You are currently viewing স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কি?

স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কি?

চলুন খুজে দেখার চেষ্টা করি।

এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা আছেন কি নেই- এ প্রশ্নের বিচার করার আগে প্রথমেই বোলে নেই যে, প্রমাণ বোলতে চাক্ষুষ প্রমাণ বোঝালে তা নেই এবং তা থাকতেও পারে না। তিনি যদি থেকে থাকেন তবে কোনদিন তিনি এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন নি যে- এই যে আমি তোমাদের স্রষ্টা এবং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কোনদিন তিনি দাঁড়াবেন না। কারণ, তাহলে মানুষ নামের এই বিশেষ সৃষ্টিটি অর্থহীন হোয়ে যেতো, আমরা গাছ-পাথর, হাতী-ঘোড়ার মত শুধু আরেকটি সৃষ্টি হোয়ে যেতাম। দ্বিতীয়তঃ আমাদের বিশ্বাস জন্মানই যদি কথা হোয়ে থাকে তবেও
তাকে নিজে দেখা দিয়ে চাক্ষুষ প্রমাণ দেয়ার দরকার নেই। কারণ তিনি সর্বশক্তিমক্ত্রিষ্টা হোয়ে থাকলে তিনি ইচ্ছা কোরলেই তো পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এই মুহূর্ত্তে তাকে না দেখেই বিশ্বাস কোরবে। তাকে সামনে এসে দাঁড়াবার প্রয়োজনই হবে না। এতে প্রমাণ হোচ্ছে যে স্রষ্টা যদি থেকে থাকেন তবে তিনি নিজে দেখা দিয়ে বা ইচ্ছে কোরে আমাদের মনে তার অস্তিত্বের বিশ্বাস এনে দিতে চান না। তিনি দেখতে চান তিনি যে একটি মাত্র সৃষ্টিকে বুদ্ধি, যুক্তির শক্তি, উপলব্ধির শক্তি দিয়ে সৃষ্টি কোরলেন সেটা অর্থাৎ মানুষ তার ঐ শক্তিগুলি দিয়ে চাক্ষুষ নয়, তাকে উপলব্ধি করে কি করে না। এ জন্য তিনি লক্ষ রকমের চিহ্ন, যুক্তি দিয়েছেন। মানুষকে এ কথা, এ যুক্তি বোঝার শক্তি দিয়েছেন যে, ধোঁয়া থাকলেই আগুন থাকবে।

এখন আমাদের দেখতে হবে ধোঁয়া অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্বের এই ধরনের প্রমাণ আছে কিনা। আরেকটি কথা, স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা কোরতে গেলে বইয়ের পর বই লেখার প্রয়োজন হোয়ে পড়বে- আমার উদ্দেশও তা নয়। আমি শুধু মৌলিক দু’একটি কারণ ও যুক্তি এখানে উল্যেখ করবো যা উন্মক্ত মনের মানুষের কাছে যথেষ্ট। এতে যাদের প্রত্যয়ের উন্মেষ হবে না, হাজার বই লিখেও, লক্ষ যুক্তি দিয়েও তাদের বোঝানো যাবে না।
প্রথমতঃ যুক্তির গোড়ার কথায় যদি যাই- অর্থাৎ ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকতেই হবে তবে যেহেতু সৃষ্টি আছে কাজেই স্রষ্টা অনিবার্য। তবুও এ প্রশ্নে আরও এগুনো যাক এবং সভাবতঃই সৃষ্টির মধ্যদিয়ে এগুতে হবে। মহা বিশ্বের সৃষ্টি কেমন কোরে হোয়েছে সে সম্বন্ধে মানুষ আজও অজ্ঞ, যদিও প্রচণ্ড বিস্ফোরণ (Big Bang), স্থিতাবস্থা (Steady State), স্পন্দনশীল (Oscillating) ইত্যাদি বিজ্ঞানীদের কয়েকটি ধারণা (Theory) আছে। কিন্ত আজও কোনটাই প্রমাণিত হয় নি এবং বিজ্ঞানীরা নিজেরাই একমত নন। কিন্তু মতবিরোধ যাই থাকুক একটা কথা অনশ্বীকার্য্য এবং তারাই শ্বীকার কোরেছেন যে, গোড়ার কথায় গেলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির মাত্র দু’টি সম্ভাবনা আছে। যেহেতু সৃষ্টি হোয়েছে এবং আছে সুতরাং ঐ দু’টি
সম্ভাবনার মধ্যে একটি অবশ্যই হোতেই হবে- তৃতীয় কোন সম্ভাবনাই নেই।
এই দু’টির একটি – এই বিশাল সৃষ্টি নিজে থেকেই আচম্বিতে হোয়ে গেছে, দ্বিতীয়টি পরিকল্পিত।
প্রথমে দেখা যাক আচম্বিতের ধারণা। এই থিওরী মতে মহাশুন্য [মহাশুন্য কি তা কিন্তু তারা বিশ্লেষন কোরতে পারেন না] শুধু গ্যাস আর ধুলিকণা দিয়ে পূর্ণ ছিলো। এই গ্যাস আর ধূলিকণা কোথা থেকে এলো এ কথার তারা কোন উত্তর দিতে পারেন না- শুধু বলেন এগুলো আগে থেকেই ছিলো। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম ওগুলো আগে থেকেই ছিলো- যদিও স্রষ্টা ছাড়া ওগুলোর সৃষ্টি কেমন কোরে, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। যাই হোক, এখান থেকেই অর্থাৎ এই উপাদান থেকেই মহা-বিশ্বের সৃষ্টি আরম্ভ এবং ক্রমে ক্রমে কোটি কোটি, অর্বুদ অর্বুদ বছর ধরে নানা রকম আচম্বিত (Accidentally) ঘটনার মধ্য দিয়ে আজকের এই পর্য্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কেমন কোরে কি কি ঘটনার মধ্যদিয়ে এখানে পৌঁছলাম তা নিয়ে বহু মতবিরোধ রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে । এই আচম্বিতের থিউরী মতে অর্বুদ অর্বুদ বছর আগে থেকে আজ পর্যন্ত সৃষ্টিতে যা কিছু হোয়ে
আসছে তাতে কোন পরিকল্পনা নেই- কারণ স্রষ্টাই তো নেই, সব হোয়েছে
এবং হোচ্ছে আচম্বিতে (Accidentally)। পরিকল্পনার কথা আসলে তো অবশ্যই সধষ্টা এসে যান। এখন থেকে এবার আগে আরেকটা কথা জেনে নিতে হবে। সেটা হোচ্ছে- এই যে আচম্বিতে ঘটনাগুলো ঘোটেছে এবং ঘোটছে এগুলো যেখানে খুশী, যখন খুশী ভাবে ঘটে নি। এগুলোকে ঘোটতে হোয়েছে ধারাবাহিক ভাবে। একটা আচম্বিত ঘটনা যখন ঘটেছে বোলে মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু ইত্যাদি বেঁচে আছে, ঐ ঘটনাটা তখন না ঘটে যদি তার আগে বা পরে ঘোটতো তবে কোন প্রাণী পৃথিবীতে থাকতো না, হয়ত জন্মই হতো না, এই সৃষ্টিও আজ যা দেখছি তা হোতনা, হয়ত মোটেও হতো না। কাজেই আচম্বিত ঘটনা ঘটেছে এবং ধারাবাহিকভাবে ঘটেছে। এইরূপ ঘটনাগুলির সংখ্যা কোটি কোটি-
অগুণতি। এইবার দেখা যাক এটা কতটুকু সম্ভব। ঠিক একই আকারের টাকা বা আধুলির মত গোল দশটি ধাতব বা প্লাষ্টিকের চাকতি নিন এবং এগুলোর উপর এক থেকে দশ সংখ্যা লিখুন। মনে রাখবেন এই চাকতি গুলি সেই কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনা গুলোর মাত্র দশটি প্রতীক এবং সংখ্যা গুলো ওগুলোর ধারাবাহিকতা, যার কথা বোলে এলাম। এই চাকতি দশটি আপনার পকেটে রেখে নেড়েচেড়ে মিলিয়ে দিন। এইবার আপনি চোখ বুজে পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটি চাকতি বের কোরুন। এই চাকতিটি এক থেকে দশ নম্বরের যে কোনটি হোতে পারে এবং প্রথম বারেই এক সংখ্যার চাকতিটি আপনার হাতে উঠে আসার সম্ভাবনা দশের মধ্যে এক (১ঃ১০)। ধরুন প্রথমবারেই আপনার হাতে এক নম্বর চাকতিটি
উঠলো। এবার ওটা পকেটে ফেরৎ রেখে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে দিয়ে আরেকটি চাকতি বের কোরে নিন। দ্বিতীয় বারে আপনার হাতে দুই নম্বর দেয়া চাকতিটি উঠে আসার সম্ভাবনা একশ’র মধ্যে এক। অর্থাৎ আপনি যদি একশ’বার পকেট থেকে একটা একটা কোরে চাকতি বের করেন তবে এক নম্বর ওঠাবার ঠিক পরের বারে দুই নম্বরের চাকতি উঠে আসার সম্ভানা থাকবে একশ’ বারের মধ্যে এক বার, অর্থাৎ (১ঃ১০x১০=১০০)। ঠিক তেমনিভাবে তৃতীয় বারের তিন নম্বর চাকতি উঠার সম্ভাবনা এক হাজার বারের মধ্যে এক বার (১ঃ১০০x১০=১০০০), অর্থাৎ আপনি
দশবার পকেট থেকে চাকতি উঠালেন। এক থেকে ধারাবাহিকভাবে দশ পর্য্যন্ত উঠার সম্ভাবনা এক হাজার কোটি বারের মধ্যে একবার (১ঃ১০০০০০০০০০০)। আমরা কোটি কোটি নয় অসংখ্য আচম্বিত ঘটনার মধ্যে মাত্র দশটির প্রতীক নিয়েছিলাম। তাতেই এই সংখ্যার সম্ভাবনা পাচ্ছি। তাহলে কোটি কোটি নিলে দেখা যাবে, যে সৃষ্টি আচম্বিতে হোয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অসীম সংখ্যার, অর্থাৎ যে সংখ্যার শেষ নেই, তার মধ্যে একবার- অর্থাৎ অসম্ভব। এখন- দু’টো সম্ভাবনার মধ্যে একটি অসম্ভব বোলে বাদ পড়লে বাধ্য হোয়ে দ্বিতীয়টিকে গ্রহণ
কোরতে হবে, এবং সেটা পরিকল্পিত এবং পরিকল্পিত মানেই স্রষ্টা।
তৃতীয় আর কোন থিওরীর সম্ভাবনা কিছুই নেই। এই একই হিসাব ঠিক উল্টো দিক থেকেও করা যায়। যেমন যে কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে আসার দরুণ আজ আমরা এই বর্ত্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছি- ঠিক তেমনি কোটি কোটি অন্যরকম আচম্বিত ঘটনা এই মহাকালের মধ্যে ঘোটতে পারতো। যার একটি মাত্র ঘটনাও সমস্ত লণ্ডভণ্ড কোরে দিতে পারতো। কিন্তু তেমন একটি মাত্র ঘটনাও ঘটেনি। যেমন ধরুন- উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমানো বরফ যদি গলে যেতো বা যায় তবে বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড়-পর্বত ছাড়া সমস্ত পৃথিবী পানিতে ডুবে যাবে। ঘোটতে পারতো, ঘটেনি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, অংকের হিসাবে, স্রষ্টার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যে কোন চিন্তাশীল মানুষ এই বিশাল
সৃষ্টির দিকে চেয়ে দেখলে এর মধ্যে এক বিরাট পরিকল্পনা দেখতে পাবেন যেটাকে অস্বীকার করা অসম্ভব।

Leave a Reply