হ্যাঁ। সৃষ্টি বা ক্রিয়েচার হিসাবে পৃথিবীর সমস্ত গরু যেমন এক জাতি, তেমনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এক জাতি। এই হিসাবে আপনার কথা ঠিক আছে। কিন্তু গরুরা গরুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না, একের অধিকারে অন্যে হস্তক্ষেপ করছে না। মানুষ সেটা করছে তাই কার্যত তারা এক জাতি নেই, তারা হাজার হাজার দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। এদের সবাইকে একতাবদ্ধ না করা গেলে রক্তপাত, হানাহানি বন্ধ হবে না- এটাই আমরা বলতে চাই। আমরা পৃথিবীর সমস্ত মানবজাতিকে বলছি যে, তোমরা এক জাতি আরেক জাতিকে হামলা করো না, ধ্বংস করো না, খনিজ সম্পদ লুটে নিও না, পানি আটকে রেখে কষ্ট দিও না, সেও তোমার ভাই, সেও মানুষ। আল্লাহ সৃষ্টি আলো, বাতাস, পানিতে তোমার যেমন অধিকার তেমনি তারও অধিকার। তুমি যে আল্লাহর সৃষ্টি, সেও ওই আল্লাহরই সৃষ্টি। তোমরা উভয়ই আদম-হাওয়ার সন্তান। ভাই-ভাই লড়াই করলে পিতা-মাতা যেমন খুশি থাকতে পারে না তেমনি তোমাদের ভ্রাতৃঘাতী লড়াই দেখে তোমাদের আদি পিতা-মাতা কষ্ট পাচ্ছেন। তোমরা এক জাতি। আমরা সকলের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি করতে চাই যে, অনুভূতির দিক থেকে সকল মানুষই এক জাতি।
তখন মানুষ চিন্তা করবে যে, তাদের বর্ডার তারা রাখবে কিনা, দুই ভাইয়ের বাড়ির মাঝে কোনো বেড়া থাকবে কি থাকবে না, সেটা সময়ই বলবে। এখানে তো বর্ডার তুলে ফেলার বা সরকার সরিয়ে ফেলার কোনো প্রশ্ন আসছে না। আমরা তো আসল কাজটিই করতে পারছি না। আমরা চাই একজাতির ধারণা সৃষ্টি করতে। বর্তমানে আমেরিকানরা চিন্তা করছেন ইরাকিরা মরলে মরুক, আমেরিকানরা বেঁচে থাকলেই হলো, আবার ভারতীয়রা হয়তো ভাবছেন, পাকিস্তানিরা মরলে মরুক, আমরা বাঁচলেই যথেষ্ট। আমরা এই ভাবনাটাকে অস্বীকার করে, আমরা ভাবতে চাই, তারাও আমার ভাই। আমার ভাই মরুক এটা আমি চাই না। এই ধারণাটা সবার মধ্যে আসলে মনের মধ্যে যে বর্ডার সেটা লুপ্ত হয়ে যাবে, তখন কাঁটাতারের বর্ডার কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করি না। তখন একদেশের সীমানায় নদীতে বাধ দিয়ে ভাটির দেশকে মরুকরণ করা হবে না। সেটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ। আমাদের নিজেদের দেশের মধ্যে তো কোনো বর্ডার নেই। তাহলে আগে আমরা এই ষোল কোটি এক হই না কেন? আমাদের মধ্যেও তো এই ভ্রাতৃত্বের ধারণা নেই। আমরা ভাবি অমুকে আওয়ামী লীগ, অমুকে বিএনপি, অমুকে হিন্দু, অমুকে চাকমা। আগে তাদের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হতে হবে যে, আমরা ভাই ভাই। আজ হিন্দুর ঘরে মুসলিম খায় না, প্রতিবেশী বাঙালির ঘরে আগুন দেয় চাকমা, চাকমাকে আক্রমণ করে বাঙালি। আগে এই দেওয়াল ভাঙতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, স্রষ্টার কোনো জাত নেই, তাই মানুষেরও কোনো জাত নেই। সবাই একজাতি, কেউ উপজাতি নয়, কেউ সংখ্যালঘু নয়। এক মানুষের ঘরে আরেক মানুষ খেলে কারো জাত যাবে না। এই শিক্ষাটা ব্যাপকভাবে প্রসার করে আমরা ধারণাগতভাবে মানবজাতিকে একজাতি করতে চাই।