মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য কী? কখন ভাস্কর্য বৈধতা পায়?

0
হেযবুত তাওহীদ
Feb 26, 2023 05:03 PM 1 Answers শিল্প-সংস্কৃতিতে হেযবুত তওহীদ
Member Since Jul 2022
Subscribed Subscribe Not subscribe
Flag(0)

মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য কী? কখন ভাস্কর্য বৈধতা পায়?

0 Subscribers
Submit Answer
Please login to submit answer.
1 Answers
Best Answer
0
হেযবুত তাওহীদ
Feb 26, 2023
Flag(0)

প্রথমেই একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে, ইসলাম হলো একটি সত্য জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগের ফলে আর্থ-সামাজিকভাবে দৃশ্যমান শান্তিময় অবস্থা। যেই দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগের ফলে শান্তি আসবে সেটাই ইসলাম, আর যেটা অশান্তি সৃষ্টি করবে তা ইসলাম নয় অর্থাৎ আল্লাহর মনোনীত নয়। আল্লাহ তাঁর দীন মানবজাতির প্রতি নাযেল করেছেন একটি মাত্র কারণে, আর তা হলো- মানবজাতি যেন অন্যায় অবিচার থেকে বেঁচে একটি শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল সমাজে জীবনযাপন করতে পারে। তাই এই দীনের প্রতিটি আদেশ মানুষের সুখের জন্য এবং প্রতিটি নিষেধ মানুষকে ক্ষতি থেকে, অশান্তি থেকে রক্ষা করার জন্য। এমন কোন আদেশ বা নিষেধ ইসলামে থাকা সম্ভব নয় যেটার সঙ্গে মানুষের ভালো মন্দের কোন সম্পর্ক নেই। যে জিনিস বা যে কাজ মানুষের জন্য অপকারী তা-ই আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এই আলোকে আমাদের জানা দরকার, ভাস্কর্য নির্মাণ বা চিত্রাঙ্কন আমাদের জন্য ক্ষতিকর কিনা। এখানে আমাদেরকে একটি বিষয় আরও পরিষ্কার হতে হবে যে, প্রতিমা আর ভাস্কর্য কিন্তু এক নয়। প্রতিমাকে পূজা করা হয়, তার কাছে প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া প্রতিমাকে ভাগ্যবিধাতা, রিজিকদাতা, শক্তিদাতা এমনকি ইলাহ বা হুকুমদাতার আসনেও বসানো হয়, যা স্পষ্ট শিরক। প্রতিমা নির্মাণের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অতীতে যে সমাজেই মূর্তিকে বিধাতার আসনে বসানো হয়েছে সে সমাজ পরিচালিত হয়েছে মূর্তিগুলোর পুরোহিতদের সিন্ধান্ত বা ফতোয়া দ্বারা। পুরোহিতদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ধর্মের বিধান বলে স্বীকৃত হয়েছে। বিভিন্ন পুরোহিত বিভিন্ন বিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি রচনা করেছে এবং প্রয়োগ করেছে, যাকে কেন্দ্র করে বিবিধ অন্যায়, অবিচার, অশান্তির জন্ম হয়েছে। এ কারণে প্রতিমাপূজা ইসলামে নিষিদ্ধ। অপরদিকে ভাস্কর্য একটি প্রাচীনতম শিল্পকলা। একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্পকলা, রুচিবোধের নিদর্শন হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, যার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। বরং এই ভাস্কর্য শিল্পের দরুন হাজার হাজার বছর পূর্বের বিভিন্ন সভ্যতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া আজ সহজ হচ্ছে। সুতরাং ইসলামে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ হবার কোনো কারণ নেই। এক কথায়- মানবতার জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় কাঠ-পাথরের প্রতিমা ইসলামে নিষিদ্ধ, কিন্তু ক্ষতিকর না হওয়ায় কাঠ-পাথরের ভাস্কর্য নিষিদ্ধ নয়। কোনটা নিষিদ্ধ কোনটা বৈধ তার মানদণ্ড হচ্ছে মানবতার কল্যাণ অথবা অকল্যাণ।

এখানে একটি বিষয় বলে রাখা দরকার- ইসলামে প্রতিমা নির্মাণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ বটে, তবে তার মানে এই নয় যে, ইসলাম শক্তির জোরে প্রতিমাধ্বংসকে জায়েজ করছে। এমন ধারণা করা ভুল হবে। ইসলামের নীতি হলো ধর্মবিশ্বাসের উপর জোর-জবরদস্তি করা চলবে না। ব্যক্তিগতভাবে মুশরিকরা প্রতিমাপূজা করতে পারে তাতে কারও বাধা দেবার অধিকার নেই। প্রশ্ন করতে পারেন- তাহলে রসুলাল্লাহ ক্বাবাঘরের মূর্তি ভেঙেছিলেন কেন? রসুলাল্লাহ মক্কা বিজয়ের দিন কাবাঘরে অবস্থিত মূর্তি ভেঙেছিলেন। এর কারণ প্রথমত, সেগুলি ছিলো লাত, মানাত, উজ্জা, হোবল ইত্যাদির মূর্তি। আরবের গোত্রগুলি পরিচালিত হতো এই মূর্তিগুলির পুরোহিতদের সিদ্ধান্ত বা ফতোয়া দ্বারা। পুরোহিতদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ধর্মের বিধান বলে স্বীকৃত হতো। এই মূর্তিগুলিকে কেন্দ্র করে তাদের নিজস্ব আইন কনুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি প্রয়োগ করত। অর্থাৎ এক কথায় ঐ মূর্তিগুলিকে তারা বিধাতার আসনে এবং সমাজ পরিচালক বা ইলাহের আসনে বসিয়েছিল, যাকে কেন্দ্র করে বিবিধ অন্যায়, অবিচার, অশান্তির জন্ম হতো। কাজেই মহানবী (দ.) এ সমস্ত গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ক্বাবাঘর হচ্ছে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার জন্য পবিত্রতম স্থান, যা আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এমন স্থানে সত্য বিরোধীদের কোনো অবৈধ কার্যক্রম চলতে পারে না। কাজেই এই গৃহের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষাও মূর্তিধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল। কিন্তু আমরা যদি তার পরের ইতিহাস দেখি অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম যখন সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়ার বুকে বেরিয়ে পড়েছেন তখন যে সমস্ত এলাকা বিজীত হয়েছিল, ঐ সমস্ত স্থানে অন্যধর্মের লোকদের উপাস্য মূর্তি, ধর্ম উপাসনালয় ধ্বংস করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যদি বিধর্মীদের কোন মূর্তির অঙ্গহানীও হয়ে থাকে, সাহাবীরা সেগুলিও মেরামত করে দিয়েছেন। ঐ সমস্ত এলাকার মূর্তিগুলি আর জাতীয় পর্যায়ে বিধাতার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলো না কাজেই ঐগুলি ভাঙ্গার প্রয়োজন পড়ে নি। অর্থাৎ ইসলামের নীতি হলো জাতীয়ভাবে চলবে আল্লাহর হুকুম ব্যক্তিগতভাবে যে যার বিশ্বাস স্থাপন করুক তাতে কোনো আপত্তি নেই। ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তনে কোনরূপ জোরাজুরি চলবে না। এক কথায় ইসলামের নীতি হলো- রাষ্ট্র চলবে সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে, কিন্তু ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার উপর (ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে) ছেড়ে দিতে হবে। সুতরাং বর্তমানে যারা ইসলামের ধুয়া তুলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের মূর্তি ধ্বংস করছে, এমনকি চূড়ান্ত অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচয় দিয়ে বহু মূল্যবান ঐতিহাসিক ভাস্কর্য গুড়িয়ে দিচ্ছে তারা সম্পূর্ণ ইসলামপরিপন্থী কাজ করছে সন্দেহ নেই। এর জন্য তাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

Sign in to Reply
Replying as Submit

Leave a Reply