You are currently viewing হযরত মোহাম্মাদ (সা:) এর আগমনের উদ্দেশ্য ও রাসূল্লাহর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ
প্রকৃত-সুন্নাহ

হযরত মোহাম্মাদ (সা:) এর আগমনের উদ্দেশ্য ও রাসূল্লাহর (সা:) প্রকৃত সুন্নাহ

এই শেষ মোহাম্মাদ (সা:) আগে যে সব জীবন ব্যবস্থা, দীন আল্লাহ পাঠিয়েছেন। সে গুলি মানুষ কেমন কোরে বিকৃত, অকেজো কোরে ফেলেছে তা অবশ্যই আল্লাহ জানতেন। তাই এবারও যাতে এই শেষ দীনের ঐ বিকৃতি না হয় সেজন্য আল্লাহ তার কোর’আনে কতক গুলি সতর্কবাণী পরিষ্কারভাবে নিবন্ধভুক্ত কোরলেন। এই মহা প্রয়োজনীয় ব্যাপারে শুধু যে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক কোরলেন তাই নয়, তার প্রেরিত বিশ্বনবীও (সা:) যে সব ভাবে পুর্ববর্ত্তী জীবন বিধান গুলি বিকৃত হোয়ে গেছে সেই সব প্রতিটি ব্যাপারে তার অনুগামীদের, তার জাতিকে বারবার সতর্ক কোরে দিলেন। এর আগে ধর্মের বিকৃতি অধ্যায়ে যে সব কারণ লিখে এসেছি এখন তা একটা একটা কোরে লক্ষ্য কোরুন।

ক) মোহাম্মাদ (সা:) -এর পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার পর অতি ভক্তির প্রাবল্যে তাকে ক্রমশঃ উর্দ্ধে উঠাতে উঠাতে স্বয়ং স্রষ্টার, আল্লাহর আসনে বসিয়ে দেয়া বা স্রষ্টাই নবীর মুর্ত্তিতে স্বশরীরে আবির্ভূত হোয়েছিলেন বিশ্বাস ও প্রচার করা। মোহাম্মাদ (সা:) -এর অনুসারীরাও যেন সে ভুল না করে সেজন্য আল্লাহ পরিষ্কার বোলে দিলেন- (মোহাম্মাদ হচ্ছে একজন রসূল মাত্র, তাঁর পূর্বে আরও অনেক রসূল গত হয়েছে; কাজেই যদি সে মারা যায় কিংবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা উল্টাদিকে ঘুরে দাঁড়াবে? এবং যে ব্যক্তি উল্টাদিকে ফিরে দাঁড়ায় সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে অতিশীঘ্র বিনিময় প্রদান করবেন।-সুরা-আলে-ইমরান-১৪৪)। তার প্রেরিত রসুলও (সা:) বারবার একথা এমন জোরালোভাবে বোলে গেলেন যে তা তার জাতির হৃদয়ে প্রোথিত হোয়ে গেলো।
খ) পূর্ববর্ত্তী নবীদের উম্মাহ গুলির মত ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থাকে অতি বিশ্লেষণ কোরে ধ্বংস যাতে না করে সে জন্য আল্লাহ সাবধানবাণী উচ্চারণ কোরলেন- দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোর না। “দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোর না” আল্লাহর এই কথার উদ্ধৃতি দিয়েছি কোর’আনের সূরা নিসার ১৭১ নং এবং সুরা মায়েদার ৭৭ নং আয়াত থেকে এবং উভয় স্থানেই আল্লাহ সম্বোধন কোরেছেন আহলে কেতাব অর্থাৎ ইহুদী খ্রীস্টান ইত্যাদিদের। যারা এই বইয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন না এবং তন্ন তন্ন কোরে এর খুঁত বের করার চেষ্টা কোরবেন, তারা বোলবেন ঐ আয়াত দু’টিতে আল্লাহ ইহুদী, খ্রীস্টানদের সম্বোধন কোরেছেন, কাজেই ও গুলি মুসলিমদের উপর প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে আমার নিজের কিছুটা সন্দেহ থাকায় আমি কোর’আন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট মুফাস্সিরদের পরামর্শ নিয়েছি। তাদের অভিমত এই যে, ইহুদী ও খ্রীস্টানদের সম্বোধন কোরে বোললেও ঐ আয়াত গুলি মুসলিমদের উপরও প্রযোজ্য। তারপর সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ হোলাম যখন দেখলাম বিদায় হজ্বে রসুলাল্লাহ (সা:) তার উম্মাহকে লক্ষ্য কোরে ঐ একই কথা বোললেন। অর্থাৎ দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। বিদায় হজ্বে মোহাম্মাদ (সা:) তো আর ইহুদী নাসারাদের সম্বোধন কোরছিলেন না, যে সব বিষয়ে তার উম্মাহ ভুল কোরে গোমরাহ হোয়ে যাবার বিষয়ে তিনি আশংকা ও ভয় কোরছিলেন সেই বিষয়ে উম্মাহকে শেষবারের মত সাবধান কোরে দিচ্ছিলেন।
রসুল (সা:) আল্লাহর এই বাণীকে ব্যাখ্যা কোরে তার সাহাবা, সাথীদের বোললেন- আমাকে বেশী প্রশ্ন কোর না। তোমাদের পূর্ববর্ত্তী জাতি (উম্মাহ) গুলো
তাদের নবীদের বেশী প্রশ্ন কোরত। তাই নিয়ে মতভেদ, দলাদলি কোরে ধ্বংস হোয়ে গেছে। কাজেই আমি যেটুকু কোরতে বলি সেটুকুই কর। বেশী কোরতে গেলে আগের জাতি গুলির মত ধ্বংস হোয়ে যাবে।

গ) পূর্ববর্ত্তী উম্মাহ গুলির পতনের আরেকটি কারণ ছিলো এই যে, তাদের নবীদের উপর অবতীর্ণ বই গুলি তারা হয় বিকৃত কোরে ফেলেছিলো না হয় যুদ্ধবিগ্রহ বা প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হোয়ে গিয়েছিলো। এই শেষ বইও যে তিনি নিজে রক্ষা না কোরলে তার শেষ নবীর (সা:) অনুসারীরা বিকৃত কোরে ফেলবে তা তিনি জানতেন- তাই এটার রক্ষার ভার তার নিজের হাতে রাখলেন।

এই শেষ ও বিশ্বনবী (সা:) কী কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হোয়ে কী অবর্ণনীয় দুঃখ ও কষ্ট কোরে তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালন কোরলেন তার বর্ণনা এখানে দরকার নেই- কারণ তা ইতিহাস। আমাদের বিষয় ইতিহাসের চেয়েও বহু প্রয়োজনীয়, যা দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি হয় তা। পূর্ববর্ত্তী নবীদের যে কারণে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তার এই শেষ নবীকেও সেই একই উদ্দেশ্যে পাঠালেন, অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষের জীবনে শান্তি, ইসলাম প্রতিষ্ঠা কোরতে। তাকে নির্দেশ দিলেন- পৃথিবীতে যত রকম জীবন ব্যবস্থা দীন আছে সমস্ত গুলিকে নিষক্রিয়, বাতিল কোরে এই শেষ জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরতে।
তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা অপছন্দ করে।- সূরা-আত তওবা-৩৩
তিনি তাঁর রাসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্ত দীনের উপর একে জয়যুক্ত করার জন্য। সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।- সূরা-আল-ফাতাহ-২৮
তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। – সূরা-আস সফ-৯

কারণ শান্তির একমাত্র পথই আল্লাহর দেয়া ঐ জীবন বিধান। আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ নবীকে শুধু নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি শেখাতে পাঠান নি, ও গুলো তার সেই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে জাতির দরকার সেই জাতির চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীমকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা।

এই বিশাল দায়িত্ব, সমস্ত পৃথিবীময় এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করা এক জীবনে অসম্ভব। মোহাম্মাদ (সা:) তার নবীজীবনের তেইশ বছরে সমস্ত আরব উপদ্বীপে এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা কোরলেন- ইসলামের শেষ সংস্করণ মানব জীবনের একটি অংশে প্রতিষ্ঠা হলো। কিন্তু তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ না, তার দায়িত্ব সমস্ত পৃথিবী, সম্পূর্ণ মানব জাতি। এর আগে কোন নবীর উপর সম্পূর্ণ মানব জাতির দায়িত্ব অর্পিত হয় নি। যতদিন সম্পূর্ণ মানব জাতির উপর এই শেষ জীবন বিধান জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন মানুষ জাতি আজকের মতই অশান্তি, যুদ্ধবিগ্রহ, অবিচারের মধ্যে ডুবে থাকবে- শান্তি, ইসলাম আসবে না এবং বিশ্বনবীর (সা:) উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বও পূর্ণ হবে না।

আল্লাহর রসুল (সা:) আংশিকভাবে তার দায়িত্বপূর্ণ কোরে চলে গেলেন এবং তার বাকী কাজ পূর্ণ করার ভার দিয়ে গেলেন তার সৃষ্ট জাতির উপর, তার উম্মাহর উপর। প্রত্যেক নবী তার উপর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ কোরেছেন তার অনুসারীদের, তার উম্মাহর সাহায্যে। কোন নবীই একা একা তার কাজ, কর্ত্তব্য সম্পাদন কোরতে পারেন নি। কারণ তাদের প্রত্যেকেরই কাজ জাতি নিয়ে, সমাজ, জনসমষ্টি নিয়ে, ব্যক্তিগত নয়। কেউই পাহাড়ের গুহায়, নির্জনে, বা হুজরায় বোসে তার কর্ত্তব্য করেননি, তা অসম্ভব ছিলো। মোহাম্মাদ (সা:) -এর বেলাও তার ব্যতিক্রম হয় নি। নবুয়ত পাবার মুহূর্ত্ত থেকে ওফাত পর্য্যন্ত পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষটির জীবন কেটেছে মানুষের মধ্যে, জনকোলাহলে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামে, সশস্ত্র সংগ্রামে- এ ইতিহাস অশ্বীকার করার কোন উপায় নেই। নবুয়তের সমস্ত জীবনটা বহির্মুখী- যে দীন তিনি আল্লাহর কাছ থেকে এনে আমাদের দিলেন সেটার চরিত্রও হলো বহির্মুখী সংগ্রামী। আল্লাহর মোহাম্মাদ (সা:) তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যে তার উম্মাহর উপর ন্যস্ত কোরে গেলেন তা যে তার উম্মাহ পূর্ণভাবে উপলব্ধি কোরতে পেরেছিলো তার প্রমাণ হলো, তার উম্মাহর পরবর্ত্তী কার্য্যক্রমের ইতিহাস। কারণ বিশ্বনবীর (সা:) লোকান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ তাদের বাড়ীঘর, স্ত্রী-পুত্র, ব্যবসায়-বাণিজ্য এক কথায় দুনিয়া ত্যাগ কোরে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ কোরতে দেশ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলো। এ ইতিহাস অশ্বীকার করারও কোন পথ নেই। মানুষের ইতিহাসে এমন ঘটনা নেই যে, একটি সম্পূর্ণ জাতি এক মহান আদর্শ পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পার্থিব সব কিছু ত্যাগ কোরে দেশ থেকে বের হোয়ে পড়েছে। এবং সে মহান আদর্শ হোচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এমন একটি জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেটা মানুষের সমষ্টিগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে পূর্ণ শান্তি আনবে। অর্থাৎ এই জাতিটি তাদের নেতা আল্লাহর শেষ নবী (সা:) যেমন কোরে মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ কোরে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি কোরে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেদের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। তাদের নেতা তাদের বোলেছিলেন আমাকে অনুসরণ কর, আমার সুন্নাহ পালন কর, যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে সে আমার কেউ নয় (হাদীস)। নেতার সুন্নাহ কি? আল্লাহ তার নবীকে (সা:) নির্দেশ দিচ্ছেন পৃথিবীতে যত জীবন বিধান আছে সে সমস্ত গুলির উপর তোমার কাছে অবতীর্ণ এই জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠা কর। মোহাম্মাদ (সা:) সারাজীবন ধোরে তাই কোরলেন এবং যাবার সময় তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভার দিয়ে গেলেন তার সৃষ্ট জাতিটার উপর। স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল (সা:) যে জাতি সৃষ্টি কোরলেন সে জাতিও সর্বশ্রেষ্ঠ, সে জাতি- সে উম্মাহ, তাদের নেতার উপর অর্পিত দায়িত্বপূর্ণ কোরতে সমস্ত কিছু কোরবান কোরে নেতার পাশে এসে দাঁড়ালো, নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ কোরে দিলো।

এই উম্মাহর সহায়তায় শেষ নবী (সা:) সমস্ত আরবে শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা কোরে চলে গেলেন। তার সৃষ্ট জাতি কিন্তু ভুলে গেলেন না যে তাদের নেতার দায়িত্ব শেষ হয় নি, তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব হোচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠা করা। কারণ তিনি ছিলেন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরিত এবং সেই দায়িত্ব এসে পড়েছে এবার তাদের উপর। তাই ইতিহাসে দেখি মোহাম্মাদ (সা:) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ পৃথিবীর সমস্ত কিছু ত্যাগ কোরে আরব থেকে বের হোয়ে পড়েছিলো। একটা জাতি তাদের দেশ ত্যাগ কোরে অন্যস্থানে চলে গেছে, এমন ঘটনা ইতিহাসে আছে। কিন্তু সে গুলোর কারণ দিগ্বিজয়, অন্য জাতির আক্রমণ, দুর্ভিক্ষ, আবহাওয়ার পরিবর্ত্তন হোয়ে দেশ বাসের অযোগ্য হোয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু একটা আদর্শস্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা গোটা জাতির দেশ থেকে বের হোয়ে যাওয়া মানুষের ইতিহাসে আর নেই। আমরা যদি আমাদের মুসলিম জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে চাই তবে ইতিহাসের এই নজীরবিহীন ঘটনাকে আমাদের গভীর ভাবে বুঝতে হবে। প্রথম কথা হলো বিশ্বনবীর সঙ্গীরা (রা:) আসহাবরা এই যে অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হোয়ে পড়লেন এ কাজ ঠিক হলো কি হলো না? মোহাম্মাদ (সা:) জীবনভর যে শিক্ষা দিলেন ঐ কাজটি সে শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপুর্ণ কি না? যদি না হোয়ে থাকে তবে পরিষ্কার বলা যায় যে, আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূলের (সা:) জীবন বৃথা। কারণ তার ওফাতের কয়েক মাসের মধ্যেই তার সৃষ্ট জাতি, উম্মাহ, তার একান্ত সঙ্গী সহচররা তার শিক্ষার বহির্ভূত একটি কাজ আরম্ভ কোরে দিলেন। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে, সমগ্র জাতিটা একযোগে এ কাজটা আরম্ভ কোরে দিলো এবং পাঁচ লক্ষ মানুষের জাতিটির মধ্য থেকে একটি মানুষও এর প্রতিবাদ তো দূরের কথা, সর্ব প্রকারে ঐ কাজে সাহায্য কোরলেন। বহু হাদীস উল্লেখ করা যায় যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, শেষনবী মোহাম্মাদ (সা:) নিশ্চিত ছিলেন যে তার সাহাবারা (রা:) তার দেয়া শিক্ষায় সম্পূর্ণভাবে শিক্ষিত হোয়েছিলেন, তার শিক্ষার মর্মবাণী তারা উপলব্ধি কোরতে পেরেছিলেন এবং তাদের নেতার, বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (সা:) প্রকৃত নায়েব অর্থাৎ প্রতিনিধি হবার যোগ্যতা অর্জন কোরেছিলেন।

এ ব্যাপারে দু’একটি হাদীস উল্লেখ করা অসঙ্গত হবে না। মোহাম্মাদ (সা:) বোলেছেন- আমার সঙ্গীরা উজ্জল তারকার মত- তাদের যে কাউকে মানুষ অনুসরণ কোরতে পারে(হাদীস ওমর বিন খাত্তাব (রা:) থেকে রাযিন মেশকাত)। এর অর্থ হোচ্ছে মহানবী শ্বয়ং তার সঙ্গীদের ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া কি সবই শিক্ষা দিয়েছেন সুতরাং প্রকৃত ইসলাম কি তা ঐ আসহাবদের চেয়ে বেশী কেউ জানতে বুঝতে পারতে পারে না, তা অসম্ভব। কারণ তারা আল্লাহর রসূলের সঙ্গে সর্বদা থেকে, তার সঙ্গে অবিরত সংগ্রাম কোরে তার প্রতি সুখ-দুঃখে অংশীদার হোয়ে যে প্রকৃত শিক্ষা তার কাছ থেকে লাভ কোরেছেন সে শিক্ষা পরবর্ত্তীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আরেকটি হাদীসে বিশ্বনবী (সা:) বোলেছেন আমার উম্মাহ ভবিষ্যতে তেহাত্তর ভাগে (ফেরকায়) বিভক্ত হোয়ে যাবে। এবং ঐ তেহাত্তর ফেরকার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী (অর্থাৎ সঠিক ইসলামে থাকবে) আর বাকী বাহাত্তর ফেরকাই আগুনে নিক্ষিপ্ত (না’রি) হবে। ঐ একমাত্র জান্নাতী ফেরকা কোনটা এই প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রসুল (সা:) বোললেন, যার উপর আমি ও আমার সাহাবীরা আছি(হাদীস- আবদুল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- তিরমিযি, মেশকাত।)। এ ব্যাপারে অগুনতি হাদীস উল্লেখ করা যায় যাতে সংশয়ের কোন অবকাশ থাকে না যে মোহাম্মাদ (সা:) জানতেন যে তিনি তার আসহাবদের প্রকৃত দীন শিক্ষা দিতে সক্ষম হোয়েছিলেন।

এখন একটা অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন হোচ্ছে এই, যে কাজটা শেষ নবীর (সা:) উম্মাহ তার ওফাতের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরম্ভ কোরে দিলো অর্থাৎ অস্ত্র হাতে স্বদেশ থেকে বের হোয়ে পড়লো এর অর্থ কি? আবার বোলছি এই জীবন ব্যবস্থায় অর্থাৎ ইসলামের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির গুরুত্ব নির্দেশনায় এই ঘটনা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। উম্মতে মোহাম্মদীর পতনের মূলে যে কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ কোরেছে তার মধ্যে অন্যতম হোচ্ছে এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যায়ণে পরবর্ত্তী কালের উম্মাহর ব্যর্থতা। ইসলামকে যারা বিকৃতরূপে দেখাতে চান তারা বলেন- এই অভিযান ছিলো একটি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। একথা সত্যি হোলে দুঃখের সঙ্গে বোলতে হয় যে, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানব জাতির আদর্শ, যাকে আল্লাহ স্বয়ং পৃথিবীর উপর তার রহমত, করুণা বোলে বর্ণনা কোরেছেন তিনি একটি পরদেশলোভী রক্তপিপাসু জাতি সৃষ্টি কোরে গিয়েছিলেন। এই অভিযোগ যে সত্য নয় তার প্রমাণ হলো এই যে, আলেকজাণ্ডার, চেঙ্গিস, হালাকু খানের সাম্রাজ্যবাদী বিজয় ছিলো ক্ষণস্থায়ী। এগুলোর আয়ু কয়েক বছরের বেশী হতে পারে নি কোথাও। আর মোহাম্মদের (সা:) উম্মাহর অভিযানের ফলে পৃথিবীর যে অংশটুকুতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোয়েছিলো সেটুকুতে আজ চৌদ্দশ’ বছর পরও তা মৃতপ্রায় হোলেও বেঁচে আছে। ইসলামকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টায় অন্য যে অভিযোগটি করা হয় তা হোচ্ছে, উম্মতে মোহাম্মদীর ঐ সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে জোর কোরে ধর্মান্তরিত করা। এ অভিযোগও যে মিথ্যা তার প্রমাণ হলো এই যে, যে বিরাট এলাকায় এই শেষ জীবন ব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা কোরেছিলেন সে এলাকা তারা একচ্ছত্রভাবে শাসন কোরেছেন বহু শতাব্দী ধোরে। জোর কোরে ধর্মান্তরিত কোরলে মরক্কো থেকে বোর্নিও পর্য্যন্ত এই ভূভাগে আজ ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্মের অস্তিত্ব থাকতো না। তদানিন্তন পৃথিবীর বোধহয় সবচেয়ে পশ্চাদপদ, সবচেয়ে অশিক্ষিত, সবচেয়ে দরিদ্র এই জাতিটি হঠাৎ কোরে মরুভূমির গভীর অভ্যন্তর থেকে একযোগে বেরিয়ে এসে শক্তিশালী সভ্যজগতের মুখোমুখী হোয়ে
দাঁড়ালো। এ কথা বুঝতে কোন অসুবিধা নেই যে, ঐ উম্মাহ নিশ্চয়ই ঐ কাজটাকে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ত্তব্য বোলেই বিবেচনা কোরেছিলেন। তা না হলে রসুলাল্লাহর (সা:) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তারা একযোগে ঐ কাজ কোরতে সব কিছু ত্যাগ কোরে আরব থেকে বের হোয়ে পড়তেন না। বিশ্বনবীর (সা:) সাহচর্যে থেকে তার কাছ থেকে সরাসরি যারা এই জীবন ব্যাবস্থার মর্মবাণী, উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া শিক্ষা কোরেছিলেন তারা কি বোঝেন নি কোন কর্ত্তব্য বড়, কোন কর্ত্তব্য ছোট? কোনটা আগে কোনটা পরে ? মহানবীর (সা:) আসহাব যদি তা না বুঝে থাকেন তবে আমরা চৌদ্দশ’ বছর পরে তা বোঝার কথা চিন্তাও কোরতে পারি না। তাহলে বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (সা:) -এর উম্মাহর ঐ কাজের প্রকৃত অর্থ কি?

এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীর আরব থেকে বের হোয়ে অন্যান্য জাতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হোয়ে যাওয়ার প্রকৃত অর্থ এই যে, রসুলাল্লাহর (সা:) কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম শিক্ষা করার ফলে তারা সঠিকভাবে বুঝেছিলেন ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কি, কোনটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কোনটা কম প্রয়োজনীয়। তারা বুঝেছিলেন আল্লাহর প্রতি ইবলিসের চ্যালেঞ্জ হোচ্ছে সে মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে দীন অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে হয় বিকৃত না হয় অস্বীকার কোরিয়ে মানুষকে দিয়ে বিধান তৈরী কোরিয়ে মানুষকে অশান্তি, অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাতের মধ্যে পতিত করাবে। আর সেই অন্যায়, অবিচার আর রক্তপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ যে জীবন ব্যবস্থা তার নবীর (সা:) মাধ্যমে পাঠালেন সেটাকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা হোচ্ছে তাদের সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম কর্ত্তব্য। ঐ শিক্ষাই তাদের নেতা, স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তার শেষ ও বিশ্বনবী (সা:) তাদের দিয়ে গিয়েছিলেন, নিজে কোরে তাদের হাতে কলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ মানব জাতিকে অশান্তি, অবিচার, অন্যায়, রক্তপাত, যুদ্ধ থেকে বাঁচাবার জন্য পৃথিবীতে শান্তি, ইসলাম, প্রতিষ্ঠার জন্য, যে জন্য বিশ্বনবীকে (সা:) আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, ঐ জাতি নিজেদের সব কিছু কোরবান কোরে সেই কাজ কোরতে আরব থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

Leave a Reply