You are currently viewing সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগের পরিনতি
সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগের পরিনতি

সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগের পরিনতি

সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগের পরিনতি

এই পচন ক্রিয়া যে কয়েকশ’ বছর ধরে চোললো এই সময়টায় কিন্তু এই উম্মাহর শত্রুরা বোসে ছিলো না। তারা ক্রমাগত চেষ্টা কোরে চোলছিলো এই জাতিকে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু এই উম্মাহর জনক মহানবী (সা:) এর মধ্যে যে বিপুল পরিমাণ সামরিক গুণ ও চরিত্র সৃষ্টি কোরে দিয়েছিলেন তার প্রভাবে ইউরোপীয়ান শক্তি গুলি কোন বড় রকমের বিজয় লাভ কোরতে পারে নি। কিন্তু ফকীহ, মুফাস্ফির ও সুফীদের প্রভাবে উম্মাহর আকীদা বিকৃত হোয়ে যাবার ফলে পচন ক্রিয়া আরও যখন ভয়াবহ হোয়ে উঠলো তখন আর এই জাতির শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার শক্তি রোইল না। মনে রাখতে হবে, সমস্ত ফকীহ, মুফাস্সির ও পীর দরবেশদের আবির্ভাব হয় এই সময়কালেই (Period)। এদের মতবাদের বিষ কেমন কোরে এই উম্মাহকে ইউরোপী খ্রীস্টানদের ক্রিতদাসে পরিণত কোরেছে তার একটি মাত্র উদারহণই বোধহয় উন্মুক্ত মনের মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে।

শেষ জীবন ব্যবস্থাকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে অর্থাৎ রসুলাল্লাহর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ কোরে এই দীনের মসলা-মাসায়েলের সুক্ষ বিশ্লেষণ কোরে, নানা মাযহাব ফেরকা সৃর্ষ্টি কোরে এই জাতিটাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করার কাজে যখন পণ্ডিতরা ব্যস্ত, শাসকরা যখন মহা জাকজমক, শান-শওকতের সঙ্গে রাজত্ব করায় ব্যস্ত তখনও এই জাতির সমস্ত মানুষ মরে যায় নি। মহানবী (সা:) তার শিক্ষায় যে সামরিক প্রেরণা উম্মাহর বুকে প্রোথিত কোরে দিয়েছিলেন, যা বটগাছের শেকড়ের মত স্থান কারে নিয়েছিলো, তা তখনও সম্পূর্ণ মরে যায় নি। কিন্তু ঐ সামরিক প্রেরণা তখন পরিবর্ত্তন হোয়ে আত্মরক্ষামূলক (Defensive) হোয়ে গেছে। এই জাতির সীমান্ত তখন উত্তরে আটলান্টিকের তীর থেকে ভূমধ্য সাগরের তীর ধরে উরাল পর্বত মালা পর্য্যন্ত, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে উত্তর আফ্রিকার আটলান্টিকের তীর, পূর্বে পুর্ব ভারত। এর মধ্যে শত্রুর আক্রমণের আশংকা ছিলো শুধুমাত্র ইউরোপের দিক থেকে। কারণ অন্য দিকে গুলোয় এমন কোন শক্তি ছিলো না যেটা এই জাতিকে আক্রমন করার সাহস করে। এই উত্তর সীমান্তে আক্রমণ কোরতে হোলে শত্রুকে ভূমধ্যসাগর পার হোয়ে এপারে এসে নামতে হবে। এই উত্তর সীমান্ত কে রক্ষা করার জন্য মুসলিম জাতি মরক্কো থেকে ভূমধ্য সাগরের উপকূল বরাবর পূর্বদিকে পারস্য পর্য্যন্ত অসংখ্য ছোটবড় দুর্গ তৈরী কোরেছিল। এ দুর্গ গুলির নাম দেয়া হোয়েছিলো রিবাত। শব্দটি নেয়া হোয়েছিলো কোর’আনের সূরা আনফালের ৬০নং আয়াত থেকে যেখানে আল্লাহ উম্মাতে মোহাম্মদীকে আদেশ কোরছেন শত্রুর মোকাবিলার জন্য তোমরা যথাসাধ্য সামরিক সরঞ্জাম, অশ্ববাহিনী ইত্যাদি একত্র কোরে সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক(সূরা আল আনফাল -৬০) । এই প্রস্তুতির স্থানটাকে আল্লাহ কোর’আনে রিবাত বোলেছেন- যার অর্থ হলো সামরিকভাবে একটি সুরক্ষিত স্থান। এই রিবাত গুলিতে একটি কোরে নিরীক্ষণ মঞ্চ (Watch tower) থাকতো। শত্রু আক্রমণ কোরলে তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে দুর্গের ভেতরে ও আশেপাশের স্থানীয় লোকদের সতর্ক কোরে দেওয়া ও নিজেরা শত্রুদের প্রতিরোধ করা ছিলো এই দুর্গ বা রিবাত গুলির উদ্দেশ্য। তখনকার দিনে এখনকার মতো পাশ্চাত্যের অনুকরণে আলাদা সামরিক বাহিনী (Standing Army) ছিলো না, গোটা জাতিটাই, উম্মাহটাই ছিলো একটা বাহিনী, প্রত্যেক মুসলিম একটি সৈন্য। তাই যেখানে যে রিবাত তৈরী করা হোয়েছিলো সেখানকার আশেপাশের লোকেরা দল বেঁধে পালাক্রমে ঐ রিবাতে বাস করতেন এবং শত্রুর আক্রমণ আসে কিনা তা লক্ষ্য করতেন। যে যতদিন সম্ভব ঐ দুর্গ গুলিতে কাটাতে চেষ্টা কোরেছেন। এমনও দেখা গেছে কেউ কেউ বছরের পর বছর রিবাতে সামরিক জীবন যাপন কোরেছেন। রিবাত শব্দটি যেমন কোর’আন থেকে নেয়া হোয়েছিলো তেমনি মহানবীর (সা:) বাণী, “একরাত সীমান্ত প্রহরা দেয়া হাজার বছর নফল এবাদতের সওয়াবের সমান(হাদীস- ওসমান (রা:) থেকে তিরমিযি, মেশকাত), এই মুজাহীদদের প্রেরণার কারণ ছিলো। এই রিবাত গুলির মধ্যে এরা প্রহরীর কাজ কোরতেন, কুচকাওয়াজ কোরতেন, অস্ত্র ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতেন। অবশ্যই সালাত, সওমও পালন কোরতেন ফরদ হিসাবে। তাছাড়া এ জাতির সালাত তো সামরিক কুচকাওয়াজেরই অন্য সংস্করণ। উত্তর আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরের উপকুল বরাবর এই বহুসংখ্যক রিবাত গুলির সতর্ক প্রহরা ও প্রতিরোধের মুখে খ্রীস্টান শত্রু বহুবার আক্রমণ কোরেও মুসলিমদের কাবু কোরতে পারে নি, পরাজিত হোয়ে পালিয়ে গেছে। ইসলামের প্রথম অর্থাৎ গতিশীল (Dynamic) যুগ (মহানবীর (সা:) কথিত ৬০/৭০ বছর) শেষ হোয়ে যাবার পর থেকে খ্রীস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীরও পর পর্য্যন্ত এই কয়েকশ’ বছর সীমান্ত রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ এই মুজাহিদরা অস্ত্র হাতে এই পতনোম্মুখ ও পচনশীল জাতিকে রক্ষা কোরেছেন।

একদিকে ঐ মুজাহিদরা কোর’আন ও সুন্নাহর আদর্শে অনুপ্রাণিত হোয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে জাতিকে রক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছেন সীমান্তে, অপরদিকে জাতির ভেতর পচনক্রিয়া দ্রুত প্রসার লাভ কোরছে। যথাসময়ে এই পচনক্রিয়া ঐ রিবাত লাইনেও প্রবেশ করলো। প্রবেশ করলো লাইনের পূর্ব প্রান্তে পারস্য দেশের দিক থেকে বিকৃত তাসাওয়াফরূপে। কিছু দিনের মধ্যেই ঐ রিবাত গুলি দুর্গ থেকে বোদলে হোয়ে গেল সুফীদের আশ্রম আর রিবাত গুলির মুজাহিদরা হোয়ে গেলেন দরবেশ, সুফী। এমনকি এ গুলির আরবী নাম রিবাত পর্য্যন্ত বোদলে হোয়ে গেলো ফারসী শব্দ খানকাহ। এরপর কী হলো তা ইতিহাস। এরপর শত্রু আক্রমণ কোরতে এসে কোন বাধার সম্মুখীন হলো না কারণ তখন তারা মুখোমুখী হলো তলোয়ার হাতে মুজাহিদদের নয়, তসবিহ হাতে খানকাহবাসী, মঠবাসী সুফীদের। দু’চারটি জায়গা ছাড়া সমস্ত মুসলিম পৃথিবী শত্রুর পদানত দাসে পরিণত হলো। মুজাহিদদের তলোয়ার যা কয়েক শতাব্দীরও বেশী রক্ষা কোরেছিল, সুফীদের আধ্যাত্মিক শক্তি ও তসবিহ তা রক্ষা কোরতে পারলো না(সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন- পৃ: ৩৯৮)।

এছাড়া এই সময়কালের মধ্যে এই জীবন ব্যবস্থার ও এই উম্মাহর আরেকটি ভয়ংকর ক্ষতি করা হলো। চুলচেরা বিশ্লেষণের ফলে যে অনৈক্য ও ফেরকা মাযহাব সৃষ্টি হলো তা ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ লুপ্ত হোয়ে যেয়ে আবার আগের মত কঠিন ঐক্য এই উম্মাহর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে- যখন এই উম্মাহ আবার তার প্রকৃত আকীদা ফিরে পাবে। বিকৃত তাসাওয়াফের অন্তমুর্খী চরিত্রের ও সেরাতুল মোস্তাকীম ছেড়ে দিয়ে দীনের অতি বিশ্লেষণের বিষময় ফল উপলব্ধি কোরে উম্মাহ ইনশাল্লাহ আবার একদিন সেরাতুল মোস্তাকীমের সহজ, সরল রাস্তায়, দীনুল কাইয়্যেমাতে অর্থাৎ তওহীদে ফিরে আসবে। কিন্তু এখন যে ক্ষতির কথা বোলছি সে ক্ষতির পূরণ কঠিন হবে। সেটা হলো এই, এই সময়কালের পণ্ডিত, ফকীহ, মুফাস্সির মোহাদ্দিসরা যে অক্লান্ত ও অপরিসীম পরিশ্রম কোরেছেন এই দীনের কাজে, তা পড়লে, চিন্তা কোরলে বিশ্বয়ে অবাক হোয়ে যেতে হয়। বিশেষ কোরে মোহাদ্দিসরা রসুলাল্লাহর (সা:) হাদীস সংগ্রহ ও যাচাই কোরতে যে অধ্যাবসায়, পরিশ্রম আর কোরবানী কোরেছেন তার তুলনা মানুষের ইতিহাসে আর নেই। কিন্তু এরা সবাই বিশ্বনবীর (সা:) জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় যে ভাগটি সেটাকে যর্থার্থ গুরুত্ব দেন নি, সেটা হলো মহানবীর (সা:) জীবনের সামরিক ভাগ। অবশ্য এটাকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে পারেন নি কারণ কোর’আনে স্বয়ং আল্লাহ যে তার নবীকে (সা:) সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন ব্যবস্থা, দীনকে প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়েছেন(সূরা আল ফাতাহ ২৮, আত তওবা ৩৩, সূরা আস-সাফ ৯)। এই উম্মাহকে যে আদেশ দিয়েছেন সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে, যে পর্য্যন্ত না পৃথিবী থেকে যুলুম, অত্যাচার, অশান্তি আর রক্তপাত দূর হোয়ে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠিত হয়(সূরা আনফাল-২২-২৩) এ গুলো তো আর বাদ দেয়া সম্ভব নয়। তারপর বিশ্বনবীর (সা:) জীবনী লিখতে গেলে তিনি যে সমস্ত জেহাদে, কিতালে এবং গাযওয়াতে (যুদ্ধ) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সে সব লিখতেই হোয়েছে। কিন্তু লিখলেও তারা সে গুলির প্রাধান্য দেন নি, প্রাধান্য দিয়েছেন তার জীবনের অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার গুলোয়। যে মানুষটির জীবনের মাত্র নয় বছরের মধ্যে আটাত্তরটি যুদ্ধ হোয়েছে যার সাতাশটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার মধ্যে নিজে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ কোরেছিলেন নয়টিতে, সাংঘাতিকভাবে যখম হোয়েছিলেন আর বিভিন্ন দিকে সামরিক অভিযান পাঠিয়েছিলেন পয়ত্রিশটি, যে গুলির সমরনীতি এবং ব্যবস্থাপনা তাকেই কোরতে হোয়েছিল, সে মানুষের জীবনটাকে প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন যোদ্ধার জীবন বোলতে আপত্তির কোন কারণ আছে? প্রতিটি যুদ্ধের আগে কত রকম প্রস্তুতি নিতে হোয়েছে। অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবস্থা, সে গুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা, শত্রুপক্ষের অবস্থান ও চলাচল, তাদের সংখ্যা ও অস্ত্র শস্ত্রের সংবাদ (Intelligent) শত্রুর ও নিজেদের রসদ সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি কত রকমের কত বন্দোবস্ত কোরতে হোয়েছে, তার উপর প্রতি যুদ্ধের বিভিন্ন রকমের সমস্যা উদ্ভুত হোয়েছে। সে গুলির সমাধান কোরতে হোয়েছে এই ব্যাপারে ঐ সময়ের পণ্ডিতদের কাছ থেকে আমরা এখন যে তথ্য পাই তা অন্যান্য বিষয়ের তথ্যাদির তুলনায় অতি সামান্য। অথচ যাকে অত গুলি যুদ্ধ কোরতে হোয়েছিলো তার সম্পর্কে লিখতে গেলে তার সামরিক জীবনের খুঁটিনাটিই মুখ্য হোয়ে দাঁড়াবার কথা। কিন্তু হোয়েছে উল্টো। মহানবীর (সা:) ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি কম প্রয়োজনীয় ব্যাপার গুলোর পুংখানুপুংখ বিবরণ তাদের লেখায় আছে কিন্তু তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক সংগ্রামের দিক এত কমস্থান পেয়েছে যে, মনে হয় তারা এটাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা কোরেছেন।

এর কারণ আছে। এই ফকীহ, মুফাস্সির, মোহাদ্দিস এরা সবাই আবির্ভুত হোয়েছিলেন এই উম্মাহ তার নেতার (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠা কোরে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করার সুন্নাহ ত্যাগ করার পর। এই উম্মাহ সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য তখন তাদের সম্মুখ থেকে অদৃশ্য হোয়ে গেছে, আকীদা বিকৃতি হোয়ে গেছে। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হারিয়ে গিয়েছিলো বোলেই তো তারা সংগ্রাম ত্যাগ কোরে খাতা কলম নিয়ে ঘরে বোসেছিলেন এই দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরতে, আরেক দল এসবও কিছু না কোরে খানকায় ঢুকে তাদের আত্মার ঘষামাজা কোরতে শুরু কোরেছিলেন, নেতার (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ সংগ্রাম মুষ্ঠিমেয় লোক ছাড়া কারোরই সম্মুখে ছিলো না। সুতরাং তারা যে ঐ সংগ্রাম সম্বন্ধে নিরুৎসুক, অনাগ্রহী হবেন তা স্বাভাবিক। তাই তাদের সারাজীবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের, অসাধারণ অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতে যে দীন, জীবন ব্যবস্থা জনসাধারণের সম্মুখে উপস্থাপিত হলো তাতে বিশ্বনবীর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহর বিবরণ অতি সামান্য, তার ব্যক্তিগত জীবনের কম প্রয়োজনীয় অভ্যাসের বিশদ বিবরণ, দীনের গুরুত্বহীন ব্যাপার গুলির অবিশ্বাস্য বিশ্লেষণ। জন সাধারণের মনে দীন সম্বন্ধে আকীদা বোদলে যেয়ে ঐ রকম হোয়ে গেলো।

এই যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হোয়ে জাতি কয়েকশ’ বছর কাটালো এই সময়টাতে পণ্ডিতদের ফতোয়াবাজী আর সুফীদের অন্তর্মুখী সাধনা খুব জোরে শোরে চোলছিলো। কাজেই পচনক্রিয়াও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিলো সমস্ত জাতির দেহময়। কিন্তু ওর মধ্যেও দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে যাদের মনে প্রকৃত দীনের আকীদা ঠিক ছিলো তারা তাদের কাজ কোরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ক্রমে ঐ পচনক্রিয়া জাতিকে এমন অবস্থায় নিয়ে এলো যে এর মধ্যে আর ফতোয়াবাজী ও তসবিহ টপকানো ছাড়া প্রায় আর কিছুই অবশিষ্ট রোইলো না। বিজ্ঞান, চিকিৎসা, রসায়ন, অংক ইত্যাদি সর্বরকম জ্ঞান থেকে এ জাতি বঞ্চিত হোয়ে এক অশিক্ষিত অন্ধ জাতিতে পরিণত হলো। অন্যদিকে জাতির স্রষ্টা বিশ্বনবী (সা:) যে সামরিক প্রেরণায় একে এমন এক দুদ্ধর্ষ, অজেয় জাতিতে পরিণত কোরেছিলেন যার সামনে বিশ্ব শক্তি গুলো পর্য্যন্ত ঝড়ের মুখে শুকনো পাতার মত উড়ে গিয়েছিলো, সে প্রেরণাও কর্পুরের মত উড়ে গিয়ে এক অন্তর্মুখী কাপুরুষ জাতিতে পরিণত হলো। যে বিজ্ঞানের ও প্রযুক্তির চর্চা কোরে, গবেষণা কোরে এই জাতি পৃথিবীর জ্ঞানকে সম্মুখে অগ্রসর করিয়ে দিয়েছিলেন সেই জ্ঞান এই জাতির শত্রু ইউরোপের খ্রীস্টান জাতি গুলি লুফে নিয়ে তার চর্চা ও গবেষণা শুরু করলো আর এই উম্মাহ ওসব ছেড়ে দিয়ে বিবি তালাকের মসলা আর ফতোয়া নিয়ে মহাব্যস্ত হোয়ে পড়লো। এই উম্মাহর আহরিত জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তির উপর খ্রীস্টান ইউরোপ তাদের প্রযুক্তির সৌধ গড়ে তুললো এবং তুলে শক্তিমান হোয়ে এই উম্মাহকে সামরিকভাবে আক্রমণ করলো।

এটা ইতিহাস যে, এই আক্রমণ এই জাতি প্রতিহত কোরতে পারে নি এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিরাট জাতি ইউরোপের বিভিন্ন জাতির পদানত দাসে পরিণত হোয়ে যায়। ইউরোপের ছোট বড় রাষ্ট্রগুলি এই উম্মাহকে টুকরো টুকরো কোরে কেটে খণ্ড গুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ কোরে নেয়। প্রতিরোধ যে হয় নি, তা নয়, হোয়েছে, কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে। আর যে জাতির ঐক্য নেই সে জাতি শক্তিহীন, পরাজয় তার স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবী। ফকীহ, মুফাস্সির, পণ্ডিতরা পাণ্ডিত্য জাহির কোরতে যেয়ে নানা মাযহাব ফেরকা সৃষ্টি কোরে ঐক্য ধ্বংস কোরে দিয়েছিলেন আর সুফীরা উম্মাহর হাত থেকে তলোয়ার ছিনিয়ে নিয়ে তসবিহ ধরিয়ে দিয়েছিলেন, সংগ্রামী চরিত্রই মিটিয়ে দিয়েছিলেন। কাজেই উম্মাহ আর লড়বে কি দিয়ে ইউরোপের বিরুদ্ধে? সুতরাং যা হবার তাই হলো। যে উম্মাহর উপর বিশ্বনবী (সা:) দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রাম কোরে সমস্ত পৃথিবীকে এই জীবন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে এসে মানব জাতির মধ্যে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কোরতে, সেই জাতি তার সংগ্রামী চরিত্র হারিয়ে নিজেই অন্যের ক্রীতদাসে, গোলামে পরিণত হলো।

Leave a Reply