মুমিনের সংজ্ঞা আর বৈশিষ্ট্য এই দুইটাকে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। সুরা মুমিনুনের প্রারম্ভে যেটা আছে সেটা হলো বৈশিষ্ট্য, আর সুরা ‘হুজুরাতের’১৫ নম্বর আয়াতে আছে মুমিনের সংজ্ঞা।
সংজ্ঞা হলো, আল্লাহ বলেছেন, মু’মিন শুধু তারাই, যারা আল্লাহ ও রসুলের প্রতি বিশ্বাস ধারণ করে, এর উপর দৃঢ়পদ থাকে এবং জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে। (সুরা হুজরাত ১৫)।
অর্থাৎ যারা সত্যের পক্ষে এবং মিথ্যার বিপক্ষে অবস্থান নেবে এবং নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করে মানবতার কল্যাণসাধনে আত্মনিয়োগ করবে তারাই মুমিন। এই কাজগুলো যিনি করবেন তাঁর চরিত্রে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হবে যেগুলো তার ব্যক্তিত্বে প্রকাশিত হবে। যেমন সুরা মু’মিনুন এ আছে, মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী-নম্র, যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে সাবধান থাকে এবং যারা তাদের নামাযসমূহের খবর রাখে। সুরা ‘আহযাবের’৩৫ নন্বর আয়াতে বলেছেন যে, আনুগত্যকারী, বিনীত, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, দানশীল, সিয়াম পালনকারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী মুমিন-মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপুরস্কার রেখেছেন। এমনি করে খুঁজলে কোর’আনে মুমিনের ৩০ টিরও বেশি চারিত্রিক গুণাবলীর কথা আমরা জানতে পারি। যে মোমেনের চরিত্রে এই গুণগুলো বিকশিত হবে, যত বেশি বিকশিত হবে তিনি মুমিনদের মধ্যে তত উচ্চ স্তরে উন্নীত হবেন। কিন্তু মোমেনের খাতায় নাম ওঠাতে হলে প্রথমে সংজ্ঞা পূরণ করতে হবে। আগে স্কুলে ভর্তি হতে হয়, তারপরে কেউ ভালো ছাত্র হয় কেউ খারাপ ছাত্র হয়। এগুলো হচ্ছে তাদের বৈশিষ্ট্য কিন্তু ছাত্র হতে হলে ভর্তি হতে হবে। এটা ছাত্রের সংজ্ঞা। তেমনি মোমেনের সংজ্ঞা হচ্ছে সুরা হুজুরাতের ১৫ নম্বর আয়াত। এখন কেউ যদি বৈশিষ্ট্যগুলিকেই মুমিন হওয়ার শর্ত মনে করেন, সেক্ষেত্রে নবী-রসুল ছাড়া পৃথিবীতে কোনো মানুষই এই সবগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এক জীবনের সাধানায়ও পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারবে না, অতএব মুমিনও হতে পারবে না কেউ, জান্নাতেও যেতে পারবে না। কাজেই এটা অসম্ভব।