You are currently viewing স্রষ্টার প্রেরিত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার উদ্দ্যেস্য, জীবন ব্যবস্থায় স্রষ্টার সার্বভৌম কর্তিত্ব মেনে নেয়ার গুরুত্ব।

স্রষ্টার প্রেরিত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার উদ্দ্যেস্য, জীবন ব্যবস্থায় স্রষ্টার সার্বভৌম কর্তিত্ব মেনে নেয়ার গুরুত্ব।

আল্লাহ তার প্রতিভু‚ আদমকে (আ:) সৃষ্টি কোরে তার স্ত্রীসহ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন। বোলে দিলেন- যাও, ওখানে বংশ বৃদ্ধি কর। তোমরা ওখানে তোমাদের সামগ্রিক জীবন কেমন কোরে পরিচলিত কোরলে অন্যায়-অবিচার, রক্তপাতহীন অবস্থায় বাঁচতে পারবে সে পথ প্রদর্শন আমি নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দেব।

আমি বললাম,‘তোমরা সবাই তা থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’-(সূরা-বাকারা-৩৮)

অর্থাৎ মানুষকে শান্তিতে থাকতে হোলে যে রকম জীবন-ব্যবস্থায় থাকতে হবে সে ব্যবস্থা প্রণয়নের ভার তিনি নিজে নিলেন। স্রষ্টা যে কাজের দায়িত্ব নিলেন তাতে যে তিনি ব্যর্থ হবেন না, তাস্বাভাবিক। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেবার পর তার প্রথম সৃষ্টি আদমকে (আ:) দিলেন তার জীবন-ব্যবস্থা। আমরা ধোরে নিতে পারি এ ব্যবস্থা ছিলো ছোট, সংক্ষিপ্ত- কারণ তখন অল্প সংখ্যক নর-নারীর জন্যই ব্যবস্থা দিতে হোয়েছিলো। আদম (আ:) এবং তার পুত্র কন্য ও নাতি-নাতনিদের জন্য এবং সমস্যাও নিশ্চয়ই ছিলো সীমিত। কিন্তু তারপর আল্লাহর হুকুম মোতাবেক বংশ বৃদ্ধি চোললো। সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আদমের (আ:) সন্তানরা ক্রমে ক্রমে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো, ফলে একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে পড়লো। স্রষ্টা কিন্তু তার দায়িত্ব ভুলেন নি। বনি-আদমের বিভিন্ন, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীতে তিনি তার প্রেরিত পাঠিয়ে তাদের জন্য জীবনব্যবস্থা পাঠাতে থাকলেন- যে ব্যবস্থা অনুসরণ কোরলে তারা নিজেদের মধ্যে অশান্তি, ফাসাদ, রক্তপাত না কোরে শান্তিতে, ইসলামে, বাস কোরতে পারে। এদিকে ইবলিস অর্থাৎ শয়তানও ভুললো না তার প্রতিশ্রুত কাজ। সেও প্রতিটি বনি-আদমের দেহ-মনের মধ্যে বোসে তাকে নানা রকম বুদ্ধি পরামর্শ দিতে থাকলো, নতুন নতুন উপায় বাতলাতে থাকলো যাতে মানুষ আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে, অন্ততঃ পক্ষে বিকৃত করে, এবং ফলে সেই অন্যায়, ফাসাদ আর রক্তারক্তিতে জড়িত হোয়ে পড়ে। যখনই ইবলিস কোন জন সমাজে সফল হোয়েছে তখনই আল্লাহ সেখানে নতুন একজন প্রেরিত পাঠিয়েছেন সেটাকে সংশোধন কোরতে।

আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ কাউকে হিদায়াত দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে কারো উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর অতঃপর দেখ, অস্বীকারকারীদের পরিণতি কীরূপ হয়েছে। -(সূরা-আন-নাহল-৩৬)

এখন দেখা দরকার যে, বিভিন্ন নবীদের মাধ্যমে, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা পাঠালেন সেটা মূলতঃ কি? পর্যবেক্ষণ কোরলে দেখা যায় এর মূল ভিত্তি হোচ্ছে- স্রষ্টাকে, আল্লাহকে একমাত্র প্রভু, শুধু একমাত্র প্রভু নয়, সর্বময় প্রভু‚ বোলেস্বীকার ও বিশ্বাস করা। এই ব্যপারে তিনি নিজের সম্বন্ধে যে শব্দটি ব্যবহার কোরেছেন সেটা হলো ‘ইলাহ’। বর্ত্তমানে এর অনুবাদ করা হয় ‘উপাস্য’ শব্দ দিয়ে। এই উপাস্য শব্দ দিয়ে এর অনুবাদ হয় না। কারণ হোচ্ছে এই যে বর্ত্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিকৃত হোয়ে গেছে। যার একটা বিকৃতি হলো আল্লাহর দেয়া বিধান থেকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি জাতীয় ব্যপার গুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে শুধু বক্তিগত ব্যপার গুলিতে সীমাবদ্ধ কোরে রাখা, এবং আনুষ্ঠানিক উপাসনা তার অন্যতম। শুধু ‘এলাহ’ শব্দ আল্লাহ এ অর্থে ব্যবহার করেন নি। তিনি যে অর্থে ব্যবহার কোরেছেন তার অর্থ হল- যার বিধান এবং নির্দেশ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে, প্রতি ব্যপারে অলংঘনীয়। আদম (আ:) থেকে মোহাম্মদ (দ:) পর্য্যন্ত প্রত্যেক নবীর সময় এই বিশ্বাসের মূলমন্ত্র রাখা হোয়েছে-একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোন এলাহ নেই (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) – এবং পরে যোগ হোয়েছে তদানিন্তন নবীর নাম। এই কলেমায় মূলমন্ত্রে কখনো এই এলাহ শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ স্রষ্টা ব্যবহার করেন নি। কখনো কোন নবীর সময় লা রব্ব ইল্লাল্লাহ বা লা মালেক ইল্লল্লাহ বা তার নিরানব্বই নামের যে কোনটা হোতে পারতো। কিন্তু তিনি তার লক্ষাধিক নবীর- কোন নবীর সময়ের কালেমাতেই ঐ এলাহ ছাড়া অন্য কোন নাম ব্যবহার করেন নি। কেন? এই জন্য যে তিনি ‘একমাত্র’ যার আদেশ নিষেধ ছাড়া আর কারো আদেশ নিষেধ গ্রাহ্য নয়। অর্থাৎ কেউ যদি কতগুলি আদেশ নির্দেশ মেনে নিলো কিন্তু অন্য কতগুলি অস্বীকার করলো, তবে তিনি আর তার এলাহ রোইলেন না। এটা সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত। কারণ যে রকম জীবনব্যবস্থা অনুসরণ কোরলে মানুষ পৃথিবীতে গোলমাল, অশান্তি, অবিচার, অন্যায়, যুদ্ধ ও রক্তপাত করা থেকে অব্যাহতি পাবে সে রকম জীবনব্যবস্থায় রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাই যে মূখ্য ও প্রধান হবে এ কথা সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যায়। তাই আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে মানুষের জন্য যে জীবনব্যবস্থা পাঠালেন তার কালেমা, মূলমন্ত্র স্থির কোরে দিলেন, তাকে একমাত্র বিধানদাতা বোলেস্বীকার করার ভিত্তিতে। জীবন-বিধানের এই ভিত্তিটাকে অর্থাৎ একেশ্বরবাদ, তওহীদকে স্রষ্টা এত রুত্ব দিয়েছেন যে, সেই আদম (আ:) থেকে শুরু কোরে তার শেষনবী মোহাম্মদ (দ:) পর্য্যন্ত প্রত্যেককে পাঠানো হোয়েছে ঐ এক দাবী দিয়ে- আমাকে ছাড়া কাউকে প্রভু বোলে, এলাহ বোলে মানবে না। অন্য কারো দেয়া বিধান, আদেশ-নিষেধ মানবে না। মানলে তাদের আমি কিছুতেই মাফ করবো না। কিন্তু ঐ একটি মাত্র দাবী মেনে নিলে আর কোন গোনাহ পাপের জন্য শাস্তি দেব না।

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।- (সূরা-আন-নিসা-৪৮)
আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।-(সূরা-আন-নিসা-১১০)
নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল।-(সূরা-আন-নিসা-১১৬)

আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হয় এ যেন এক উন্নাসিক, অহংকারী, একনায়কের তোষামোদির দাবী। কিন্তু তাই কি? যদি তার এই মহাকাশ, মহাসৃষ্টির দিকে তাকাই তখন দেখি কী অসম্ভব বিরাট এই সৃষ্টি। শুধু যে ছায়া পথের (Milky Way অর্থাৎ Galaxy) মধ্যে আমাদের এই সৌরজগত, একটাই এত বড় যে এর ঠিক কোনখানটায় আমরা আছি তা সঠিক কোরে নির্দ্ধারণ আজ পর্য্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোরতে পারেন নি। অথচ এই Galaxy ই আরো কত কোটি কোটি আছে যার সংখ্যা করা অসম্ভব। আজ পর্য্যন্ত এই মহাসৃষ্টির সীমা পাওয়া যায় নি। মানুষ এ পর্য্যন্ত সবচেয়ে দূরের যে ছায়াপথের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, তা হলো z8_GND_5296- এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত সবথেকে প্রাচীন ছায়াপথ। এই ছায়াপথ আবিস্কার করতে বিজ্ঞানীরা হাবল মহাকাশ দূরবীন এর তথ্য এবং কেক-1 দূরবীন ব্যাবহার করেছে। এই ছায়াপথের সৃষ্ট হয়েছে মহাবিস্ফোরনের (Big Bang) মাত্র 700 মিলিয়ন বছরের মধ্যে। অর্থাৎ W.M. Keck Observatory থেকে এর দুরত্ব ১৩ বিলয়ন আলকবর্ষ । অবশ্য এটাই মহাকাশের শেষ সীমানা নয়,আর এর শেষ সীমানা কোথায় তা আজ পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। কোন কিছু সেকেণ্ডে এক লক্ষ ছিয়াশী হাজার চারশ’ মাইল বেগে চোলতে থাকলে তা ১৩ বিলিয়ন বছর পরে ঐ z8_GND_5296- গ্যলাক্সিতে যেয়ে পৌঁছতে পারবে। কি অসম্ভব দূরত্ব, কল্পনা করা যায় না, ধারণা করা যায় না। ঐ গ্যলাক্সির পরেও আরও কত সৃষ্টি আছে কেউ জানে না। এই অচিন্তনীয় বিশাল সৃষ্টির মধ্যে আমাদের পৃথিবী তো দূরের কথা, এই সৌরজগত যেটার মধ্যে আমরা আছি, এর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই সৃষ্টির যিনি স্রষ্টা তার কী এত প্রয়োজন পড়লো আমাদের মত কীটানুকীটের কাছ থেকে তার প্রভুত্ব্যের স্বীকৃতি নেবার? আমরা তাকে অস্বীকার কোরে অন্য যাকে খুশী এলাহ বোলে মেনে নেই, তাতে তার কী আসবে- যাবে? তার দেয়া পথ বর্জন কোরে নিজেরাই যদি পথ তৈরী কোরে নেই, তাতেই বা তার কী ক্ষতি বৃদ্ধি হবে?

আসল কথা হলো- তার কিছুই হবে না, তার কিছুই আসে যাবে না। তিনিজানেন তার পাঠানো জীবনব্যবস্থা গ্রহণ না কোরে, নিজেরা তা তৈরী কোরে তা মেনে চোললে তার নিজের হাতের গড়া, তার অতি স্নেহের সৃষ্টি মানুষ অশান্তি আর রক্তপাতে ডুবে থাকবে। তাই তিনি চান মানুষ তার দেয়া জীবনব্যবস্থা মেনে নিয়ে তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করুক এবং পরিণামে শান্তিতে পৃথিবীতে বসবাস করুক। যেহেতু তাকে একমাত্র প্রভু, এলাহ বোলে স্বীকার ও বিশ্বাস না কোরে নিলে তার পাঠানো জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ওঠেনা তাই ওর উপর, তওহীদ, একেশ্বরবাদের উপর এত কড়াকড়ি। এ কড়াকড়ি আমাদের অশান্তি, অত্যাচার, রক্তারক্তি থেকে বাঁচাবার জন্য ভালবাসার কড়াকড়ি। আল্লাহকে একমাত্র বিধান দাতা বোলে স্বীকার ও বিশ্বাস কোরে নেয়াই আদম (আ:) থেকে মোহাম্মদ (দ:) পর্য্যন্ত সমস্ত দীনের, ধর্মের ভিত্তি। এই হোচ্ছে দীনুল কাইয়্যেমা, সনাতন ধর্ম, সেরাতুল মোস্তাকীম। এটা স্বতঃস্ফর্ত যে, তাকে একমাত্র জীবন-বিধাতা বোলে মেনে নেয়ার পর আর অন্য কারো তৈরী বিধান গ্রহণযোগ্য হোতে পারে না এবং শুধু এইটুকুই তিনি চান আমাদের কাছে।

এখন দেখা যাক এই যে জীবনব্যবস্থা ষ্টা যুগে যুগে পাঠিয়েছেন এটা কি? লক্ষ্য কোরলে দেখা যায় এর ভিত্তি ঐ একত্ববাদ, তওহীদ যা চিরস্থায়ী। অন্যভাগ আদেশ-নিষেধ, যেগুলি মেনে চোললে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমষ্টিগতভাবে মানুষ পরিপূর্ণ শান্তিতে, প্রগতিতে বাস কোরতে পারে। এই দ্বিতীয় ভাগটি চিরস্থায়ী, সনাতন নয়, এটিস্থান ও কালের উপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন সময়ে তিনি তার নবী পাঠিয়ে যে জীবনব্যবস্থা দিয়েছেন তাতে স্বভাবতঃ স্থান, কাল, পাত্র ও সমস্যা ভেদে বিভিন্ন নির্দেশ থেকেছে। আর দু’টি ভাগ এতে সব সময় থেকেছে- সেটা উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার ভাগ। উদ্দেশ্য সব সময়ই একই থেকেছে- শান্তিতে সুবিচারে বসবাস এবং এ উদ্দেশ্য অর্জন কোরতে যে সমস্ত প্রক্রিয়া অবশ কর্ত্তব্য। এই প্রধান চারটি ভাগকে একত্র কোরে দেখলে পরিস্ফুুট হোয়ে উঠবে যে, আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা মানুষের সমগ্র জীবনের প্রতিটি বিষয়বস্তুকে নিয়ন্ত্রণ কোরবে। তা যদি না হতো তবে তা মানুষের জন্য জীবন-বিধান হোতে পারতো না, হোলেও অসম্পূর্ণ ও আংশিক হোত। অর্থাৎ আল্লাহকে “একমাত্র জীবন-বিধাতা” স্বীকার ও গ্রহণ করার পর জীবনের কোন অঙ্গনে অন্য কোন বিধান অর্থাৎ আইন স্বীকার করার অর্থ হলো তাকে ছাড়াও অন্য বিধাতা স্বীকার কোরে নেওয়া বা শেরক।

এই যে যুগে যুগে প্রভু আল্লাহ আমাদের জন্য জীবন-বিধান পাঠিয়েছেন তা তিনি পাঠিয়েছেন তার নবীদের মাধ্যমে- যারা আমাদেরই মত মানুষ। এখানে একটা সমস্যা এসে দাঁড়ায়। যেহেতু ঐ প্রেরিতরা আমাদের মত মানুষ কাজেই যখন তারা ঘোষণা কোরেছেন যে তাকে জীবন-বিধান দিয়ে পাঠানো হোয়েছে তখন তার কথা সত্য কি মিথ্যা তা স্বভাবতই প্রশ্নের ব্যাপার হোয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি এ কথা প্রশ্ন কোরে যে, এই লোকটি তার কোন বক্তিগত স্বার্থোদ্ধারের জন্য, নেতৃত্ব লাভের জন্য বা তার মনগড়া কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য স্রষ্টার দোহাই দিচ্ছে না তার প্রমাণ কি? এ প্রশ্ন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ নেই। কাজেই আল্লাহ এ ব্যাপারেও তার নিজের সম্বন্ধে যে রকমের ব্যবস্থা নিয়েছেন তার প্রেরিতদের সম্বন্ধেও সেই রকম ব্যবস্থা নিলেন। অর্থাৎ চিহ্ন। তিনি তার প্রেরিতদের মধ্যে, তাদের কাজের মধ্যে এমন সব চিহ্ন দিয়ে দিলেন যা যে কোন যুক্তিসম্পন্ন মানুষের সন্দেহ নিরসন করার জন্য যথেষ্ট। সংগত কারণে তিনি তার প্রতিটি নবীকেই অলৌকিক শক্তি দিলেন যা সাধারণ মানুষের থাকে না। এগুলোর নাম তিনি দিলেন চিহ্ন বা আয়াত। আমরা এখন বলি মো’জেজা, অলৌকিক ঘটনা। যাদের জন্য এই নবীরা জীবনব্যবস্থা, দীন নিয়ে এসেছেন তারা তার কথায় সন্দেহ বা অবিশ্বাস কোরলে তিনি ঐ অলৌকিক কাজ কোরে তাদের সন্দেহ অপনোদন কোরেছেন। এমনি কোরে যুগে যুগে, যখনই কোন জনগোষ্ঠী আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থা হয় ত্যাগ কোরেছে না হয় তাকে এমন বিকৃত কোরে ফেলেছে যে তা আর তাদের শান্তি, ইসলাম দিতে পারে নি, তখনই স্রষ্টা তার করুণায় আরেক নবী পাঠিয়েছেন। তিনি এসে বোলেছেন- তোমরা আমার পূর্ববর্ত্তি নবীর আনা জীবন-বিধান বিকৃত কোরে ফেলেছো। তাই আমাকে পাঠানো হোয়েছে তোমাদের জন্য নতুন বিধান দিয়ে। শুভ- বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই নতুন প্রেরিতের কথায়, কাজে তার জীবন-ধারায় ও তার অলৌকিক কাজ করার শক্তি দেখে তাকে বিশ্বাস কোরে এই নতুন জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরেছে। আর কিছু লোক শয়তানের প্ররোচনায় তাকে অস্বীকার কোরে আগের বিকৃত দীনকে আকড়ে ধোরে রেখেছে। পৃথিবীতে আরেকটি দীন, জীবনব্যবস্থার জন্ম হোয়েছে। তারপর কালে কলে ইবলিসের-প্ররোচনায় এই নতুন দীনেও বিকৃতি এসেছে এবং এতখানি বিকৃতি এসেছে যে ওটাও আর মানুষকে সেই চির আকাংখিত শান্তি দিতে পারে নি। তখন আল্লাহ আবার এক নতুন রসুল পাঠিয়েছেন- আগের মত কোরে আবার এক দীন, ধর্ম পৃথিবীতে সংযোজন হোয়েছে। এমনি কোরে মানব জাতির শান্তির জন্য আল্লাহ লক্ষাধিক প্রেরিত পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য সেই এক। মানুষ যাতে নিজেদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি না কোরে, অবিচার না কোরে, যুদ্ধ, রক্তপাত না কোরে পূর্ণ শান্তিতে পৃথিবীতে বসবাস করে। যখনই কোন জনগোষ্ঠী, জাতি কোন প্রেরিতকে বিশ্বাস কোরে আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরে তা তাদের জাতীয়, পারিবারিক, বক্তিগত জীবনে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা কোরেছে তখন তাদের মধ্যকার সমস্ত অশান্তি, অবিচার, মারামারি, রক্তপাত বন্ধ হোয়ে গেছে। তারা অনাবিল সুখ ও শান্তিতে, ইসলামে বাস কোরতে লেগেছে। কিন্তু এই শান্তি চিরস্থায়ী হয় নি, কারণ শয়তানও বোসে ছিল না এবং বোসে নেই। সে অবিশ্রান্ত ভাবে মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে চলেছে ঐ জীবনব্যবস্থাকে বিকৃত কোরে, অচল কোরে দিয়ে পরিণতিতে মানুষকে আবার ঐ ফাসাদ আর রক্তপাতে জড়িত কোরতে এবং কোরেছেও।

অতীতের দিকে ফিরে চাইলে আমরা দেখি যে মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্ব ও প্রভুত্ব ঠিক রেখে যুগে যুগে যে ইসলাম পৃথিবীতে এসেছে তার রূপ কিছু কিছু বিভিন্ন হোয়েছে- এবং যে সব ব্যাপারে বিভিন্ন হোয়েছে তা সবই স্থান, কাল ও পাত্রের অধীন। উদাহরণ রূপে আদমের (আ:) উপর যে ইসলাম দেয়া হোয়েছিলো তাতে বিধান ছিলো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ে। স্বভাবতঃই, কারণ তখন তারা ছাড়া পৃথিবীতে আর মানুষ ছিলো না। কিন্তু পরে যখন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলো, তারা নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়লো, তখন আর সে প্রয়োজন রোইলো না এবং পরবর্ত্তী যে সব নবীরা এলেন তাদের উপর বিধান গুলিতে ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ কোরে দেয়া হলো। অনুরূপভাবে আস্তে আস্তে যেমন মানুষ নতুন ব্যাপারে জ্ঞান লাভ কোরতে লাগলো, নতুন নতুন আবিষ্কার কোরতে লাগলো, এক কথায় মানুষের যুক্তি, বুদ্ধি উন্নতি কোরতে লাগলো- তেমনি আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থাতেও সে গুলির প্রতি লক্ষ্য রেখেই বিধান দেয়া হোতে লাগলো। প্রতিবার যেখানেই নবীরা এসেছেন এবং যেখানকার মানুষ তাদের আনা জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরেছে সেখানে সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোয়েছে। আর যেখানে মানুষ নবীদের প্রত্যাখ্যান কোরেছে সেখানে তারা অশান্তি, অবিচারে রক্তপাতে ডুবে থেকেছে এবং কালে কালে ধ্বংস হোয়ে গেছে।

Leave a Reply