You are currently viewing সভ্যতার সিদ্ধান্ত সূত্র

সভ্যতার সিদ্ধান্ত সূত্র

পূর্বের পোস্ট গুলোতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে এই মহা বিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। এখন আমরা এটাও জানি যে, আমাদের বর্তমান সভ্যতার সিদ্ধান্ত সূত্র হচ্ছে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, তার মানুষ কিভাবে তার জীবন পরিচালনা করবে তাঁরও কোন দিকনির্দেশনা স্রষ্টার পক্ষ থেকে নেই ফলে আমরাই আমাদের জীবন ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে পারি। আমরা এই পোস্ট এবং পরবর্তী পোষ্টগুলোতে এর বিপরীত একটি সভ্যতার নিয়ে আলোচনা করবো।

স্রষ্টার অস্তিত্ব শ্বীকার কোরে নেওয়া হলো। প্রশ্ন হোচ্ছে আমরা কি তাকে ধারণা কোরতে পারি? তিনি নিজে বোলেছেন- না, তোমরা পারো না। কেন পারি না? পারি না- কারণ আমরা সৃষ্ট, আমাদের সমস্তশক্তি সীমিত। ধারণার শক্তিও সীমিত, স্রষ্টা অসীম। স্রষ্টাকে কেন, এই মহাসৃষ্টির একটা সামান্য অংশকেও আমরা ধারণায় আনতে পারি না। স্থান ধারণা কোরতে চেষ্টা কোরলে মোটামুটি আমরা কয়েক মাইলের দুরত্ব ধারণা কোরতে পারি। আমাদের পৃথিবীরই এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের দূরত্ব চিন্তা কোরতে গেলে মাথা গুলিয়ে যেতে চায়। আর এই সৌর জগত, তারপর গ্যালাক্সি তারপর মহাশূণ্যের অগণ্য আলোক বর্ষের দূরত্ব ধারণা করা মানুষের অসাধ্য। ঠিক তেমনি সময়, সময় সম্বন্ধে ধারণা কোরতে চেষ্টা করলে আমরা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের সময় আমাদের ধারণার মধ্যে আনতে পারি। একটা সম্পূর্ণ মাসের সময়টাও আমার মনে হয় কেউ সম্যকভাবে ধারণার ভেতর আনতে পারবে না। বিগত এবং ভবিষ্যতের কোটি কোটি বৎসরের সময় ধারণার মধ্যে আনা অসম্ভব। যদি সৃষ্টির একটা অতি, অতি ক্ষুদ্র অংশই মানুষের ধারণা করার শক্তি না থাকে তবে সেই সৃষ্টির স্রষ্টাকে ধারণা করা যে যাবে না তা অতি পরিষ্কার।

তাহলে পৃথিবীতে মানব জাতির যে চিরন্তন সমস্যা অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তারক্তি, না কোরে শান্তিতে বসবাস করার পথ খুঁজে বার কোরতে যেয়ে প্রথম যে প্রশ্নের সমাধান অর্থাৎ স্রষ্টা আছেন কিনা, এর জবাব আমরা এখন নিশ্চয়ই ধোরে নিতে পারি যে- স্রষ্টা, আল্লাহ, আছেন। এখন থেকে এ কথাটা সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে যে স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং তার গুণাবলী, সিফতসমূহ হবে, সমস্ত চিন্তাধারার ভিত্তি, সিদ্ধান্ত সূত্র। এই সিদ্ধান্ত-সূত্র থেকে যেখানেই পদস্খলন হবে সেখানেই সিদ্ধান্ত ভুল হবে চিন্তা-ধারার মধ্যে যেখানেই এই ভিত্তিকে ভুলে যাব সেখানেই পথ হারিয়ে যাব এবং ভুল সিদ্ধান্তে যেয়ে পৌঁছব। উদাহরণ স্বরুপ ধরা যাক, আজ-কালকার মহাশূন্য গবেষণা বা যাত্রা। যে সব অংক কোষে মানুষ ঠিকমত চাঁদে গেছে, সেখান থেকে ফিরেও এসেছে- সে সব হিসাবপত্রের মূল ভিত্তি, সিদ্ধান্ত-সূত্র হলো এলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব। যে কোন মহাশুন্য বিজ্ঞানীকে প্রশ্ন কোরে দেখুন যে এই আপেক্ষিক তত্ত্ব বাদ দিয়ে হিসাব কোরলে কি ফল হবে? তার সোজা জবাব হবে- সমস্ত বিপর্যস্ত হোয়ে যাবে। এই যে প্রায় কয়েক হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই যে রকেট গুলো মঙ্গলগ্রহ, শুত্রগ্রহ পর্যন্ত ঠিকমত পৌঁছে পৃথিবীতে নানারকম বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠাচ্ছে- এর কোন কিছুই সম্ভব হোত না যদি আইনস্টাইনের E=mC2 কে ভিত্তি হিসাবে না নেয়া হোত। অর্থাৎ যে কোন হিসাবপত্র বা চিন্তাধারাতে আসল ভিত্তি সিদ্ধান্ত সূত্র কে যখনই ভুলে যাওয়া বা অগ্রাহ্য করা হবে, তখনই হিসাবে বা চিন্তাধারাতে ভুল হোতে বাধ্য। আপেক্ষিক তত্বের উপর নির্ভর না কোরে হিসাব কোরে চাঁদ অভিমুখে রকেটে চড়ে রওনা হোলে যেমন মানুষ চাঁদে না পৌঁছে মহাশূণ্যে হারিয়ে যাবে, তেমনি স্রষ্টার অস্তিত্বকে হিসাবে না রেখে মানুষ তার জীবন ব্যবস্থা নির্দ্ধারণ বা তৈরী কোরে নিলে সে অবশ্যম্ভাবীরূপে বিপর্যস্ত হবে- যেমন আজ হোচ্ছে।

ফুটনোট: ১.কোর’আন- সূরা আল-আনাআম ১০৩।

Leave a Reply