পার্শ্ববর্তী পরাশক্তি ভারত সম্পর্কে হেযবুত তওহীদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের শক্তিবলে সারা পৃথিবীতে একটি সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, যে সভ্যতাটা স্রষ্টাহীন, আত্মাহীন, ঈশ্বরহীন একটা বস্তুবাদী সভ্যতা। এতে ধর্মের কোনো জায়গা নেই, ভূমিকা নেই, ধর্মকে করা হয়েছে ব্যক্তিজীবনের ঐচ্ছিক বিষয় যা কোনোভাবেই সামাজিক কাঠামোর উপর প্রভাব বিস্তারের অধিকার রাখে না। মানুষের মনে স্রষ্টার প্রতি জবাবদিহিতা বা পরকালের ভয় বিলীন হয়ে যাওয়ায় সমস্ত অপরাধ লাগামহীনভাবে বাড়ছে, মিথ্যা, প্রতারণা, ব্যভিচার যুগের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো দুনিয়াটা হয়ে গেছে অশান্তির নরককুণ্ড। এই সভ্যতাটাকে সৃষ্টি করেছে পশ্চিমারা। বিশ্বটা যখন তাদের অধীনে চলে গেল তখন তাদের থেকে এই জীবনদর্শন সব জায়গায় ঢুকেছে। আমরা এটার জন্যই পশ্চিমা সভ্যতার বিরুদ্ধে কথা বলি, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে নয়।
ভারতে কিন্তু কখনো এমন জীবন দর্শন ছিল না। ভারতে হাজার হাজার বছর গেছে শাস্ত্রের বিধানে, এখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতিবোধ মানুষের রক্তে, অস্থিমজ্জায় মিশে ছিল। সেখানে পরিবার, গ্রাম, সমাজ ইত্যাদি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানরূপে কাজ করত। এগুলো মানুষের আচরণ ও শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করত। সে ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে এই পশ্চিমা জীবনব্যবস্থার বিষাক্ত দর্শন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আগে শাস্ত্র থেকে জ্ঞান লাভ করে ব্যক্তিজীবনে এতই সৎ ছিলেন দুধে পানি মেশানোর কথা কল্পনাও করত না, অথচ আজ সব খাদ্যেই বিষ, সবকিছুতেই ভেজাল, এ বিষয়ে সনাতন-মুসলিমের কোনো পার্থক্য নেই। মানুষ সবাই সবাইকে বিশ্বাস করত, চিন্তাও করত না মানুষ মিথ্যা কথা বলতে পারে, কিন্তু ব্রিটিশরা মামলা মকদ্দমার সিস্টেম চালু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে মিথ্যাবাদী হতে বাধ্য করেছে। সনাতন কি মুসলিম, মানুষের ওয়াদা ছিল পাহাড়ের মত অনড়, সেখানে পশ্চিমাদের শেখানো রাজনীতির দ্বারা মানুষের ওয়াদা মূল্যহীন হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ব্যাপারে কথা বলি না কেন প্রশ্ন করা হয়, আগে বলুন- ৪৭ সালের আগে কি ভারত আলাদা ছিল? কারা একে আলাদা করল? যারা হাজার হাজার বছর ধরে একই ভূখণ্ডে, একই জলবায়ুতে লালিত হয়েছে, আজ তারা একে অপরের শত্রু, পাকিস্তান বাংলাদেশ শত্রু, ভারত পাকিস্তান শত্রু। একে অপরকে শোষণ-শাসন করার চেষ্টা করছে, সীমান্তে হানাহানি করছে। এরা কবে থেকে পরস্পরের শত্রু হলো সে ইতিহাস দেখবেন না? আজ এই মানুষগুলি সম্পূর্ণ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে গেছে কারণ তারা নিজস্ব সভ্যতাকে পরিত্যাগ করে পশ্চিমাদের স্বার্থপর সভ্যতাকে গ্রহণ করে নিয়েছে; ফলে ব্যক্তিজীবনে তারা অসৎ হয়েছে, জাতীয় জীবনে হয়েছে দাঙ্গাপ্রিয়।
ভারতকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার রাষ্ট্র বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিজেপির কাছে ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস যেভাবে পরাজিত হলো তাতে আমরা এটুকু বলতে পারি যে, বর্তমানে ধর্মীয় অনুভূতিই সেখানে রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি বা ফ্যাক্টর। গোটা উপমহাদেশের জনগোষ্ঠীই, সনাতন কি মুসলিম, তারা অধিকাংশই ধর্মবিশ্বাসী। তাদের এ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করে রাজনীতিকরা ও ধর্মব্যবসায়ীরা। আমরা মনে করি, আমাদের দেশেও ধর্মকে নিয়ে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই এখন জরুরি হয়ে পড়েছে মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার, যাতে ধর্মবিশ্বাস দেশ ও জাতির অকল্যাণে নয় কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।