You are currently viewing হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর   মো’জেজা
হিজবুত তাওহিদ

হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর মো’জেজা

হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর মো’জেজা

এ পর্য্যন্ত আমরা মানুষ জাতির একটা মৌলিক অতীত পেলাম। এই মৌলিক অতীতকে আমি আজ থেকে মোটামুটি চৌদ্দশ বছর আগে দাড়ি টানবো। কারণ চৌদ্দশ বছর আগে মানুষ জাতির জীবনে ও ইতিহাসে এমন এক মহাবিপ্লব ঘটে গেলো যে তদানিন্তন পৃথিবীকে তো বদলিয়ে দিয়েছিলোই- শুধু তাই নয়, যা মানুষ জাতির বাকি সম্পূর্ণ ভবিষ্যতকেও নিয়ন্ত্রণ কোরবে। এক দিক দিয়ে এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। কারণ যুগে যুগে, একের পর এক প্রেরিতদেরই আরেকজন এলেন স্রষ্টার বাণী আর জীবন-বিধান নিয়ে। কিন্তু আরেক দিক দিয়ে এবারের এই আগমনে রোইলো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম। প্রধান প্রধান ব্যতিক্রমগুলি হোচ্ছে-

(ক) এর আগের জীবন-বিধান, দীন গুলি এসেছে নির্দিষ্ট, সীমিত মানব সমাজের জন্য। সনাতন ধর্ম, দীনুল কাইয়্যেমা অর্থাৎ একেশ্বরবাদ ভিত্তি হিসাবে থেকে অন্যান্য আইন নিয়ম ইত্যাদি এসেছে স্থান, কাল ও পাত্রের সমস্যা ও চাহিদাঅনুযায়ী। এবারেরটা এলো সমস্ত মানব জাতির জন্য। স্রষ্টা লক্ষ্য রাখলেন এতে যেন এমন কোন আইন, কানুন, নির্দেশ না থাকে যা স্থান, কাল বা পাত্রের প্রভাবাধীন হয়। অর্থাৎ এবারের বিধান এলো সম্পূর্ণভাবে সার্বজনীন।

(খ) এটা এলো মানুষের জন্য শেষ জীবন-বিধান হিসাবে, অর্থাৎ এরপর আল্লাহর কাছ থেকে আর কোন জীবনব্যবস্থা আসবে না। এখানেও স্রষ্টা লক্ষ্য রাখলেন যে, এতে এমন কোন আইন, নির্দেশ না থাকে যা সময়ের পরিবর্ত্তনের ফলে অকেজো হোয়ে যায়- অর্থাৎ শুধু যা শাশ্বত।

(গ) এর আগের প্রতিটি জীবন-বিধানের বই (ধর্মগ্রন্থ) মানুষ তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিকৃত কোরে ফেলেছিলো। স্রষ্টা জানতেন তার এই শেষ বইও মানুষ বিকৃত কোরে ফেলবে। তাই এবার একে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার ভার নিলেন নিজে।
(নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।-সূরা আল-হিজর-৯)

ঘ) যার মাধ্যমে আল্লাহ তার এই শেষ জীবনব্যবস্থা পাঠালেন তাকে তিনি তৈরী কোরলেন সমস্ত মানব জাতির আদর্শ কোরে।
(অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।- আল-আহযাব-২১)
এবং যেহেতু তাকে মানুষ জাতির আদর্শ কোরে তৈরী কোরলেন কাজেই তাকে কোরতে হলো একেবারে নিখুঁতকোরে, যেমন নিখুঁত কোরে স্রষ্টা আর কাউকে তৈরী করেন নি। কোন মানুষকে তো নয়ই, এমন কি তার অন্য কোন নবী রসুলকেও নয়।

সব নবীর বেলায় যা হোয়েছে মোহাম্মাদ (সাঃ) -এর বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হলো না। প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে উঠলো প্রচলিত ধর্মের হর্ত্তাকর্ত্তাদের দিয়ে। প্রশ্ন উঠলো, ইনি যে সত্যই নবী, আল্লাহর প্রেরিত তার প্রমাণ কি, চিহ্ন কি? আল্লাহ জানেন এ প্রশ্ন উঠবে, তার প্রতিটি নবীর সময় উঠেছে, এবং তিনিও প্রতিটি নবীকেই চিহ্ন অর্থাৎ মো’জেজা দিয়ে শক্তিশালী কোরেছেন। এখানে একটা কথা বোলে নেই। কোর’আনে কোথাও মো’জেজা শব্দটি নেই। মো’জেজা অর্থাৎ অলৌকিক শব্দের জায়গায় আল্লাহ ব্যবহার কোরেছেন আয়াত শব্দটি অর্থাৎ চিহ্ন। অর্থ ঐ একই, অর্থাৎ একটি বিশেষ ব্যাপার বা জিনিষ যে সত্য তার চিহ্ন। এই অর্থে আল্লাহ তার কোর’আনের শ্লোক, Verse বা স্তবক গুলিকে আয়াত বোলে বর্ণনা কোরেছেন। অর্থাৎ এই শ্লোক, Verse বা স্তবক গুলি স্রষ্টার, তার প্রেরিতের সত্যতার চিহ্ন, প্রমাণ। তিনি না থাকলে এবং যার মুখ দিয়ে ঐ আয়াত গুলি উচ্চারিত হোচ্ছে তিনি প্রেরিত না হোলে ঐ শ্লোক গুলি কোথা থেকে এলো? এই অর্থে আরো বহু জিনিষকে আল্লাহ তার অস্তিত্বের, একত্বের সত্যতার চিহ্ন হিসাবে বর্ণনা কোরেছেন। যেমন প্রাকৃতিক নিয়ম, গ্রহ-নক্ষত্রের, দিন-রাত্রির বিবর্ত্তন ইত্যাদিও সব স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার চিহ্ন। কোরআনের ভাষায়-
(আমি রাত আর দিনকে দু’টো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনটিকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার আর যাতে বছরের সংখ্যা আর হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি।- বনী-ইসরাঈল-১২)
(তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে রাত, তাত্থেকে আমি দিনকে সরিয়ে নেই, ফলে তখনই তারা অন্ধকারে ডুবে যায়। আর সূর্য তার জন্যে নির্দিষ্ট ক’রে দেয়া জায়গায় গতিশীল, এটা মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের সুনিরূপিত নির্ধারণ। আর চাঁদের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি মানযিলসমূহ, অবশেষে সেটি খেজুরের শুষ্ক পুরাতন শাখার মত হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদকে ধরে ফেলা, আর রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে ছাড়িয়ে আগে বেড়ে যাওয়া, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষ পথে সাঁতার কাটছে। – ইয়াসীন-৩৭-৪০)
ঠিক একি ভাবে চিহ্ন বা আয়াত হলো নবীদের অলৌকিক, মো’জেজার শক্তি, যেমনটা ঈসা ও মুসা (আ:) এর ব্যপারে কোরআনের বর্ণনা করা হয়েছে।
ঈসার (আ:):
যখন আল্লাহ বলেন, ‘‘হে ‘ঈসা বিন মারইয়াম! তুমি তোমার প্রতি আর তোমার মায়ের প্রতি আমার নি‘মাতের কথা স্মরণ কর। আমি তোমাকে রূহুল কুদুর (জিবারাঈল) দিয়ে শক্তিশালী করেছি, তুমি দোলনায় থাকা অবস্থায় আর পূর্ণ বয়সেও মানুষের সাথে কথা বলেছ। স্মরণ কর আমি তোমাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম। তুমি আমার অনুমতিক্রমে মাটি দ্বারা পাখীর মত আকৃতি গঠন করতে আর তাতে ফুঁক দিতে তখন তা আমার হুকুমে পাখী হয়ে যেত, জন্মান্ধ আর কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিকে তুমি আমার হুকুমে আরোগ্য করতে, স্মরণ কর আমার হুকুমে তুমি মৃতকে জীবিত করতে, স্মরণ কর যখন আমি তোমার থেকে বানী ইসরাঈলকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম যখন তুমি তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি নিয়ে আসলে, তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলল- “এটা তো স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।”-আল-মায়েদা-১১০
মুসার (আ:) :
তখন আমি মূসার প্রতি ওয়াহী করলাম- ‘তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক ভাগ সুবিশাল পর্বতের ন্যায় হয়ে গেল। -আশ-শুআ’রা-৬৩
এই যে শেষ প্রেরিতকে (সা:) আল্লাহ পাঠালেন, উনাকে যে আয়াত অর্থাৎ মো’জেজা দেয়া হলো তা তার পূর্ববর্ত্তী নবীদের জন্য দেয়া মো’জেজা থেকে অন্য রকম হোতে হলো। কারণ পূর্ববর্ত্তী নবীদের দায়িত্ব ছিলো যার যার জাতির মধ্যে সীমিত, আর মোহাম্মাদ (সাঃ) -এর দায়িত্ব হলো সমগ্র মানব জাতির নয় শুধু- মানব জাতির বাকি আয়ুষ্কালেরও।

স্রষ্টা তার জীবনব্যবস্থা দিয়ে যত প্রেরিত (নবী রসুল) এই পৃথিবীতে প্রেরণকোরেছেন তার প্রত্যেককে মো’জেজা বা অসাধারণ, আপাতঃ অসম্ভব অর্থাৎ অলৌকিক কাজ করার শক্তি দিয়েছেন। এ ব্যাপরে আল্লার ঘোষনা হচ্ছে:
যারা ব’লে থাকে যে, ‘আল্লাহ আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছেন, যেন আমরা আগুনে গ্রাস করে এমন কোন কুরবানী আমাদের সামনে না দেখানো পর্যন্ত কোন রসূলের প্রতি ঈমান না আনি’। বল, ‘আমার পূর্বে বহু রসূল বহু প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছিল এবং তোমাদের কথিত সেই মু’জিযা নিয়েও (এসেছিল)। যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে কেন তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছিলে?’ তারপরও যদি কাফিরগণ তোমাকে অস্বীকার করে, তবে তোমার পূর্বেও রসূলগণকে অস্বীকার করা হয়েছিল যারা স্পষ্ট নিদর্শন, অনেক সহীফা এবং দীপ্তিমান কিতাব নিয়ে এসেছিল -আলে-ইমরান-১৮৩-১৮৪)

যেহেতু তিনি তার প্রত্যেক প্রেরিতকে এই শক্তি দিয়েছেন তাতে বোঝা যায় এটার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই মো’জেজা গুলি বিভিন্ন প্রেরিত, রসুলদের বিভিন্ন ধরনের হোয়েছে। যে সমাজে যে ধরনের মানুষ, পারিপার্শ্বিকতা, যে ধরনের অভিযোগ কোন নবীর উপর দেয়া হোয়েছে, মো’জেজার শক্তি গুলির ধরন সেই গুলির উপর নির্ভর কোরেছে। এ ছাড়াও যে বিশেষ সমাজে বা জাতিতে একজন রসুল প্রেরিত হোয়েছেন সে জাতির বা সমাজের কতখানি বিবর্ত্তন ভিত্তিক অগ্রগতি হোয়েছে তার উপর নির্ভর কোরছে সেই নবীকে কোন ধরনের মো’জেজার শক্তি দেয়া হবে তা। বহু পুরোনো রসুলদের কাকে কী ধরনের মো’জেজার শক্তি দেয়া হোয়েছিলো তার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য আমরা পাই না। কিন্তু তুলনামূলকভাবে আধুনিক নবীদের মো’জেজার যে নির্ভুল তথ্য পাই তাতে দেখা যায় মুসাকে (আ:) মুখোমুখি হোতে হোয়েছিলো মিশরের যাদুকরদের। এর কারণ আছে। তখন মিশর পৃথিবীর প্রচণ্ড শক্তিধর রাজত্ব গুলির একটি। শাসনকর্ত্তা ফেরাও সর্বময় কর্ত্তা। দেবতা ‘রা’ এবং সময়ান্তরে ‘আমন’ দেবের পুরোহিতরাই স্থির করতেন ধর্মীয় এবং জাতীয় সব কাজকর্ম। এই পুরোহিতরা পূর্ববর্ত্তী ব্যাবিলনীয় যাদুবিদ্যা, যে সম্বন্ধে স্বয়ং আল্লাহ কোর’আনে উল্লেখ কোরেছেন
এবং সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়ত্বানরা যা পাঠ করত, তারা তা অনুসরণ করত, মূলতঃ সুলায়মান কুফরী করেনি বরং শয়ত্বানরাই কুফুরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত এবং যা বাবিলের দু’জন ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর পৌঁছানো হয়েছিল এবং ফেরেশতাদ্বয় কাউকেও (তা) শিখাতো না যে পর্যন্ত না বলত, আমরা পরীক্ষা স্বরূপ, কাজেই তুমি কুফরী কর না,এতদসত্ত্বেও তারা উভয়ের নিকট হতে এমন জিনিস শিক্ষা করতো, যদ্বারা তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতো, মূলতঃ তারা তাদের এ কাজ দ্বারা আল্লাহর বিনা হুকুমে কারও ক্ষতি করতে পারত না, বস্তুতঃ এরা এমন বিদ্যা শিখত, যদ্দ্বারা তাদের ক্ষতি সাধিত হত আর এদের কোন উপকার হত না এবং অবশ্যই তারা জানত যে, যে ব্যক্তি ঐ কাজ অবলম্বন করবে পরকালে তার কোনই অংশ থাকবে না, আর যার পরিবর্তে তারা স্বীয় আত্মাগুলোকে বিক্রয় করেছে, তা কতই না জঘন্য, যদি তারা জানত!-আল-বাকারা-১০২
সেই সব যাদুবিদ্যা ভালো ভাবে রপ্ত কোরে নিয়েছিলেন এবং সেই যাদুবিদ্যার জোরে জনসাধারণকে অভিভূত কোরে রেখেছিলেন। কাজেই মুসা (আ:) আল্লাহর আদেশে ফেরাও এর দরবারে যেয়ে যখন বোললেন- আমাকে পাঠানো হোয়েছে আপনার কাছে এই কথা বোলতে যে, “আমি পৃথিবীর সমস্ত জাতিসমূহের প্রভুর প্রেরিত। প্রভুর ব্যাপারে আমার সত্য ছাড়া আর কিছু বলা সম্ভব নয়। সেই প্রভুর কাছ থেকে আমি পরিষ্কার নিদর্শন নিয়ে এসেছি, আপনাকে এই বোলতে যে আপনি বনি-ইসরাইলীদের আমার সঙ্গে (মিশর থেকে) চলে যেতে দিন”, তখন ফেরাও তাকে সেই পুরানো কথাই বোললেন- অর্থাৎ (হে মুসা) আপনার কথার সত্যতার প্রমাণ কি? যদি কোন নিদর্শন (আয়াত) এনে থাকেন তবে তা দেখান। কোরআনে সূরা আল-আরাফের ১০৩ থেকে ১২২ পর্যন্ত বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। নবী প্রমাণ কোরতে মুসাকে (আ:) মুখোমুখী হোতে হলো মিশরের পুরোহিত শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ যাদুকরদের। তার হাতের লাঠি সাপ হোয়ে যাদুকরদের সব সাপ খেয়ে ফেলা ছাড়াও পরে বন্যা, ফড়িং, পোকা, ব্যাঙ ও নদীর পানি রক্তে পরিণত করার মো’জেজা দেখাতে হোয়েছিলো তা পৃথিবীর শেধষ্ঠতম যাদুকরের পক্ষেও অসম্ভব।

তারপর মো’জেজা নিয়ে এলেন ঈসা (আ:)। তিনি এলেন ফেরাও এর মত কোন শক্তিশালী রাজার মুখোমুখি হোতে নয়। বনী ইসরাইল জাতি যদিও তখন মুসার (আ:) মাধ্যমে দেয়া জীবন পথই অনুসরণ কোরে চোলছিলো, কিন্তু পূর্বতন জীবন বিধান গুলির মতো ওটাও আত্মা বা উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে, ছোটখাট বিষয়ের অতি বিশ্লেষণ নিয়ে বর্ত্তমানে আমাদের মত বিরামহীন তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদিতে ব্যস্ত ছিলো। তাদের পুরোহিত অর্থাৎ রাব্বাই, সাদ্দুসাই এবং ধর্ম সম্বন্ধে পণ্ডিতগণ ধর্মের অবিশ্রান্ত চুলচেরা বিচার কোরতে কোরতে এমন অবস্থায় এসে পড়ছিলেন যে সেই জীবন পথের আসল উদ্দেশ্যই হারিয়ে গিয়েছিলো, আজকের ইসলাম নামের ধর্মের মত। শাস্তি হিসাবে আল্লাহ ইতিমধ্যেই মুসার (আ:) অনুসারীদের ইউরোপের রোমানদের পদানত দাসে পরিণত কোরে দিয়েছিলেন, যেমন এই মুসলিম বোলে পরিচিত জাতিটাকেও আল্লাহ একই কারণে ইউরোপের বিভিন্ন জাতির ক্রীতদাসে
পর্যবসিত কোরে দিয়েছিলেন। যাই হোক, ঈসাকে (আ:) পাঠানো হলো ঐ পথভ্রষ্ট বনি ইসরাইলীদের পথে আনতে। নিজেকে আল্লাহর নবী বোলে প্রমাণ কোরতে তাকে যে সব মো’জেজা দেখাতে হোয়েছিলো তাতে কিন্তু যাদুকরদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা কোরতে হয় নি। তার মো’জেজা হলো শিশু অবস্থায় দোলনা থেকে কথা বলা, জন্মান্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া, মরাকে জীবন দান, শুধু পাঁচটি রুটি ও দু’টি মাত্র মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার লোককে পেট ভরে খাওয়ানো ইত্যাদি। এসব কিছু ছিলো ইহুদীদের কাছে প্রমাণ কোরতে যে তিনি সাধারণ লোক নন, তিনি স্রষ্টার প্রেরিত। কিন্তু এসব চোখের সামনে দেখেও তার নিজের জাতি ইহুদীরা বিশেষ কোরে তাদের পুরোহিত রাব্বাই, সাদ্দুসাইরা তাদের প্রভু ও শাসনকর্ত্তা রোমানদের কাছে নালিশ কোরে তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়ালো। যদিও সে প্রানদণ্ড কার্যকরী করার আগেই আল্লাহ তাকে স্বশরীরে অন্য জগতে উঠিয়ে নিলেন এবং তার যে শিষ্য বিশ্বাসঘাতকতা
কোরে ঈসাকে (আ:) ধরিয়ে দিয়েছিলো তার চেহারা ঠিক ঈসার (আ:) মত কোরে দিলেন এবং রোমান এবং ইহুদী পুরোহিতরা ঈসা (আ:) মনে কোরে তাকে ক্রূশে উঠিয়ে হত্যা করলো।
এই বিষয় গুলো নিয়ে কোরআনে আলোচনা হয়েছে, সূরা আল-মায়েদা, আলে-ইমরান, আন-নিসা তে।

তারপর এলেন আদম সন্তানের মুকুটমণি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মানুষ, আল্লাহর শেষ প্রেরিত মোহাম্মাদ (সাঃ)। এবার কিন্তু স্থান, কাল, পাত্র সব অন্য
রকম। প্রথম প্রভেদ হলো এই যে, এর আগে আল্লাহর যত বার্ত্তাবাহী এসেছেন তারা জীবনপথ ‘দীন’ নিয়ে এসেছেন তাদের যার যার জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য, তাদের সমস্যা ও প্রয়োজন মোতাবেক। মোহাম্মাদ (সাঃ) নিয়ে এলেন আইন-কানুন-দণ্ডবিধিসহ পূর্ণ জীবন বিধান সমগ্র মানব জাতির জন্য। দ্বিতীয় প্রভেদ হলো- স্রষ্টার বার্ত্তাবাহীদের লাইনে মোহাম্মাদ (সাঃ) হোলেন শেষ। এরপর পৃথিবীর ও মানব জাতির আয়ুষ্কালের মধ্যে আর কেউ বার্ত্তা-জীবন ব্যাবস্থা নিয়ে আসবেন না। এর আগের নবীদের যে মো’জেজা, যা তারা দেখিয়েছেন সেগুলি তাদের যার যার জাতি গুলিকেই দেখিয়েছেন, তাদের উপর বিশ্বাস, ঈমান আনার জন্য। সেই মো’জেজা বা আপাতো অসম্ভব কাজ সম্ভব কোরে দেখানো- তাদের যার যার জাতি গোষ্ঠী গুলিই দেখেছে। বাকি পৃথিবীর মানুষ দেখেনি, তাদের দেখবারও সে নবীদের উদ্দেশ্য ছিলো না, কারণ তারা গোটা পৃথিবীর জন্য প্রেরিত হন নি। তারা পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর আর কেউ সেই সব মো’জেজা দেখতে পায়নি। দেখার প্রয়োজনও থাকেনি এজন্য যে কিছুদিন পরই আবার অন্য প্রেরিত এসেছেন এবং আবার মানুষ অন্য মো’জেজা দেখতে পেয়েছে। মুসার (আ:) লাঠির আঘাতে লোহিত সাগর দু’ভাগ হোয়ে পথ কোরে দিয়েছে ইসরাইলীদের পার হবার জন্য। কিন্তু সারা জীবন লোহিত সাগরের কুলে বোসে থাকলেও আর তাকে দু’ভাগ হোয়ে পথ কোরে দিতে দেখতে পাব না। ঈসা (আ:) দু’তিন দিন আগে মরে যাওয়া মৃতদেহকে আদেশ কোরলেন- ল্যাযারাস ওঠ! ল্যাযারাস প্রাণ ফিরে পেয়ে জীবিত মানুষ হোয়ে গেলো, বিশ্বাস করি। কিন্তু দেখেনি। দেখতেও পাব না। কারণ ল্যাযারাস আবার মরে গেছেন আর উঠবেন না। কারোরই মো’জেজা স্থায়ী নয়, অস্থায়ী, যার যার সময়ের, যার যারস্থানের।

কিন্তু এবার যিনি এলেন তাকে তার (সা:) পূর্বসুরীদের মত হোলে চোলবে না। তার মো’জেজাও তার পূর্বসুরীদের মো’জেজার মত অস্থায়ী হোলে চোলবে না- কারণ তিনি শেষ প্রেরিত। প্রথমতঃ তিনি যে প্রেরিত সে নিদর্শন, প্রমাণ হোতে হবে চিরস্থায়ী। তার সময়ের থেকে হাজার দশ হাজার বছর পরে নয়, পৃথিবী এবং মানব জাতির আয়ু যতদিন আছে ততদিন পর্য্যন্ত তার মো’জেজা স্থায়ী হোতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ পূর্বসুরীদের মো’জেজা তাদের নিজেদের জাতি, গোষ্ঠীরা দেখতে পেয়েছে। কারণ শুধু তাদের জন্যই তারা প্রেরিত হোয়েছিলেন, অর্থাৎ স্থানীয়। মোহাম্মাদ (সাঃ) -এর বেলায় তাও হোলে চোলবে না, মোহাম্মাদ (সাঃ) -এর মো’জেজা’ দেখতে পেতে হবে পৃথিবীর সবার। কারণ তিনি বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত। এক কথায় এই শেষ এবং শ্রেষ্ঠতম রসূলের (সা:) মো’জেজা হোতে হবে এমন যে, পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তা দেখতে পায় এবং শুধু তাই নয়, পৃথিবী ও মানব জাতি যত দিন আছে ততদিনই দেখতে পায়। এমন মো’জেজা কি সম্ভব? এমন মো’জেজা কি মানব জাতির আদর্শ সেই তুলনাহীন মানুষটি দেখিয়েছেন? হ্যাঁ দেখিয়েছেন।

শেষ প্রেরিত মোহাম্মাদ (সাঃ) -কে যখন জিজ্ঞাসা করা হতো- আল্লাহর অন্যান্য নবীদের (আ:) মো’জেজা ছিলো, আপনার মো’জেজা কি? তখন তিনি জবাব দিতেন- আমার মো’জেজা কোর’আন। যদিও কোর’আন তার (সা:) একমাত্র মো’জেজা নয়। কিন্তু সত্যই তার সর্ব প্রধান মো’জেজা কোর’আন। কেমন কোরে তার কিছুটা ব্যাখ্যা দরকার।

আগের পোস্ট

Leave a Reply