আপনারা বলছেন, দাজ্জাল হচ্ছে ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা। আমরা জানি, দাজ্জাল বিরাট একটি দানবীয় প্রাণী। এর ব্যাখ্যা কী?
দাজ্জাল সম্পর্কে হাদিসে যে অতিকায় দানবের কথা বলা আছে সেটা বর্তমানের পাশ্চাত্য সভ্যতার রূপক বর্ণনা, মাননীয় এমামুয্যামান তাঁর দাজ্জাল বইয়ে এটা প্রমাণ করেছেন। তাঁর যুক্তিগুলো কেউ খণ্ডাতে পারেন নি, পারবেও না। সংক্ষেপে মূল কথা হচ্ছে, ইউরোপের মধ্যযুগে যখন চার্চ ও রাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল, তখন রাজা অষ্টম হেনরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চার্চের ক্ষমতাকে খর্ব করেন এবং রাজাকে চার্চের প্রধান বলে ঘোষণা করেন। সেই থেকে জাতীয় জীবনে ধর্মের আর কোনো গুরুত্ব রইল না, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়ে পরিণত হলো। এর পূর্বে মানুষের ইতিহাস যতদূর জানা যায়, ধর্মের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে, সেই ধর্ম সঠিক হোক আর বিকৃতই হোক। ১৫৩৭ এর পরের রেনেসাঁ যুগের দার্শনিক, সাহিত্যিক ও রাষ্ট্রনীতির কারণে ধর্মহীন একটি জীবনব্যবস্থা সৃষ্টি হলো যাকে কেতাবি ভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হচ্ছে। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক যুগে প্রায় সমগ্র বিশ্বে এটি চালু করা হয়। এর কু-প্রভাবে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে গেল যে কোনো উপায়েই হোক অধিক উপার্জন, ভোগবিলাস, বস্তুগত স্বার্থোদ্ধার। একেই বলা হচ্ছে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। অথচ মানুষ দেহসর্বস্ব নয়, তার আত্মাও আছে। তার আত্মিক পরিশুদ্ধির ও চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ধর্মহীন জীবন ব্যবস্থার প্রভাবে ব্যক্তিজীবন থেকেও ধর্ম লুপ্ত হয়ে মানবসমাজে চরম নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি হলো। সর্বত্র বিরাজমান স্রষ্টার ভয়ে ধর্মবিশ্বাসী মানুষ অপরাধ করে না, কিন্তু স্রষ্টাহীন জীবনব্যবস্থায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারলেই অপরাধ সংঘটন করে। এভাবে সর্বপ্রকার অপরাধ মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। এই যে একদিকে প্রযুক্তির উন্নয়ন, অপরদিকে মনুষ্যত্বের চরম অধঃপতন পৃথিবীতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অবশ্যই মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ ও স্রষ্টার নেয়ামত, কিন্তু আজ এগুলো যতটা না মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে তার বহুগুণ ব্যবহৃত হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে। সংবাদপত্রগুলো দুঃসংবাদে ভরা, রাজনীতি আর মিথ্যা সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে, নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ সম্মানিত হচ্ছে। ধর্মকে জাতীয় জীবন থেকে নির্বাসন দেওয়ার পরিণামেই এই ভয়ঙ্কর বস্তুবাদী সভ্যতার জন্ম হয়েছে। তাই একে আল্লাহর রসুল দানবের সঙ্গে তুলনা করেছেন।