হেযবুত তওহীদ কী দীনে এলাহী প্রতিষ্ঠা করতে চায়?

0
হেযবুত তাওহীদ
Feb 25, 2023 07:54 PM 1 Answers হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
Member Since Jul 2022
Subscribed Subscribe Not subscribe
Flag(0)
0 Subscribers
Submit Answer
Please login to submit answer.
1 Answers
Best Answer
0
হেযবুত তাওহীদ
Feb 25, 2023
Flag(0)

ধর্মের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে কিছু দেখলেই, কিংবা সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ঐক্যসৃষ্টির কোনো উদ্যোগ দেখলেই অনেক পণ্ডিতমন্য ব্যক্তি দীনে এলাহীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাদের উদ্দেশ্য থাকে যারা দীনে এলাহী সম্পর্কে জানেন না তাদেরকে বিভ্রান্ত করা। আমরা মনে করি, আমাদের বক্তব্য এবং দীনে এলাহী সম্পর্কে না জানার কারণেই এমন প্রশ্ন ওঠে। প্রকৃত ইসলাম আর দীনে এলাহী কি এক জিনিস? আল্লাহর রসুলও সকল আহলে কেতাবকে বলেছেন, এসো আমরা এমন একটি বিষয়ের উপর মিলিত হই যে বিষয়ে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, সেটা হচ্ছে আমরা একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহর এবাদত করব (সুরা ইমরান ৬৪)। সুতরাং সকল ধর্মের অনুসারীদের ঐক্য আল্লাহরই অভিপ্রায়। বিগত তেরশ বছর ধরে ইসলাম বিকৃত হতে হতে আজকে সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে। আল্লাহর দয়ায় আমরা আবার সেই সত্য এসলাম লাভ করেছি। সব ধর্মের মানুষের জন্যই শেষ রসুল এসেছিলেন, তিনি যেমন সব ধর্মের মানুষের কাছে গিয়েছেন আমরাও সব ধর্মের মানুষের কাছেই যাচ্ছি। সমগ্র মানবজাতিকে এক মহজাতিতে পরিণত করে তাদের শান্তিময় সহাবস্থান নিশ্চিন্ত করাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষয। আমাদের এই ধারণার সঙ্গে দীনের এলাহীর দূরতমও কোনো সাদৃশ্য নেই।

কারণ দীনে এলাহী ছিল সম্রাট আকবরের একটি রাজনৈতিক কূটকৌশলমাত্র। প্রাচীনকাল থেকে ভারতে ডজন এর উপর ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রাজস্থানের রাজপুতনারা। ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় তারা সম্রাট আকবরের বিরূদ্ধে চরম সাম্প্রদায়িক অসন্তোষের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সাম্প্রদায়িকতার এ বিষবাষ্প থেকে ভবিষ্যতে মোঘল সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার পথ খুঁজতে থাকেন আকবর। তিনি রাজপুত কন্যা যোধাবাঈসহ বিভিন্ন রাজপরিবারের মেয়েদেরকে বিয়ে করে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, অনেকের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি করেন। কিন্তু তার গৃহীত এসকল পদক্ষেপগুলোকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি স্থায়ী মোঘল ধর্মীয় নীতি। এটাই হলো দীনে এলাহি। বিরাট ভূ-ভারতের বিভিন্ন দূরবর্তী রাজ্যের শক্তিমান হিন্দু রাজাদের পক্ষে রাখার জন্য তিনি সনাতন ধর্মের প্রচলিত পূজা-পদ্ধতিগুলো নিজ ধর্মে গ্রহণ করেন এবং একটি একটি করে ইসলামের সকল বিধি-বিধানকে বাদ দেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি বিরাট সুযোগ-সুবিধার লোভ দেখিয়েও হিন্দু-মুসলিম থেকে মাত্র ১৯ জন অনুসারী সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন, যারা কিনা তার মৃত্যুর পরই যার যার ফিরে যায়। মুসলিমরা (যদিও প্রকৃত মুসলিম নয়, কার্যত কাফের মোশরেক) এ ধর্মটি মেনে নিতে পারে নি কারণ এর প্রধান উপাদানই ছিল সূর্যের উপাসনা করা। বাদশাহ পণ্ডিতদের কাছ থেকে সূর্যকে বশীভূত করার মন্ত্র শিখেছিলেন যা তিনি মাঝরাত্রে ও ভোরে পাঠ করতেন। এ ধর্মে আগুন, পানি, গাছ, গাভী ও নক্ষত্র পূজাও করা হত। দীনে এলাহীর কলেমা ছিল লা ইলাহা ইল্লালাহু আকবারু খলিলুল্লাহ। এ ধর্মে বাদশাহকেও সেজদা করতে হত। সূদ ও জুয়া ছিল বৈধ। খাস দরবারে জুয়া খেলার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয় এবং জুয়াড়ীদেরকে রাজকোষ থেকে সুদি কর্জ দেয়া হত। মদ্যপান করাও হালাল সাব্যস্ত করা হয়। বাদশাহ স্বয়ং দরবারের নিকট একটি শরাবখানা খুলে দেন। নববর্ষের অনুষ্ঠানে আলেম, কাজী ও মুফতিগণকেও শরাব পানে বাধ্য করা হত। শহরের বাহিরে বিভিন্ন জায়গায় পতিতাদের বসতি স্থাপন করে ব্যাভিচারকে আইনসিদ্ধ করা হয়। বার বৎসরের পূর্বে বালকদের খৎনা করা নিষিদ্ধ করা হয়। এই ধর্মাবলম্বী কোন লোকের মৃত্যু হলে তার গলায় কাচা গম ও পাকা ইট বেঁধে তাকে পানিতে নিক্ষেপ করা হতো। যেখানে পানি পাওয়া যেত না, সেখানে মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হতো অথবা পূর্ব দিকে মাথা ও কাবার দিকে পা দিয়ে দাফন করা হতো। গরু, উট, ভেড়া প্রভৃতি জন্তুর গোশত হারাম বলে ঘোষিত হয়েছিল, ঈদুল আযহার সময়ও এগুলো কোরবানি করা যেতন না। পক্ষান্তরে বাঘ ভাল্লুকের গোশত হালালের মর্যাদা লাভ করে। এমন আরো অনেক আছে যা বিস্তারিত লেখার জায়গা এটা নয়। মোট কথা সর্বক্ষেত্রে ইসলামের বিরোধিতা করাই ছিল দিন-ই-ইলাহির মূল উদ্দেশ্যের পেছনে মূল প্রেরণা ছিল রাজনীতি। সম্রাট আকবরের ছেলে জাহাঙ্গীর পিতার নীতিতেই রাষ্ট্র চালাতেন, ফলে তাকে মুসলিমদের বিদ্রোহে পড়তে হয় এবং তিনি সম্মুখযুদ্ধে পরাজিতও হন, তার সেনাবাহিনীও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। অনন্যোপায় জাহাঙ্গীর দীনে এলাহি ত্যাগ করার শর্তে দিল্লির সিংহাসন ফিরে পান। এহেন দীনে এলাহীর সঙ্গে হেযবুত তওহীদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ কোথায় মেলে সেটাই আমাদের বোধগম্য নয়। হেযবুত তওহীদ ১৩০০ বছরের বিকৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া ইসলামের বহু সত্যকে পুনর্জীবন দিয়েছে এবং রসুলাল্লাহর প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী হওয়ার জন্য আপ্রাণ সাধনা করছে, সমগ্র দুনিয়াতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের জীবন-সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই যারা কথায় কথায় দীনে এলাহীর কথা বলেন আসলে তারা এ বিষয়ে কতটুকু জানেন সেটাই প্রশ্ন। আমাদের মতে আগে তাদের দীনে এলাহীটা পড়া উচিত, হেযবুত তওহীদের লেখাগুলোও পড়া উচিত, তারপর নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে আপনিই উত্তর পেয়ে যাবেন।

Sign in to Reply
Replying as Submit

Leave a Reply