেতৃত্ব যেমন কুফরী ও শেরক ব্যবস্থা গায়রুল্লাহর জীবন-ব্যবস্থাকে চালু করার জন্য কাফের ও মোশরেক, তেমনি ঐ ব্যবস্থাকে স্বীকার কোরে নেওয়ার জন্য জনসাধারণও কুফর ও শেরকের মধ্যে ডুবে আছে। শেষ ইসলামকে সঠিকভাবে যিনিই বুঝবেন তিনিই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে, রাষ্ট্রীয় শক্তিবিহীন ইসলাম ইসলামই নয়। কারণ এর প্রথম ও অতি প্রয়োজনীয় অংশটুকু জাতীয় শরিয়াহ অর্থাৎ এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আইন ব্যবস্থা বিচার দণ্ডবিধি ইত্যাদি ফরদ গুলি রাষ্ট্রীয় শক্তি ছাড়া প্রয়োগ সম্ভব নয়। যে রাষ্ট্রে আল্লাহর ঐ সরাসরি (Direct) আদেশ গুলি প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠিত নয় সে রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্রতো নয়ই, মুসলিম রাষ্ট্রও নয়। সে রাষ্ট্রের জনগণ যদি শতকরা একশ’ জনই তাহাজ্জুদী হয় তবুও নয়, কারণ তারা সমবেতভাবে তাদের নেতাদের বাধ্য করেন নি আল্লাহর আদেশ জাতীয়ভাবে বাস্তবায়িত কোরতে। অমুসলিম খ্রীস্টান ইউরোপিয়ান শাসকরা যখন শাসন কোরত, অর্থাৎ এই তথাকথিত মুসলিম জাতি গুলি যখন তাদের দাস ছিলো তখন তারা যতটুকু ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ কোরত অর্থাৎ শুধু ব্যক্তিগত দিকটা, এখন স্বাধীন হবার পরও ততটুকুই করে, তার চেয়ে একটুকুও বেশী নয়। খ্রীস্টানদের অধীনে দাস অবস্থায় যতটুকু ‘ধর্মকর্ম’ করার অধিকার ছিলো আজও তাই আছে, বেশী নয়। বিদেশী প্রভুরা দয়া কোরে তাদের ঘৃণিত দাসদের নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ব্যক্তিগত সবরকম ‘ধর্মকর্ম’ই কোরতে দিতো, দেশী প্রভূরাও দেয়। সাদা বিদেশী প্রভূরা তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আইন ব্যবস্থা বিচার দণ্ডবিধি ইত্যাদি ব্যাপারে ধর্মকে আনতে দিতো না, কালো, বাদামী প্রভুরাও দেয় না। তখনকার দাসত্ব আর এখনকার স্বাধীনতা এর মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে কোন তফাৎ নেই। দাসত্বের সময়ের আর এখনের মধ্যে তফাৎ শুধু এইটুকু যে, ঐ সময় তাদের শাসনের গুণে যে জানমালের, সম্মানের যে নিরাপত্তা ছিলো আজ তার শতকরা দশভাগও নেই।

Leave a Reply