আমাদের মহানবীকে (সা:) অবমাননা করা হয়, ব্যাঙ্গচিত্র অংকন করা হয়, এ বিষয়ে আপনাদের মন্তব্য কী?
অন্য ধর্মের নবী রাসুল অবতার বা ধর্মগ্রন্থগুলিকে নিয়ে যারা ব্যঙ্গচিত্র আঁকে বা চলচ্চিত্র বানায়, এই কাজগুলো যারা সুস্থ মানুষ না। তারা সমাজের শত্রু মানবতার শত্রু। যে কারও বাবা-মাকে নিয়ে অশোভন উক্তি করলে মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ হবে এটা যেমন যুক্তিযুক্ত তেমনি প্রাণাধিক প্রিয় নবীকে নিয়ে কটূক্তি করলেও যারা তাঁর অনুসারী তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে, এটাও যুক্তিযুক্ত। তবুও যারা এটা করে তারা মূলত একটি দাঙ্গাময় পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যে কাজটি করে। পরে যখন কেউ সহিংসতা ঘটিয়ে ফেলে তখন পুরো মুসলিম জাতির উপর সন্ত্রাসের লেবেল এঁটে দেওয়া হয়। একটি ঘটনা যখন ঘটে তখন সেটা চলে যায় রাজনৈতিক ধান্ধাবাজদের নিয়ন্ত্রণে, তারা এর থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। শার্লি হেবদো পত্রিকাটি ছিল পেছনের সারির একটি অখ্যাত সাপ্তাহিক, সেটার নাম এখন বিশ্বের সবাই জানে, ৬০ লক্ষ কপি ছাপা হয়। এটাই হল ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার। আমরা এসব কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
পক্ষান্তরে, যারা রসুলাল্লাহকে অপমান করলেই ফুঁসে উঠে হামলা চালিয়ে বসেন তাদেরকে আমরা রসুলাল্লাহর জীবনাদর্শ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। রসুলাল্লাহর আড়ালে নয় একেবারে সামনে গালাগালি করা হয়েছে শত শতবার, তাঁর গায়ে থুথু ছেটানো হয়েছে, তাঁর পিঠে উটের নাড়ি-ভুঁড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁকে মুরতাদ, কাফের, পাগল, জাদুকর, মিথ্যাবাদী ইত্যাদি বলে অপবাদ প্রচার করা হয়েছে। আল্লাহর রসুল কি পারতেন না তাঁর আসহাবদেরকে নির্দেশ দিয়ে রাতের অন্ধকারে আবু জেহেল, আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে, বা তাদেরকে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে হত্যা করে ফেলতে? অবশ্যই পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি, তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েও যুক্তি দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে গেছেন যে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারও হুকুমে শান্তি আসবে না। এক সময় সত্যিই তাঁর আহ্বান মানুষ মেনে নিল, একদিন যারা তাঁর বিরোধিতা করেছে তারাই নবীর ডান হাত বাঁ হাতে পরিণত হলো। জোর করে রাষ্ট্রশক্তি দখল করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই, সেখানে শান্তি আসে না।
এই সত্যটি এসব জঙ্গিবাদীদেরকে বুঝতে হবে যে তারা রসুলাল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে যা করছেন তাতে না ইসলামের কোনো উপকার হচ্ছে, না উম্মাহর কোনো উপকার হচ্ছে। উল্টো বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দেশে দেশে মুসলমানরা নিজেদের বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে নিজেদের সম্পদই ধ্বংস করে ফেলছে, নিজের পায়ে কুড়াল মারা আর কাকে বলে? এর চেয়ে বড় মূর্খতা আর কী হতে পারে। সুতরাং এটা সঠিক পন্থা নয়। আগে তাদের নিজেদেরকে সত্যের পক্ষে, হকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। তারপর প্রতিপক্ষের এ মন্তব্যগুলিকে যুক্তি দিয়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রতিহত করা, মিথ্যা অভিযোগ খণ্ডন করা। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া যেহেতু প্রচলিত আইনেও বৈধ নয়, যারা এমন কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয়ও নেয়া যেতে পারে।
অনেকে অভিযোগ করেন, আমরা হেযবুত তওহীদ কেন কোনো প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করি না? করি না, কারণ আমাদের দৃষ্টি এগুলো অন্তঃসারশূন্য ও অর্থহীন। ১০০ বছর আগেও রসুলাল্লাহর নামে বহু অপপ্রচার করা হয়েছে, তখনো অনেক বিক্ষোভ হয়েছে। এখনো হয়। এসব করে কি অপপ্রচার কমেছে? না। বরং আরো বেড়েছে। তাই এ পথে আরো হাজার বছর চেষ্টা চালিয়ে লাভ হবে না, উল্টো ক্ষতি হবে। আমরা মনে করি, সত্যটা তুলে ধরা, সত্যের পক্ষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের মুখ্য কর্তব্য। আর যারা ধর্মব্যবসা করেন তাদের তো রসুলাল্লাহর পবিত্র নামই মুখে আনা উচিত নয়। যে কাজ আল্লাহ হারাম করেছেন তারা সেটাকেই ধর্ম বানিয়ে নিয়েছেন। তারা যখন রসুলাল্লাহকে অবমাননা করার প্রতিবাদ করে সেটাকে বক ধার্মিকতা আর নিজেদের জাহির করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই আমরা মনে করি না।