সংবিধানের মূলনীতিগুলো হেযবুত তওহীদ স্বীকার করে কিনা?

0
হেযবুত তাওহীদ
Feb 26, 2023 04:19 PM 1 Answers রাজনীতি বিষয়ে হেযবতু তওহীদের দৃষ্টিভঙ্গি
Member Since Jul 2022
Subscribed Subscribe Not subscribe
Flag(0)

সংবিধানের মূলনীতিগুলো অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ হেযবুত তওহীদ স্বীকার করে কিনা?

0 Subscribers
Submit Answer
Please login to submit answer.
1 Answers
Best Answer
0
হেযবুত তাওহীদ
Feb 26, 2023
Flag(0)

প্রথমত, আমরা গণতন্ত্র মানি কি না। আসলে এক কথায় এর উত্তর হয় না। কারণ কেতাবে যাই লেখা থাক বাস্তবে গণতন্ত্রের যে করাল রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি দুনিয়াময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে দেশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়, গণতন্ত্রের নামে অন্যের অধিকার হরণ করা হয়, কথায় কথায় হরতাল ডাকা হয়, নাস্তানাবুদ করা হয়. সহিংস কর্মাকাণ্ড চালানো হয়, কারখানায় লক আউট করা হয়, এভাবে গণতন্ত্রের নামে সমস্ত অপকর্মগুলো যে চলে। যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের কোনো মাপকাঠি নেই, জনতার নামে সব চালিয়ে দেওয়া হয় আমরা এ গণতন্ত্র মানি না। শুধু তা-ই না, আমরা মনে করি, কোনো সভ্য মানুষ এই জাতীয় গণতন্ত্র মানতে পারে না এবং এ জাতীয় গণতন্ত্র দিয়ে কোনো দেশ সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নতি করতে পারে না। যে গণতন্ত্রের কারণে গত ৪৪ বছরে জাতিটি একদিনের জন্যও স্বস্তি পায় নি, যার দ্বারা জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়, ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, হানাহানি হয়, একটা জাতি টুকরো টুকরো হয়ে যায়, নিজের দলের লোকেরা পদের জন্য নিজেদের হত্যা করে, আমরা এমন সর্বনাশা গণতন্ত্রকে ঘৃণা করি, প্রত্যাখ্যান করি। এ জাতীয় গণতন্ত্র দিয়ে পুরো দেশ, জাতিকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, এটা হচ্ছে পশ্চিমাদের চাপিয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রমূলক ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি। আশা করি এ সহিংসতা জাতিবিনাশী গণতন্ত্রের কথা আমাদের সংবিধানে লেখা নেই। সেখানে যে গণতন্ত্রের কথা লেখা আছে তা হলো, ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীলতা, অন্যের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সকলের বাক স্বাধীনতা, গবেষণার স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা, অবাধে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন দিয়ে সরকার গঠনের স্বাধীনতা, সরকারকে পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন নাগরিক হিসাবে আমার মতামত প্রদানের স্বাধীনতা ইত্যাদি। এই যদি গণতন্ত্র হয়ে থাকে তবে আমি এই সব নীতেকে স্যালুট করি, আমি এই সকল অধিকার চাই, এর জন্য লড়াই করি। আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলামও মানুষের এ অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দেয় এবং তা প্রাপ্তির সঠিক পথ দেখায়।

এরপরে ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতার মানে যে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, যার যার ধর্ম সে সম্মানের সঙ্গে পালন করবে, তার বিশ্বাসে কেউ আঘাত করবে না, তার উপাসনালয়ে কেউ হামলা করবে না, অর্থাৎ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা, ধর্মীয় আনন্দ-অনুষ্ঠান করার স্বাধীনতা। এটা ধর্মনিরপেক্ষতা যদি হয়ে থাকে তবে এই ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমরা সম্মান করি, এর জন্যই আমরা লড়াই করছি। ইসলাম যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন সব ধর্মের লোকেরাই সেই ভূখণ্ডে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেছিল। আমরা প্রকৃত ইসলামের যুগ বলতে রসুলাল্লাহর পর থেকে ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত সময়কালকে বুঝি। এর পরে ইসলাম শাসক ও ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। সেটার উদ্দেশ্য হয়ে গিয়েছিল ভোগবিলাস ও সাম্রাজ্যবাদ। তারপর থেকে ইসলামের নামে যা কিছু করা হয়েছে তার সঙ্গে আল্লাহ-রসুলের কোনো সম্পর্ক ছিল না, এর জন্য উম্মতে মোহাম্মদীকে দোষারোপ করা অযৌক্তিক।

পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতার জন্ম কীভাবে সেটাও স্মরণে রাখা প্রয়োজন। বাইবেলে রাষ্ট্রীয় জীবনব্যবস্থা নেই, তাই রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তির পথনির্দেশ করতে খ্রিষ্টধর্ম ব্যর্থ হয়। এজন্য ইউরোপে ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে মানুষের তৈরি বিধান দিয়েই রাষ্ট্র চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ইউরোপ রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা একটা বস্তুবাদী সভ্যতার জন্ম দিয়ে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা, মিডিয়ার মাধ্যমে অপ-প্রচার চালিয়ে সেই ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকেও ধর্মকে উৎখাত করে দিতে চেষ্টা করে। ধর্মনিরপেক্ষতার নাম নিয়ে প্রকারান্তরে ধর্মহীনতার চর্চা শুরু হয়, এটাকে যদি ধর্মনিরপেক্ষতা বলেন তবে সেই ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সেই ধর্মহীনতা আমরা মানি না। কারণ এতে ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মনিরপেক্ষতা যিগির তুলে আল্লাহর দেওয়া বিধানের প্রাকৃতিক ও মহাসত্য বিষয়গুলোকেও ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে জীবনকে অপ্রাকৃতিক করে তোলা হয়। মানুষের ঈমানকে বনসাই বানিয়ে রাখার এ প্রচেষ্টার ফলেই মানুষ ক্ষুব্ধ হয় আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাকে ভিন্নখানে প্রবাহিত করে ধর্মকে ধ্বংসাত্মক কাজে লাগায়। ধর্মকে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার প্রেরণা থেকেই জন্ম নিয়েছে ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতি ও জঙ্গিবাদ। এগুলোর দ্বারা মানুষ ইহজীবনও হারিয়েছে, পরকালও হারিয়েছে। ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ বা ধর্মপ্রাণ মানুষের চিন্তা চেতনাকে হেয় করার ফলে মানবতা, জাতি, রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ নৈতিকতা হারিয়ে অপরাধী হয়েছে। কাজেই ধর্মনিরপেক্ষতা যদি ধর্মহীনতা হয়, তবে আমরা এই ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে নই। আমাদের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যার যার ধর্ম প্রালন ও প্রচারের অধিকার নিশ্চিত করা, আমরা দৃঢ়ভাবেই এর সমর্থন করি।

এরপরে জাতীয়তাবাদ। এমামুয্যামান বলেছেন, জাতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি জাতির এককমাত্র, কিন্তু জাতির বাইরে ব্যক্তির কোনো মূল্য নেই। ইসলাম অর্থ শান্তি, আর শান্তি একটি সমষ্টিক বিষয়। এককভাবে একজনের জীবনকে শান্তিময় করা সম্ভব নয়, যদি আরেকজন অশান্তি সৃষ্টি করে। ইসলামের সবকিছুই হলো জাতি ভিত্তিক। আমি প্রথমে বলব মানবজাতি এক জাতি। বাবা আদম (আ.), মা হাওয়ার সন্তান সবাই আমরা একজাতি মানবজাতি। সে হিসাবে আমরা বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষও একজাতি। অন্যদিকে আমরা বাঙালি জাতি। কিন্তু নামে একজাতি হলেই হবে না, প্রত্যেকের অনুভূতি, জাত্যবোধ, চিন্তা চেতনা এক হতে হবে। আমরা একে অন্যের সমস্যাগুলো ভাগাভাগি করে নেব, প্রত্যেকের বিপদে এগিয়ে যাব। একজন বিপদগ্রস্তকে দেখে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যাব না, তাকে রক্ষার চেষ্টা করব। এটা হচ্ছে জাতীয়তাবাদ। তা না করে কেবল রাজনীতির মঞ্চে গলার রগ ফুলিয়ে আমি বাঙালি, আমি মুসলমান ইত্যাদি বলে চিৎকার করে লাভ নেই। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, আমরা ষোল কোটি যদি সত্যিই এক জাতিভুক্ত হয়ে থাকি তাহলে আমাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি থাকবে না। আমাদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে যদি সমাজের স্বার্থকে স্থান না দেই, তবে আমাদের দিয়ে কোনোদিন জাতিগঠন হবে না। জাতীয় উন্নতির স্বার্থে আমরা সর্বদা একমত থাকব, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব সমস্ত ধর্মব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে। এই অর্থে আমরা জাতীয়তাবাদের পক্ষে। পাশ্চাত্য জাতিগুলিও তাদের ভৌগোলিক জাতীয়তায় বিশ্বাসী, এবং ঐ ভৌগোলিক রাষ্ট্রের স্বার্থকে তাদের অধিকাংশ মানুষ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের উপর স্থান দেয়। আমার লাভ হবে কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে এমন কাজ তাদের অধিকাংশ লোকেই করবে না। তাদের বিদ্যালয়, স্কুল-কলেজে, ছোট বেলা থেকেই কতকগুলি বুনিয়াদী শিক্ষা এমনভাবে তাদের চরিত্রের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয় যে, তা থেকে কিছু সংখ্যক অপরাধী চরিত্রের লোক ছাড়া কেউ মুক্ত হতে পারে না। ফলে দেখা যায় যে ওসব দেশের মদখোর, মাতাল, ব্যভিচারীকে দিয়েও তার দেশের, জাতির ক্ষতি হবে এমন কাজ করানো যায় না, খাওয়ার জিনিসে ভেজাল দেওয়ানো যায় না, মানুষের ক্ষতি হতে পারে এমন জিনিষ বিক্রি করানো যায় না ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশে জাতীয়তাবাদের শে­াগান আছে কিন্তু সেই শে­াগান দিয়ে জাতির সম্পদই ধ্বংস করা হচ্ছে। ষোল কোটি বাঙালিকে নিয়ে একটি শক্তিশালী জাতি সত্তা গড়ার কাজ আমরা করে যাচ্ছি। গত ৪৪ বছরে এই কাজ কেউ করে নাই, সবাই ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করাকেই রাজনীতি মনে করা হচ্ছে। এটা কি জাতীয়তাবাদ হলো? প্রতিটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে দেয়াল দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, রাজনীতিক মতবাদ চাপিয়ে দিয়ে রাজনীতিক দল সৃষ্টি করে হানাহানির ইতিহাস দেখেছি আমরা গত ৪৪ বছরে। আমাদের সংবিধানে শক্তিশালী জাতিসত্তার যে ধারণা আছে আমরা মনে করি সেটা পূরণ করতে পারছে হেযবুত তওহীদ। আমরা বিগত ২০ বছরে বহু নির্যাতিত হয়েছি, কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছি। ভাঙচুরের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না, ওপথে কোনোদিন মানুষের শান্তি আসতে পারে না।

তবে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ধারণায় আমরা বিশ্বাসী নই, কারণ এটাও এক প্রকার অন্ধ অমানবিকতার জন্ম দেয়। আমি বাঙালি জাতি নিয়ে খুব সুখ সমৃদ্ধির মধ্যে আছি, অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে একটি জনগোষ্ঠী না খেয়ে মরছে আমি তার দিকে চেয়ে দেখব না এটা ঠিক নয়। আমাদের দেশেই ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বাস করছে, প্রতিনিয়ত সেখানে মানবতা পদদলিত হচ্ছে সেটা আমারও কষ্টের কারণ হতে হবে। এটা যদি না হয় তবে তা মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো না, কাল আমাকেও হয়তো বিপদে পড়তে হবে, তখন আমার পাশেও কেউ দাঁড়াবে না। কাজেই ন্যায়-নীতিভিত্তিক, শক্তিশালী জাতিসত্তা গঠনে আমরা অগ্রগামী থাকতে চাই।

Sign in to Reply
Replying as Submit

Leave a Reply